Sports Questions Answer: Basketball || খেলাধুলা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর: বাস্কেটবল
খেলাধুলা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর: বাস্কেটবল
বাস্কেটবল খেলার ইতিহাস
বাস্কেটবল (BASKET BALL)
বাস্কেটবল খেলার জনক হলেন স্প্রিংফিল্ডের শারীরশিক্ষা অধিকর্তা ড. জেমস নেসমিথ । 1932 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার বাস্কেটবল ফেডারেশন গঠিত হয় । 1936 খ্রিস্টাব্দে বার্লিন (জার্মানি) অলিম্পিকে বাস্কেটবল প্রথম প্রতিযােগিতামূলক খেলা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয় । বাস্কেটবল আমেরিকার জাতীয় খেলাও বটে । 1950 খ্রিস্টাব্দে বােম্বাইতে (মুম্বাই) বাস্কেটবল ফেডারেশন অফ ইণ্ডিয়া গঠিত হয় ।
বাস্কেটবল খেলার নিয়মাবলী
1. বাস্কেটবল খেলার কোর্ট শক্ত, সমতল আয়তক্ষেত্র বিশেষ । যার দৈর্ঘ্য 28 মিটার ও প্রস্থ 15 মিটার ।
2. বাস্কেটবল কোর্টের সমস্ত লাইন সাদা ও 5 সেমি চওড়া হয় । পার্শ্বরেখা ও প্রান্তরেখা খেলার কোর্টের বাইরে অবস্থিত ।
3. কেন্দ্রীয় রেখার মাঝখানে কেন্দ্রীয় বৃত্ত টানা থাকে, যার ব্যাসার্ধ 1.80 মিটার ।
4. দুটি সেমি সার্কেল যার ব্যাসার্ধ 1.80 মিটার, বাস্কেটবল কোর্টের দুই অর্ধে অঙ্কিত থাকে । যার কেন্দ্রফ্রি থ্রো লাইনের মাঝখানে থাকে ।
5. প্রান্তরেখা থেকে 5.80 মিটার দূরে 3.60 মিটার লম্বা লাইন টানা থাকে, যাকে ফ্রি থ্রো লাইন বলে । প্রান্তরেখার মধ্যবিন্দু থেকে উভয় দিকে 3 মিটার করে মােট 6 মিটার চওড়া এবং ফ্রি থ্রো লাইনের সংযুক্ত অঞ্চলকে রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া বলে ।
6. প্রান্তরেখা ও পার্শ্বরেখা -এর সংযােগস্থলে 1.25 মিটার প্রান্তরেখার ভেতর দিকে একটি 6.25 মিটার ব্যাসার্ধের সেমি সার্কেল কাটা থাকে, যা 1.575 মিটার রেখা দ্বারা প্রান্তরেখায় সংযুক্ত থাকে । কোর্টের দুপ্রান্তের এই সেমি সার্কেলকে বাদ দিয়ে বাকি অংশকে ফ্রি পয়েন্ট ফিল্ড গােল এরিয়া বলে এবং উভয় কোর্টের এই সেমি সার্কেলের ভেতরের অংশকে টু পয়েন্ট ফিল্ড গােল বলে ।
7. প্রান্তরেখা থেকে 1 মিটার দূরে দু'দিকে দুটি পােস্ট লাগানাে থাকে । বাস্কেট বাের্ডের দৈর্ঘ্য 1.80 মিটার ও প্রস্থ 1.20 মিটার হয় । বাস্কেট বাের্ড মাটি থেকে 2.75 মিটার উঁচুতে থাকে ।
8. বাস্কেট বাের্ড কাঠ অথবা ফাইবার গ্লাসের হয় । বাের্ডের উপর (0.59 মিটার লম্বা ও 0.45 মিটার চওড়া একটি আয়তক্ষেত্র থাকে । বাস্কেট রিং উক্ত আয়তক্ষেত্রের নিচে থেকে লাগানাে থাকে । রিং -এর ভেতরের ব্যাস 45 সেমি এবং রিং -এর ভেতর থেকে বাের্ডের দূরত্ব 15 সেমি ।
9. বাস্কেটবল গােলাকার । বাইরে রাবার, চামড়া অথবা সিন্থেটিক বস্তু দ্বারা আবৃত । বলের পরিধি 74 9-78 সেমি ও ওজন 567-650 গ্রাম হয় ।
10. বাস্কেটবল দুটি দলের মধ্যে খেলা হয় এবং প্রত্যেক দলে 12 জন করে খেলােয়াড় থাকে । 5 জন করে খেলােয়াড় অংশ নেয় । খেলার মাঠে 5 জন করে খেলােয়াড় একসঙ্গে থাকতে পারে ।
11. এই খেলা 10 মিনিটের চারটি পর্যায়ে (40 মিনিট) হয় । প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায় এবং প্রতিটি পর্যায়ের মাঝে 2 মিনিটের বিরতি থাকে । অমীমাংসিত থাকলে 5 মিনিট করে অতিরিক্ত সময় খেলা চালাতে হয়, যতক্ষণ না খেলার মীমাংসা হচ্ছে ।
12. খেলােয়াড়দের খেলার পােশাকের সামনের ও পিছনের দিকে নম্বর লেখা থাকে । সামনের দিকে সংখ্যার উচ্চতা 20 সেমি ও পিছনের দিকে সংখ্যার উচ্চতা 10 সেমি হয় এবং উভয় দিকে । সংখ্যা 2 সেমি চওড়া হয় । এই খেলার খেলােয়াড়দের পােশাকে 4 থেকে 15 সংখ্যা অবধি ব্যবহার করা যায় ।
13. কোনও ফাউল হবার পরই যদি খেলা শেষের বাঁশি পড়ে যায় এবং তা যদি ফ্রি থ্রো হয়, তবে খেলার সময় শেষ হবার পরেও ফ্রি থ্রো দিয়ে খেলা শেষ করা হয় ।
14. খেলা চলাকালীন ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়ে বলে লাথি মারলে তা ফাউল বলে গণ্য করা হয় । কিন্তু অকস্মাৎ কোনও কারণে পায়ে বল লাগলে তা ফাউলের আওতায় পড়ে না ।
15. যদি কোনও খেলােয়াড় অকস্মাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজের বাস্কেটে গােল করে তবে বিপক্ষ দলকে 2 পয়েন্ট দেওয়া হয় এবং তা বিপক্ষ দলের অধিনায়ক -এর বাস্কেট বলে চিহ্নিত থাকে । কিন্তু কোনও খেলােয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে নিজ বাস্কেটে গােল করলে তা ফাউল বলে বিবেচিত হয় ।
16. দুটি চার্জ টাইম আউট প্রত্যেক দল প্রথমার্ধে পাবে এবং 3 করে টাইম আউট পাবে দ্বিতীয়ার্ধে । প্রত্যেক অতিরিক্ত সময়ের জন্য 1 টি করে টাইম আউট পাবে ।
17. প্রত্যেক খেলােয়াড় পরিবর্তন মােটামুটি 30 সেকেন্ড সময়ের মধ্যে করতে হবে । কোনও খেলােয়াড় পঞ্চম ফাউল করার পর বা কোনও কারণে বাতিল হলে তাকে দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে । অযথা দেরি করলে তা চার্জ টাইম আউট হিসেবে গণ্য হবে এবং উই আউট শেষ হয়ে গয়ে থাকলে টেকনিক্যাল ফাউল বলে তা গণ্য হবে ।
18. থ্রি সেকেন্ড রুল: কোনও খেলােয়াড় খেলা চলাকালীন বিপক্ষের রেস্ট্রিক্টেড এরিয়াতে পাম্প 3 সেকেন্ড - এর বেশি থাকতে পারবে না যখন বল তাদের আয়ত্বে ফন্ট কোর্টে থাকবে ।
19. ফাইভ সেকেন্ড রুল: কোনও খেলােয়াড় কখনওই বল হাতে নিয়ে 5 সেকেন্ডের বেশি থাকতে পারবে না ।
20. এইট সেকেন্ড রুল: কোনও দলের খেলােয়াড় অবশ্যই নিজ আয়ত্বে থাকা বল নিজ কোর্ট থেকে বিপক্ষ দলের কোর্টে 8 সেকেন্ডের মধ্যে নিয়ে যাবে ।
21. টুয়েন্টি ফোর সেকেন্ড রুল: কোনও দলের খেলােয়াড়কে অবশ্যই নিজ আয়ত্বে থাকা বলকে 24 সেকেণ্ড সময়ের মধ্যে বিপক্ষ বাস্কেটে গােল করার চেষ্টা করতে হবে ।
22. মাঠের বাউন্ডারি রেখাতে শরীরের কোনও অংশ স্পর্শ করলে তা আউট বলে বিবেচিত হবে ।
23. বাস্কেটবল খেলায় দুই ধরনের ফাউল আছে যথা—
1) পারশােনাল ফাউল
2) টেকনিক্যাল ফাউল
24. পরিচালকমণ্ডলী: বাস্কেটবল খেলায় একজন রেফারী, একজন আম্পায়ার, একজন কমিশনার, একজন স্কোরার, দুজন সহকারি স্কোরার এবং দু’জন সময়রক্ষক থাকেন ।
বাস্কেটবল খেলার নিয়ম/কলাকৌশল
দাঁড়াবার ভঙ্গী: সঠিকভাবে দাঁড়াবার জন্য সব সময়ই পা দুটোকে ছড়িয়ে বা ফাঁক করে হাঁটু ভেঙে দাঁড়াতে হবে । কোমর থেকে ওপরের শরীরটাকে বাঁকিয়ে দু'হাত দিয়ে বুকের কাছাকাছি ধরে রাখতে হবে । কনুই দুটো নিচের দিকে থাকবে ।
বল ধরা: বল এমনভাবে ধরতে হবে যাতে বলটা দখলে থাকে । বল ধরবার সময় আঙুলগুলােকে জড়িয়ে বুড়াে আঙুল দুটোকে একে অপরের সমান্তরাল রাখতে হবে । কখনওই হাতের তালু দিয়ে বল ধরা উচিত নয় ।
চেষ্ট পাস: বলটাকে দুহাত দিয়ে সহজভাবে ধরতে হবে । আঙুলগুলােকে ছড়িয়ে ও কনুই দুটোকে ভেতরের দিকে রাখতে হবে বুক সমান । উঁচুতে বলটাকে এনে সামনের দিকে ঠেলে দিতে হবে । এইভাবে খুব দ্রুত পশি । দেওয়া যায় ও পাস দেওয়াটা সঠিক বা নির্ভুল হয় ।
হুক পাস: রক্ষণকারীদের থেকে দূরে বা তাদের উপর দিয়ে বলটাকে পাস । দেবার প্রয়ােজনের সময় এভাবে পাস দেওয়াটা সুবিধাজনক । যেদিকে পাস দেওয়া হবে সেইদিকে একটা পা -কে এগিয়ে দিয়ে বলটাকে হাতের মধ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে, যে হাত দিয়ে পাস দেওয়া হবে সেটাকে নিচে ও অন্যটাকে উপরে রেখে কাঁধের লাইনের উপর তুলে সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উপরে উঠতে হবে । হাতটাকে সােজা করে বলটাকে কব্জি ও আঙুলের সাহায্যে ছাড়তে হবে ।
আন্ডারহ্যাণ্ড পাস: এইভাবে পাস দেওয়ার সময় বলটা নিচুতে ধরে দুই উরুর ফাঁকের মধ্যে রাখা হয় এবং বলটাকে পাস করার সময় একটু পেছনের দিকে এনে নিয়ে সামনে যে দিকে বল দেওয়া হবে সেদিকে নিয়ে গিয়ে কব্জির সাহায্যে ঠেলে দিতে হবে ।
বেসবল পাস: বলটাকে দুহাতে করে ডান কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে এনে বাঁ-পাকে এক পা সামনে নিয়ে বলটাকে ডান হাতের উপর নিয়ে ডান কাঁধ, কনুই ও কব্জির সাহায্যে কাধের লাইনে সামনে ঠেলে দিতে হয় । বলটাকে সামনে ঠেলে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই ডান পা-কে বাঁ পায়ের সামনে নিয়ে যেতে হবে ।
বাউন্স পাস: বলটাকে খুব জোরে মাটিতে এমনভাবে ঠেলে দিতে হবে যাতে বলটা মাটিতে পড়ার পরই লাফিয়ে নিজের দলের নির্দিষ্ট লােকের কাছে চলে । যায় । স্বাভাবিকভাবেই এই পাসটা কাছাকাছি বল দেবার ক্ষেত্রেই উপযুক্ত ।
ওভার হেড পাস: সাধারণভাবে এইভাবে পাস দেওয়া হয় যখন নিজের দলের কোনও খেলােয়াড় বাস্কেটের কাছাকাছি আছে বা দ্রুত গতিতে বাস্কেটের দিকে এগােচ্ছে তখন । বলটাকে দুহাত দিয়ে মাথার উপর ধরতে হয় । বল ধরবার সময় বুড়ো আঙুল দুটো বলের নিচের দিকে রেখে আঙুলগুলােকে ভালােভাবে ছড়িয়ে দিতে হয় ।
ড্রিবলিং: ড্রিবলিং -এর সময় বলকে আঙুলগুলাে দিয়ে ঠেলা দিতে হয় । ড্রিবলিং করার সময় শরীরটাকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে যে কোনও মা যে কোনও দিকে সহজেই এগােনাে যায় ।
স্যুটিং: বলকে সােজাসুজি বাস্কেটের মধ্য দিয়ে গলিয়ে ফেলা এক্ষেত্রে বলটা বাস্কেটের পেছনের কাঠ বা গােলটাকে স্পর্শ করবে না । বলটাকে বাস্কেটের পেছনের কাঠের ওপর ফেললে বলটা কাঠে আঘাত খেয়ে বাস্কেটের গােলের ভেতর গলে যায় ।
বাস্কেটবল বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর
১. ডঃ জেমস নাইসমিথ কোন কলেজের শারীরশিক্ষা অধিকর্তা ছিলেন ?
উত্তর: আমেরিকার ওয়াই.এম.সি.এ কলেজ ।
২. বাস্কেটবল খেলার উদ্ভাবন করেন কে ?
উত্তর: ডঃ জেমস নাইসমিথ ।
৩. বাস্কেটবল খেলার উদ্ভাবন হয় কত সালে ?
উত্তর: ১৮৯১ সালে ।
৪. ডঃ জেমস নাইসমিথকে বলা বাস্কেটবল খেলার কি বলা হয় ?
উত্তর: জনক বলা হয় ।
৫. বাস্কেটবল খেলা প্রথম কোন দেশে প্রচলিত হয় ?
উত্তর: আমেরিকা ।
৬. বাস্কেটবল কোন দেশের জাতীয় খেলা ?
উত্তর: আমেরিকা ।
৭. ভারতবর্ষে বাস্কেটবল খেলার প্রচলন হয় কত সালে ?
উত্তর: ১৯১০ সালে ।
৮. ভারতবর্ষে বাস্কেটবল খেলা কে প্রচলন করেন ?
উত্তর: ডঃ জন হেনরি গ্রে ।
৯. বাস্কেটবল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া গঠিত হয় কত সালে ?
উত্তর: ১৯৫০ সালে ।
১০. মহিলাদের জাতীয় বাস্কেটবল প্রতিযােগিতা শুরু হয় কত সালে ?
উত্তর: ১৯৫৩ সালে ।
১১. কোন পুরুষ বাস্কেটবল খেলােয়াড় প্রথম অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
উত্তর: সর্বজিৎ সিং ।
১২. কোন মহিলা বাস্কেটবল খেলােয়াড় প্রথম অর্জুন পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
উত্তর: কুমারী সুমন শর্মা ।
১৩. বাস্কেটবল প্রতিটি দলে সর্বোচ্চ কতজন খেলােয়াড় থাকেন ?
উত্তর: ১২ জন ।
১৪. বাস্কেটবল খেলার সময় মাঠে কতজন খেলােয়াড় খেলেন ?
উত্তর: ৫ জন ।
১৫. বাস্কেটবলের মাঠ কত মিটার লম্বা হয় ?
উত্তর: ২৮ মিটার ।
১৬. বাস্কেটবলের মাঠ কত মিটার চওড়া ?
উত্তর: ১৫ মিটার ।
১৭. বাস্কেটবলে যে বল দিয়ে খেলা হয় তার আকার কেমন হয় ?
উত্তর: গােলাকার ও কমলা ।
১৮. বাস্কেটবলের ওজন (পুরুষদের) কত হয় ?
উত্তর: ৫৬৭-৬৫০ গ্রাম ।
১৯. বাস্কেটবলের ওজন (মহিলাদের) কত হয় ?
উত্তর: ৫১০-৫৬৭ গ্রাম ।