এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “আমার প্রিয় সাহিত্যিক প্রবন্ধ রচনা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার প্রিয় সাহিত্যিক রচনা
অনুরূপে: (১) তোমার প্রিয় লেখক; (২) কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র।
ভূমিকা:
আমার প্রিয় সাহিত্যিক কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের শিল্পসৃজন যেখানে নৈতিক মানুষকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথের শিল্পসৃজন যেখানে নান্দনিক মানুষকে নিয়ে, সেখানে শরৎচন্দ্রের শিল্পসৃজন সাধারণ মানুষকে ঘিরে। তিনি ভাগ্যহত জীবনের অকৃত্রিম রূপকার। সমাজের অবহেলিত, ঘৃণিত মানুষজন স্থান পেয়েছে তাঁর সাহিত্যে। মানবমনের ক্রন্দনধ্বনি শরৎ সাহিত্যে ধ্বনিত হওয়ায়, তিনিই আমার প্রিয় কথাসাহিত্যিক।
জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা:
শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ভাগলপুরে মাতুলালয়ে তিনি প্রতিপালিত হন৷ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অর্থাভাবে উচ্চতর শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন। জীবিকার জন্য চাকরি করতে তাঁকে ব্রহ্মদেশ যেতে হয়েছিল। ব্রহ্মদেশে বসবাসকালে তিনি সাহিত্যসাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। দেশপ্রীতি ও অবহেলিত জনগণের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে লেখনী ধারণে অনুপ্রাণিত করেছিল। সামাজিক, রাজনৈতিক বহু লেখা তিনি লিখেছেন। প্রত্যক্ষভাবে তিনি রাজনীতিও করেছেন।
তাঁর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু চিত্তরঞ্জন দাস। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক পান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডি.লিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারী এই অসামান্য ব্যক্তিত্বের জীবনবসান ঘটে।
শরৎচন্দ্রের সাহিত্যজগতে প্রবেশ:
‘কুন্তলীন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘মন্দির’ গল্পটি শরৎচন্দ্রের প্রথম প্রকাশিত গল্প ৷ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকায় তার ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হয়। বহু পাঠকের মন জয় করে এবার তিনি সাহিত্য জগতে ডুব দেবার জন্য ব্রহ্লদেশ থেকে কলকাতায় চলে আসেন এবং কথাসাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব রূপে চিরসম্মানের অধিকারী হয়ে ওঠেন।
গল্পকার শরৎচন্দ্র:
বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য বড়োগল্প এবং কয়েকটি ছোটোগল্প শরৎচন্দ্র রচনা করেন । তার মধ্যে ‘মন্দির’ (১৯০৩), ‘বড়দিদি’ (১৯০৭), ‘রামের সুমতি’, ‘পথ-নির্দেশ’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘আঁধারে আলো’, ‘কাশীনাথ’, ‘আলো ও ছায়া’, ‘বোঝা’, ‘অনুপমার প্রেম’, ‘হরিলক্ষ্মী’, ‘মহেশ’, ‘ছেলেধরা’, ‘লালু’, ‘দেওঘরের স্মৃতি’ -তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
শরৎগল্পের বিশিষ্টতা:
(ক) বাঙালি জীবনের হৃদয়-রহস্যের মধ্যে ডুবে তিনি বাঙালি জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কামনা-বাসনার তৃপ্তি-অতৃপ্তিকে গল্পে মূর্ত করেছেন।
(খ) ছোটোগল্পের নিজস্ব শিল্পরূপ ছেড়ে তিনি সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন৷ ছোটোগল্পের শেষে অপ্রত্যাশিত চমক, অতৃপ্তি শরৎচন্দ্র সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেছেন।
(গ) সমাজের অন্ত্যজ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিষ্ঠা তাঁর গল্পে ব্যাপকভাবে ঘটেছে।
(ঘ) প্লটের সুডোল গাঁথনি নয়, চরিত্রের সুস্পষ্ট রূপ- চিত্রণই তাঁর ছোটোগল্প-শিল্পের প্রধান হাতিয়ার। ‘মহেশ’, ‘বিলাসী’, ‘অভাগীর স্বর্গ’ -এই রীতির সার্থক নিদর্শন ৷
বাংলা উপন্যাসে শরৎচন্দ্র:
উপন্যাস-শিল্পেও শরৎ প্রতিভার অসাধারণ স্ফূরণ লক্ষ করা যায়। সংসারের অতিপরিচিত সাধারণ নরনারী তাঁর উপন্যাসের পাত্রপাত্রী। সমাজের দুঃখী ও ব্যথিত মানুষদের জন্য তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তাঁর শিল্পসম্মত উপন্যাসগুলির মধ্যে ‘বড়দিদি’ (১৯১৩); ‘বিরাজ বৌ’ (১৯১৪); ‘বিন্দুর ছেলে’ (১৯১৪); ‘মেজদিদি’ (১৯১৫); পল্লীসমাজ (১৯১৬); ‘নিষ্কৃতি’ (১৯১৭); ‘শ্রীকান্ত’ (চারখণ্ডে প্রকাশিত); ‘চরিত্রহীন’ (১৯১৭); ‘দত্তা’ (১৯১৮); ‘গৃহদাহ’ (১৯২০); ‘নববিধান’ (১৯২৪); ‘পথের দাবী’ (১৯২৬); ‘শেষ প্রশ্ন’ (১৯৩১); ‘বিপ্রদাস’ (১৯৩৫); ‘শুভদা’ (১৯৩৮); ‘শেষ পরিচয়’ (১৯৩৯) অন্যতম।
শরৎ-উপন্যাসের বিশিষ্টতা:
(১) শরৎচন্দ্রের প্রায় প্রতিটি উপন্যাস সামাজিক সমস্যা বিজড়িত। সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্বের প্রকাশ, সামাজিক প্রথা ও অভাবের চাপে ব্যক্তিমনের যন্ত্রণা শরৎ-উপন্যাসে যথাযথভাবে রূপায়িত হয়েছে। গ্রামবাংলার ও মফস্সলের পারিবারিক জীবন, ঘরোয়া জীবনের খুঁটিনাটি শরৎ সাহিত্যে অভিব্যক্ত। পরিচিত সাধারণ নরনারীর জীবনের ছবি শরৎ উপন্যাসে স্বতপ্রতিষ্ঠিত। চরিত্রগুলি মনের দ্বারা পরিচালিত। শরৎ সাহিত্যে পুরুষ অনেকটা উদাসীন, ভাবুক এবং নিষ্ক্রিয়।
অথচ নারীর বিচিত্র রূপ লক্ষণীয়। সহনশীলা অন্নদাদিদি, সেবাপরায়ণা সাবিত্রী, স্বৈরিণী কিরণময়ী, প্রেমিকা রাজলক্ষ্মী, প্রতিবাদমুখরা অভয়া, কমললতা এরা সকলেই পরিপূর্ণ নারী চরিত্র। সমকালের সমাজজীবনে জমিদারি অত্যাচার, দরিদ্র মানুষের অসহায় অবস্থার চিত্র, সামাজিক ভেদবুদ্ধির ফলে নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অবজ্ঞা শরৎ সাহিত্যে চিত্রিত।
প্রাবন্ধিক শরৎচন্দ্র:
প্রাবন্ধিক হিসেবে শরৎচন্দ্র উচ্চমানের শিল্পী। তাঁর ‘তরুণের বিদ্রোহ’ (১৯১৯) তৎকালীন পরাধীন দেশের অগ্নিবর্ষী বীজমন্ত্রস্বরূপ। সমাজে নারীর অবমাননা দেখে তাদের মুখে প্রতিবাদের ভাষা জোগালেন ‘নারীর মূল্য’ (১৯৩০) প্রবন্ধে। ‘স্বদেশ ও সাহিত্য' প্রবন্ধে তাঁর দেশজ চিন্তা-চেতনা ও দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উপসংহার:
শরৎচন্দ্র শুধু কথাসাহিত্যিক নন, দরদি কথাশিল্পী । তাঁর সরল গদ্যশৈলী, আবেগময় ভাষা, সমাজদীক্ষা, মন ও মননের টানাপোড়েন আজও বাংলা সাহিত্যের গতিকে প্রবহমান রেখেছে । মানুষের হয়ে নালিশ জানাতে তিনি কলম ধরেছিলেন। তাই-
“দেশের মৃত্তিকা নিল যারে হরি,
দেশের হৃদয় তাকে রাখিয়াছে ধরি।”
বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।)
আরও পড়ুন-
Thanku
ReplyDelete