ড্রাগের নেশা সর্বনাশা প্রবন্ধ রচনা | Drug Addiction Disaster Essay PDF- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ড্রাগের নেশা সর্বনাশা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ড্রাগের নেশা সর্বনাশা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা:
বর্তমান সমাজজীবনে নানা সমস্যায় মানুষ বিপর্যস্ত। মাদকাসক্তি তার মধ্যে অন্যতম। আগুনের মনোহারি দীপ্তিতে পতঙ্গকুল যেমন দলে দলে আত্মবিস্মৃত হয়ে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি পৃথিবীর কত সহস্র মানুষ আজ আপাত সুখ ও আপাত প্রাপ্তির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে ড্রাগের নেশায় মেতে উঠেছে। ড্রাগ নামক ড্রাগন প্রতিনিয়ত মৃত্যু ফাঁদ রচনা করে প্রলুব্ধ করে চলেছে মানুষকে। বিশেষ করে আধুনিক প্রজন্মের কাছে এই সর্বনাশা মাদকদ্রব্য ভয়াবহরূপে দেখা দিয়েছে।
ভালোভাবে খেয়াল করলে বর্তমান যুগে এর ভয়াল ভয়ংকর ব্যাপকতা যে কতখানি এবং সমাজের কত গভীরে পরিব্যাপ্ত তা অনেকটা অনুমান করা যায়। তাই সর্বনাশা ‘ড্রাগের নেশা’ -কে আজ আর ব্যক্তিগত সমস্যা না বলে সামাজিক তথা আন্তর্জাতিক সমস্যা বলাই শ্রেয়।
মারণ নেশার সর্বনাশা রূপ:
ড্রাগের নেশা মানবজীবনে এক সর্বনাশা অভিশাপ বহন করে এনেছে। ড্রাগের নেশা লক্ষ লক্ষ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীকে অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ আদিকাল থেকে কোনো না কোনো নেশায় আসক্ত। বেদে দেবতাদের সোমরস পানের কথা বর্ণিত। মদ, গাঁজা, সিদ্ধি, আফিং, চরস, ধূমপান প্রভৃতি বহু পুরোনো নেশা। এসব মাদক দ্রব্য কোনোদিনই তীব্র সমস্যার সৃষ্টি করেনি। কিন্তু বর্তমানে ড্রাগ সৃষ্টি করেছে মারাত্মক সমস্যা -এই সমস্যা সমগ্র বিশ্বের।
ড্রাগের উপাদান ও অর্থ লোভীদের ঘৃণ্য প্রয়াস:
বিস্তৃত অর্থে ড্রাগ বলতে মাদক দ্রব্যকে বোঝালেও সাধারণভাবে চরস, এলএসড়ি হেরোইন, ব্রাউন সুগার, মরফিন, কোকেন, হাসিস, মারিজুয়ানা, ক্র্যাক প্ল্যাক ইত্যাদিকেই বোঝায়। আসলে ড্রাগ একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ। এইসব মাদক দ্রব্যের মধ্যে কোনোটি ইনজেকশন, কোনোটি ধূমপানের সঙ্গে, আবার কোনোটি সাধারণভাবে সেবন করার দ্রব্য। দেশের স্কুল কলেজের অগণিত যুবসমাজকে প্রলুব্ধ করার জন্য অর্থলোভী ব্যবসায়ী-চক্র বিস্কুট, চকলেট নানাবিধ খাদ্যবস্তুর সাথে মাদক দ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করছে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল আকারে বর্তমানে মাদক দ্রব্যের রমরমা ব্যাবসা চলছে প্রায় সমস্ত ধনী দেশের শহরগুলোতে। আমাদের দেশও খুব একটা পিছিয়ে নেই এই দুরপনেয় জঘন্য নেশা থেকে।
মাদকাসক্তির বিভিন্ন কারণ:
মাদকাসক্তি বা ড্রাগের নেশার কারণ হিসেবে সমাজতাত্ত্বিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ নানা বিষয়ের উল্লেখ করেন। মদ্যপান ব্যতীত নানাবিধ মাদক দ্রব্যের ওপর দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ অত্যাসন্ত হয়ে পড়েছে। এর সম্ভাব্য কারণ হল–
(১) সামাজিক হতাশা;
(২) বেকারত্বের যন্ত্রণা;
(৩) দারিদ্র্যের জ্বালা;
(৪) কু-সংসর্গে আকৃষ্ট হওয়া;
(৫) হীনমন্যতা;
(৬) যথেষ্ট পরিমাণে মানসিক শক্তির অভাব;
(৭) পিতা-মাতা ও অভিভাবকের নিকট থেকে অবজ্ঞাপ্রাপ্তি;
(৮) সন্তানের প্রতি যথেষ্ট দৃষ্টিদানের অভাব;
(৯) নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব;
(১০) সিনেমা, ভিডিও ও অত্যাধুনিক জীবনচর্যার প্রভাব;
(১১) পারিবারিক ভগ্ন সম্পর্কের প্রভাব;
(১২) যৌবনের অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি।
সাময়িক আনন্দ পেতে গিয়ে অথবা জীবনযন্ত্রণা লাঘব করতে গিয়ে কত মানুষ যে আত্মধ্বংসী নেশার জালে জড়িয়ে পড়ছে তার হিসেব নেই।
আন্তর্জাতিক চক্রান্ত:
আন্তর্জাতিক চক্র কোটি কোটি ডলার খরচ করে আধুনিকতম ল্যাবরেটরিতে দক্ষ কেমিস্টের সাহায্যে তৈরি করেছে এই মাদক দ্রব্যগুলি। আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীরা অর্থের লোভে বিশ্বব্যাপী মাদক দ্রব্যের বিষব্যাবসা ফেঁদে বসেছে। অর্থের জন্য এই চক্র যে-কোনো ধরনের অসামাজিক, নৃশংস কাজ করতে প্রস্তুত। চোরা পথে এইসব চক্র বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের ড্রাগ সরবরাহ করছে। এই ব্যবসায়ের সাথে পৃথিবীর বড়ো বড়ো ধনাঢ্য ব্যক্তি, ক্ষমতাবান রাজপুরুষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিও জড়িত রয়েছে।
সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের এজেন্টরা ছড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশসমুহে যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে সর্বনাশা মাদক দ্রব্যের আত্মঘাতী নেশার বিস্তার ঘটানোর জন্য কৌশল নিয়েছে এইসব এজেন্টরা। ড্রাগের ব্যাবসা যদিও কোনো দেশে আইনসিদ্ধ নয়, কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার জোরে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চক্র ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশেও এমন চক্র ও তাদের এজেন্টদের অভাব নেই।
মাদকাসক্তি রোধে রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের ভূমিকা:
ড্রাগের ব্যাবসা ও তার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই রাষ্ট্র কর্তৃক কঠোর আইন প্রবর্তন করে তা যাতে সঠিকভাবে কার্যকরী হয় তার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। ড্রাগ ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের শুধু কঠোর শাস্তি প্রদানই নয় প্রয়োজনে দৃষ্টান্তস্বরূপ মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনের কড়াকড়ি করতে হবে এবং তার দ্বারা গোপন ব্যাবসাকেন্দ্র ধ্বংস করতে হবে। অন্যদিকে, সমাজকে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার চালাচ্ছে এর বিরুদ্ধে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে কলকাতা, মুম্বাই ও মাদ্রাজ শহরে। পরিবারের প্রধান ও অন্যান্য সদস্যদের সহানুভূতির সঙ্গে এই সমস্যার আশু সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহার-
যুবসমাজ দেশের মেরুদণ্ডস্বরূপ। সর্বনাশা নেশার হাত থেকে যদি যুবসমাজকে রক্ষা না করা যায় তবে তার পরিণাম ভয়াবহ হতে বাধ্য। তাই শুরু আমাদের রাজ্য কিংবা দেশ নয়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এর ভয়াবহ মাদক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। তারাও যথাযথ প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
সমস্ত পৃথিবী মাদকমুক্ত হয়ে উঠুক, লক্ষ-কোটি যুবক-যুবতীর আশাহত জীবনবৃক্ষে নব আশার পুষ্প প্রস্ফুটিত হোক এবং সুন্দর জীবন ফুলে ফুলে সুশোভিত হোক- আজ এই কামনা সকলের। ড্রাগ আজ কীভাবে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে তা সকলেই জানে, অথচ জেনেও এর প্রতিরোধে কিছু করা হচ্ছে না, সেটাই আশ্চর্যের। ড্রাগ-চক্র খতম না করলে ড্রাগের নেশা সমাজকে ধ্বংস করে দেবে। এ বিষয়ে এখনই সরকার ও সমাজের সচেতন হওয়া কর্তব্য।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।