নদী পথে সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমি রূপ চিত্রসহ
নদী পথে সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমি রূপ চিত্রসহ: With Pictures Various Land Forms Created Along River: এই টপিকটি থেকে প্রায় সমস্ত রকম প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় WBCS | WBPSC | BANK | Rail | WBP | SSC প্রায়শই প্রশ্ন এসেই থাকে, তাই আপনাদের কাছে এই তালিকাটি সুন্দর করে দেওয়া হলো। যদি ভালোভাবে মুখস্ত বা মনে রাখেন তা হলে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় আপনাদের অনেক সুবিধা হবে।
আদর্শ নদী:
উৎস থেকে মােহনা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই
যথা- উচ্চ, মধ্য ও নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে তাকে প্রাকৃতিক দিক
থেকে আদর্শ নদী বলে ।
উদাহরণ: হিসাবে বলা যায় যে, গঙ্গা একটি আদর্শ নদী । কারণ এই নদীর মধ্যে তিনটি
অবস্থাই পরিলক্ষিত হয়,
যেমন-
(১) গােমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার গতিকে
উচ্চগতি বলে ।
(২) হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে গঙ্গার মধ্যগতি
বা সমভূমি প্রবাহ বলে ।
(৩) মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মােহনা পর্যন্ত অংশে গঙ্গার
গতিপ্রবাহকে নিম্ন বা বদ্বীপ প্রবাহ বলে ।
উৎস থেকে মােহানা পর্যন্ত নদীর প্রবাহকে কাজ অনুসারে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা
যায়,
যথা:
(ক) উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ
(খ) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ এবং
(গ) নিম্নগতি বা দ্বীপ প্রবাহ
(ক) উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ:
নদী যখন পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে
খরস্রোতে বয়ে চলে তখন নদীর ওই গতিকে উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ বলে । গােমুখ
থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার গতিকে উচ্চগতি বা পার্বত্য
প্রবাহ বলে ।
(খ) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ:
পার্বত্য অঞ্চল ছাড়িয়ে নদী যখন সমভূমির ওপর
দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন নদীর ওই গতিপ্রবাহকে গতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে ।
হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান পর্যন্ত গঙ্গার গতিপ্রবাহকে গঙ্গার
মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে ।
(গ) নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ:
উচ্চ ও মধ্যগতি প্রবাহের পর নদীপ্রবাহের বাকি
অংশকে নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ বলে । মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের পর থেকে
বঙ্গোপসাগরের মােহানা পর্যন্ত অংশে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে গঙ্গা নদীর নিম্ন বা
বদ্বীপ প্রবাহ বলে ।
নদীর উচ্চ, মধ্য ও নিম্নগতির বিভিন্ন কাজের তুলনা |
---|
বিভিন্ন গতি | নিম্নক্ষয় | পার্শ্বক্ষয় | বিশেষ ভূমিরূপ |
---|---|---|---|
উচ্চগতি | বেশি | কম | গিরিখাত ও জলপ্রপাত |
মধ্যগতি | কম | মাঝারি | স্বাভাবিক বাঁধ ও প্লাবনভূমি |
নিম্নগতি | - | বেশি | চর, দ্বীপ, বদ্বীপ, বেশি ও অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ এবং খাঁড়ি |
(ক) নদীর উচ্চগতিতে ক্ষয়কার্যের ফলে ভূমিরূপ:
নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে বিভিন্ন
ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়,
যেমন:
১। ইংরেজি I এবং V অক্ষরের মতাে নদী উপত্যকা:
নদীর পার্বত্য প্রবাহের প্রথম অবস্থায় নদী প্রধানত নিম্নক্ষয়ই করে বলে
নদী-খাত প্রথমে ' I ' আকৃতির এবং পরে আবহবিকার ও জলপ্রবাহের দ্বারা
পার্শ্বক্ষয়ের ফলে ক্রমশ ' V ' অক্ষরের আকার ধারণ করে ।
২। গিরিখাত:
নদীর পার্বত্য পথে ' I ' ও ' V ' আকৃতির নদী উপত্যকা যখন খুব গভীর হয় তখন তাকে
গিরিখাত (gorge) বলে । গিরিখাত যতটা গভীর ততটা চওড়া নয় । শতদ্রু, সিন্ধু,
তিস্তা প্রভৃতি নদীর পার্বত্য গতিপথে এইরকম গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায় ।
৩। অন্তবদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ:
এটি পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া অন্যতম একটি প্রধান
ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথের বাধাস্বরূপ পাহাড় বা শৈলশিরা থাকলে
সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় এবং
শৈলশিরাগুলি নদীপ্রবাহের ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও খাঁজকাটা হয়ে যায়, এদের
অভিক্ষিপ্তাংশ বলে । পার্বত্য অঞ্চলে কোনাে নদীর গতিপথে অনেক সময় পাহাড়গুলির
অভিক্ষিপ্তাংশ কুমিরের দাঁতের মতাে এমনভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, নদীর প্রবাহপথের
একটি অংশ আর একটি অংশ থেকে আড়াল হয়ে যায় । এই অবস্থায় দূর থেকে দেখলে মনে
হয় শৈলশিরাগুলি যেন আবদ্ধ অবস্থায় আছে, একে তখন অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার
অভিক্ষিপ্তাংশ বলে ।
৪। ক্যানিয়ন বা সুগভীর নদীখাত:
মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলের সংকীর্ণ ও গভীর গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয় । দীর্ঘপথ
ধরে বৃষ্টিহীন পার্বত্য মরু অঞ্চল দিয়ে কোনাে নদী প্রবাহিত হলে নদীর জলের
স্বল্পতার জন্য নদীখাতে শুধুমাত্র নিম্নক্ষয় হলে ' I ' আকৃতির অতি গভীর খাত বা
ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয় ।
উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলােরাডাে নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দৈর্ঘ্য
হল ৪৪৬ কিলােমিটার এবং সময় সময় এটির গভীরতা ১.৬ কিলােমিটারেরও বেশি ।
৫। জলপ্রপাত ও প্রপাতকুপ:
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর
ওপর-নীচে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে কোমল শিলাস্তর কঠিন শিলাস্তরের তুলনায়
দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু হয়ে গেলে নদীর প্রবাহপথে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়
এবং নদীস্রোত তখন খাড়া ঢাল থেকে প্রবল বেগে নীচে আছড়ে পড়ে, একেই জলপ্রপাত
বলে ।
উদাহরণ: দক্ষিণ-আমেরিকার ভেনিজুয়েলার অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতটি হল পৃথিবীর উচ্চতম
জলপ্রপাত ।
৬। মন্থকুপ বা পটহােল:
পার্বত্য-গতিতে নদীখাতের কোনাে অংশে কোমল শিলাস্তর
থাকলে নদীবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে নদীগর্ভ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে
সেখানে বড়াে বড়াে গর্তের সৃষ্টি হয় । নদীর প্রবল জলস্রোতের সঙ্গে সঙ্গে
নদীবাহিত নানান আকৃতির শিলাখণ্ডগুলিও ঘুরতে থাকায় নদীগর্ভের গর্তের আকার ক্রমশ
বেড়ে হাঁড়ির মতাে হয় । পার্বত্যপথে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া এইসব
গর্তকে মন্থকূপ বা পটহােল বলে । নদীগর্ভে মন্থকুপের সৃষ্টি হওয়ার ফলে নদীর
গভীরতা বাড়ে ।
৭। কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spur):
নদীর পার্বত্য গতিতে নদীপথের ঢাল যদি হঠাৎ
বৃদ্ধি পায় তবে তীব্র জলস্রোতের প্রভাবে নদীপথে অবস্থিত শৈলশিরাগুলিকে
ব্যাপকভাব ক্ষয়প্রাপ্ত করে নদী তার পথ করে নেয় এবং সােজা পথে বয়ে চলে ।
উদাহরণ: হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে তিস্তা, তাের্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর
গতিপথে কর্তিত শৈলশিরা দেখা যায় ।
৮। খরস্রোত:
নদীর পার্বত্য গতিপথে কোমল ও কঠিন শিলা স্তরগুলি একটির পর একটি
লম্বালম্বিভাবে থাকলে কোমল শিলাস্তরগুলি কঠিন শিলাস্তরের তুলনায় তাড়াতাড়ি
ক্ষয়ে গিয়ে নদী উপত্যকায় কয়েকটি সিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি করে । নদী
উপত্যকায় সিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি হলে নদীস্রোত একটির পর আর একটি সিঁড়ি
পেরিয়ে ধাপে ধাপে প্রবলবেগে নীচে নেমে আসে, একে খরস্রোত বলা হয় ।
উদাহরণ:
মিশরের আসােয়ান থেকে আটবারা পর্যন্ত স্থানে নীলনদের গতিপথে ছয় জায়গায়
খরস্রোত দেখা যায় ।
(খ) মধ্যগতিতে নদীর সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমিরূপ:
উচ্চগতির তুলনায় মধ্যগতিতে নদীর গতিপথের ঢাল কম হওয়ায় নদীর গতিবেগ হ্রাস
পাওয়ার ফলে ক্ষয়কার্য কম হয় এবং নদীবাহিত বড়াে শিলাখণ্ডগুলি নদীগর্ভে ও
উভয় তীরে সঞ্চিত হয় । কেবল কাদা ও বালি নদীস্রোতের সঙ্গে ভাসতে ভাসতে সামনের
দিকে এগিয়ে চলে । মধ্যগতিতে নদীর ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের
সৃষ্টি হয়,
যথা:
১. প্রশস্ত V আকৃতির উপত্যকা:
পার্বত্য প্রবাহ ছেড়ে নদী যতই সমভূমির ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হতে থাকে ততই তার ' I ' আকৃতির উপত্যকা চওড়া হয়ে প্রশস্ত ' V '
আকৃতি ধারণ করে ।
২. পলিশঙ্কু:
পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে নদী যখন সমভূমিতে নেমে আসে তখন নদী
উপত্যকার ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ায় নদীর বহন ক্ষমতা ও স্রোতবেগ দুইই হঠাৎ কমে যায়
। এই অবস্থায় পর্বতের পাদদেশবর্তী নদী উপত্যকায় পলি, কাঁকড়, নুড়ি, বালি
প্রভৃতি শঙ্কুর আকারে সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ গঠন করে পলিশঙ্কু বা পলল শঙ্কু
বলে ।
উদাহরণ: হিমালয় পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চলে প্রায় সমস্ত নদীতেই পলিশঙ্কু দেখা
যায় ।
৩. পল ব্যজনী:
সমভূমি অঞ্চলে নদী পলিশঙ্কুর ওপর দিয়ে নানান খাতে প্রবাহিত হলে
ক্রমশ পলিশঙ্কুটি অর্ধগােলাকার আকৃতি ধারণ করে । অনেকটা হাতপাখার মতাে দেখতে
অর্ধগােলাকার এই ভূমিরূপটিকে পলল ব্যজনী বা পলল পাখা বলে । যেসব নদীর জলে পলির
পরিমাণ কম, কিন্তু জলপ্রবাহ বেশি সেইসব নদীতেই পলল ব্যজনী সৃষ্টি হয় । পলল
ব্যজনীর উচ্চতা পলিশঙ্কুর তুলনায় কম হয় ।
উদাহরণ: হিমালয় পর্বতের পাদদেশবর্তী হিমালয়, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি ভঙ্গিল
পর্বতের পাদদেশবর্তী বেশিরভাগ নদীতেই পলল ব্যজনী দেখা যায় ।
৪. নদী মঞ্চ:
সমভূমি প্রবাহে নদীর মধ্যগতিতে নদীর উভয় তীরে অনেক সময় একাধিক
অসমান ধাপ বা মঞ্চ দেখা যায়, এদের নদী মঞ্চ বলা হয় । মধ্য গতিতে নদী উপত্যকার
দু'ধারে নদীবাহিত বিভিন্ন পদার্থ ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে এই ধরনের অসমান ধাপ বা
নদী মঞ্চ গঠিত হয় ।
উদাহরণ: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা প্রভৃতি নদীর উভয় তীরে নদী মঞ্চ দেখা যায় ।
৫. বালুচর ও নদী-দ্বীপ:
মােহানার কাছে নদীপথের ঢাল অসম্ভব কমে যাওয়ায়
সঞ্চয়কাজ প্রাধান্য পায় । এই সময়ে বলে নদী তার জলের সঙ্গে বয়ে আনা প্রচুর
বালি, কাঁকর, নুড়ি ইত্যাদি বইতে পারে না, ফলে সেগুলাে নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে
চড়া বা বালুচরের সৃষ্টি হয় । নদীগর্ভের সর্বত্রই চড়ার সৃষ্টি হয় না,
নদীখাতের যে দিকে স্রোত কম সাধারণত সেদিকেই বালুচর গড়ে ওঠে । অনেক সময় নুড়ি,
পাথর , কাদা, কাঁকর জমে নদীগর্ভ ভরাট হয়ে নদীর মাঝে দ্বীপ সৃষ্টি হয়, একে
নদী-দ্বীপ বলে ।
৬। নদী বাঁক:
নদীর প্রবাহপথে চড়া সৃষ্টি হলে নদীখাতের প্রস্থ অনেকটা কমে যায়,
ফলে নদীর জল একটা সরু খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় । এতে জলের
স্রোতের বেগ কিছুটা বেড়ে যায় এবং নদীতীরে সেই জল আছড়ে পড়ে পার্শ্বক্ষয়
বাড়িয়ে তােলে, ফলে নদীপথ ক্রমশ ধনুকের মতাে বেঁকে যেতে থাকে । অতিরিক্ত
ক্ষয়ের জন্য বেঁকে যাওয়া অংশে খাড়া পাড় সৃষ্টি হয় । বাঁকের দিকের নদীগর্ভে
কিছুটা নিম্নক্ষয় চলে, ফলে এই অংশে নদীর গভীরতা বেশি হয় । বাঁকের উলটো দিকে
স্রোতের বেগ কম থাকায় সঞ্চয় । কাজ চলে, ফলে ওই দিকে ঢালু পাড় তৈরি হয় ।
নদীর মধ্যগতিতে সৃষ্টি হওয়া অন্যান্য
ভূমিরূপগুলি হল:
(i) চওড়া ও অগভীর নদী উপত্যকা
(ii) নদী চড়া ও বিনুনী আকৃতির নদী
(iii) ধনুকের মতাে আঁকাবাঁকা নদীপথ
(iv) নদীর খাড়া পাড় ও ঢালু পাড় প্রভৃতি ।
(গ) নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:
১। প্লাবনভূমি:
সমভূমি অঞ্চলে (নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে) নদীর ঢাল ক্রমশ কমতে
থাকায় নদীর সঞ্চয় কাজ ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং নদীখাতে নুড়ি, কাদা, পলি
প্রভৃতি জমে নদীগর্ভ ভরাট ও অগভীর হয়ে যায় । বর্ষাকালে নদীর প্রবাহপথের এই
অংশে নদীর জল অত্যধিক বেড়ে গেলে তা স্বাভাবিক বাঁধকে অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী
বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্লাবিত করে । নদীর প্লাবনের জলে থাকা পলি নদী উপত্যকার
নিন্ন অংশে থিতিয়ে পড়ে ও সঞ্চিত হয় । এইভাবে নদী উপত্যকার নিম্ন অংশে পলি
সঞ্চয়ের ফলে যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবনভূমি বলে ।
২। অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ:
নিম্নপ্রবাহে নদীর স্রোতের বেগ কমে আসায় পার্শ্বক্ষয়
ও সঞ্চয় কাজই প্রাধান্য পায় বলে নদীখাতের কোনাে কোনাে অংশ পলি সঞ্চয়ের ফলে
উঁচু হয়ে যায় এবং নদী আঁকাবাঁকা পথে চলতে বাধ্য হয় । নদী বেশি বেঁকে গেলে,
অনেক সময় স্রোতের বেগে নদী-বাঁকের একটি অংশ নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে
হ্রদের আকার ধারণ করে ।
প্রথম দিকে এই বিচ্ছিন্ন অংশের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক থাকে
এবং বন্যার সময় এই হ্রদে নদীর জল প্রবেশ করে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
হ্রদটি নদী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘােড়ার ক্ষুরের মতাে বাঁকাভাবে
অবস্থান করলে তখন তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয় । এছাড়া নদীর নিম্নগতিতে
নদীর বাঁক অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে, অনেক সময় দুটি নদী-বাঁক নিজেদের কাছাকাছি এসে
পড়ে । এই অবস্থায় ওই বাঁক দুটির মধ্যবর্তী অংশ ক্রমাগত ক্ষয় পেতে থাকলে বাঁক
দুটি জুড়ে যায় এবং নদীটি সােজা পথে বয়ে চলে । ক্ষয়প্রাপ্ত বাঁকা অংশটি তখন
নদী থেকে ঘােড়ার ক্ষুরের আকারে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্রদের আকার ধারণ করে- এভাবেও
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয় ।
উদাহরণ: সাগরের কাছাকাছি গঙ্গার নিম্নগতিতে অসংখ্য অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা
যায় ।
৩। বদ্বীপ:
নদীর মােহানা অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে সঞ্চয়ের ফলে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (△)
মাত্রাহীন ‘ ব ’ -এর মতাে যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে বদ্বীপ বলে । মােহানার
কাছে নিম্নগতিতে নদীর গতিপথের ঢাল একেবারে কমে যাওয়ায় নদীতে জলপ্রবাহের
গতিবেগ থাকে বললেই চলে, ফলে সেখানে নদীবাহিত পলি সঞ্চয়ের হার অসম্ভব বেড়ে
যায় । নদীগর্ভ, হ্রদ বা সাগরসঙ্গম ভরাট হয়ে ক্রমশ উঁচু হতে থাকে এবং নদী
শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয় ।
প্রথম পর্যায়ে দুটি শাখার
মধ্যবর্তী অংশ জলাভূমি হিসেবে অবস্থান করে । দ্বিতীয় পর্যায়ে এই অংশে নদীর
সঙ্গে সমুদ্রবাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে সঞ্চিত হয় এবং এই অংশটি আরও ভরাট হয়ে
নতুন ভূভাগ বা দ্বীপের সৃষ্টি হয় । দ্বীপকে দেখতে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (△) -এর
মতাে হলে বাংলা অক্ষর মাত্রাহীন ব -এর সঙ্গে তার কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় তাকে
বদ্বীপ বলা হয় ।
পৃথিবীর বেশিরভাগ বদ্বীপই গ্রিক অক্ষর △ - র মতাে দেখতে হলেও, কোনাে কোনাে নদীর
বদ্বীপ বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে,
যেমন: ভারতে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী-মিসিসিপি
নদীর বদ্বীপ অনেকটা পাখির পায়ের মতাে দেখতে ।
বালুচর:
নিম্নগতিতে নদীপথের ঢাল খুব কমে যাওয়ায় নদীর বহন ক্ষমতা কমে যায় । এই
অবস্থায় নদী তার জলের সঙ্গে বয়ে আনা বালি, কাঁকর ইত্যাদি আর বইতে পারে না,
ফলে সেগুলি নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়ে চড়া বা বালুচরের সৃষ্টি হয় । নদীগর্ভের
সর্বত্রই বালুচরের সৃষ্টি হয় না, নদীখাতের যে দিকে স্রোত কম সাধারণত সেদিকেই
বালুচর গড়ে ওঠে ।
স্বাভাবিক বাঁধ:
নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যাওয়ায় নদী তার বােঝা (বিভিন্ন আকৃতির
শিলাখণ্ড, শিলাচূর্ণ, বালি, পলি প্রভৃতি) বইতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং নদীবাহিত
বিভিন্ন পদার্থ নদীর দু'তীরে অবক্ষেপণের মাধ্যমে সঞ্চিত হয় । দীর্ঘকাল ধরে
পলিসঞ্চয়ের ফলে নদীর দুই তীরবর্তী স্থান পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় উঁচু
হয়ে যায় । এইভাবে নদীর দুই পাশে পলি সঞ্চয়ের ফলে প্রাকৃতিকভাবে বাঁধের আকারে
যে দীর্ঘ ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলা হয় ।
স্বাভাবিক
বাঁধের উচ্চতা সাধারণত ২ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত হলেও হােয়াংহাে, মিসিসিপি
প্রভৃতি নদীতে ৭-১০ মিটার উচ্চতার স্বাভাবিক বাঁধও দেখা যায় । স্বাভাবিক বাঁধ
নদীর নিম্ন অববাহিকাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে ।
উদাহরণ: কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের ওপর অবস্থিত ।