প্রিয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা | Favorite Filmmaker Satyajit Rays Essay- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “প্রিয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা
অনুরূপে- (১) ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়; (২) বাঙালির গর্ব সত্যজিৎ রায়: (৩) তোমার প্রিয় চলচ্চিত্রকার।
ভূমিকা:
বিশ্ববন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় আজ আমাদের মধ্যে নেই। দীর্ঘ ৮৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৩ এপ্রিল (১৯৯২) বিকাল ৫-৩২ মিনিটে তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান৷ বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রস্রষ্টা হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। আবার সুসাহিত্যিক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তিনি অনন্য স্রষ্টা।
জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা:
১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম। পিতা সুকুমার রায়; মাতা সুপ্রভা দেবী। তাঁর পিতামহ স্বনামধন্য উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। পিতার ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু হলে মাত্র ২ ১/২ বছরের শিশু সত্যজিৎ রায়কে মানুষ করার জন্য সুপ্রভা দেবীকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয় । সত্যজিতের শৈশব কাটে উত্তর কলকাতার ১০০ নম্বর গড়পাড় রোডের বাড়িতে। পাঁচ বছর বয়সে তাঁরা বকুল বাগানের বাড়িতে চলে আসেন। ৮ ১/২ বছর বয়সে সত্যজিৎ বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে ভরতি হন। ব্রষ্মসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, ভারতীয় মার্গসংগীত এবং পাশ্চাত্য সংগীতে তিনি ছিলেন গভীর মনোযোগী। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত তিনি কলেজে কাটান। এ সময়ে তিনি ইংরেজি ভাষাও অনবদ্যভাবে রপ্ত করেন। ১৯৩৯ -এ তিনি বিএ পাস করেন। তাঁর জীবনে নন্দলাল বসু এবং বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪২ খিস্টাব্দের ডিসেম্বরে শিক্ষাক্রমের ঠিক অর্ধপথে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।
কর্মজীবন:
বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠানের শিল্পীকর্মী হিসেবে সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন শুরু। ১৯৪৩ -এ মাসিক আশি টাকা বেতনে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোম্পানি ডি. জি. কিমারে যোগ দেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি নিজগুণে এই প্রতিষ্ঠানের আর্ট ডিরেক্টরের পদে উন্নীত হন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ তে সাফল্যের পর তিনি ১৯৫৬ -তে বিজ্ঞাপনের চাকরিতে ইস্তফা দেন।
চলচ্চিত্র পরিচালনা:
চলচ্চিত্র শিল্পের এই প্রতিভাধর পুরুষ একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি করে চললেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ তাঁকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তিনি এর জন্য অনেক পুরস্কার পেলেন। এরপর তিনি ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬); ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’ (১৯৫৮); ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯); ‘দেবী’ (১৯৬০); ‘তিনকন্যা’ (১৯৬১); ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ (১৯৬২); ‘মহানগর’ (১৯৬৩); ‘চারুলতা’ (১৯৬৪); ‘নায়ক’ (১৯৬৬); ‘চিড়িয়াখানা’ (১৯৬৭); ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ (১৯৬৯); ‘অশনি সংকেত’ (১৯৭৩); ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ (১৯৭৮); ‘হীরক রাজার দেশে’ (১৯৮০); ‘আগভুক’ (১৯৯১) ইত্যাদি অসাধারণ সব ছবি পরিচালনা করেন। সত্যজিৎ রায় বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র এবং দূরদর্শন চিত্র রচনা করেন। এর মধ্যে ‘রবীন্দ্রনাথ’ (১৯৬১); ‘ইনার আই’ (১৯৭৪); সুকুমার রায়’ (১৯৭৮) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ‘সিকিম’ (১৯৭১);
অন্যান্য কর্ম:
চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় সংগীত পরিচালনার দায়িত্বভার হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ‘তিনকন্যা’ ছবি থেকেই তিনি এই দায়িত্ব নেন। তা ছাড়া এত কিছুর বাইরেও বলতে হয় বলা চলে পোস্টার শিল্পের তিনি অদ্বিতীয় শিল্পী। তাঁর কিছু কিছু পোস্টার এক একটি নিখুঁত শিল্পবস্তু।
সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকর্ম:
এর পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় সাহিত্যসৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তার পূর্বসূরিদের প্রিয় ‘সন্দেশ’ পত্রিকা পুনঃপ্রকাশ করলেন। নিজেও সেখানে লিখতে শুরু করলেন। এভাবে সৃষ্টি হল ফেলুদা , তপসে, জটায়ু, প্রফেসর শঙ্কুর মতো চরিত্রগুলি। এ প্রসঙ্গে তাঁর নিম্নলিখিত সৃষ্টিগুলি জনপ্রিয়- ‘বাদশাহী আংটি’, ‘একডজন গল্প’, ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’, ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৭১); ‘বাক্সরহস্য’ (১৯৯৩); সাবাশ প্রফেসর শঙ্কু (১৯৭৪) ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ (১৯৭৬) ইত্যাদি। তিনি শুধুমাত্র সাহিত্যকর্ম নিয়ে থাকলেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর শিল্পকর্মের অক্ষয়কীর্তির প্রমাণ পাওয়া যেত।
সত্যজিৎ রায়ের সম্মানলাভ:
সারাজীবনে সত্যজিৎ রায় ভিন্নমুখী শিল্পকর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য ১৯৩৬ -এ ‘বয়েজ ওন পেপার’ পত্রিকায় প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে তার জয়গাত্রা ও পুরস্কার প্রাপ্তির শোভাযাত্রা শুরু দেশে এবং বিদেশে। ভারত সরকার কর্তৃক তিনি ১৯৫৮ -তে, ‘পদ্মশ্রী’, ১৯৬৫ -তে ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার পান। ১৯৬৭ -তে তিনি পান ‘অ্যাকাডেমি পুরস্কার’; এই বছরই পান ‘ম্যাগসেসাই’ পুরস্কার। বিশ্বভারতী কর্তৃক ‘দেশিকোত্তম’ পান ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৮২ -তে তিনি পান ‘ভিস্কান্তি’, ‘হেলেস অ্যাঞ্জেল ট্রফি’। ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘লিজিয়ন অব্ অনার’ পান ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে। শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম নোবেল পুরস্কারস্বরূপ নিউইয়র্কের ‘অ্যাকাডেমি অব্ মোশন পিকচার্স’ কর্তৃক ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’ এর জন্য বিশেষ ‘অস্কার’ পুরস্কার পান ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে এবং এবছরই তিনি ভারত সরকারের শেষ ও শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ পান। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।
উপসংহার:
সত্যজিৎ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। মহৎ সত্যকে জয় করে তিনি চলে গেছেন আমাদের অস্তিত্বের সীমার বাইরে। তাঁর এই মহাপ্রয়াণ হোক মহা-অধিষ্ঠান; তা ছড়িয়ে পড়ুক বঙ্গভূমি থেকে বিশ্বভূমিতে। তাঁর অসামান্য সাফল্যের মূলে আছে শিল্পীর জন্মগত প্রতিভা, পারিবারিক ঐতিহ্য ও আজীবন সাধনার সংমিশ্রণ। এসবের সার্থক সম্মিলনেই তিনি একাধারে সাহিত্যরচনা, শিল্পসাধনা, চিত্রপরিচালনা প্রভৃতি বহুমুখী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছেন অগণিত দুর্লভ শিরোপা। শিল্প-সাহিত্যজগতে তাঁর আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তাঁর অমর আত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র প্রণাম।
বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।)