বিজ্ঞাপন ও আধুনিক জীবন প্রবন্ধ রচনা | Advertising and Modern Life Essay Writing- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিজ্ঞাপন ও আধুনিক জীবন” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন ও আধুনিক জীবন প্রবন্ধ রচনা
অনুরূপে- (১) বিজ্ঞাপন ও মানবজীবন; (২) প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞাপন; (৩) বিজ্ঞাপনের উপযোগিতা; বিজ্ঞাপনের সুফল ও কুফল।
ভূমিকা-
বিজ্ঞাপন বলতে বোঝায় বিশেষরূপে জ্ঞাপন করা। কোনো একটি বিশেষ ঘটনা বা তথ্য জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করার নাম বিজ্ঞাপন। কাগজে ছাপার অক্ষরে, দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে কিংবা বক্তৃতা বা ঘোষণার দ্বারা কোনো বিষয়কে বিজ্ঞাপিত করা যায়। এই মাধ্যমটিকে বর্তমানে ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছেন। ফলে বিজ্ঞাপনের সাহায্যে নানা পণ্যের খবরাখবর জানতে পারা যায়, এবং পছন্দমত কেনাকাটা করতে পারা যায়। তবে কিছু ব্যবসায়ী তাঁদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে অনেক অসত্য তথ্য প্রচার করে মানুষকে প্রতারিতও করেন।
ব্যবহারিক জীবনে বিজ্ঞাপন-
ব্যবহারিক জীবনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। বিজ্ঞাপনের সাহায্যে আমরা নিত্যনতুন আবিষ্কারের কথা জানতে পারি। বর্তমান যুগে প্রতিটি মানুষের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বিজ্ঞানের প্রভাব। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাত্রে বিছানায় শুতে যাবার সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানের অবদান আমাদের নৈমিত্তিক চাহিদা পূরণ করে চলেছে। এমনকি ঘুমের মধ্যেও বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে চলে। এই বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলি জানতে পারা যায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। প্রাত্যহিক চাহিদা ছাড়াও ক্রেতা সাধারণের সামনে বিলাসব্যসন-সমৃদ্ধ দ্রব্যের সংবাদ এনে হাজির করে এই বিজ্ঞাপনই।
উপযোগিতা-
আবার কোন দ্রব্যটির মধ্যে কতখানি উপযোগিতা আছে, তাও জানতে পারা যায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এই তথ্য নিয়ে প্রতিটি ক্রেতা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারেন। পণ্যমূল্যের বাজার যাচাই করতে পারেন। বিজ্ঞাপনের আসল লক্ষ্য যেহেতু ক্রেতা সংগ্রহ করা, তাই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতার মনে কৌতূহল বা আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলাই হল তার প্রধান উদ্দেশ্য।
সেইসঙ্গে ক্রেতাসাধারণের মনে একটি সুগভীর প্রত্যয় সৃষ্টি করাও বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। ক্রেতা একবার ঠকলে বিজ্ঞাপন ব্যর্থ হতে বাধ্য। ক্রেতার বাসনা পূরণই ব্যবসায়ীর প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য তাঁকে সদা সতর্ক থাকতে হয়।
বিজ্ঞাপনের শিল্পবোধ-
বিজ্ঞাপন আজকের জগতে একটি স্বতন্ত্র শিল্প হয়ে উঠতে পেরেছে। বিজ্ঞাপনকে আর বাজে খরচ বলে মনে করে না কোনো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত ক্রেতা বাড়াবার উদ্দেশ্যে তারা নিত্যনতুন চটকদারী, দমকদারী বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করে মানুষের মন আকর্ষণ করবার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য দৈনিক খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে আজকাল কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সন্তুষ্ট থাকছে না।
শহরে ব্যস্ততম অঞ্চলে বিরাট বিরাট হোর্ডিং লাগিয়ে তাতে বর্ণালী চিত্রসম্ভারের সাহায্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যম এখন টেলিভিশন। সেখানে কেবল পণ্যদ্রব্যের খবরাখবরই থাকে না; ছোটো ছোটো নাটকের মাধ্যমে বিজ্ঞাপিত দ্রব্যটির গুণাগুণ হাতেনাতে দেখিয়ে প্রভাবিত করবার অভিনব ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত মানুষকে প্রলুব্ধ করে চলেছে।
বাণিজ্যক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। এমনকি বিজ্ঞাপনকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও জীবনে প্রতিষ্ঠালাভের সম্ভাবনা দেখে বিজ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞাপনের পাঠদানের ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে চালু হয়েছে নানা পাঠক্রম।
বিজ্ঞাপনের নেতিবাচক দিক-
বিজ্ঞাপনের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি আছে একটি নেতিবাচক দিক। এই নেতিবাচক দিকটিও কম শক্তিশালী নয়। কিছু অশুভ বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে আজকাল বিকৃত মানসিকতার পরিচয় রাখছে। বিশেষ করে নারীসমাজকে বিজ্ঞাপনের জন্য এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা অনেক সময় রুচিসম্মত নয়। তাদের স্বল্পপোশাক, আচারআচরণ এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা সুস্থ সমাজের পক্ষে একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। এর দ্বারা নারীজাতির মর্যাদাহানীও হয়ে থাকে।
কখনো কখনো অসত্য তথ্য উপস্থাপিত করে ক্রেতাদের ঠকাবার প্রবণতাও কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে দেখতে পাওয়া যায়। সেইসব বিজ্ঞাপন মানুষকে লোভী, কুরুচিকর করে তোলে। তাই বর্তমান সমাজে যে এত লোভ, লালসা কিংবা মূল্যবোধের অভাব, লজ্জাহীনতা দেখতে পাওয়া যায়, এ সবের জন্য বিজ্ঞাপনকে কিছুটা হলেও দায়ী করা যেতে পারে।
শিশুমনের ওপর প্রভাব-
বিজ্ঞাপন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে যেভাবে প্রভাবিত করে, তার থেকেও বেশি প্রভাবিত করে শিশুমনকে। শিশুমনের বিচারবিশ্লেষণের ক্ষমতা কম। তাই তারা টিভিতে যে বিজ্ঞাপন দেখে, তাকেই অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করে; এবং তা পাবার জন্য লালায়িত হয়। এ থেকে হিংসা, ক্রোধ, প্রতারণা ইত্যাদির মত সামাজিক ব্যাধিগুলি অনায়াসে গভীর ছাপ ফেলে যাচ্ছে নরম শিশুমনের ওপর এবং শারীরিক ও মানসিক ব্যাধি উৎপন্ন করে সামাজিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
উপসংহার-
বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় অবদান, সে মানুষকে অনেক কিছু ভাবতে শেখায়। দৈনন্দিন জীবনের অভাব অভিযোগ ভুলে মানুষ নিজেকে পূর্ণ করবার স্বপ্ন দেখে। অসুন্দরকে ভুলে গিয়ে সুন্দরের চিন্তায় মগ্ন থাকে। বর্তমান যুগ গতিশীলতার যুগ। এই গতিশীল জীবনে বিজ্ঞানের হাতের ছোঁয়া গ্রহণ না করে উপায় নেই। বিজ্ঞাপন মানুষকে সেই বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে প্রলুব্ধ করে। তাই বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনকে অস্বীকার করবার উপায় নেই।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।