শারীরশিক্ষা সম্পর্কে ধারণা || শারীরশিক্ষার সংজ্ঞা || শারীর শিক্ষা কাকে বলে|| Definition of Physical Education
শারীরশিক্ষা সম্পর্কে ধারণা
শারীর শিক্ষা কাকে বলে:
শারীরিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা সমগ্র ব্যক্তি সত্ত্বার উন্নতি ঘটায় তাকেই শারীরশিক্ষা বলে। শিক্ষার লক্ষ্যই শারীরশিক্ষার লক্ষ্য। কিন্তু মানবসভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটেছে, তাই শারীরশিক্ষারও পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন শারীরশিক্ষাবিদদের দেওয়া।
শারীর শিক্ষার সংজ্ঞাগুলি হল-
জে. আর. শারমন: শারীরশিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে শারমান যথার্থ বলেছেন যে- “ শারীরশিক্ষা হল শিক্ষার সেই অংশ যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সংগঠিত হয় এবং যার ফলে ব্যক্তির আচরণবিধি গড়ে ওঠে।”
জে. পি. থমাস: থমাসের মতে, “ শারীরশিক্ষা সাধারণ শিক্ষার অঙ্গ যা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে একটি শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও তার দেহ, মন ও আত্মার পূর্ণতা ঘটায়।”
জে. বি. ন্যাশ: ন্যাশের মতে, “ শারীরশিক্ষা সম্পূর্ণ শিক্ষার একটি অংশ বিশেষ যা বৃহৎ পেশীগুলির গতিবিধির সাথে জড়িত।”
জে. এফ. উইলিয়াম: উইলিয়ামস- এর মতানুযায়ী, “উদ্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত, মানুষের সুনির্বাচিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সমষ্টিই হল শারীরশিক্ষা।”
সি. এ. বিউচার: বিউচার শারীরশিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “ শারীরশিক্ষা সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গা এবং এর প্রচেষ্টাই হচ্ছে বিশেষভাবে নির্বাচন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ব্যক্তিকে শারীরিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক ও সামাজিক দিক দিয়ে উপযুক্ত নাগরিক করে তােলা।”
শারীরশিক্ষার লক্ষ্য: লক্ষ্য হল, একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। বুকওয়ালটারের মতানুযায়ী শারীরশিক্ষার লক্ষ্য হল- “ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিকের চূড়ান্ত উন্নতি যা ব্যক্তির সু-সংগঠিত নির্দেশনা ও সমগ্র দৈহিক ক্রীড়া, ছন্দোবদ্ধ ও জিমন্যাস্টিক্স কার্যকলাপে সামাজিক ও স্বাস্থ্যকর স্তরে অংশগ্রহণের দ্বারা সূচিত হয়।”
শারীর শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি কি কি
শারীরশিক্ষার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্দেশ্যগুলির পর্যালােচনা করলে চারটি প্রধান উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে-
(1) শারীরিক বিকাশের উদ্দেশ্য: শারীরশিক্ষার কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি প্রাণবন্ত হয়, দক্ষতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং তার শারীরিক যন্ত্র ও তন্ত্রসমূহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে সে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে।
(2) গতিসঞ্চালক বিকাশের উদ্দেশ্য: গতিসঞ্চালক বিকাশের উদ্দেশ্য হল- শারীরশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দ্বারা শারীরিক সচেতনতার বিকাশ, কম শক্তি ব্যয় করে প্রয়ােজনীয় অঙ্গসঞ্চালন, দক্ষ, ত্রুটিহীন এবং শৈল্পিক অঙ্গসন্তানকে সূচিত করে।
(3) মানসিক বিকাশের উদ্দেশ্য: মানসিক বিকাশের উদ্দেশ্য বলতে বােঝায়- শারীরশিক্ষার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দ্বারা প্রাক্ষোভিক বিকাশ, ব্যবহারিক আচরণের উন্নতি, জ্ঞানের প্রসারণ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, কু-অভ্যাস ত্যাগ, সহযােগিতার মনােভাব গঠনসহ বিভিন্ন মানবিক গুণের বিকাশের দ্বারা ব্যবহারিক পরিবর্তন।
(4) সামাজিক বিকাশের উদ্দেশ্য: সামাজিক বিকাশের উদ্দেশ্য হল, ব্যক্তির ব্যক্তিগত বােঝাপড়া, দলগত বােঝাপড়া, সমাজের সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। শারীরশিক্ষা কার্যক্রমের দ্বারা ব্যক্তি সর্বোৎকৃষ্ট সামাজিক গুণের বিকাশ সুনিশ্চিত করে এবং ব্যক্তিকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে।
শারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি:
দেহকে সুস্থ, সবল ও কর্মঠ রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও শারীরশিক্ষার বিশেষ প্রয়ােজন।
যথা-
1. শারীরশিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সময়মতাে খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, ঘুম, ব্যায়াম ইত্যাদি সু-অভ্যাসগুলি গড়ে ওঠে, যা প্রতিটি ব্যক্তি জীবনে একান্ত প্রয়ােজন।
2. শারীরিক বিভিন্ন কর্মসূচীতে যােগদানের মাধ্যমে শিশুর সহানুভূতি, সৌজন্যবােধ, ভ্রাতৃত্ববােধ, সহমর্মিতা, মূল্যবােধ ইত্যাদি নাগরিক গুণগুলি জাগ্রত হয়। যা ব্যক্তিত্ব বিকাশের এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়তা করে।
3. ব্যক্তির চারিত্রিক গুণগুলির বিকাশের জন্য শারীরশিক্ষার প্রয়ােজন। শারীরিক কার্যাবলীর মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতা, আত্মসংযম, সততা, আত্মবিশ্বাস প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটে।
4. শারীরবৃত্তীয়, নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, পুষ্টি-খাদ্য, প্রাথমিক চিকিৎসা, মাদক দ্রব্যের কুফল প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পারে, যা ব্যক্তি জীবনে খুবই প্রয়ােজন।
5. জাতীয় সংহতি সৃষ্টিতে শারীরশিক্ষার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শারীরশিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচী সম্পাদনের মাধ্যমে জাতীয় সংহতি রক্ষা করা সহজ হয়।
আরও পড়ুন-