Sports Questions Answer: Volleyball | খেলাধুলা বিষয়ক প্রশ্ন উত্তর: ভলিবল
ভলিবল খেলার ইতিহাস
ভলিবল খেলার রোটেশন পদ্ধতি
ভলিবল (VOLLY BALL)
1895 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় প্রথম ভলিবল খেলার প্রচলন হয় । আমেরিকার ওয়াই.এম.সি.এ. (Y. M. C. A.) সংগঠন সারা পৃথিবীতে এই খেলাটি ছড়িয়ে দেয় । 1947 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের প্যারিসে ভলিবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা “ ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল ” (Federation of Internation Volley Ball) গঠিত হয় । ওয়াই.এম.সি.এ -র প্রচেষ্টায় ভারতবর্ষে প্রথম ভলিবল খেলা শুরু হয় । 1927 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে । 1951 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ভলিবল ফেডারেশন গঠিত হয় (Volley Ball Federation of India) ।
ভলিবল খেলার মাঠ
1. ভলিবল কোর্ট: ভলিবল কোর্টের দৈর্ঘ্য 18 মিটার ও প্রস্থ 9 মিটার । কোর্টের ঠিক মাঝখানে নেটের নিচে 5 সেমি চওড়া করে একটি লাইন টেনে কোর্টকে সমান দুভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, একে সেন্টার লাইন বা মধ্যরেখা বলে ।
2. আক্রমণ অঞ্চল: মধ্যরেখার দুপাশে সমান্তরালভাবে 3 মিটার দূরে 5 সেমি চওড়া করে দুটি লাইন টানা হয় । মধ্যরেখা থেকে 3 মিটার দূরত্বের এই অঞ্চলটিকে আক্রমণ অঞ্চল বা অ্যাটাক এরিয়া বলে ।
3. বাউন্ডারী লাইন: মাঠে খেলা হলে কোর্টের চারপাশে 3 মিটার, এবং হলের ভেতরে খেলা হলে 2 মিটার জায়গা অবশ্যই খালি রাখতে হবে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পার্শ্বরেখা থেকে 6 মিটার এবং প্রান্তরেখা থেকে ৩ মিটার উন্মুক্ত রাখতে হয় । কোর্টের সব সীমারেখাই 5 সেমি চওড়া হবে ।
4. সার্ভিস এরিয়া: পার্শ্বরেখা বরাবর প্রান্তরেখার দুপাশে 20 সেমি জায়গা বাদ দিয়ে 15 সেমি রেখা টেনে সার্ভিস অঞ্চল তৈরি করা হয় । খেলােয়াড় প্রান্তরেখার বাইরে এই সার্ভিস অঞ্চলের যে কোনও স্থান থেকে সার্ভিস করতে পারবে ।
5. সার্ভিস: খেলা শুরুর আগে দু'দলের অধিনায়কের মধ্যে যে দল টসে জিতবে সেই দল সার্ভিস কিংবা কোর্টের যে কোনও সাইড বেছে নিতে পারবে ।
6. ভলিবল নেট: ভলিবল নেটের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার 50 সেমি এবং প্রস্থ 1 মিটার । নেটের উচ্চতা পুরুষদের জন্য নেটের মাঝের জমি থেকে 2 মিটার 43 সেমি উচ্চতাসম্পন্ন এবং মহিলাদের জন্য নেটের উচ্চতা হবে 2 মিটার 23 সেমি ।
7. অ্যান্টেনা: জালের দু’দিকে পার্শ্বরেখা বরাবর 1 মিটার দীর্ঘ এবং 5 সেমি চওড়া একটি পট্টির সঙ্গে খাড়াভাবে 1.80 মিটার লম্বা এবং 10 মি.মি. ব্যাসের একটি করে দণ্ড বা অ্যান্টেনা লাগানাে হবে ।
8. বল: বলের আকৃতি গােলাকার এবং হাল্কা রঙের হওয়া বাঞ্ছনীয় । ভলিবলের পরিধি 65 থেকে 67 সেমি এবং ওজন 260 থেকে 280 গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
ভলিবল খেলার নিয়ম pdf
ভলিবল খেলার নিয়মাবলী
1. দুটি দলের মধ্যে ভলিবল খেলা হয় । প্রতি দলে 12 জন করে খেলােয়াড় থাকে । মাঠে খেলার সময় ঐ খেলােয়াড়দের মধ্য থেকে 6 জনের বেশি বা 6 জনের কম খেলােয়াড় নিয়ে কখনওই খেলা শুরু করা যাবে না । খেলােয়াড়দের মধ্যে একজন দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবে । তালিকাভুক্ত ঐ 12 জন খেলােয়াড়দের মধ্য থেকে প্রতি সেটে সর্বাধকি 6 জন বা 6 বার খেলােয়াড় বদল করা যেতে পারে ।
2. খেলা শুরুর সময় সামনের সারিতে 3 জন ও পিছনের সারিতে 3 জন খেলােয়াড় দাঁড়াবে । সেট চলার সময় এই অবস্থার আর কোনওরকম পরিবর্তন চলবে না । সার্ভিস পরিবর্তন হলে টিমকে ঘড়ির কাঁটার মত সামনের সারিকে ডান দিক দিয়ে এবং পিছনের সারিকে বাঁদিক দিয়ে ঘুরে অবস্থানের পরিবর্তন করে নিতে হবে ।
3. প্রান্তরেখার বাইরে সার্ভিস অঞ্চলে দাড়িয়ে শূন্যে থাকা অবস্থায় এক হাত দিয়ে বলকে আঘাত করে সার্ভিস করতে হয় । সার্ভিস করে বিপক্ষ দলের এলাকার মধ্যে বল ফেলে খেলা শুরু করা হয় । সার্ভিস করা বল জাল স্পর্শ না করে দুই অ্যান্টেনার মধ্য দিয়ে বিপক্ষ দলের অঞ্চলে গেলে তা বিধিসম্মত বলে গণ্য হবে । প্রথম সেটে যে বল প্রথম সার্ভ করবে, তার পরের সেটে বিপক্ষ দল প্রথম সার্ভ করার সুযােগ পাবে ।
4. সাধারণত আন্তর্জাতিক খেলাগুলিতে 5 টি সেটে খেলা হয় । প্রত্যেকটি সেটের মধ্যে 3 মিনিটের বিরতি থাকে । খেলা নিষ্পত্তিকারক সেটে কোনও দলের ৪ পয়েন্ট হওয়ার পর বিরতি না দিয়ে প্রান্ত বদল করে নিতে হয় ।
5. উভয় দল প্রত্যেকটি সেটে সর্বাধিক 2 বার 30 সেকেন্ড করে “ টাইম আউট ” বা “ বিরতি নিতে পারবে । এই বিরতির সময় উভয় দলের প্রত্যেক খেলােয়াড়কে মাঠের বাইরে আসতে হবে ।
6. একটি দল সর্বাধিক তিনবার বল স্পর্শ করে বিপক্ষ দলের সীমানায় বল পাঠাতে পারবে । ব্লক করার সময় যদি বল স্পর্শ হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে এর মধ্যে ধরা হবে না ।
7. সাধারণত হাত দিয়ে বলকে খেলতে হয় । তবে কোমরের উপরের দেহের যে কোনও অংশে বল লাগাতে পারে, এটা ফাউলযােগ্য অপরাধ নয় । বলকে কখনওই হাত দিয়ে বা অন্য কোনওভাবে থামানাে চলবে না ।
8. নিজের এলাকায় থাকাকালীন কোনও বলকে তার বিপক্ষ দলের কোনও খেলােয়াড় জালের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতে পারবে না, তবে ব্লক করার সময় বিপক্ষ দলের এলাকায় হাত যেতে পারে ।
9. খেলা চলাকালীন কোনও খেলােয়াড়ের শরীরের কোনও অংশ জাল স্পর্শ করতে পারবে শুধু মাত্র আক্রমণের সময় যদি নেটের উপরের অংশ স্পর্শ হয় তাহলে স্পর্শকারীর বিপক্ষ দল । ফাউল করার সুযােগ পাবে ।
10. আক্রমণ করার সময় আক্রমণ অঞ্চলে থাকা বলকে পিছনের অঞলের কোনও খেলােয়াড় এসে স্পর্শ করে বিপক্ষ দলের এলাকায় পাঠাতে পারবে ।
11. যে দল বিপক্ষ দলের থেকে ন্যূনতম 2 পয়েন্টের ব্যবধান রেখে আগে 25 পয়েন্ট করতে পারবে সেই দল সেই সেটে বিজয়ী হবে । খেলায় যদি 24 পয়েন্ট সমান হয়ে যায় তাহলে যতক্ষণ না 2 পয়েন্টের ব্যবধান হচ্ছে ( 26-24, 27-25 এরকম ) ততক্ষণ খেলা চলতে থাকবে ।
12. সার্ভিস গ্রহণকারী দল খেলা শুরু হওয়ার পর যদি কোনও ফাউল করে থাকে তাহলে বিপক্ষ দল এক পয়েন্ট পাবে এবং সেই সঙ্গে সাইড আউট হয়ে সার্ভিস করার অধিকার লাভ করবে । আবার সার্ভিস গ্রহণকারীর বিপক্ষ দল যদি কোনও ফাউল করে থাকে তাহলে সার্ভিসকারী দল । পয়েন্ট এবং সেই সঙ্গে পুনরায় সার্ভিস গ্রহণ করার সুযােগ পাবে । ভলিবলের পয়েন্ট গােনা হয় । অনেকটা টেবিল টেনিস খেলার পয়ন্টে গােনার মত ।
13. নিস্পত্তিকারক সেটে যে দল বিপক্ষ দলের থেকে ন্যূনতম 2 পয়েন্টের ব্যবধান রেখে আগে 25 পয়েন্ট করতে পারবে সেই দল বিজয়ী হবে ।
পরিচালক:
খেলা পরিচালনা করার জন্য একজন রেফারী, একজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার এবং চারজন লাইন্সম্যান থাকবে ।
ভলিবল খেলার কৌশল
ভলিবল খেলার কলাকৌশল
পাসিং (Passing the Ball):
ভলিবল খেলার সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে সঠিকভাবে পাসিংটা আয়ত্ত করার উপর । ভলিবলে পাসিংটা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয় । বল খেলা বা বল তােলা বা বলটাকে দলের অন্য খেলােয়াড়ের উদ্দেশ্যে দেওয়া এগুলােই পাসিং । এই পাসিং -এর মধ্য দিয়েই ভলিবলের উপর দখল আনা হয় । ভলিবল খেলায় সবার আগে ভালােভাবে পাসিং শিখতে হবে । ভলিবলে পাসিং সাধারণত দুভাবে করা যায়—
(I) আপার হ্যান্ড ফরওয়ার্ড পাস (Upper hand forward pass)
(II) আণ্ডার আর্ম পাস (Underarm pass)
আপার হ্যাণ্ড ফরওয়ার্ড পাস: দু’হাত মাথার উপর দিয়ে বল খেলা বা পাস দেওয়াটা সব থেকে কার্যকরী, সহজ ও নির্ভুল । সবচেয়ে বড় কথা এভাবে খেললে বলটা নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে । এইভাবে বল পাস করতে গেলে মনে রাখতে হবে
আপার হ্যান্ড ফরওয়ার্ড পাস চিত্র
(1) বলটা সবসময় আঙুলের প্রথম গাঁট ও শেষ প্রান্তের মাঝখানের অংশটা দিয়ে স্পর্শ করতে হবে । হাতের তালু বা কড়ে আঙুলকে বল স্পর্শ করার কাজে ব্যবহার করা উচিত নয় ।
(2) সাধারণত বুড়াে আঙুল বলকে ঠেলে দেবার শক্তি জোগায় ও অন্য আঙুলগুলাে সঠিক গতিপথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে ।
(3) দুহাতের আঙুলগুলাে ছড়িয়ে হাতের কব্ধিটাকে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে খাড়া করে ধরতে
(4) দুহাতের তর্জনী ও বুড়াে আঙুলকে নিয়ে অনেকটা 'V'- এর আকার করে হাতের তালুতে খানিকটা গর্তের মতাে করতে হবে ।
(5) হাতের কনুই দুটো কাধ সমান উঁচুতে তুলে কিছুটা সামনে ও বাইরের দিকে নিয়ে কাঁধ বরাবর রাখতে হবে যাতে বলটাকে ঠিক কপালের সামনে খেলা যায়, দৃষ্টি বলের দিকে রাখতে হবে ।
(6) পা-দুটোর মধ্যে কাধ সমান দূরত্ব রেখে, পা-দুটোকে কোণাকুনি বা বাম পা-কে সামনে ও ডান পা-কে পিছনে রেখে হাঁটু দুটো ভেঙে দু'পায়ের উপর সমান ভর রেখে সামনের দিকে সামান্য ঝুকে দাড়াতে হবে ।
(7) উপরের অবস্থান থেকে আঙুলগুলাে ও হাতদুটোকে প্রসারিত করে বলটাকে সােজা সামনে । কোণাকুনি ওপরের দিকে ঠেলে দিতে হবে ।
আণ্ডার আর্ম পাস: যখন বলটা কোমরের সমান বা তার নিচে দিয়ে আসছে, সেটা পাশের দিকেই হােক বা সামনের দিকেই হােক — তখন হাত দুটোকে কনুই বা কাঁধের নিচে এনে বল পাস দেওয়া হয় । এভাবে পাস দেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে
আণ্ডার আর্ম পাস চিত্র
(1) বুড়াে আঙুল বাদে অন্য আঙুলগুলাে দিয়ে দু'হাতের আঙুলগুলােকে জড়িয়ে ধরে তার উপর বুড়াে আঙুল দুটোকে একসঙ্গে করে পাশাপাশি রাখতে হবে ।
(2) কনুই দুটোকে ভেতরের দিকে নিয়ে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে কনুই থেকে কজি পর্যন্ত হাতের অংশটা পাশাপাশি থাকে ।
(3) দুটো পায়ের হাঁটু ভেঙে একটা পা সামনে নিয়ে হাত দুটোকে উপরের চিত্রের মতাে করে, হাঁটু ভেঙে ও কোমর নিচু করে বলের নিচে ও পেছনে শরীরটাকে নিয়ে যেতে হবে ।
(4) অনেক সময় বলটা খুব কঠিন জায়গায় পড়লে এক হাতে বলটা তােলা অনেক সময়ই সুবিধাজনক হয় । এর জন্য বুড়াে আঙুলকে তর্জনীর পাশে রেখে আঙুলগুলাে বন্ধ করে মুঠি করতে হয় ।
(5) এক হাতে বল তােলার জন্য হাতের আঙুল ও তালুর গােড়া দিয়ে বলের ঠিক পিছনে আঘাত করতে হবে । দৃষ্টি বলের দিকে রাখতে হবে ।
সার্ভিস (Service):
ভলিবল খেলা শুরু হয় সার্ভিস করে । আবার পয়েন্ট পাবার পরও সার্ভিস করতে হয় । সার্ভিস বলতে বােঝায় বলকে হাত বা হাতের তালুর গােড়া দিয়ে আঘাত করে অপর দলের কোর্টে পাঠানাে । সাধারণভাবে সার্ভিসকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায় -
(1) কাধের নিচে হাত এনে সার্ভিস (Under arm Service)
(2) টেনিস সার্ভিস (Tennis Service)
(3) ভাসানাে সার্ভিস (Floating Service)
(4) হাত পাশে নিয়ে পাক দিয়ে সার্ভিস (Side armspin Service)
(5) হাত ঘুরিয়ে সার্ভিস করা (Round arm Service)
ভলিবলে সার্ভিস করার চিত্র
এদের মধ্যে অন্যতম হল— (a) আণ্ডার আর্ম সার্ভিস (b) টেনিস সার্ভিস (c) ভাসানাে সার্ভিস
আণ্ডার আর্ম সার্ভিস: এই সার্ভিসে শারীরিক পরিশ্রম সবথেকে কম হয় তাই খেলার সময় খেলােয়াড়েরা যখন খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তারা এই সহজ সার্ভিসটা করাই বেছে নেয় । এইভাবে সার্ভিস করার সময় মনে রাখতে হবে-
(1) মাঠের প্রান্ত রেখার বাইরে ডানদিকে পা-দুটিকে আড়াআড়িভাবে বা সামনে পিছনে রেখে কাধ সমান ফাক করে দাঁড়াতে হবে ।
(2) বলটাকে যদি ডান হাত দিয়ে আঘাত করা হয় তাহলে বাঁ পা-কে সামনে রেখে দেহের ওজনটাকে পিছনের পায়ের উপরে রাখতে হবে ।
(3) হাঁটু দুটোকে সামান্য ভেঙে উপরের শরীরটাকে পাছা থেকে সামনের দিকে ঝোঁকাতে হবে ।
(4) বাঁ হাতে বল নিয়ে কোমরের সমান উঁচুতে বলটাকে ধরতে হবে ।
(5) ডান হাতকে মােটামুটি সােজা রেখে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে হবে ।
(6) ডান হাতকে দুলিয়ে সামনে এনে হাতের তালুর গােড়া দিয়ে বলটাকে জোরে আঘাত করতে হবে ।
(7) আঘাত করার ঠিক আগের মুহূর্তে বাঁ হাত দিয়ে বলটাকে উপরে ও কিছুটা সামনের দিকে তুলে দিতে হবে ।
টেনিস সার্ভিস: আণ্ডার আর্ম সার্ভিসের তুলনায় এই সার্ভিস একটু কঠিন । কিন্তু এইভাবে সার্ভিস করলে বল দ্রুতগতিতে ও বেশ জোরে এবং নির্ভুলভাবে বিপক্ষ দলের কোর্টে গিয়ে পড়ে । এবং এইভাবে সার্ভিস করা বল তােলা বা খেলা খুব শক্ত বা কষ্টকর হয়ে পড়ে । এই সার্ভিস করার সময় মনে রাখতে হবে -
ভলিবলে টেনিস সার্ভিস করার চিত্র
(1) মাঠের প্রান্তরেখার বাইরে ডানদিকে পা-দুটোকে আড়াআড়ি করে দু'পায়ের উপর সমান ভর রেখে দাঁড়াতে হবে ।
(2) ডান হাত দিয়ে বলকে আঘাত করা হবে । বাঁ পা-কে সামনের দিকে এগিয়ে রাখতে হবে ।
(3) সামনের দিকে 30 সেমি দূরে বলটাকে বা হাতে ধরে ডান দিকে নিয়ে আসতে হবে ।
(4) হাঁটু দুটোকে সামান্য ভেঙে বলটাকে ডানদিকে মাথার উপর 1/2 থেকে । মিটার উঁচুতে বা হাত দিয়ে ছুঁড়ে দিতে হবে ।
(5) বলটা উপর থেকে নিচে নামার সাথে সাথেই হাতের তালু দিয়ে বলটাকে আঘাত করতে হবে । বলকে আঘাত করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত শরীরটাকে কোমর পর্যন্ত ভেঙে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে পারলে ভালাে হয় ।
(6) আঘাত করার মুহূর্তে শরীরের ওজন পিছনের পা থেকে সামনের পায়ে নিয়ে আসতে হবে । এবং এই গতির সাহায্যেই খেলার মাঠের মধ্যে চলে আসতে হবে ।
ভাসানাে সার্ভিস: হাতকে কনুই বা কাধের নিচে এনে পাস দেওয়ার কৌশলটা আয়ত্ব হওয়ার পর থেকেই সার্ভিস তােলাটা অনেক সহজ ব্যাপার হয়ে পড়ে । ভাসানাে সার্ভিসে বলটা বিপক্ষের কোর্টে ভাসতে ভাসতে খেলােয়াড়ের বুক বা মুখের সামনে হঠাৎ নিচে নেমে পড়ে । মনে রাখতে হবে-
ভলিবলে ভাসানাে সার্ভিস চিত্র
(1) নেটের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পা দুটোকে আড়াআড়িভাবে রেখে কাঁধ সমান ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে ।
(2) বলটাকে বাঁ হাতে বা দু'হাতে ধরে ডানদিকে মাথার উপর ছেড়ে দিতে হবে বা ছুঁড়ে দিতে হবে ।
(3) বলটাকে আঘাত করার সময় হাত খােলা রাখতে হবে । যতটা সম্ভব কনুইকে শক্ত করে কাধের সন্ধির থেকে হাতের গতি এনে তালুর শক্ত অংশ দিয়ে বলের মাঝ ও নিচ বরাবর আঘাত করতে হবে ।
(4) বলে আঘাত করার সময় দেহের ওজন পিছনের পা থেকে সামনের পায়ে আনতে হবে ।
বলে চাপ মারা (Spiking): বলে জোরে আঘাত করে বিপক্ষের কোর্টে বলটাকে ফেলা সবথেকে কঠিন কাজ এবং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশল । কারণ বল ও খেলােয়াড় দুজনকেই মাটির উপর হাওয়াতে থাকতে হবে । বলে চাপ মারার সময় মনে রাখতে হবে—
ভলিবলে বলে চাপ মারা চিত্র
(1) যেখানে লাফিয়ে উঠে বল মারতে হবে সেইখান থেকে সাধারণত 2 মিটার দূরে থাকতে হবে ।
(2) দুই থেকে তিন পা দৌড়ে এসে এমনভাবে লাফিয়ে উঠতে হবে যেন ঠিক বলের পেছনে থাকা যায় ।
(3) হাত দুলিয়ে সােজা এমনভাবে উপরে উঠতে হবে যাতে হাতটাকে উপরের দিকে নিয়ে বলটাকে আঘাত করা যায়। শরীরের উপরের অংশটাকে ভেঙে পিছনের দিকে বাকিয়ে । নিতে হবে যাতে বেশি শক্তি পাওয়া যায় ।
(4) আঘাত করার পর ঠিক সেই জয়াগাতেই মাটিতে নেমে আসতে হবে । নামার সময় হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতাকে প্রথম মাটি স্পর্শ করাতে হবে ।
(5) সাধারণত খােলা হাতেই বলটা মারা ভালাে, এইভাবে মারার জন্য আঙুলগুলাে খােলা রাখতে
(6) আবার কব্জির সাহায্য নিয়ে বলকে ডান বা বাঁদিকে মারা বা ফেলে দেওয়া যেতে পারে ।
বলকে বাধা দেওয়া (Blocking): এটা হল একটি আত্মরক্ষামূলক কৌশল । তাই অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে যখন বিপক্ষ দল বলটা মারছে তখনই বলকে মারতে বাধা না দিলে বল তােলা অসম্ভব হয়ে পড়বে । বাধা দেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে-
ভলিবলে বলকে বাধা দেওয়া চিত্র
(1) টাইমিং বিশেষ জরুরী । যখনই বিপক্ষ দলের কেউ বলকে চাপ মারার জন্য উপরে উঠছে ঠিক ঐ সময়ই বাধা দেওয়ার জন্য লাফ দিয়ে উপরে উঠতে হবে ।
(2) জোড়া পায়ে লাফিয়ে উপরে উঠতে হবে । পা দুটোকে বেশি ছড়ালে চলবে না, কারণ যারা লাফ দেওয়ার জন্য পাশাপাশি উপরে উঠবে তারা বিপক্ষ দলের খেলােয়াড়দের স্পর্শে আসতে পারে ও নিজেদেরও অসুবিধের সৃষ্টি করতে পারে ।
(3) উপরে লাফিয়ে উঠে কজিটাকে নেটের উপর রেখে ও কজি থেকে হাতটিকে ভেঙে শক্ত দেওয়ালের মতাে তৈরি করতে হবে যাতে বলটা হাতে লেগেই বিপক্ষের কোর্টের দিকে ফিরে যায় ।
(4) যখন কয়েকজন মিলে ব্লকিং করা হবে তখন সবাইকেই পাশাপাশি দাড়িয়ে একসাথে লাফিয়ে উপরে উঠতে হবে এবং নামার সময় নামাটা যেন যেখান থেকে ওঠা হয়েছে সেখানেই হয় ।
ভলিবল খেলা বিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর
১. ভলিবলের জন্ম কোন দেশে হয়েছিল ?
উত্তর : আমেরিকায় ।
২. ভলিবলের জন্ম কত সালে ?
উত্তর : ১৮৯৫ সালে ।
৩. ভলিবলের জন্ম আমেরিকার কোথায় হয়েছিল ?
উত্তর : ম্যাসাচুসেটসের হলিহকে ।
৪. উইলিয়াম জি. মর্গান কোন খেলা দেখতে দেখতে ভলিবলের কথা ভেবেছিলেন ?
উত্তর : বাস্কেটবল ।
৫. সর্বপ্রথম ভলিবল খেলার নাম দেওয়া হয়েছিল ?
উত্তর : মিনােটোনেট ।
৬. প্রথম প্রথম কি দিয়ে ভলিবল খেলা হত ?
উত্তর : রবারের ব্লাড়ার দিয়ে ।
৭. ভলিবল খেলার নতুন আইন তৈরি হয়েছিল কত সালে ?
উত্তর : ১৯১৬ সালে ।
৮. ভলিবলের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল ’ কত সালে গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর : ১৯৪৭ সালে ।
৯. প্রথম পুরুষদের বিশ্ব ভলিবল প্রতিযােগিতা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তর : চেকোস্লোভাকিয়ায় ।
১০. প্রথম মহিলাদের বিশ্ব ভলিবল প্রতিযােগিতা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তর : মস্কোতে ।
১১. কত সালে ভারতীয় ভলিবল ফেডারেশন আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশনের স্বীকৃতি পেয়েছিল ?
উত্তর : ১৯৫২ সালে ।
১২. দ্বিতীয় বিশ্ব ভলিবল প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণকারী বাঙালি খেলােয়াড় কে ছিলেন ?
উত্তর : সুনীল চ্যাটার্জী ।
১৩. কোন অলিম্পিক গেমসে প্রথম পুরুষ ও মহিলাদের ভলিবলকে প্রতিযােগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ?
উত্তর : টোকিয়াে অলিম্পিক গেমস -এ ।
১৪. কোন চিত্রাভিনেত্রী ভলিবল খেলায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন ?
উত্তর : মিনাক্ষী গােস্বামী ।
১৫. কত সালে প্রথম পুরুষ ও মহিলাদের ভলিবলকে প্রতিযােগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ?
উত্তর : ১৯৬৪ সালে ।
১৬. ভারতে ভলিবল খেলা প্রথম কে প্রচলন করেন ?
উত্তর : ওয়াই.এম.সি.এ . ।
১৭. ওয়াই.এম.সি.এ . -র প্রচেষ্টায় ভারতবর্ষের কোন রাজ্যে প্রথম ভলিবল খেলা শুরু হয় ?
উত্তর : পশ্চিমবাংলায় ।
১৮. শ্রী. এ. পালনীস্বামী কোন খেলার জন্য অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন ?
উত্তর : ভলিবল ।
১৯. শ্রীমতী জি. মুলিনী রেড্ডী কোন খেলার জন্য অর্জুন পুরস্কার পান ?
উত্তর : ভলিবল খেলার জন্য ।
২০. বেঙ্গাল ভলিবল অ্যাসােসিয়েশন কত সালে গঠিত হয় ?
উত্তর : ১৯৩৫ সালে ।
২১. পশ্চিমবঙ্গে প্রতিযােগিতামূলক ভলিবল খেলার প্রচলন করেছিলেন কারা ?
উত্তর : বাগবাজার জিমন্যাসিয়াম ক্লাব ।
২২. বেঙ্গাল ভলিবল অ্যাসােসিয়েশন গঠিত হয়েছিল কাদের উদ্যোগে ?
উত্তর : বাজবাজার জিমন্যাসিয়াম ক্লাব ।
২৩. পশ্চিমবাংলার গ্রাম-গঞ্জে ভলিবলকে কে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ?
উত্তর : শিবপ্রসাদ ঘােষাল ও ফণী ভট্টাচার্য ।
২৪. ভলিবলে খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য কত হয় ?
উত্তর : ১৮ মিটার ।
২৫. ভলিবল খেলার মাঠের প্রস্থ কত হয় ?
উত্তর : ৯ মিটার ।
২৬. ভলিবল মাঠের ওপরের দিকে কতটা জায়গা ফাকা রাখতে হয় ?
উত্তর : ৩ মিটার ।
২৭. ভলিবল মাঠের চারপাশে কমপক্ষে কতটা জাগয়া মুক্ত রাখতে হবে ?
উত্তর : ৩ মিটার ।
২৮. কোর্টে পিছনে ডানদিকের কোণে ১৫ সেন্টিমিটার দুটি লাইন থাকে তাকে কি বলে ?
উত্তর : সার্ভিস লাইন ।
২৯. ভলিবলের জালের বা নেটের দৈর্ঘ্য কত হবে ?
উত্তর : ৯.৫০ মিটার ।
৩০. ভলিবলের জালের বা নেটের প্রস্থ কত হবে ?
উত্তর : ১ মিটার ।
৩১. ভলিবলের জালের ফাঁকগুলাে কত হবে ?
উত্তর : ১০ বর্গসেন্টিমিটার ।
৩২. ভলিবলের জাল বাধার পােস্ট লাইন থেকে কত দূরে থাকবে ?
উত্তর : ৫০ সেন্টিমিটার দূরে ।
৩৩. পুরুষদের জন্য ভলিবলের জাল মাটি কত উচ্চতায় থাকবে ?
উত্তর : ২.৪৩ সেন্টিমিটার ।
৩৪. মহিলাদের জন্য ভলিবলের জাল মাটি কত উচ্চতায় থাকবে ?
উত্তর : ২.২৪ সেন্টিমিটার ।
৩৫. ভলিবলের খেলায় কতজন খেলােয়াড় খেলতে পারে ?
উত্তর : প্রতি দলে ৬ জন ।
৩৬. আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে ভলিবল খেলার জয়-পরাজয় নিষ্পত্তি হয় কটি সেটে ?
উত্তর : ৩ বা ৫ টি সেটে ।
৩৭. ভলিবলের ওজন কত হবে ?
উত্তর : ২৬০-২৮০ গ্রাম ।
আরও পড়ুন-