শিবাজীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মারাঠাদের উত্থান || Rise Of Marathas Political Force The Leadership Of Shivaji pdf
শিবাজীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মারাঠাদের উত্থান |
শিবাজীর উথান
প্রশ্ন । শিবাজীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মারাঠাদের উত্থানের বিবরণ দাও । (Give account of the rise of the Marathas as a Political Power under Shivaji.)
উত্তর ।
শিবাজীর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে মারাঠাশক্তির অভ্যুত্থান ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি বিশেষ গুরুত্বপর্ণ ঘটনা । গ্রান্ড ডাফ মারাঠাদের উত্থানকে ' দাবানলের মতাে আকস্মিক ও স্বল্পস্থায়ী 'একটি ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন । কিন্তু অন্যান্য বহু ঐতিহাসিক মারাঠাশক্তির অভ্যুত্থানের মধ্যে একটি পারম্পর্য, ধারাবাহিকতা ও উদ্দেশ্য লক্ষ্য করেছেন । জি. এস সরদেশাই -এর মতে, ভারতব্যাপী হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপন করাই ছিল শিবাজীর চূড়ান্ত লক্ষ্য । তা ছাড়া শিবাজীর বহু পূর্বেই মারাঠাজাতির জাগরণ শুরু হয়েছিল । শিবাজী সেই জাগরণকে পূর্ণতা দিতে সচেষ্টা হয়েছিলেন ।
𐇙 প্রভাব- সমকালীন পরিস্থিতি ও আর্থসামাজিক প্রভাব শিবাজীর উত্থান ত্বরান্বিত করেছিল ।
প্রথমত, মুঘল সাম্রাজ্যের ভাঙনের ফলে বহু মারাঠা মুঘল সেনাবাহিনী থেকে কর্মচ্যুত হয়েছিল । মুঘল প্রশাসনের উপর ক্ষুব্ধ এই মারাঠা জনশক্তিকে শিবাজী ঐক্যবদ্ধ করে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করতে পারেন ।
দ্বিতীয়ত, মারাঠা জাতির কোনাে রাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য ছিল না, সামরিক দক্ষতা সত্ত্বেও এরা ছিল বিছিন্ন, বিক্ষিপ্ত । শিবাজীর নেতৃত্ব এদের মধ্যে রাজতন্ত্রের আশা জাগরিত করে । তাই মারাঠা জাতি খুব সহজেই শিবাজীর আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয় ।
তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক ও ভৌগােলিক প্রভাব মারাঠাজাতির অভ্যুত্থানকে প্রভাবিত করেছিল । মহারাষ্ট্র ছিল পর্বতবেষ্টিত দেশ । উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত সহায়দ্রি পর্বতমালা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতমালা মহারাষ্ট্রকে এক স্বাতন্ত্র দান করেছে ।
ভূমির অনুর্বরতা ও বারিপাতের স্বল্পতা মারাঠাদের করেছে পরিশ্রমী, কষ্টসহিষ্ণু ও সংগ্রামী । সেইসঙ্গে সামাজিক সাম্য তাদের করেছে ঐক্যবদ্ধ । চতুর্থত, রামদাস, তুকারাম, বামন-পণ্ডিত প্রভৃতি ধর্মগুরুর ঐক্যের বাণী ও মারাঠা সাহিত্য এবং ‘পােবড়া’ নামক বীরগাথা মারাঠাদের অতীত ঐতিহ্য প্রচার করে মারাঠাদের মনে জাতীয় ঐক্যের প্রেরণা জাগিয়ে তুলেছিল । অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মারাঠাজাতি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরেছিল ।
শিবাজী তার অনন্য সাংগঠনিক প্রতিভার দ্বারা সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মারাঠা-ঐক্যের কাজকে বাস্তবায়িত করেন ।
𐇙 রাজনৈতিক উত্থান- শিবাজী রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্যায়ে বিজাপুর সুলতানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে নিজের শক্তিকে সুদৃঢ় করেন । বিজাপুর সুলতানের দুর্বলতার সুযােগে শিবাজী তােরনা ’ দুর্গটি দখল করেন (১৬৪৭ খ্রিঃ) । রাজগড়, প্রতাপগড় ও রায়গড়ে তিনি একাধিক দুর্গও নির্মাণ করেন । শিবাজীকে শায়েস্তা করার জন্য বিজাপুর সুলতান তার পিতা শাহজীকে বন্দি করেন । শেষ পর্যন্ত শিবাজী তিনটি দুর্গ প্রত্যর্পণ করেন ও ভবিষ্যতে দুর্গ দখল করবেন না- এই প্রতিশ্রুতি দিলে শাহজী মুক্তি পান । পরবর্তী কয়েক বছর শিবাজী দুর্গজয়ের পরিবর্তে নিজ-শক্তিবৃদ্ধিতে আত্মনিয়ােগ করেন ।
১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে শিবাজী চন্দ্ররাও মােরে নামক এক ক্ষমতাশালী জমিদারকে হত্যা করে জাবলী বা সাতারা দখল করেন । এর ফলে মােরে পরিবারের সঞ্চিত বহু ধনসম্পদ শিবাজীর হস্তগত হয় । এ ছাড়া জাবলীর বিরাটসংখ্যক মাওলী সেনাবাহিনীও শিবাজীর হস্তগত হয় । এই সময়ে বিজাপুরের সুলতানের মৃত্যুজনিত বিশৃঙ্খলার সুযােগে শাহজাদা ঔরঙ্গজেব বিজাপুর আক্রমণ করেন । ফলে শিবাজীর সাথে মুঘলের প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় ।
কিন্তু শীঘ্রই ঔরঙ্গজেব সিংহাসন দখলের জন্য আগ্রা ফিরে গেলে শিবাজীর সামনে সুর্বণসুযােগ আসে । তিনি আহম্মদ নগরে মুঘল-অধিকৃত গ্রাম ও দুর্গগুলি লুঠ করতে শুরু করেন ।
𐇙 আফজল খাঁ হত্যা - ইতিমধ্যে বিজাপুরের সাথে মুঘলদের এক সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছে । এবারে বিজাপুরের সুলতান শিবাজীকে দমন করার জন্য বিখ্যাত সেনাপতি আফজল খাঁ’কে নির্দেশ দেন (১৬৫৯ খ্রিঃ) । আফজল খাঁ দম্ভভরে বলেছিলেন, তিনি ঘােড়া ছুটিয়ে যাবেন এবং ঘােড়া থেকে না-নেমেই শিবাজীকে বন্দি করে ফিরে আসবেন । অবশ্য ফিরতে তাকে আর হয়নি । যাই হােক, আফজল খাঁ শিবাজীর অনেক গুলি দুর্গ দখল করতে সক্ষম হন ।
কিন্তু ' পার্বত মূষিক ' শিবাজী গেরিলা-পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন । এই অবস্থায় চক্রান্ত করে তিনি শিবাজীকে হত্যা করতে সচেষ্ট হন । এই উদ্দেশ্যে কৃষ্ণাজী ভাস্কর নামক এক পণ্ডিতকে দূতরূপে শিবাজীর কাছে পাঠান । উদ্দেশ্য ছিল শিবাজী আলােচনার জন্য এলেই তাকে অতর্কিতে আক্রমণ করা হবে । চতুর শিবাজী পূর্বাহেই এই চক্রান্তের কথা অনুধাবন করতে পারেন, এবং আফজল খাঁ আক্রমণের পূর্বেই শিবাজী ' বাঘনখ ' ও ‘ বিছুয়া ’ নামক ছুরি দ্বারা আফজলকে হত্যা করেন ।
অতঃপর বিজাপুর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে । শিবাজী কোলাপুর ও উত্তর-কোঙ্কন দখল করেন । শেষ পর্যন্ত বিজাপুর সুলতান শিবাজীর সাথে সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন (১৬৬২ খ্রিঃ) ।
𐇙 মুঘলের সাথে সংঘাত- এদিকে দিল্লিতে উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত যুদ্ধ চলতে থাকার ফলে মুঘল-শক্তি শিবাজীর, ব্যাপারে নিস্পৃহ ছিল । ১৬৫৯ খ্রিঃ নিজেকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করার পর ঔরঙ্গজেব শিবাজীর অগ্রগতি রুখতে নতুন উদ্যোগ নেন । এজন্য তিনি মাতুল শায়েস্তা খা’কে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত করেন (১৬৬০ খ্রিঃ) । চতুর শিবাজী মুঘলবাহিনীর সাথে প্রকাশ্য-সংঘর্ষে লিপ্ত না- হয়ে অতর্কিত আক্রমণ দ্বারা তাদের নাজেহাল করতে থাকেন ।
এমনকি এক আক্রমণকালে শায়েস্তা খা’র পুত্র শিবাজীর হাতে নিহত হন এবং শায়েস্তা খাঁ’র একটা আঙুল কাটা পড়ে । শায়েস্তা খাঁ'র ক্রম ব্যর্থতায় মুঘলবাহিনীর মনােবল নষ্ট হতে থাকে । তাই ঔরঙ্গজেব শায়েস্তা খাঁর পরিবর্তে নিজপুত্র মুয়াজ্জমকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত করেন । সহকারী সুবাদার নিযুক্ত হলেন রাজপুত বীর জয়ংসিহ । এই বদলির সুযােগে শিবাজী মুঘলের সুরাট বন্দরটি লুণ্ঠন করে (১৬৬৪ খ্রিঃ) প্রচুর ধনরত্ন লাভ করেন ।
সুরাটের বিত্তশালী বণিকেরাও শিবাজীকে প্রচুর অর্থ দিতে বাধ্য হন । ইউরােপীয় কুঠিগুলি কামান দেগে নিজেদের রক্ষা করেন ।
𐇙 পুরন্দরের সন্ধি- জয়সিংহ ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও সাহসী সেনাপতি । তিনি বুঝতে পারেন, শিবাজী সাধারণ যােদ্ধা নন । তাই তিনি কূটকৌশলে শিবাজীকে দুর্বল করতে চেষ্টা করেন । প্রথমে তিনি বিজাপুর রাজ্যকে শিবাজীর পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন । জায়গিরের লােভ দেখিয়ে কোনাে কোনাে মারাঠা সর্দারকেও মুঘলদের পক্ষে টেনে আনেন । অতঃপর পুরন্দর দুর্গে কামান অভিযান চালিয়ে শিবাজীকে পরাস্ত করেন । শিবাজী ‘ পুরন্দরের সন্ধি ’ " স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন ।
সন্ধির শর্তানুযায়ী শিবাজী ২৩ টি দুর্গ মুঘলদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন এবং আগ্রায় যেতে সম্মত হলেন । জয়সিংহের চেষ্টায় তখন মারাঠা-মুঘল মিত্রতার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল । কিন্তু ঔরঙ্গজেবের মুখতায় তা ব্যর্থ হয়ে যায় । শিবাজী আগ্রা-দরবারে এলে ঔরঙ্গজেব তার প্রতি অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেন এবং শিবাজী ও তার পুত্র শম্ভুজীকে কারারুদ্ধ করেন । কিন্তু শিবাজী কৌশলে পুত্র শম্ভুজীকে নিয়ে আগ্রা থেকে মহারাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন । স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর কিছুদিন তিনি চুপচাপ থাকেন ।
𐇙 শিবাজীর অভিষেক- এদিকে মুঘল-শক্তি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে আফগান সমস্যায় বিব্রত হয়ে পড়ার ফলে শিবাজীর বিরুদ্ধে কোনাে ব্যবস্থা নিতে অক্ষম হন । শিবাজীও ' পুরন্দর-সন্ধি ' দ্বারা মুঘলকে ছেড়ে দেওয়া স্থানগুলি পুনর্দখল করতে থাকেন । অতঃপর ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে রায়গড় দুর্গে শিবাজীর অভিষেকক্রিয়া সম্পন্ন হয় । তিনি ‘ ছত্রপতি ’ উপাধি গ্রহণ করেন ।
𐇙 মৃত্যু- রাজ্যভিষেকের পর শিবাজী মাত্র ছয় বছর বেঁচেছিলেন । এই সময়ে তিনি বিজাপুর ও গােলকুণ্ডার বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে লিপ্ত হন । জিঞ্জি, ভেলাের ও মহীশুরের বৃহদংশ তিনি অধিকার করতে সক্ষম হন । ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে তার দেহান্তর ঘটে । মৃত্যুকালে শিবাজীর রাজ্য উত্তরে সুরাট থেকে দক্ষিণে কানাড়া পর্যন্ত এবং পূর্বে বাগলানা থেকে পশ্চিমে আরবসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । এ ছাড়া মহীশূরের কিয়দংশ তার রাজ্যভুক্ত ছিল ।
এইভাবে শিবাজী মারাঠারাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন, যা পেশােয়াদের আমলে বিশিষ্ট শক্তিতে পরিণত হয়েছিল ।
আরও পড়ুন -
সুতরাং, দেরি না করে এখনই শিবাজীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মারাঠাদের উত্থান Pdf টি পোস্টটির নীচে গিয়ে ডাউনলোড করুন
File Details :
File Name- শিবাজীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে মারাঠাদের উত্থান [জীবিকা দিশারি]
File Format- pdf
Quality- High
File Size- 357 KB
File page- 3
File Location- Google Drive
Download Link: CLICK HERE TO DOWNLOAD
আরও পড়ুন -