Ads Area


শিক্ষার উদ্দেশ্যে: শিখনের মূল চারটি স্তম্ভ- ডেলার কমিশন (Educational objectives: 4 Pillars of Education- Delores Commission)

শিক্ষার উদ্দেশ্যে: শিখনের মূল চারটি স্তম্ভ- ডেলার কমিশন (Educational objectives: 4 Pillars of Education- Delores Commission)


শিক্ষার উদ্দেশ্যে: শিখনের মূল চারটি স্তম্ভ- ডেলার কমিশন (Educational objectives: 4 Pillars of Education- Delores Commission)


শিক্ষার উদ্দেশ্যে: শিখনের মূল চারটি স্তম্ভ- ডেলার কমিশন


পাঠ্যসূচি- শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিখনের মূল চারটি স্তম্ভ- জানতে শেখা, করতে শেখা, একসঙ্গে বাঁচতে শেখা, পরিণত হতে শেখা।


ভূমিকা - Introduction:


শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই এবং শিক্ষা ব্যতীত মানুষের জীবন পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এর উপস্থিতি অনুভূত হয়। জীবনের পদে পদে এর প্রয়োজন। এর অভাবে চলার ছন্দের ব্যাঘাত ঘটে।


Jacques Delor তাঁর ইউনেস্কোর রিপোর্ট (Learning: The Treasure within. Report to UNESCO of the International Commission of Education for the twenty- first century, France, UNESCO, 1996) -এ বলেছেন, "Education an indispens able asset in its attempt to attain the ideals of peace, eedom and social justice.”


অর্থাৎ শিক্ষা শান্তি, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিক্ষা সামাজিক দায়িত্ব পালনে মানুষকে প্রণোদিত করতে উৎসাহ দান ও প্রেরণা।


(incentives and motivation) দিয়ে থাকে। Jacques Delor- এর শিক্ষাচিন্তা থেকে দুটি সূত্র পাওয়া যায়:


(১) ব্যক্তি ও সামাজিক উন্নয়ন (personal and social development)

(২) দরিদ্রতা, অজ্ঞতা, অত্যাচার ও যুদ্ধের বাতাবরণ থেকে মুক্তি (reduce poverty, ignorance, oppression and war)| সুতরাং শিক্ষা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করে।


শিক্ষা রাজনৈতিক, আর্থিক, সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত সমাজকে মুক্ত করে। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের জাল থেকে সমাজের পশ্চাদপদ অংশকে মুক্ত করে তাদের মর্যাদাবোধ জাগ্রত করে। তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে শিক্ষা অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের বেলায় আমরা দেখেছি যে, মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশই শিক্ষার লক্ষ্য। এই সর্বাঙ্গীণ বিকাশের অপরিহার্য অঙ্গ হল সামাজিক বিকাশ, সমাজ অনুমোদিত পথে নিজের সম্ভাবনার বিকাশ সাধন ও তার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তন ঘটানো এবং সমষ্টির উন্নতি ও কল্যাণের জন্য সামাজিক নীতিগুলি মেনে তার ভিতর দিয়ে ব্যক্তির গুণাবলির বিকাশ করা। তাই সামাজিক পরিবেশ এবং ব্যক্তিগত চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে।


শিক্ষার লক্ষ্য ও স্বরূপ সম্পর্কে বিশ্বের প্রত্যেক শিক্ষাবিদ এবং চিন্তাবিদ বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই উদ্দেশ্য UNESCO নানা ধরনের শিক্ষা পরিকল্পনা ও সুপারিশ করেছেন। তাঁদের শিক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "But how can we learn to live together in the global village, if we cannot manage to live together in the communities to which we naturally belong - the nation, the city, the village, the neighbourhood? Do we want to make a contribution to public life and can we do so? That question is central to democracy".


অর্থাৎ শিক্ষার দ্বারা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার উপযোগী নাগরিক গড়ে উঠবে যারা সহযোগিতার মনোভাবের মধ্য দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন প্রতিবেশীর সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে তার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে বিশ্বের আদর্শ নাগরিক, বিশ্বমানব “এক পৃথিবী” হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।


সুতরাং এই প্রতিবেদনে কয়েকটি কথার তাৎপর্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


(১) সুনাগরিক হওয়ার জন্য যেসব চারিত্রিক গুণের দরকার, ব্যক্তিকে তাঁর চর্চার সুযোগ দান করা। বিশেষভাবে সহযোগিতা শৃঙ্খলা ও সৃজনশীলতা যেগুলি গণতন্ত্রের পক্ষে একান্ত কাম্য।


(২) গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূল কথা হল ব্যক্তির উন্নতি সাধন এবং ব্যক্তির মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সাধন। তাই এই শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। ব্যক্তির উন্নতি হলে তার পরোক্ষ ফল সমাজের উপর এসে পড়বে।


(৩) শিক্ষা গতিশীল প্রক্রিয়া হিসাবে জ্ঞানের ও দক্ষতার বিকাশ সাধন।


(৪) ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমাজের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করা। এর মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন লোকের প্রতি ভালবাসা, সাহায্য, সহানুভূতি, সখ্য ইত্যাদি গুণগুলি বর্ধিত হয়।


শিক্ষা-সংকট:


নতুন সহস্রাব্দের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে আরো গতিশীল করার জন্য ব্যাপক আয়োজন চলছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কার সভ্যতার জয়যাত্রাকে আরো ত্বরান্বিত করে তুলেছে।


বিশ্বের দূরতম প্রাপ্ত এসেছে একেবারে ঘরের কাছে । সংবাদ আদান- প্রদান হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন (UNESCO) যথার্থভাবে মন্তব্য করেছেন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির এই অকল্পনীয় অগ্রগতি মানবসমাজের পক্ষে কতখানি কল্যাণকর হবে, বিশ্বের কত বেশি অংশে মানুষ এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে উন্নত জীবনধারণ করার সুযোগ পাবে তা বহুলাংশে নির্ভর করে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার ওপর।


তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা কিছুটা দুরূহ। শিক্ষার উদ্দেশ্যের যথার্থ মূল্যায়ন করতেহলে শিক্ষা- সংকটের বিষয়কে বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে।


সংকটগুলি হল–


(১) বিশ্বায়ন- একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এক বিপুল সম্ভাবনার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে মানুষের চাহিদাও ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। তার উপর বিশ্বায়নের নীতির প্রভাবে মানুষ ভোগবাদে নিমজ্জিত হচ্ছে। তাই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া মানুষের জীবনকে ভীষণভাবে স্পর্শ করেছে।


আধুনিক জীবন চেতনায় পরিবর্তনের রং লেগেছে। বদলেছে জীবন, বদলেছে জীবনবোধ। “বিশ্বায়ন” –এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘গ্লোবালাইজেশন’- অবাধ প্রতিযোগিতা, পুঁজি আর পণ্যের বাধাহীন চলাচল দেশ থেকে অন্য দেশে। বিশ্বজুড়ে উদারনীতি, অর্থনীতির বিশ্বায়নের স্লোগানে গোটা দুনিয়া উথাল- পাথাল।


তারই প্রভাবে মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়ে চলেছে। বিত্তবান আর বিত্তহীন- এই দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার নির্দেশিত পথে হাঁটতে গিয়ে স্বনির্ভরতার প্রসঙ্গ প্রাসঙ্গিক হয়ে আসছে।


নতুন নতুন বেকারের সৃষ্টি হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি জনসাধারণের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর এক অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করছে। আর ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধার্মিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিভিন্ন স্তরে বিশ্বায়নের প্রভাব ঢুকে পড়েছে।


আমরা জানি, মানব সভ্যতার উন্নয়নের মৌলিক শর্ত হল শিক্ষা। শিক্ষা ব্যতীত গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব, অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার সর্বজনীনতা বিশ্বায়নের যুগে আদর্শের বিষয় নয়, আবশ্যিক এবং একমাত্র অধিকার। বিশ্বায়ন তখনই আমাদের কাছে গ্রহণীয় যখন তাকে উপভোগ করার মতো ‘সক্ষমতা’ আমাদের জন্মাবে। ‘সক্ষমতা’ জন্মাবে শিক্ষা প্রচেষ্টা থেকে। এই প্রচেষ্টা পরিস্ফুট হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য।



(২) শ্রেণি বিভাজন-


শিক্ষা সংকটের আর একটি দিক শ্রেণি বিভাজন। আমাদের দেশে শ্রেণি বিভাজন সমাজদেহকে পঙ্গু করে দিয়েছে। নানা সামাজিক কারণে দীর্ঘকাল অবহেলিত থাকার ফলে সমাজের একটা অংশে প্রকট হয়েছে নিরক্ষরতা, ধর্মভীরুতা এবং কুসংস্কার। সমাজের সবধরনের বৈষম্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং চালু রাখতে শ্রেণি বিভাজনের একটি অতুলনীয় ভূমিকা আছে।


শিক্ষাই একমাত্র সমাজের শ্রেণি বিভাজনের কারণগুলিকে রক্ষা করতে, সাহায্য করতে পারে এবং শ্রেণিভিত্তিক অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে। তাই শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধ পদ্ধতিগুলির পুনর্মূল্যায়ন ভাল মতোই দরকার আছে।


বৈষম্য বিরোধী ব্যবস্থা হিসাবে যেসব সরকারি কর্মনীতি চালু করা হয়েছে, খোলামনে সেগুলির ফলাফল পর্যালোচনা করতে হবে- কোনো পূর্বনির্ধারিত সূত্র দ্বারা চালিত হলে চলবে না।


(৩) লিঙ্গ বিভাগ-


লিঙ্গ বৈষম্যের ব্যাপারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিস্থিতি অতি খারাপ। যার একটি প্রকাশ দেখা যায় নারীদের অস্বাভাবিক রুগ্নতা ও মৃত্যুহার। যেসব দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পুষ্টির ক্ষেত্রে নারীরা এ ধরনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় ভোগেন না, সেগুলির সঙ্গে তুলনা করলে দক্ষিণ এশিয়ার সাধারণ নারীদের জীবনযাত্রার দুরবস্থার অবস্থা সহজেই পরিস্কারভাবে দেখা যায়।


কিন্তু অন্যদিকে এটাও দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চশ্রেণির নারীরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নানা বিষয়ে এগিয়ে গিয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে গেছেন।


নিম্নশ্রেণির নারীরা যে বাধা অতিক্রম করতে পারেন না, উচ্চশ্রেণিতে জন্মানো নারীরা সেই বাধা সহজেই টপকাতে পারেন। তাই সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিতে লিঙ্গবিভেদ নিশ্চয়ই একটি উপাদান। “বস্তুত নিম্নশ্রেণির নারীদের ক্ষেত্রে শ্রেণিবজ্ঞনা ও লিঙ্গবজ্ঞনা এক বিন্দুতে মিলিত হয়ে তাদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে”।


একদিকে নিম্নশ্রেণির অভিশাপ এবং তারই সঙ্গে মেয়ে হয়ে জন্মানোর বঞ্চনা। এই দুই দিক একত্রিত হবার ফলে নিম্নশ্রেণির মেয়েরা নিদারুণ দৈন্য ও রিক্ততার মধ্যে পড়েন। অর্থাৎ নিচু জাতিতে জন্মানোটা নিঃসন্দেহে বঞ্চনার একটা কারণ। কিন্তু নিচু জাতির লোকেরা যদি দরিদ্র হয়, জাতিগত বঞ্চনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় (অমর্ত্য সেন)।


তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ণয়ে লিঙ্গ-বৈষম্য তীব্র হলে সমাজ দুর্বল হয়ে পড়বে। একমাত্র নারীশিক্ষার মাধ্যমেই সমাজকে সবল ও সমৃদ্ধিশালী করা যায়।



ভারতীয় সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকার সাম্যের কথা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের গোড়াতেই রয়েছে নারী-পুরুষের সাম্যের কথা (equal rights of men and women)। আমাদের সংবিধানও সেই নীতি গ্রহণ করেছে। সংবিধানের ১৫ (১) নং অনুচ্ছেদে আছে- The state shall not discriminate against any citizen on grounds of religion, race, caste, sex, place of birth or any of them।

বারবার এই ধরনের সাম্যের কথা সংবিধানে উচ্চারিত হয়েছে। যেমন ৩৯ (ক) নং অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে- "The citizens, men and women equally, have the right to an adequate means of livelihood"। অর্থাৎ নারী-পুরুষের বৈষম্য রাখা হয়নি। সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্যে সমাজের যোগ্য নাগরিক হিসাবে যাতে তাঁরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন (UNESCO) যথার্থই বলেছেন যে- ছেলেমেয়েদের এমন শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন সেখানে পুরুষেরা নারীর অধিকারের প্রতি সৌজন্যমূলক ব্যবহার করেন সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত (learned to respect rights of women and men)


(৪) সুস্থ পরিবেশ-


অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা সম্পূর্ণভাবে মেটানোর পূর্বেই পৃথিবীর প্রতিটি কোণে কোণে আরও একটি সমস্যা ভীষণভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। সমস্যাটি- বিশ্ব পরিবেশ। শিল্প, প্রযুক্তি এবং আধুনিক ভোগবাদী জীবনযাত্রা বিকাশের সঙ্গেই এসেছে দূষণ, যা ধ্বংস করেছে পরিবেশ, বিপন্ন করেছে মানুষ, জীবজগৎ এবং প্রকৃতিকে।


এই সমস্যা মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে নয়, তাদের অদূরদর্শী বিদ্বেষেরই বিষবৃক্ষ। নির্বিচারে অরণ্যচ্ছেদন, রাসায়নিক পরিবেশ দূষণ, লাগামহীন শিল্পোন্নয়নের কুফলের দিকে যদি আমরা নজর না দিই, তবে অচিরেই পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাহত হয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।


তাই United Nations Conference on Environment and Development- এ (UNCED, 1992 Rio-de-janerio) বলা হয়েছে সচেতন নাগরিক হিসাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে সুস্থ সবুজ পৃথিবী ফিরিয়ে দেওয়া (Good condition to future generation) আমাদের কর্তব্য।


(৫) বিশ্ব অস্থিরতা-


গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবী জুড়ে বিশেষত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সাহায্যে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। শান্তির পক্ষে এবং সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে দুনিয়ার সর্বস্তরের মানুষকে সজাগ করতে হবে।


সজাগ থাকতে হবে সচেতন বুদ্ধিজীবী সমাজের সকলকে, দেশের ঐক্য ও অখন্ডতা ভাঙার গভীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে। পৃথিবী জুড়ে দরিদ্র, বেকারি, দুর্নীতি বিষমগ্ন প্রভাব বৃদ্ধি ঘটেছে।


এমনকি অগ্রসর বা উন্নয়নশীল দেশগুলিও কর্মহীনতার চাপে ভুগছে। ভোগবাদী জীবনের নেশায় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে ইঁদুর দৌড়। এই নেশায় মানুষ প্রকৃতিকে এবং নিজেকে করছে নিঃস্ব ও রিক্ত।


অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা, লোভ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মধ্যে দ্বেষ ও ঘৃণা সঞ্চার করছে। এর ফলে যুদ্ধের আবহাওয়া পৃথিবী ঘিরে ফেলেছে, শুরু হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ (Cold War)। যুদ্ধের আবহাওয়াতেই আমরা বাস করছি।


ফলে ভাবীকালকে যুদ্ধের নিগ্রহ থেকে রক্ষা করার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতার পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কমিশন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি (Peaceful coexistence ) অনুসরণ করার কথা ঘোষণা করেছে । আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (International Atomic Energy Agency, IAEA) পারমাণবিক শক্তি যাতে বিশ্বশান্তি ও মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় তার প্রচেষ্টা করা।



শিক্ষার উদ্দেশ্য এই সমস্ত বিষয়ে বিশ্বের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন করা। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে ন্যায়, মানবাধিকার ও আইনের অনুশাসনের প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধাকে দৃঢ় করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষাক্ষেত্রে নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতা করা মূল বিষয় হিসাবে এগিয়ে এসেছে।


(৬) সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ-


মানবসভ্যতার অগ্রগতির জন্য দায়ী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার এবং কারিগরি বিদ্যার উন্নতি। তাই আজকের মানুষ অন্তত সহস্র গুণ বেশি সমাজ-নির্ভর হয়ে পড়েছে। তার অস্তিত্ব রক্ষার অপরিহার্য উপকরণ, জীবিকা-নির্বাহ, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন, ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্য, বিলাসের উপকরণ, চিন্তার বিষয়বস্তু- এ সবের জন্যই সে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নানা ব্যক্তি ও সংগঠনের উপর নানা দিক দিয়ে নির্ভরশীল।

আধুনিকতার প্রভাবে সমাজজীবনে বস্তুমুখী পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে এই প্রক্রিয়া মানুষের জীবনযাত্রার মান ও মূল্যবোধের পরিবর্তন করেছে। এই পরিবর্তন সার্বিক। আধুনিকতার প্রভাবে কৃষি, শিল্প, ধর্ম, সামাজিক বিন্যাস, শিক্ষা ইত্যাদি সমস্ত দিকেরই পরিবর্তন হয়।


আধুনিকতার প্রভাবে মানুষের বিশ্বাস ও মনোভাবের পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ সার্বিকভাবে পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই এই পরিবর্তন-অভিমুখিতা আধুনিকতার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আধুনিকতার প্রভাবে অন্যান্য সামাজিক সংস্থার মতো শিক্ষাসংস্থারও নানারকম পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিকতার প্রভাবে শিক্ষার উদ্দেশ্যগত পরিবর্তন হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা ও মতামতের উপর উপযুক্ত গুরুত্ব দেওয়া আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।

শিক্ষার উদ্দেশ্য গঠনে আধুনিকতার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় সবরকম বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতে হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষাসংস্থার (UNESCO) একটি রিপোর্ট এ সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে আধুনিকতার জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা রচনা করতে হলে, তারও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, বিষয়বস্তু ইত্যাদি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে শিক্ষাকে পুনর্বিন্যস্ত করলে তবেই তা সামাজিক পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।



আধুনিকতার প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চিত্তের উপর একরকম সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, রাষ্ট্র সংস্কৃতি ছাড়িয়ে এখন এসে পৌঁছেছে বিশ্বসংস্কৃতি। এই বিশ্বসংস্কৃতির প্রভাব অবচেতনে মনে অজ্ঞাতসারে কাজ করে যাচ্ছে। তার ফলে মানুষের মনে সর্বদাই একটি দ্বন্দের সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ব্যক্তির মন সর্বদাই তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে ফিরে পাবার চেষ্টা করে।

কিন্তু ইন্দ্রিয়গুলি তাকে বাইরে আকর্ষণ করছে। ফলে আমাদের মনের উপর এই সংস্কার সমষ্টির প্রভাব লক্ষ করা যায়। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে ‘সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে গণ্য করা হয়।


 সুতরাং শিক্ষার সংকট ও দ্বন্দ্বগুলি অনুধাবন করে আমরা বলতে পারি একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যুগে শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণ করা সহজসাধ্য ব্যাপারে নয়। তাই কমিশন শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। যেগুলির সমন্বয় শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই।


শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণের সম্ভাব্য সমন্বয়:


(১) বিশ্বপ্রকৃতি ও স্থানীয় পরিবেশ-


বিশ্বপ্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে। যাতে সামাজিক পরিবেশের অংশ হিসাবে প্রত্যেক শিশু একটি পরিবারে (Family) বা গোষ্ঠীর (Community) বা সমাজের (Society) বা রাষ্ট্রের (State) সদস্য হিসাবে তৈরি হয় সে তার নিজস্ব সামাজিক পরিবেশের মধ্যে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক স্থাপন (Social relation) করে এবং বিভিন্ন ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করতে পারে। অর্থাৎ সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার (Social interaction) সম্পর্ক শিশুর মনে আনে সামাজিক চেতনা। এর মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সামাজিক বিষয়ের প্রতি আগ্রহ সঞ্চার এবং সামাজিক অভ্যাস গঠনে সহায়তা করবে।


(২) সর্বজনীন ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক-


সামাজিক প্রক্রিয়া হিসাবে শিক্ষা ব্যক্তিজীবনের সামাজিক ও কৃষ্টিমূলক অভিযোজন প্রচেষ্টার সহায়তা করে। শিক্ষার দ্বারা বিশ্ব নাগরিক হিসাবে ব্যক্তি সহযোগিতামূলক মনোভাব, গোষ্ঠী জীবনের প্রতি আনুগত্য, সমাজ পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ক্ষমতা ইত্যাদি সামাজিক আচরণগুলি সম্পাদনের প্রশিক্ষণ পায়। আধুনিক যুগে সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে ভিন্ন ভিন্ন কৃষ্টিসম্পন্ন গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে বাস করতে হয়।

তার ফলে ব্যক্তিকে মিশ্রকৃষ্টি সম্পন্ন (Mixed Cultural group) গোষ্ঠীর মধ্যে বসবাস করতে হয়। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে এমনভাবে শিক্ষা পরিকল্পনা করতে হবে যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি সার্থকভাবে অভিযোজন করতে পারে।


(৩) গতানুগতিকতা ও আধুনিকতা-


একবিংশ শতাব্দীতে সমগ্র পৃথিবীর অর্থনীতি একীভূত হয়ে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি দূরত্বকে ঘুচিয়ে দেয়। ভাষা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ফলে সৃষ্টি হয় বিশ্ব-সংস্কৃতি। বিজ্ঞান হয়ে ওঠে সকল মানুষের সম্পদ। শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের এই ধারণাই দিতে হবে যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, বাণিজ্য গোটা পৃথিবী আজ এক সূত্রে গ্রন্থিত কোনো জাতিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়- পৃথিবীর মানুষ এক সূত্রে আবদ্ধ।


আবার অপরদিকে শিক্ষা হল সাংস্কৃতি সংগতিবিধানের একটি প্রধান মাধ্যম। তাই শিক্ষার অভাবে কোটি কোটি ভারতবাসী যাতে ভারতের মূল সাংস্কৃতিক ভাবপ্রবাহ থেকে বিচ্যুত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।

কারণ আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শিক্ষাদীক্ষা, ভাবধারা, রীতিনীতি, বিশ্বাস, ধারণা, কৌশল, দক্ষতা, সাহিত্য-দর্শন প্রভৃতির সঞ্চিত ভান্ডারটিকেই এক কথায় ‘সংস্কৃতি’ বলা হয়। এর আর এক নাম হল সামাজিক উত্তরাধিকার।


প্রত্যেক সমাজেরই এই সাংস্কৃতিক ভান্ডারটি নিজস্ব স্বকীরতা ও বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। এইজন্য এক সমাজের সঙ্গে আর এক সমাজের মানুষের এত পার্থক্য দেখা যায়। যেমন ভারতীয়দের সঙ্গে আমেরিকা বাসীদের। সেইজন্য বিশেষ কোনো সমাজের সর্বজন গৃহীত সদস্য হতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সেই সমাজের এই সাংস্কৃতিক ভান্ডারটির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এবং সেটির সঙ্গে নিজেকে সংগতিবিধান করে চলতে হবে।


(৪) দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা- 


শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য রূপায়ণে সব সময় স্মরণ রাখতে হবে যাতে কোনো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে দ্রুত পরিবর্তন না করা যায়। কারণ, এর সাথে যুক্ত আছে অগণিত মানুষ। তাদের সাথে ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিবর্তনগুলি আনতে হয়। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। যদিও সমাজের পরীক্ষাব্যবস্থার আভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা চটজলদি সাফল্যের পথ ধরতে চায়।


এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় সাজেশনভিত্তিক মুখস্থবিদ্যা বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। মেধা বিকশিত হবার সুযোগ কম দেখা যায়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে উদ্দেশ্য রূপায়ণে স্মৃতিশক্তি বিকাশসাধনের সঙ্গে সঙ্গে মননশক্তি, কল্পনাশক্তি, ধীশক্তি, চিন্তাশক্তি বিকশিত হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।


(৫) প্রতিযোগিতা মনোভাব ও সমান সুযোগ এবং সমানাধিকার-


একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এক বিপুল সম্ভাবনার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে নাটকীয় অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে মানুষের চাহিদাও ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। সমগ্র সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, আদর্শের অবমূল্যায়ন, আত্নবিশ্বাসহীনতা, অন্ধ পাশ্চাত্যানুকরণের বশবর্তী ইন্দ্রিয়স্পৃহা চরিতার্থ করার তীব্র বাসনা ইত্যাদি নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে জর্জরিত। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মনোভাব এনে দেয়। 

সমাজ পরিবেশে সহযোগিতা ও মৈত্রীর আবহাওয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে হিংসা, দ্বেষ, ঘৃণা, আত্মশ্লাঘা প্রভৃতি দেখা যায়। আবার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের মধ্যে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিদ্যার উন্নতি হয় এবং ব্যক্তির সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় ও সমাজের মধ্যে নিজের ক্রমোচ্চশীল মর্যদা প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলে নিঃস্বদের (have-nots-দের) বড় রকমভাবে আলাদা করে দেয় সমৃদ্ধদের (have- দের) থেকে।



‘সমৃদ্ধ’ ও ‘নিঃস্ব’দের মধ্যে বিভাজন রেখা শুধু আলংকারিক নয়, এটা সামাজিক বিশ্লেষণের একটা বড় রকম অঙ্গ। এই সার্বিক বিভাজনেরই অনুধাবন আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। শিক্ষার উদ্দেশ্য রচনায় এই বৈষম্য ও বঞ্চনার দিককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।


কারণ, শিক্ষার সমসুযোগ এবং শিক্ষায় সমানাধিকার না থাকায় সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য, দূরত্ব এবং অনৈক্য দেখা যায়। শিক্ষায় সমসুযোগ বলতে রাষ্ট্রের সাধ্যমত ব্যয়ে সর্বোত্তম শিক্ষার সুযোগই হল আসল কথা। কিন্তু আজও শিক্ষাক্ষেত্রে অসমতা আমাদের পীড়া দেয়। শিক্ষার সম অধিকারের স্বীকৃতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই গণতান্ত্রিক পদবাচ্য হতে পারে না। সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্য রচনার সময় শিক্ষার সংকট ও দ্বন্দ্বগুলি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন।


যাতে আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য রচনায় আধুনিক জীবন পরিবেশেরই প্রতিফলন ঘটে। কারণ আধুনিক সমাজে মানুষ পরস্পর বিপরীতমুখী অনেক ধারণার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সহঅবস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।


আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন (UNESCO) -এর শিক্ষার উদ্দেশ্য স্থাপনের ক্ষেত্রেও আমরা অনুরূপ সমন্বয় দেখতে পাই। কমিশনের মত অনুযায়ী শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সম্পূর্ণ জীবনধারণের জন্য শিক্ষা (Education for complete living)।


এই মতবাদে জীবনের বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে গুরুত্ব দান করা হয়। কমিশনের মত অনুযায়ী আধুনিক যুগে শিক্ষা হল শিশুর জীবনব্যাপী অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া (Life long education)। আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার যুগে অনেক জীবনাদর্শ অচল বলে পরিত্যক্ত হয়েছে, আবার অনেক নতুন জীবনাদর্শের সৃষ্টি হয়েছে।


তাই শিক্ষাও জীবনের উপযোগী হয়ে সততই পরিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক শিক্ষার ভাবধারা আমাদের এই জীবন পরিবেশের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্ণীত হয়েছে। অর্থাৎ পরিবর্তনশীল জীবন পরিবেশে শিক্ষার্থীর যাতে সার্থকভাবে অভিযোজন করতে পারে, তার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়াই আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য।


পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখতে পাই শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ণয়ে পরস্পরবিরোধী মতবাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা একান্ত প্রয়োজন। এই পরস্পরবিরোধী মতবাদগুলি হল এরূপ-


1. বিশ্বপ্রকৃতি ও স্থানীয় পরিবেশ


2. সর্বজনীন ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক


3. গতানুগতিকতা ও আধুনিকতা


4. দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কর্ম পরিকল্পনা প্রতিযোগিতার


5. মনোভাব ও সমসুযোগ এবং সমানাধিকার




সুতরাং উপরিউক্ত পরস্পরবিরোধী মতবাদগুলি বিশ্লেষণ করলে আমরা বলতে পারি শিক্ষা-উদ্দেশ্য ব্যক্তির জ্ঞান ও তার সামাজিক অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাই বিশ্বে শিক্ষা একটি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। Jacques Delor তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন "Education has to face up to this problem now more than ever as a world society struggles painfully to be born: education is at the heart of both personal and community development; its mission is to enable each of us, withut exception, to develop all our talents to the full and to realize our creative potential, including responsibility for our own lives and achievement of our personal aims"।



তাই শিক্ষা মানুষের গণতান্ত্রিক ধিকার, জীবনের নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, সমসুযোগ দান ইত্যাদি স্বীকৃতি দান করে শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও তার মানোন্নয়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে। যাতে মানুষের মধ্যে বিদ্যা বা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়।


কমিশন এইরূপ সমাজকে 'Learning Society' হিসবে গণ্য করেছেন। কারণ ন্যূনতম শিক্ষার সুযোগের অভাবে সমাজের যথাযথ অগ্রগতি সম্ভব নয়।


কমিশনের মতে "the need to advance towards a learning society". The truth is that every aspect of life, at both the individual and the social level offers opportunities for both learning and doing. to take every opportunity for learning and self improvement, they will not be able to make good use of all these potential resources unless that have received a sound basic education. Better still, school should impart both the desire for, and pleasure in, learning, the ability to learn how to learn, and intellectual curiosity. One might even imagine a society in which each individual would be in turn both teacher and learner| অর্থাৎ আজকে সভ্যজগতে সব চাইতে বড় যে প্রয়োজন তা হল প্রতিটি শিশুকে, প্রতিটি নাগরিককে ন্যূনতম প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত ..... people need করে তোলা।




শিক্ষার উদ্দেশ্য-



শিখনের চারটি স্তম্ভ [Objectives of Education: Four fundamental types of Learning]:


আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশনের Jacques Delor কমিটির প্রস্তাবকে বাস্তব রূপ দিতে বিশ্বের সকল দেশ তৎপর হয়েছে নিজ নিজ পরিকাঠামোগত অবস্থার প্রেক্ষিতে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও নানান শিক্ষা প্রকল্পের উদ্ভাবনে যার মাধ্যমে মানব সমাজের ক্রমপুঞ্জমান জ্ঞানভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করে। পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া যায়। কারণ শিক্ষাকে বর্তমানে মানবসম্পদ এবং মানব মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


নিরক্ষর মানুষ সেই মূলধনি সম্পদকে যথাযোগ্য ব্যবহার করতে পারে না। ফলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এই বিষয়ে একমত যে, সাক্ষরতা তথা শিক্ষা এমন একটি হাতিয়ার, যা, নারী-পুরুষকে তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে, স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা দান করে এবং বাস্তব জগৎ ও জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ও ব্যবস্থা নিতে সক্ষম করে তোলে, ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যাভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। 


কিন্তু শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হল দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমিতিয়েন শহরে ৫ থেকে ৯ ই মার্চ ইউনেস্কো (UNESCO), (রাষ্ট্রসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা) -এর ব্যবস্থাপনায় একটি বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইউনেস্কো মনে করে এই বিশ্বের মোট নিরক্ষর মানুষের তিনভাগের দুইভাগেরও বেশি বাস করে ৯ টি রাষ্ট্রে। এই ৯ টি দেশের মধ্যে আছে ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মেক্সিকো এবং মিশর। সেইজন্য এই সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রসংঘকে প্রারম্ভিক শিক্ষার জন্য উদার হাতে সাহায্য করতে আবেদন জানানো হয়।


দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষাগত যে বৈষম্য আছে, তা দূর করার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার মনোন্নয়নের উপরেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


এছাড়া দীর্ঘদীন ধরে পরিপুষ্ট ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন দেশের অন্তর্নিহিত মৌলিক মূল্যবোধ -এর সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের চাহিদা এবং প্রত্যাশার প্রতি লক্ষ্য রেখে শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রবর্তনে আগ্রহী।



শিক্ষার উদ্দেশ্য-


দেশের আর্থিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে একটি উন্নত সমাজ তৈরি করা। একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া এবং একতাকে শক্তিশালী করা এবং সর্বোপরি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নিহিত শক্তি এবং প্রতিভার পরিপূর্ণ স্ফূরণ করা। Jacques Delor রাষ্ট্রসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্মেলনের চেয়ারপার্সন হিসাবে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিখনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের কথা ব্যক্ত করেছিলেন।



স্তম্ভগুলি নিম্নরূপ


(১) জানতে শেখা (Learning to know)


(২) করতে শেখা (Leaming to do)


(৩) একসঙ্গে বাঁচতে শেখা (Learning to live together)


(৪) পরিণত হতে শেখা (Learning to be)



(১) জানতে শেখা (Learning to know)


আধুনিক বিশেষধর্মিতার যুগে (age of specialization) এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও কারিগরি প্রযুক্তিবিদ্যার (rapid change brough about by scientific progress) ব্যাপক বিস্তারের ফলে বর্তমানে ব্যক্তির জ্ঞান (knowledge) তার সামাজিক অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাই জ্ঞানে প্রয়োগমূলক এবং গতিধর্মিতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। তাই Delor সমাজজীবনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার উদ্দেশ্যর কথা বলেছেন।


তিনি বলেছেন ‘জানতে শেখা’ (learning to know) শিক্ষার্থীর জীবনের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়া দরকার। যাতে এই জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সাহায্যে সে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে পারে। এই উদ্দেশ্যে সাধারণধর্মী জ্ঞানের মধ্যে বৈচিত্র্য ঘটিয়ে, নির্দিষ্ট কতকগুলি নতুন, মূল্যবান বিষয় গভীরতার সঙ্গে অনুধাবন করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই শিক্ষা হবে জীবনের মাধ্যমে জীবনের শিক্ষা।


ইউনেস্কোর (UNESCO) প্রতিবেদনে শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে এমন বিষয়বস্তু যুক্ত করতে হবে যেখানে ব্যক্তির সমাজজীবনের পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় জ্ঞান নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে বিকাশ লাভ ঘটবে।


(i) শিক্ষা হবে জীবনের মাধ্যমে জীবনের শিক্ষা।


(ii) শিক্ষা হবে কার্যভিত্তিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন প্রক্রিয়া -এই জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সাহায্যে বক্তি-সমাজজীবনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশে সক্ষম হবে।


(iii) শিক্ষার দ্বারা শ্রমের প্রতি মর্যাদা দিতে শেখানো।


(iv) শিক্ষার্থীদের উপযোগী সংযোগ কৌশল বিকাশ ঘটানো।


(v) শিক্ষার উদ্দেশ্য কর্মসম্পাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি।


(vi ) শিক্ষার্থীর মধ্যে বোধগম্যতার স্তর বৃদ্ধি করা- যার দ্বারা মানসিক তৃপ্তি, কোনো কিছুকে জানা ও আবিস্তারের স্পৃহা অনুভব করে তা বিজ্ঞান প্রীতি ও কৌতূহল স্পৃহা চরিতার্থ করতে পারে।


সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্যে ‘জানতে শেখা’ (Learning to know) বর্তমানে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ অতীতের মতো নিছক কতকগুলি অর্থহীন বিষয় শেখানো চলবে না। তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কতগুলি সাংকেতিক তথ্য, পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয়বস্তু, যেগুলির পরবর্তীকালে কোনো উপযোগিতা নেই, সেই সমস্ত বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার প্রবণতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।


অর্থাৎ অনাবশ্যক তথ্য ও বিষয়ের ভারে অযথা ভারাক্রান্ত। এই ধরনের শিক্ষার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের যথার্থ মানসিক ও চিন্তার পুষ্টি আনতে পারে না। তাই আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিষয়বস্তুকে অর্থপূর্ণ করে জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ কোনো বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে জানতে হণ্ডেবা বস্তুজগৎ সম্পর্ক জানতে হলে ব্যক্তিকে তার নিজের সঙ্গে বস্তুজগতের যে সম্পর্ক আছে তা উপলব্ধি করতে হবে। আবার বর্তমানে দূরদর্শনের অনেক চ্যানেল তৈরী হওয়ায় (Channel Surfing) শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বিস্ফোরণ ঘটে গেছে।


শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ দূরদর্শনের মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়। তাই শৈশবকাল থেকে জ্ঞানের স্পৃহা (learning to learn), কোন বিষয়ে মনঃসংযোগের ইচ্ছা (calling upon the power of concentration), স্মৃতি (memory), চিন্তন (thought) ইত্যাদি প্রভাব বিস্তার করে থাকে।


আবার এগুলি সবসময় যে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষাভিমুখী প্রভাব বিস্তার করে তা নয়, অনেক সময় শিক্ষার্থীর মনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে তাড়াতাড়ি কোনো কিছু শেখার প্রবণতা স্মৃতি (memory) -র পক্ষে মারাত্মক রূপ নেয়। কারণ গণমাধ্যমের দ্বারা স্বল্প সময়ের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য সংগ্রহের প্রবণতা দেখা দেয়।


আর এই অভিজ্ঞতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না ঘটার জন্য ঐ সব অভিজ্ঞতাগুলি যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় না। সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্যে অভিজ্ঞতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কাজ অনুষঙ্গমূলক স্মৃতির (human faculty of memory by association) দ্বারা সম্পাতি করতে হবে।


কারণ উপযোগিতার দিক দিয়ে বিচার করলে স্থায়ী স্মৃতিই ভাল। স্থায়ী স্মৃতি শিক্ষার্থীর জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। আর এই ব্যাপারে অভিভাবক, শিক্ষককে সচেষ্ট হতে হবে যাতে তাদের মধ্যে উপযুক্ত পাঠ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হল নিরপেক্ষ চিন্তনের ক্ষমতা (independent thinking), বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন মানসিক প্রক্রিয়া (exercise of the faculty of thought) বিকাশ করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে চিন্তনের গুরুত্ব দু'দিক থেকে-


(১) চিন্তন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে শিখনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা এবং বিমূর্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা।


(২) শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীর মধ্যে চিন্তনের বিকাশ ঘটানো যাতে তারা পরবর্তী জীবনে স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করতে পারে। কারণ ভবিষ্যৎ জীবনের যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে সার্থকভাবে অভিযোজন করতে হলে, জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে হলে বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন চিন্তন প্রক্রিয়া একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তন প্রক্রিয়াকে জাগিয়ে তুলে সমাজজীবনের অগ্রগতিতে সহায়তা করা।


এই জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মসক্রিয়তা আনে এবং সঠিক মানসিক অবস্থার সৃষ্টির পিছনে উদ্বোধক (incentive) হিসাবে কাজ করে। আবার এই চিন্তন প্রক্রিয়া দুরকমের হয়ে থাকে-


(১) আরোহ (inductive) এবং (২) অবরোহ (deductive)।


কয়েকটি বিচ্ছিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোনো সাধারণ সিদ্ধান্তের অনুমানকে বলা হয় ‘আরোহ চিন্তন’।


আবার অনেক সময় সাধারণ ধারণা থেকে আমরা বিশেষ কোনো দৃষ্টান্ত সম্পর্কে অনুমান করি, এই ধরনের অনুমানের দ্বারা চিন্তন প্রক্রিয়াকে ‘অবরোহ চিন্তন’ প্রক্রিয়া বলা হয়।


Jacques Delor- র তাঁর ‘জানতে শেখার’ (learning to know) উদ্দেশ্য আরোহ এবং অবরোহ উভয় চিন্তন প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণের কথা বলেছেন। কারণ এর দ্বারা চিন্তন, কল্পন, ইত্যাদির ইচ্ছামত ব্যবহার করে নানা নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করে কৌতূহলের স্পৃহা চরিতার্থ করে। আর বিচারকরণ, উদ্ভাবন শিক্ষার কাজ হল স্বাভাবিক কৌতূহলকে গঠনমূলক পথে পরিচালিত করে তাকে বাঞ্ছিত আচরণ ও জ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া।



“জানতে শেখা” (learning to know) -র শিক্ষাগত উদ্দেশ্য নিম্নরূপঃ


(i) ব্যক্তিকে তার নিজের সঙ্গে বস্তুজগতের যে সম্পর্ক আছে তা উপলব্ধি করা।


(ii) অভিজ্ঞতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কাজ অনুষঙ্গমূলক স্মৃতির দ্বারা সম্পাদিত করা।


(iii) নিরপেক্ষ চিন্তনের ক্ষমতা, বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন মানসিক প্রক্রিয়া বিকাশ করা।


(iv) আরোহ এবং অবরোহ চিন্তন প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে চিন্তন, কল্পন, বিচারকরণ, উদ্ভাবন ক্ষমতার বিকাশ সাধন করা।


(v) স্বাভাবিক কৌতূহল স্পৃহাকে গঠনমূলক পথে পরিচালিত করে ব্যক্তিকে বাঞ্ছিত আচরণ ও জ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া।




(২) করতে শেখা বা কাজ করার জন্য শেখা (Learning to do):


Jacques Delor- র দ্বিতীয় স্তম্ভ কাজ করার জন্য শেখা বা করতে শেখা (learning to do)। “জানতে শেখা বা জানার জন্য শেখা” (Learning to know) এবং “করতে শেখা বা কাজ করার জন্য শেখা” (learning to do) - দুটি উদ্দেশ্যই শিক্ষা পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘কাজ করার জন্য শেখা’ বিশেষ করে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত। অর্থাৎ ‘কাজ করার জন্য শেখা’র ক্ষেত্রে দুটি জিনিসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি জ্ঞান (Knowledge) এবং দ্বিতীয়টিদক্ষতা (Skill)। এখানে ‘দক্ষতা’ বলতে ব্যবহার করার দক্ষতার (occupational skill) উপর জোর দেওয়া হয়েছে। হাতে হাতে কাজ করতে করতে ব্যবহারিক দক্ষতা ও কোনো বিষয়কে ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়ে যায়।


তাই পৃথিবীর উন্নত দেশে অন্যান্য শিক্ষাভাবনার মত কাজ করার জন্য শেখা বা করতে শেখার (learning to do) ধারণা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমান শিল্প প্রযুক্তি এত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের তাল রাখা খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে।


শিল্প অর্থনীতিতে (industrial economics) পেশাভিত্তিক মজুরি দানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্চে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত স্বতন্ত্র শিল্প সংস্থায় পেশাদারিত্বের কোনো প্রভাব নেই। সুতরাং পেশাভিত্তিক মজুরি ব্যবস্থায় দৈহিক শ্রমের চেয়ে বুদ্ধিযুক্ত বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়, যাতে শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


তাই বর্তমান যুগে কর্মদক্ষতার বৌদ্ধিক জ্ঞান ছাড়া চলতে পারে না। কারণ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কমিশন মনে করেন বর্তমানে পৃথিবীর সবদেশেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার আধুনিক মানুষকে অনেক বেশি জটিল জীবনে পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে এবং তার চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য অনেক বেশি জটিল দক্ষতা প্রয়োগ করতে হচ্ছে।


আর এইসব কর্মদক্ষতাগুলি আয়ত্তকরার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য পরিবর্তন ঘটাতে হচ্চে। সেই জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্যে মানুষের শ্রম (বুদ্ধিযুক্ত) ও কর্মকুশলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। কারণ বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তি যখন তার সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎপাদন দিতে সমর্থ হবে, তখনই সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। আর এজন্যই উৎপাদনক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষ (occupation skill) কর্মীর প্রয়োজন।


যা পরিবর্তিত পরিবেশের উপযোগী হয়ে উঠতে ব্যক্তিকে সহায়তা করবে। মানুষের কর্মদক্ষতাকে পরিবর্তনশীল কর্মপরিস্থিতির চাহিদার সঙ্গে উন্নয়নকরার জন্য বিশেষধর্মী কর্মসূচির প্রয়োজন।


যেমন- technological monitoring, consultancy services, financial, accounting and management services এবং প্রচলিত সমাজ বিজ্ঞানমূলক কর্মসূচি যেমন - স্বাস্থ্যরক্ষা কর্মসূচি, সাক্ষরতা কর্মসূচি, জনসংখ্যা শিক্ষার কর্মসূচি, মানবশক্তির পরিকল্পনা ইত্যাদি।


ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে পেশভিত্তিক মজুরি দানের কাজ তেমন বেশি প্রভাব বিস্তার করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসংগঠিত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থায় নিযুক্ত এবং কৃষিপ্রধান দেশ হিসাবে বেশিরভাগ ব্যক্তি কৃষি ও অন্যান্য কৃষিজাত উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত, যেকানে গতানুগতিক প্রাচীন উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আধুনিক সব উন্নত দেশের মতই উন্নয়নশীল দেশে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক কৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যার জ্ঞান প্রয়োগ করার প্রয়োজন। 


যাতে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের যদি তাদের জীবিকা অর্জনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হয়, তবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ্যার মৌলিক ধারণাগুলি “কাজ করার জন্য শেখা” (learning to do) উদ্দেশ্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবে।


যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তুকে বিজ্ঞানসম্মতবাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা জাগ্রত হয়। অর্থাৎ কাজ করার জন্য শেখা (learning to do) -র মূলনীতি হল- এই জ্ঞান শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়। এখানে শিক্ষার্থী কোনো মূল বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। অর্থাৎ উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্রে উপনীত হয় বা নতুন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং শিক্ষার্থীকে আবিস্কারকের ভূমিকায় স্থাপন করে অনুসন্ধান স্পৃহা জাগ্রত করা হয়।


অর্থাৎ ‘কাজ করার জন্য শেখা’র মূল কথা- প্রকৃত জ্ঞান বা সত্যের উপলব্ধি একমাত্র সক্রিয়তার মধ্যে দিয়ে ঘটতে পারে।



কাজের জন্য শেখা-র উদ্দেশ্য:


উপরিউক্ত মূলনীতির ভিত্তিতে “কাজের জন্য শেখা” র উদ্দেশ্যগুলি নিম্নোক্ত:


(i) প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বাবলম্বী এবং স্বনির্ভর জীবনযাপন করে তোলা এবং নিজের পরিবারের প্রতি তার কর্তব্য পালন করতে শেখা, তার জন্য তাকে উপযুক্ত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া। 

(ii) কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলির চর্চা এবং সে নানা কৌশল আয়ত্ত করে তার ব্যবহারিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা।

(iii) এই উদ্দেশ্যের মাধ্যমে কাজের দ্রুততা বৃদ্ধি করা।

(iv) শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা ও চাহিদা অনুযায়ী অগ্রসর হতে শেখানো এবং এই জ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তাদের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে শেখানো। কারণ অনুশীলনের মাধ্যমেই কোনো কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

(v) শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করা এবং এই অভিজ্ঞতাগুলিকে স্থায়ী করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

(vi) শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনাত্মক স্পৃহা (creative urge) চরিতার্থ করা এবং কাজের প্রতি তীব্র প্রেরণা সৃষ্টি করা।

(vii) শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ পায়।


সুতরাং কমিশন মনে করেন উন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই ‘কাজের জন্য শেখা’ এই নীতি শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা আবশ্যিক। কারণ এই উদ্দেশ্যেই কেবলমাত্র সক্রিয়তার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর আধুনিক শিক্ষাবিদরা মনে করেন শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা একান্ত প্রয়োজন।


(৩) একসঙ্গে বাঁচতে শেখা (Learning to Live together):



একবিংশ শতাব্দীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার এই উন্নতি আমাদের জীবনে সমস্ত দিকের উপর প্রভাব ফেলেছে। শিল্প, ধর্ম, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক বিন্যাস সমস্ত দিকেই এই পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব এসে পড়েছে।


এই পরিবর্তন মানুষের জীবনে যেমন একদিকে আশীর্বাদ স্বরূপ, তেমনি অন্যদিকে জ্ঞানমূলক স্থিতিবস্থার অভাবে মানুষের মনে এক ধরনের সংকট সৃষ্টি করে। এই সংকটের ফলে মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে অনিশ্চিতা দেখা যায়।


তাই চিন্তাজগতে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি না হওয়ায় জীবনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে, সিদ্দান্ত গ্রহণেও সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই দ্বিধা একদিকে মানুষের অতিরিক্ত জ্ঞান আহরণে বাধা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে এই ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যক্তি সহজভাবে তার জীবন পরিবেশে সার্থকভাবে অভিযোজন করতে ব্যর্থ হয়। কারণ এর পাশাপাশি সামাজিক রীতিনীতি, দৃষ্টিভঙ্গি, কৃষ্টি ও সামাজিক সংগঠনগুলির পরিবর্তন ততটা দ্রুত হারে হচ্ছে না।


এর ফলে ব্যক্তিজীবনে এমনকি সমাজজীবনের মধ্যেও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। এই দ্বন্দ্ব মূলত: প্রচলিত ধ্যানধারণার সঙ্গে আধুনিকতার চাহিদা। সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে স্তম্ভ হিসাবে “একসঙ্গে বাঁচতে শেখা” (learning to live together) গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে ইউনেস্কোর (UNESCO) প্রতিবেদনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


কারণ বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখার দ্বারা বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী, বিভিন্ন ভাষাভাষী ও বিভিন্ন জাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা কারণে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দেখা দিয়েছে। এই পরস্পরবিরোধী মতাবলম্বীর ফলে পার্থক্য ও বৈষম্যগুলি বড় করে দেখা দিয়েছে এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ দেখা দিয়েছে।


তাই উপযুক্ত শিক্ষা সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্তাবাদ, জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ ইত্যাদির মতো মারাত্মক ব্যাধি দূর করতে পারে।


“একসঙ্গে বাঁচতে শেখা” নীতির বিস্তৃতি হিসাবে অহিংসার তত্ত্ব স্থাপন করেছেন। অহিংসার অর্থ আনুগত্য নয়। “অহিংসা” র মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে কতকগুলি মানবীয় গুণ - সহনশীলতা, ধৈর্য, উদ্যম, আত্মোৎসর্গের ভাব ইত্যাদি প্রত্যেক নাগরিককে এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যাতে করে সে সমাজে তার নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারে।

বস্তুত প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সমাজের যোগ্য ও দায়িত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তুলতে পূর্বপুরষদের ভাবধারা, বিশ্বাস, আচরণধারা, অভ্যাস প্রভৃতি আহরণ করতে শেখা। একসঙ্গে বাঁচতে শেখার উদ্দেশ্য সহমতের ভিত্তিতে সহাবস্থান শেখানো। এর মূল নীতিগুলি হল এরূপ-



(i) বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা-

বর্তমান শতাব্দীতে ব্যক্তির নিজের অনুরাগ ও কর্তব্যকে নিজের স্বদেশ চিন্তার সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাঁর জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হবে। যাতে সে বিশ্বের সব দেশ ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সাম্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বশান্তি কায়েম করতে পারে, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জাতিগুলির মধ্যে সত্যিকারের আন্তরিক ঐক্যবোধ ও সংহতি আনতে পারে এবং সহযোগিতা ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হতে পারে। 

কারণ প্রত্যেক সমাজেই ব্যক্তিতে ব্যাক্তিতে, ব্যাক্তিতে-গোষ্ঠীতে এবং গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়ে চলেছে তা থেকে যে বিশ্বসংস্কৃতির ধারণা তৈরি হয় তা অনুধাবন করা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তির চরিত্রে যে ধরনের পরিবর্তন দরকার, শিক্ষার মাধ্যমে তা আনতে হবে।

(ii) জীবনাদর্শভিত্তিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা-

সামাজিক মেলামেশার মধ্যে দিয়েই শিশু তার সমাজের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে পরিচিত হয় এবং সমাজের প্রচলিত জীবনধারা অনুযায়ী নিজের জীবনকে সংগঠিত করে তোলে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষার মধ্যে দিয়েই সে সমাজের প্রচলিত ধারণা, বিশ্বাস, রীতিনীতি, নিয়মকানুন প্রভৃতি আযত্ত করে এবং সেইমত নিজের জীবনধারাকে নিয়ন্ত্রিত করে। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করা।

এর মাধ্যমে শিশু দেশের ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পাবে এবং সেগুলি তাকে তার নিজের সাংস্কৃতিক জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। কারণ শিক্ষা, কৃষ্টি, বিশ্বাস, আদর্শ প্রভৃতির দিক দিয়ে জাতিতে জাতিতে যে বৈষম্য গড়ে উঠেছে, ব্যাপক শিক্ষা পরিকল্পনার সাহায্যে সেই বৈষম্য দূর করতে হবে।

চিন্তা ও ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার সাহায্যে বিভিন্ন জাতির মধ্যে কৃষ্টিমূলক ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে। যাতে বিভিন্ন জাতিগুলি শিক্ষায়, কৃষ্টি ও সমৃদ্ধিতে পরস্পরের সমান হয়ে ওঠে পুরানো ইতিহাসকে পরিসংস্কৃত করে নতুন ইতিহাস রচনা করতে হবে।

এর মাধ্যমে প্রতিটি জাতি বা দেশের ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে। ইতিহাসকে পরিবর্তিত করে ন্যায় ও সাম্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিহাস রচনা করতে হবে। বিশেষ করে ইতিহাসকে এমনভাবে জানতে হবে যাতে কোনো জাতির প্রতি শিক্ষার্থীর মনে বিদ্বেষ বা ঘৃণার ভাব সৃষ্টি না হয়।

সুতরাং প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানগুলির সঙ্গে আধুনিক সভ্যতার মিশ্র সংস্কৃতির সংগতিবিধান ঘটিয়ে শিক্ষার একটি ন্যূনতম স্তর পর্যন্ত পৌঁছনো শিক্ষার উদ্দেশ্য। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সমাজের যোগ্য ও দায়িত্বপূর্ণ সদস্য হতে হলে তার পূর্বপুরুষদের ভাবদারা, বিশ্বাস, আচরণধারা, অভ্যাস প্রভৃতি আহরণ করতে শেখা। আর পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য প্রভৃতি আহরণের বড় মাধ্যম হল শিক্ষা।

এই ঐতিহ্য প্রত্যেক সমাজে বিভিন্ন এবং একান্তভাবে নিজস্ব। এই ঐতিহ্যের বিভিন্নতা ও স্বকীয়তার জন্যই একটি সমাজ আর একটি সমাজ থেকে স্বতন্ত্র। তাই প্রত্যেক সমাজেরই একটি নিজস্ব মূল্যবোধের সংগঠন থাকে। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত আচরণ, ব্যক্তির কর্তব্য, ন্যায়-অন্যায়, ভালমন্দ প্রভৃতি মাপকাঠি দিয়ে সংগঠিত।

তাই পুরাতন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মূল্যবোধগুলির প্রতি তাদের অনুগত্য শিথিল না হয়ে ওঠে এবং প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে সংগতি রেখে তাদের মধ্যে নতুন নতুন মূল্যবোধ গড়ে ওঠে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

Delor মনে করেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি সামাজিক বিশ্বাস, বিশেষভাবে ধর্মবিশ্বাসের উপর গ্রহণ করা হয়, তাহলে শিক্ষা কোনোদিন সামাজিক অগ্রগতিতে সহায়তা করতে পারবে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে জীবনাদর্শভিত্তিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে যা সম্পূর্ণভাবে বস্তুনির্ভর নয় বা আধ্যাত্মিক কোনো ব্যাপার নয়।

শিক্ষার উদ্দেশ্য ধর্ম, সামাজিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে সংহতি এবং ঐক্যবোধ সৃষ্টি করা।

(৪) পরিণত হাতে শেখা (Learning to be):

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (United Nations Educational, Scientific and Cultural Organiasation - UNESCO) প্রথম অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেন যে, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে ন্যায়, মানবাধিকার ও আইনের অনুশাসনের প্রতি


বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধাকে দৃঢ় করে শান্তি ও নিরাপ্ততা প্রতিষ্ঠা করাই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। সুতরাং শিক্ষার উদ্দেশ্য সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন।


সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন হল - ব্যক্তির দেহ এবং মনের বিকাশসাধন, বুদ্ধির বিকাশ, সংবেদনশীলতা, সৌন্দর্যবোধ, আধ্যাত্মিক বিকাশ ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ। যার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি স্বাধীন ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তন প্রক্রিয়ার সাহায্যে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।

কমিশন তার রিপোর্টে “পরিণত হতে শেখা” (Learning to be) কথাটি ব্যবহার করেন। Learning to be: The World of Education, Today and Tomorrow-Paris, UNESCO, 1972 সম্মেলনের প্রস্তাবনায় “পরিণত হয়ে ওঠার শিক্ষা -এর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে মানুষের মধ্যে কতকগুলি মানবীয় বৈশিষ্ট্যের অবক্ষয় দেখা দিতে পারে, তার ফলে পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থায় আভিযোজিত হওয়ার জন্য শিক্ষার দ্বারা কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের বিকাশসাধনের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেন।

যেমন, নিজেই নিজের সমস্যা সমাধান করার প্রণতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার এবং দায়িত্ব ইত্যাদি। অর্থাৎ আধুনিক শিক্ষার ভাবধারা আমাদের এই জীবন পরিবেশের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্ণীত হয়েছে। পরিবর্তনশীল জীবন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা যাতে সার্থকভবে অভিযোজন করতে পারে। 

তার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়াই আধুনিক শিক্ষার উদ্দেশ্য। “পরিণত হতে শেখা” পরিবর্তনধর্মিতাকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করছে। “পরিণত হতে শেখা” (Learning to be) উদ্দেশ্য স্থাপন করতে গিয়ে কমিশন মনোবৈজ্ঞানিক, বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় সমন্বয় সাধন করেছেন। Jacques Delor তাঁর প্রতিবেদনে একইভাবে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন।

ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যকে সামাজিক দিক থেকে তাৎপর্য করে তোলার জন্য শিক্ষার নিম্নোক্ত উদ্দেশ্যগুলির কথা বলেছেন।



পরিণত হতে শেখার উদ্দেশ্য:


(1) ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ব্যাপক বৈষম্য আছে, এটি একটি প্রমাণিত সত্য। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সকলের অধিকার সমান এবং সকলে যাতে এমনভাবে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়, সেটিই হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য। বিভিন্ন শিক্ষার্থী যাতে নিজেদের সহজাত সামর্থ্য, প্রবণতা ও আগ্রহ অনুযায়ী শিক্ষালাভ করতে পারে তার আয়োজন করতে হবে।

(ii) বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের জগতে যে বিশাল অভিজ্ঞতার সয়ন হয়েছে, তার সব কিছুর সঙ্গে শিক্ষার্থীকে পরিচিত করতে হবে। তা না হলে সমাজ অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে না। আবার অন্যদিকে ব্যক্তিরও কল্যাণ হবে না। তাই “পরিণত হতে শেখা” (learning to be) -র উদ্দেশ্য আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করা। অর্থাৎ ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা এবং সক্রিয়তা।

(iii) একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার উদ্দেশ্য জীবন-পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে রচনা করতে হবে। তাই ব তমান শতাব্দীতে ব্যক্তির চাহিদা, অনুরাগ, মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতা বিচার করে শিক্ষার উদ্দেশ্য তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সহযোগিতা, আত্মত্যাগ, দলগত সংহতি ইত্যাদি সামাজিক গুণ এনে দেয়। আবার প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ব্যক্তির মধ্যে স্মৃতি, মনোযোগ, বিচারকরণ, কল্পনশক্তি, সৌন্দর্যবোধ ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলির অনুশীলন করার সুযোগ সৃষ্টি করা শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।


এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, জ্ঞানমূলক, বৃত্তিমূলক, নৈতিক প্রভৃতি সব দিকগুলিই পূর্ণভাবে অভিব্যক্ত ও পরিপুষ্ট হবার সুযোগ পায়।

(iv) শিক্ষার উদ্দেশ্য- সৃজন ও উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির প্রকৃতিদত্ত বিভিন্ন প্রতিভার বিকাশ ঘটানো। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর কোনো সুপ্ত প্রতিভা অপ্রকাশিতা না থাকে। তাই এমন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর আত্নজ্ঞান বিকশিত হয়।




যেকোনো সুসভ্য সমাজের মানব সম্পদ বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার উদ্দেশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই একটি গতিশীল সমাজের শিক্ষার উদ্দেশ্য ও তার প্রয়োগ কৌশল বারবার আলোচিত হয়, সমাজ বিকাশের ধারা অনুসরণ করে তা পরিবর্তিত পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়। তাই যেকোনো শিক্ষা পরিকল্পনার শুরুতেই পরিকল্পনা রচয়িতাগণ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করেন।

এর জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য রূপায়ণে Delor কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী শিখনের চারটি স্তম্ভ- জানতে শেখা (learning to know), করতে শেখা (Learning to do) একসঙ্গে বাঁচতে শেখা (Learning to live together) ও পরিণত হতে শেখা (Learning to be) এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীর বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের স্তর অনুসারে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার বিশেষ বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করা হবে।

ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য রূপায়ণে আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন (UNESCO) -এর সুপারিশগুলি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন আছে। কারণ ভারতীয় সমাজের ইতিহাস হল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য।

আর স্বাধীনতা উত্তর ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈশিষ্ট হল- ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সাম্য ও সম্প্রীতিভিত্তিক কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রব্যবস্থা। আর সমাজের অর্থনৈতিক নীতির মূলকথা হল– গণতান্ত্রিক রীতিসম্মত উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত বৈষয়িক ও শিল্প-সাংস্কৃতিক বিকাশ।

এই সাধারণ সামাজিক দর্শন ও আশা-আকাঙ্খার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান সাধারণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যগুলি নিম্নরূপ

(i) জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, অর্থনৈতিক সামর্থ্য, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমমানের শিক্ষার সমান সুযোগ উন্মুক্ত রাখা।

(ii) শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক নীতিকে সামনে রেখে সামজতান্ত্রিক নীতির সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তাবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সক্রিয় ও সফল নাগরিকের জীবনযাপনে অভ্যস্তকরে তোলা।

(iii) জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজনে এবং বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের প্রয়োজনে দেশের মানব সম্পদের বিকাশ ঘটানো।

(iv) সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে ধর্মনিরপেক্ষ, উদার ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটানো।

(v) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সুষম বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মনোভাব গড়ে তোলা।

(vi) শিক্ষার্থীর দৈহিক মানসিক, বৌদ্ধিক ও প্রাক্ষোভিক গুণাবলির সুষম বিকাশ ঘটানো।

(vii) সামাজিক উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রম ও শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদাবোধের বিকাশ ঘটানো।

(viii) সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত করে সামাজিক দায়িত্ববোধের উন্মেষ ঘটানো।

(ix) বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও শান্তির স্বপক্ষে মানসিকতা গড়ে তোলা।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area