Ads Area


আর্তের জননী মাদার টেরেসা প্রবন্ধ রচনা | Arts Mother Mother Teresa Wrote The Essay

আর্তের জননী মাদার টেরেসা প্রবন্ধ রচনা | Arts Mother Mother Teresa Wrote The Essay


আর্তের জননী মাদার টেরেসা প্রবন্ধ রচনা



অনুরূপে: (১) করুণাময়ী মাদার টেরেসা; (২) বিশ্বজননী মাদার টেরেসা; (৩) এযুগের মহীয়সী নারী ।


ভূমিকা:


"নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান ক্ষয় নাহি তার ক্ষয় নাই"

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আলোর আধার প্রদীপ যেমন নিজেকে পুড়িয়ে অপরকে আলোদান করে থাকে, তেমনি এমন কিছু মহাপ্রাণ এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছেন যারা অপরের সেবায় নিজের জীবনকে নিঃশেষে দান করেছেন ।

এঁদের ঘর থাকে সর্বত্র । দেশে দেশে ছড়িয়ে থাকে এঁদের পরম আত্মীয়েরা । কোনো একটি দেশ, ভূখণ্ড বা জনসমষ্টির মধ্যে এরা নিজেদের বন্দি রাখতে পারে না । তাই সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ভারতের মাটিতে অবতীর্ণ হন এমন এক নারী যিনি এই দেশকে এই দেশের মানুষকে ভালোবেসে ভারতবর্ষকেই নিজের দেশ করে নিয়েছিলেন, তিনি মাদার টেরেসা, আর্তের জননী । বিশ্ববাসীর কাছে যার একটিই পরিচয়, তিনি 'মাদার' ।


'কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ

জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস' ।


জন্ম, পরিচয় ও শিক্ষা:

মাদার টেরেসার পিতৃভূমি আলবেনিয়া হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল যুগোশ্লাভিয়ার স্কুপেজ শহরে 1910 খ্রিস্টাব্দের 27 আগস্ট, এক ধনী খ্রিস্টান পরিবারে । ছোটোবেলায় তাঁর নাম ছিল অ্যাগনেস ।

শৈশবের শিক্ষা সাঙ্গ করে অ্যাগনেস ডাবলিনের মিশনারি মঠ লরেটো অ্যাবে যোগদান করেন । পিতা- নিকোলাস এবং জননী ড্রানাফিল বার্নাডের কন্যা অ্যাগনেস গাংক্সা বেজাস্কা হিউ লরেটোতে যোগদান করার সময় সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন এবং তাঁর নাম হয় ‘মাদার টেরেসা’ ।


মানবধর্মে দীক্ষা:

অষ্টাদশী তরুণী ঈশ্বরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চিরদিনের মতো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন । লরেটোর তরুণী সন্ন্যাসী এসে পৌছালেন ভারতে । স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ভারতের দুঃখী মানুষের কথা তার হৃদয়ে বেদনার অতল আহ্বান তুলত । তাই তিনি আর্তমানুষের সেবা করার আদর্শ নিয়ে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হাজির হলেন কলকাতায় । ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রহণ করলেন ভারতীয় নাগরিকত্ব । তিনি বললেন- "I am an Albenian by chance but an Indian by choice", এই দেশ হল তাঁর নতুন জন্মভূমি , স্বদেশ । তিনি হলেন এই ভারতের ভূমিসূতা ।

কলকাতায় এসে সেন্টমারি হাইস্কুলে শিক্ষিকা রূপে শুরু হল মাদারের কাজ । এই স্কুলের পাশে ছিল একটি বস্তি । সেখানকার অধিবাসীদের দুঃখদুর্দশা দেখে মাদারের অস্ত্র উদ্‌বেল হয়ে ওঠে । এসময় একদিন ট্রেনে চড়ে দার্জিলিং যাওয়ার পথে তিনি মনের মধ্যে জিশুর বাণী উপলব্ধি করলেন । বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দরিদ্রের সেবায় আত্মনিয়োগ করলেন । মাদার পরবর্তীকালে বলেছেন- আমি দার্জিলিং যাচ্ছিলাম । পথে ট্রেনের কামরায় আমি যেন আহ্বান শুনতে পাচ্ছিলাম । কে যেন বলল সব ত্যাগ করে আমাকে অনুসরণ করো । বস্তিতে বস্তিতে দরিদ্রের সেবা করলেই আমার সেবা করা হবে । দার্জিলিং -এর পথে ট্রেনের মধ্যে নির্ঝরের শব্দ ভঙ্গ হল । এরপর আপন জীবনাদর্শ দিয়েই তিনি বোঝালেন-

“জীবে প্রেম করে যেইজন 

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ।”


সেবাকেন্দ্র ও শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা:

অবশেষে তিনি নিজেকে সমর্পণ করলেন আর্তের সেবায় । পরনে নীল পাড় সাদা সুতির শাড়ি, বাম কাঁধে পবিত্র ক্রুশ । কলকাতার বস্তিতেই তাঁর সেবাযজ্ঞে প্রথম আহুতি শুরু হল, মাত্র 5 টাকা সম্বল করে এন্টালি অঞ্চলে গুটি কয়েক ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তিনি একটি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলেন । তারপর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় আর্তমানুষের আপনজন মিশনারিজ অফ চ্যারিটি -এর সেবাদল ।

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কালিঘাটে নির্মিত হল নিমর্ল হৃদয় । অভাগা অনাথ অসহায় মানুষের দল খুঁজে পেল নিজস্ব ঠিকানা । মৌলালিতে অনাথ শিশুদের জন্য 'নির্মল শিশুভুবন', উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ে নির্মিত হল কুণ্ঠাশ্রম । নির্মিত হল নির্মলা কেনেডি সেন্টার । স্নেহ-মায়া-মমতা আর ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক মাদার পরম যত্নে তুলে নিলেন সমাজের চোখে ঘৃণ্য কুষ্ঠরোগীকে । বললেন আমি যখন কুষ্ঠ রোগীর সেবা করি তখন ভাবি আমি ভগবানের সেবা করছি ।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময় শরণার্থীদের মা হয়ে উঠলেন তিনি । কেবলমাত্র কলকাতা নয় ভারতেও নয় গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল মাদারের সেবাকেন্দ্র । ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, জাপান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, বাংলাদেশ প্রভৃতি জায়গায় পৌছে গেল মাদারের স্নেহ স্পর্শ । তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে শোনালেন- 'শিশুরাই জিশু', উলঙ্গ শিশুকে পোশাকে ভূষিত করো; গৃহহীন শিশুকে আশ্রয় দাও আর তোমার নিজের ভবনটি শান্তির স্বর্গ এবং প্রীতির আনন্দ নিকেতনে পরিণত করো ।


বিশ্বস্বীকৃতি ও সম্মানলাভ:

গোটা পৃথিবী এই জগৎজ্জননীকে সম্মান জানাল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মান Nobel মাদারের শিরভূষণ হয়ে নিজেই সম্মানিত হল । ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পান । ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে গোটা ভারত প্রণত হয়ে মাদারকে ভারতরত্ন হিসেবে স্বীকৃতি দিল । আফ্রিকায় তিনি হলেন অ্যাঞ্জেল অফ পিস । পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থ তিনি দান করেন আর্তের সেবায় । এ ছাড়া ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে পান ম্যাগসেসাই সম্মান । ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পান পোপের শান্তি পুরস্কার । কেম্ব্রিজ ও অক্সফোর্ড তাকে দিয়েছে ডক্টরেট উপাধি, ব্রিটেন তাঁকেদিয়েছে সর্বোচ্চ সন্মান অর্ডার অব মেরিট; নিউইয়র্ক থেকে তিনি পেয়েছেন গুড সামারিটান অ্যাওয়ার্ড । আসলে পৃথিবী ব্যাপী পুরস্কার তাঁর কাছে এসে নিজেরাই পুরস্কৃত হয়ে ওঠে ।


মহাপ্রয়াণ:

বিংশ শতাব্দীর এই মহীয়সী ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর অমৃতলোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । শুক্রবার রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে মাদার কলকাতার মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সদর দপ্তর মাদার হাউসে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন । ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মাদারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । কলকাতার রাজপথের ওপর দিয়ে সেন্ট টমাস গির্জা থেকে তাঁর অস্তিম যাত্রার সমাপ্তি ঘটে মাদার হাউসেই । সেখানে ধরিত্রীর শীতল অঙ্কে তার চিরশয্যা রচিত হয় ।


উপসংহার:

মহীয়সী মাদার টেরেসার জন্মের শতবর্ষ বছর পূর্ণ হল ২০১০ সালে । তাঁর মূল্যবান স্মৃতি স্মরণে রাখার জন্য গোটা পৃথিবী জুড়ে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । এদেশের রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে মাদারের নামাঙ্কিত ট্রেন ‘মাদার এক্সপ্রেস’ চালু করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে । ভারত সরকার মাদারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি ডাকটিকিট চালু করেছে । অপরিমেয় শ্রদ্ধা নিয়ে এই মহামানবীর জন্ম শতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে ।

আজ যখন আমরা ভোগবাদের পথে মনুষ্যত্বকে ভুলতে বসেছি তখন আমাদের আলোর পথের সন্ধান দিতে পারেন বিশ্বজননী মাদার টেরেসা মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাঁর মানবমন্ত্রই আমাদের প্রেরণা, মানবপ্রেমের আদর্শে তিনিই আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন । এমন পথের সন্ধান দিতে পারেন, যে পথের ঈশ্বর হলেন মানুষ ৷


বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন


যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য । আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area