Ads Area


আমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা | My Favorite Poet Is Essay Writing

আমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা | My Favorite Poet Is Essay Writing

আমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা

আজকের পোস্টে আমরা তোমাদের প্রবন্ধ রচনা দিলাম৷ আমার প্রিয় কবি প্রবন্ধ রচনা এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য৷ তাই এই রচনাটি খুব ভলো করে মুখস্ত করে রাখো৷

"আমার প্রিয় কবি রচনা" থেকে আমরা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে দেওয়া হলো৷


অনুরূপে: (১) বাংলা সাহিত্যে নজরুল; (২) কবি নজরুল  জীবন ও সাহিত্য; (৩) কবিব্যক্তিত্ব নজুরল।


ভূমিকা:

আমি চির বিদ্রোহী বীর

আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির !

বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বিদ্রোহের প্রবল ধ্বজা উড়িয়ে যিনি বাংলা সাহিত্যের আসন অলংকৃত করেছেন তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহের প্রবল সুর তাঁর কবিতায় শোনা গেলেও তিনি একই সঙ্গে জীবনবাদী কবি; মানবতাবাদী কবি; স্বদেশপ্রেমিক এবং রোম্যান্টিক কবি। তবে বিদ্রোহী কবি হিসেবেই নজরুল বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে পরিচিত ৷


জন্ম, বংশপরিচয় ও শিক্ষা:

কবি বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ (ইংরেজি ২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজি ফকির আহম্মদ; মাতা জাহেদা খাতুন। শৈশব থেকেই তিনি প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে মানুষ হন।

প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত কবি পারিবারিক অভাব-অনটনের জন্য ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে ছেলেবেলা থেকেই পাঠ্য বিষয়ের পাশাপাশি আরও নানা বিষয়ে জ্ঞানলাভের চেষ্টা করেছেন। এগারো বছর বয়সে নজরুল ‘লেটো’ দলে যোগ দেন।

পরে নিজের ইচ্ছাতেই রানিগঞ্জের শিয়ারশোল রাজ স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। এখানে কল্লোল গোষ্ঠীর শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার বিশেষ পরিচয় হয়।

‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য’ পত্রিকায় তাঁর ‘মুক্তি’ নামক কবিতা প্রকাশিত হলে তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। হাফিজ মামুদ আহম্মদ নামে এক ভদ্রলোকের সহায়তায় কবি ‘ধূমকেতু’ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত প্রকাশ করেন।

এই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য তিনি কারারুদ্ধ হন। মুক্তির পর গিরিবালা দেবীর কন্যা প্রমীলা সেনগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানিতে চাকরি নেন। এরপর কবির দুঃখময় জীবনের সূচনা।

মায়ের মৃত্যু; সন্তান বুলবুলের মৃত্যু তাঁকে মুহ্যমান করে। নজরুল বিস্ময়কর সংগীত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং একজন দক্ষ সংগীত পরিচালক ছিলেন। তাঁর কবিতা, গান ধীরে ধীরে বেতার, চলচ্চিত্র, নাটক-প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে।

১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে কবিপত্নীর মৃত্যু হয়। শেষ জীবনে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং ১৯৭৬ খিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ঢাকায় ইহলোক ত্যাগ করেন।


নজরুলের কাব্যচর্চা:

নজরুলের কাব্য-কবিতা একই সঙ্গে প্রতিবাদ প্রতিরোধের উচ্চারণ, রোমান্টিক কল্পনাবিলাস ও স্বদেশপ্রেমের নিগূঢ় অভিব্যক্তি। আবার তাঁর শিশু বিষয়ক অনেক কবিতা (‘ঘুম পাড়ানি গান’; ‘লিচুচোর’, ‘খুকী ও কাঠবিড়ালী’) আজও পাঠকের কাছে চমকের বিষয়। নজরুলের প্রতিবাদী কাব্যসম্ভারের মধ্যে- ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২); ‘বিষের বাঁশী’ (১৯২৪); ‘সর্বহারা’ (১৯২৬); ‘ভাঙার গান' (১৯২৪); ‘ফণিমনসা' (১৯২৭); ‘প্রলয়শিখা’ (১৯৩০) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। নজরুলের শিশুমনস্ক কাব্য ‘ঝিঙে ফুল’ (১৯২৬)। আবার ‘চক্রবাক’ (১৯২৯) কাব্যে মানব-মানবীর বেদনা বিশ্ববেদনায় পর্যবসিত হয়েছে। ‘নতুন চাঁদ’ (১৯৪৫, মার্চ) কাব্যে কবির বিদ্রোহ-বিবর্জিত মনোভাবের পরিচয় মেলে।


কবির উপন্যাস চর্চা:

বাংলা উপন্যাস চর্চাতেও নজরুল অসামান্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলির মধ্যে 'বাঁধনহারা’ (১৯২৯, আগস্ট); ‘মৃত্যুক্ষুধা’ (জানুয়ারি, ১৯৩০); ‘কুহেলিকা’ (১৯৩১) প্রভৃতি উল্লেখ্য।


বাংলা ছোটোগল্পে নজরুল:

বাংলা ছোটোগল্পে নজরুলের প্রতিভার বিকাশ খুব বেশি না হলেও তার ‘ব্যথার দান’ (১৯২২); ‘রিক্তের বেদন' (১৯২৫); 'শিউলি মালা’ (১৯৩১) বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।


নাটক রচয়িতা নজরুল:

নজরুল বাল্যকাল থেকে দারিদ্র্যের চাপে বিভিন্ন পেশাদারি কর্মে লিপ্ত হন। কাজেই নাটক রচনা তাঁর কাছে অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। তাঁর সফল নাটকগুলির মধ্যে ‘ঝিলমিলি’ (১৯৩০); ‘আলেয়া’ (১৯৩১); ‘পুতুলের বিয়ে’ (১৯৩৩); ‘মধুমালা’ (১৯৬০) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।


প্রাবন্ধিক নজরুল:

বাংলা প্রবন্ধ জগতেও নজরুলের প্রতিভা অনন্য। তিনি তৎকালীন সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার অসারত্ব নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেন। বিশেষ করে ‘যুগবাণী’ (১৯২২); ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী' (১৯২৩); ‘ইন্দ্রমঙ্গল’ (১৯২৩); ‘দুর্দিনের যাত্রী’ (১৯২৬); ‘ধূমকেতু’ (১৯৬১) -তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ।


নজরুলের সংগীতচর্চা:

গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে নজরুল এক অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। তিনি বিভিন্ন রাগ-রাগিনী সহযোগে সংগীত রচনা ও চর্চা করেছেন। ঝুমুর, বাউল, গজল, ঠুংরী, কীর্তন, খেয়াল প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গনে তাঁর যাত্রা। তাঁর প্রেম-সংগীত; শ্যামাসংগীত, ইসলামি সংগীত অদ্বিতীয় । ‘বুলবুল’ (১৯২৮); ‘চোখের চাতক’ (১৯২৯); ‘নজরুল গীতিকা’ (১৯৩০); ‘গুলবাগিচা’ (১৯৩৩); ‘গীতিশতদল’ (১৯৩৪); ‘রাঙাজবা’ (১৯৬১) তার শ্রেষ্ঠ সংগীত গ্রন্থ। তার শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ বিষয়ক তিনটি গান আজও বাঙালির ভক্তমনকে আবিষ্ট করে- ‘জয়তু শ্রীরামকৃষ্ণ নমো মম; পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার; জয় বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী বীর চিরগৈরিকধারী’ ইত্যাদি গানগুলি অনন্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।


কেন আমার প্রিয় কবিকবি:

নজরুলের বাল্যজীবনের সংগ্রাম আমাদের কাছে প্রেরণাস্বরূপ। তিনি জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনতরি পাড়ি দিয়ে প্রমাণ করেন- 'তিনি চির উন্নত শির।' পরাধীন দেশের বুকে সর্বপ্রকার অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন, একা রক্ত না -ঝরাতে পেরে বড়ো বিষজ্বালা বুকে নিয়ে বিদ্রোহের ঝড় তুলেছেন বাংলা কাব্যে। তিনি লিখেছেন-

“রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা

তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,

বড়ো কথা বড়ো ভাব আসে নাকো মাথায়, বন্ধু, বড়ো দুখে !”


তাই যেখানেই মানবতার অপমান, মনুষ্যত্বের অবমাননা দেখেছেন- সেখানেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন। সমকালীন আধুনিক কবিদের মধ্যে তাই তিনি পৃথক মানসিকতার কবি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নজরুল- চর্চার পালাবদল হলেও সমকালীন যুগের নিরিখে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।


উপসংহার:

নজরুলের কাব্য-কবিতায়, ছন্দে ও গানে কত-না ভাবের দেশে স্বপ্ন-ধূসর মন নিয়ে বিচরণ করেছি; কত না কৰ্ম-উদ্দীপনায় জেগে উঠেছি। প্রার্থনা করি প্রিয় কবির সৃষ্টি-সম্ভার থেকে জীবনে যেন বঞ্চিত না হই; জীবনে এমন কোনো দুঃসময় যেন না আসে যে সময় কবি নজরুলকে আমরা বিস্মৃত হব। মহাশূন্যের মহাকর্মযজ্ঞের অবসানে কবি আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও আমাদের চিরস্মরণীয়।


বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধরচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন


(যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area