Ads Area


ঋতুরানি শরৎ প্রবন্ধ রচনা | Season Queen Autumn Essays

ঋতুরানি শরৎ প্রবন্ধ রচনা | Season Queen Autumn Essays

ঋতুরানি শরৎ প্রবন্ধ রচনা | Season Queen Autumn Essays- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ঋতুরানি শরৎ প্রবন্ধ রচনা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


ঋতুরানি শরৎ প্রবন্ধ রচনা

অথবা,

তোমার প্রিয় ঋতু প্রবন্ধ রচনা


🔘 Join Our Telegram Chanel - Click Here 🔘

ভূমিকা-

বঙ্গপ্রকৃতি ঋতুবৈচিত্র্যে ভরা । সারাবছর ধরে বাংলার বুকে চলে নানা বর্ণচ্ছটায় ভরা ঋতুর হরেক রকম খেলা । ছটি ঋতু বছরভর তার নতুন নতুন রূপের সম্ভার সাজিয়ে প্রকৃতিকে রূপময়তায় ভরিয়ে তোলে । তবুও সমস্ত ঋতুর মাঝে শরৎই ঋতুরানি । বর্ষার অবিরাম ধারায় পৃথিবী স্নাত হওয়ার পরই ধীর পায়ে এসে হাজির হয় কোমল মধুর লাবণ্যময়ী শরৎ । আকাশে জলদগম্ভীর মেঘের ঘনঘটা বিদায় নিতেই অমল শুভ্র নির্জলা মেঘের তরণি ভাসিয়ে শরৎ আনন্দের শিহরণ তোলে বঙ্গবাসীর মনে । বনে, অরণ্যে সর্বত্র সবুজের সমারোহ, কিংবা প্রান্তর জুড়ে কাশফুলের মেলা, সমস্ত মিলিয়ে শরতের অনির্বচনীয় সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর ।


রূপবতী শরৎ-

বঙ্গপ্রকৃতির রঙ্গমঞে বর্ষার যবনিকা পড়তেই ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি’ সাজিয়ে উপস্থিত হয় স্নিগ্ধমধুর শরৎ । আকাশ তার ধুম্র মেঘের কালিমা মুছে সুনীল সুন্দর হয়ে ওঠে । মুক্ত স্বচ্ছ আলোয় ভরে যায় মাঠের কোল । অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে চতুর্দিক । মেঘমুক্ত আকাশ, শিউলির গন্ধ, কাশফুলের সমারোহ আর জ্যোৎস্নালোকে প্লাবিত রাত- এই মর্ত্যবুকে অভিনব স্বর্গ রচনা করে । মৃদুমন্দ হিমেল হাওয়ায় শীতল হয়ে ওঠে প্রকৃতি । মুগ্ধতায় ভরে যায় মানুষের মন ।

রাতভর শিশিরকণায় ভরে ওঠে ঘাসের ডগা । সকালের সূর্যালোকে অনির্বচনীয় সৌন্দর্যে ভরে যায় মাঠ- “শিশিরকণায় মানিক ঘনায় দূর্বাদলে দীপ জ্বলে ।” রাত জেগে ফুলের পসরা সাজায় শিউলি । ফুল ভারে মাথা নত করে শাখাপ্রশাখা । আর সেই মোহভরা সুগন্ধ মেদুর করে তোলে প্রকৃতিকে । তারই সঙ্গে সঙ্গে মাঠে প্রান্তরে ঘটে সবুজের সমারোহ । মৃদু হাওয়ায় দোল খেতে খেতে মাথা তুলে দাঁড়ায় সোনালি ধানের চারা । নব উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে কৃষকের মন । গ্রামে-গঞ্জে জেগে ওঠে নবজীবনের আশা । এমন সুন্দর মনোহারি ঋতু আর দুটি নেই ।


উৎসবের ঋতু শরৎ-

বাঙালি উৎসবপ্রিয় । তাই বারোমাসে তার তেরো পার্বণ । তবু পৃথক ভাবে শরৎকে উৎসবের ঋতু বলে চিহ্নিত করা যায় । মাসভর উৎসবের সমারোহ এই ঋতুকে অনন্য সৌন্দর্যময়ী করে তোলে । বর্ষা বিদায় নিতেই নির্মেঘ আকাশে অভিনব আলো ঝলমল করে উঠতেই প্রকৃতি যেন শিউলি-মালতীর অর্ঘ্য সাজিয়ে আগমনী গান গেয়ে ওঠে । চির আরাধ্যা মা দুর্গা তাঁর পুত্রকন্যাদের সঙ্গে নিয়ে পিত্রালয়ে উপস্থিত হতেই আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মণ্ডপ । ঢাকের বাজনায় গমগম করে ওঠে চতুর্দিক । সকলের মুখ ভরে যায় হাসি আর আনন্দে ।

নিত্যনতুন পোশাকে সেজে ওঠার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় ঘরে ঘরে । আনন্দময়ীর আগমনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় গ্রামে-গঞ্জে শহরে । প্রবাসীরা তারই অংশীদার হতে ফিরে আসেন নিজ গৃহে । ষষ্ঠীতে বোধন আর সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীতে মহানন্দে পূজা সমাপনের পর দশমীতে আসে বিসর্জনের দিন । আনন্দ-বেদনায় মোহাবিষ্ট করে বিদায় নেন অসুরদলনী মা দুর্গা । সপ্তাহ কাটতেই আবার কোজাগরি পূর্ণিমার দিন ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর বন্দনা- মেতে ওঠে বাঙালি । তার পক্ষকাল কাটতে না কাটতেই আবার অমাবস্যার প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হয়ে যায় নৃমুণ্ডমালিনী এলোকেশী শ্যামা মায়ের বন্দনা, বাঙালির প্রিয় দেওয়ালি উৎসব । তার পরই আসে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার পুণ্যতিথি । বোনেরা পবিত্র চন্দনের ফোঁটা ভায়ের কপালে এঁকে দিয়ে তার মঙ্গল কামনা করে । আর তারই সঙ্গে ঘটে শরৎ ঋতুর উৎসবের অবসান ।


শরৎ ছুটির ঋতু-

শরৎ যেমন উৎসবের ঋতু, তেমনি ছুটিরও । শরতের আগমনে ছুটির বাঁশি বেজে ওঠে চারিদিকে । বিদ্যালয় , কলেজ প্রভৃতি শিক্ষায়তনে ছুটি পড়ে যায় এ সময়ে । আনন্দে মেতে ওঠে শিশু-কিশোর মন । কবির কণ্ঠে সুর মিলিয়ে তারাও বলে ওঠে- 'আজ আমাদের ছুটি রে ভাই, আজ আমাদের ছুটি।' বাঙালি মাত্রই মন উড়ু-উড়ু করে ওঠে । প্রবাসী চায় দেশে ফিরতে, দেশবাসী চায় ছুটি অবসরে প্রবাসে পাড়ি দিতে । এ সময়ে দার্জিলিং, পুরী, দিঘা, মুসৌরি, সিমলা প্রভৃতি জায়গায় ভ্রমণের হিড়িক পড়ে যায় । মুক্ত পাখির মতো মন নিরুদ্দেশ হতে চায় । ছুটির আনন্দে ভরপুর হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস । তৃপ্তির অনুভূতিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে বাঙালির মন ।


শারদ সাহিত্য-

শরতের সঙ্গে সাহিত্যের আত্মিক সম্পর্ক । এই সময় যেমন উৎসবময় হয়ে ওঠে বঙ্গভূমি, তেমনি রঙ, রূপে, বৈচিত্র্যে সেজে ওঠে সাহিত্য-ভাণ্ডার । এ সময়ে প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা । প্রকাশনা বিভাগে পড়ে যায় প্রতিযোগিতার ধুম । কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ নাটক-উপন্যাস প্রভৃতিতে ভরে ওঠে শারদ সাহিত্য । এর পাশাপাশি অনেক নবীন-প্রবীণ সংগীত শিল্পীরাও তাদের সংগীত অর্ঘ্য নিয়ে হাজির হয় বাঙালির দরবারে ।


ফুল ও ফলের ঋতু শরৎ-

শিউলির সাহচর্যে সুন্দরী হয়ে ওঠে শরৎ । শিউলির শীর্ণ ডাল এ সময় ভরে যায় । সুন্দর শিউলির সঙ্গে সঙ্গে মালতীরও আত্মপ্রকাশ ঘটে এ সময়ে । আর তাদের সঙ্গে এসে হাত মেলায় মাঠে মাঠে হেসে ওঠা কাশগুচ্ছের মেলা । ফুলের সঙ্গে সঙ্গে ফসলের ডালি নিয়েও সেজে ওঠে শরৎ । বর্ষার জলধারায় স্নাত হওয়া প্রকৃতি শরতের সাহচর্যে নতুন ফসলকে আহ্বান জানায় । আর নতুন ধানের শিষে বরণডালা সাজায় প্রকৃতি । তারপর প্রান্তর জোড়া সবুজের সমারোহ হেমন্তের হাতে সমর্পণ করে প্রকৃতির বুক থেকে বিদায় নেয় শরৎ ।


উপসংহার-

ফুল-ফলে উৎসবে আনন্দে ভরা শরৎ, সমস্ত ঋতু থেকে স্বতন্ত্র । এই ঋতু তার সৌন্দর্যে ও বিশিষ্টতায় মোহাচ্ছন্ন করে রাখে সকলকে । ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস নিয়ে শরৎ রচিত হলেও তার অবস্থিতি যেন ক্ষণিকের । উৎসবের আনন্দে কিংবা ছুটির আনন্দে মেতে উঠতে না উঠতেই আর-এক ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠে, আর মন ভরে যায় বিষণ্ণতায় ।

দেবীর আগমনে যে অপরিমেয় আনন্দের সূচনা, বিজয়ার বিষাদ সংগীতে তার পরিসমাপ্তি । সমস্ত আনন্দ, ভ্রমণের অবসান ঘটিয়ে ঘরে ফেরার পালা । আবার নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়ার পালা । তবুও শরৎই আমাদের প্রিয়ঋতু । শরৎ আমাদের হৃদয়ের ঋতু । তাই শরৎ ঋতু বিদায় নিতেই আবার অন্য ঋতুর সঙ্গে মন সখ্যতা স্থাপন করলেও শরতের সুন্দর স্মৃতি মানসপটে চির অম্লান থেকে যায় ।


বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা PDF পড়তে এখানে ক্লিক করুন


যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য । আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area