বাংলার ঋতুসৌন্দর্য প্রবন্ধ রচনা
বাংলার ঋতুসৌন্দর্য
অথবা, বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
অথবা, প্রবন্ধ রচনা বাংলার ঋতু বৈচিত্র
অথবা, বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
অথবা, বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
অথবা, ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা
অথবা, তোমার প্রিয় ঋতু প্রবন্ধ রচনা
অথবা, ঋতুরঙ্গ রচনা
ভূমিকা
“বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর ।”
রূপ-রং-বৈচিত্র্যে ভরা এই বাংলা আমাদের ‘রূপসী বাংলা’ । ঋতুতে ঋতুতে এই বাংলা তার রূপের পসরা সাজিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে । পল্লিবাংলা মানে শ্যামলে-সবুজে ঘেরা সাজানো মাঠ, হিজল-বট-কাঁঠালের সারি, চাঁদ আর নক্ষত্রে সাজানো ঝলমলে আকাশ । গ্রামবাংলার ছড়ানো প্রকৃতির চিত্রপটে গ্রামীণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে লাবণ্যময়ী, বৈচিত্র্যময়ী ৷
বাংলার ঋতুর পর্যায়ক্রম:
প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে বছরে ছটি ঋতুর আবর্তন ঘটে । প্রতিটি ঋতুই পৃথক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল । গ্রীষ্ম মানেই রুক্ষতা আবার বর্ষা মানেই সজলতা । একইভাবে শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত- প্রতিটি ঋতুই পৃথক সৌন্দর্য এবং অভিনবত্বের প্রকাশক । এক এক ঋতুতে প্রকৃতি তার রূপের বদল ঘটায় ।
গ্রীষ্মকালীন রুক্ষতা:
বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ- এই দুই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল । গ্রীষ্মের প্রকাশ রুক্ষতায়, শুষ্কতায় এবং রিক্ততায় । এই সময় সূর্য প্রকৃতিকে দগ্ধ করে সবুজ সৌন্দর্যকে পুড়িয়ে দেয় । মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায় । তৃষ্ণয় প্রাণীকুল চাতকের মতো হাহাকার করে । প্রকৃতির এই রুক্ষতার মাঝেই আগমন ঘটে কালবৈশাখীর । তার ভয়ংকর রূপ প্রকৃতিকে করে তোলে বিপর্যস্ত । এই রুদ্র বৈশাখেই পালিত হয় রবীন্দ্রনাথের জন্মোৎসব । রুক্ষতার মাঝেও কবিতা ও গানে স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালির মন ।
বঙ্গে বর্ষা:
গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা । অরণ্যে-প্রান্তরে জেগে ওঠে আনন্দের হিল্লোল । রসসিক্ত হয়ে ওঠে রুক্ষ প্রকৃতি । বর্ষার সমাগমে কবিহৃদয় আনন্দে আত্মহারা-
“হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে
ময়ূরের মতো নাচে রে”
বর্ষা মৃতপ্রায় প্রকৃতির বুকে প্রাণের সঞ্চার ঘটায় । মৃত্তিকা হয়ে ওঠে শস্য-শালিনী । খাল-বিল, নদীনালা ভরে বর্ষার অমৃত ধারায় । কদম্ব, বেল, গন্ধরাজ, পদ্ম, কেতকী, জুঁই ফুলের ডালি সাজিয়ে তোলে রূপময়ী প্রকৃতিকে । এ সময় অসুখবিসুখের প্রকোপ দেখা গেলেও বর্ষার কোমলতা ও মাধুর্য সকলের মনকে হর্ষে ভরিয়ে তোলে ।
ঋতুরানির আগমন:
বর্ষার পরে হিমেল হাওয়ায় দোলা খেতে খেতে আসে ঋতুরানি শরৎ । এ সময় প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে ওঠে । নীল আকাশের বুকে ভেসে যায় সাদা মেঘের ভেলা । কাশফুলের মেলা, শিউলির সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতিতে । শিশির ভেজা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য একমাত্র শরৎ প্রকৃতিতেই লক্ষ করা যায় । শরৎ মানেই পুজোর ঋতু । এ সময়ে সর্বত্র বাঙালি দুর্গা পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে । শহরের অলিতে-গলিতে আলোর রোশনাই শরৎ প্রকৃতিতে অসামান্য রূপে সাজিয়ে তোলে । একে একে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া- প্রভৃতি নানা উৎসবে উদ্বেল হয়ে ওঠে প্রকৃতি ।
বঙ্গে হেমন্ত ঋতু:
শরতের পরই আসে হেমন্তকাল । হেমন্ত যেন শরতেরই বিদায়ী রূপ । শরতের পরে হেমন্তের প্রকৃতিতে বিরাট কোনো পরিবর্তন লক্ষিত হয় না । এ সময় ফসলের সম্ভার নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতি । সোনার ধানে ভরে যায় খেতখামার । এই ঋতুতে প্রকৃতি তার শারদ সৌন্দর্য একটু একটু করে হারিয়ে রিক্ত হতে শুরু করে ।
বঙ্গে শীতকাল:
হেমন্তের পরে বঙ্গে শীত ঋতুর আগমন ঘটে । এই ঋতুতে মানুষের শরীরে, চেহারায় যেমন রুক্ষতা নেমে আসে, তেমনি সবুজ গাছপালা তার সৌন্দর্য হারিয়ে ক্রমশ রিক্ত হয়ে ওঠে । হরিদ্রা বর্ণ ধারণ করে গাছের পাতা । হিমেল হাওয়া এই ঋতুর বৃক্ষরাজিকে নিরাভরণ করে তোলে । তবুও প্রত্যুষে ঝরে পড়া শিশির সবুজ মাঠের বুকে সূর্যের আলোতে যখন ঝলমল করে ওঠে, তখন সহজেই শীতের রিক্ততা আমাদের মনে মুগ্ধতা এনে দেয় । দোপাটী, গাঁদা, অতসী- ইত্যাদি ফুলের পসরা সাজিয়ে আসে শীত ঋতু । পাশাপাশি এই ঋতু তরতাজা রকমারি শাকসবজির ঋতু ।
ঋতুরাজ বসন্ত:
শীতের পরে কুহুধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে আসে বসন্ত ঋতু । চিরযৌবনের প্রতীক এই বসন্ত ঋতু । বসন্তের আগমনে নবপল্লবে জাগে প্রাণের সাড়া । মল্লিকা, চাঁপা, পলাশ, বকুল, অশোক, কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারোহে বসন্ত প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে । এই ঋতুতে আসে হোলির উৎসব । রঙিন আবির ছড়িয়ে রঙের উৎসবে মেতে ওঠে বাংলার মানুষ । নবীনতায়, উচ্ছলতায়, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা বসন্ত ঋতু । বিদায়ের কালে এই ঋতু যেন চারিদিক নিঃস্ব-রিক্ত করে চলে যায় । শুরু হয় নতুন ঋতুচক্র ।
উপসংহার:
প্রকৃতির এই লীলাবৈচিত্র্য চলে সারাবছর ধরে । এক ঋতু যায়, আরেক ঋতু আসে; তারই সঙ্গে চলে প্রকৃতির বিচিত্র সাজের খেলা । ঋতুতে ঋতুতে প্রকৃতি প্রকাশ করে তার রূপময়তা । ভিন্ন রূপে ভিন্ন সাজে প্রকৃতি বিমুগ্ধ করে পল্লিবাংলার মানুষকে । পল্লিবাংলার বুকে প্রকৃতি-রাজ্যের এই রূপসৌন্দর্য অপার এবং অভিনব ৷
বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য । আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো ।