আকবর ও মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিকরণ PDF - Akbar and the consolidation of the Mughal Empire
আকবর ও মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিকরণ PDF
ভূমিকা (Introduction):
বাবরের শাসনকাল ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। চার বছরের কিছু বেশি সময় তিনি ক্ষমতাসীন ছিলেন। স্বভাবতই সাম্রাজ্যের সাংগঠনিক ভিত্তি তিনি সুদৃঢ় করে যেতে পারেননি। অবশ্য রাজপুত ও আফগানদের পরাজিত ও ক্ষমতাচ্যুত করে নিঃসন্দেহে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সুনিশ্চিত করে যেতে পেরেছিলেন। বাবরের মৃত্যুর পর (১৫৩০ খ্রিঃ) সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র হুমায়ুন। ভাগ্যবিড়ম্বিত হুমায়ুনের রাজত্বকাল আদৌ শান্তির ছিল না।
শের খাঁ'র নেতৃত্বে আফগানদের উত্থান হুমায়ুনের অস্তিত্বের সংকট ডেকে আনে। শেষ পর্যন্ত শের খাঁ'র কাছে পরাজিত হয়ে (১৫৪০ খ্রিঃ) হুমায়ুন দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। শের খাঁ ‘শেরশাহ’ উপাধি নিয়ে দিল্লির সিংহাসন দখল করে নেন।
ভারতে মুঘল শাসনের মাঝে শেরশাহ একটা ছোট্ট বিরতি চিহ্ন এঁকে দেন। যাই হোক, পারস্যের সহায়তায় হুমায়ুন দিল্লিতে মুঘল কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন (১৫৫৫ খ্রিঃ)। পলাতক অবস্থাতেই অমরকোটে তাঁর পুত্র আকবরের জন্ম (১৫৪২ খ্রিঃ) হয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আকবর। হুমায়ুনের পলাতক অবস্থায় অমরকোটে আকবরের জন্ম হয়।
তারপর মাত্র ১৩ বছর বয়সে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবর বৈরাম খাঁ’র অভিভাবকত্বে সম্রাট পদে অভিষিক্ত হন। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে বৈরাম খাঁ'র অভিভাবকত্বের অবসান ঘটিয়ে তিনি নিজহাতে শাসনভার গ্রহণ করেন। এরপর একের পর এক রাজ্য জয় করে তিনি উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের সুবিস্তৃত অঞ্চলে এক ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।
আরও পড়ুন- আকবরের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা করাে
সেই সাম্রাজ্যের সুশাসনের ব্যবস্থাও তিনি করেন। আকবর হিন্দু-মুসলমানের দেশ এই ভারতবর্ষে সমন্বয়ী আদর্শ গ্রহণ করে সাম্রাজ্যকে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করান। তাঁর রাজপুত নীতি, উদার ধর্মনীতি হিন্দুদেরকে তাঁর অনুগত প্রজায় পরিণত করে। শিল্পসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তাঁর অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। মুঘল বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর। তিনিও ছিলেন পিতার মতোই সাম্রাজ্যবাদী শাসক। তাঁর রাজত্বকালে তাঁর মহিষী নূরজাহান রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করেন। এঁর পরবর্তী সম্রাট ছিলেন শাহজাহান।
তাঁর রাজত্বকালে মধ্য-এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য একাধিক অভিযান প্রেরণ করা হয়। কিন্তু শাহজাহানের প্রসিদ্ধি রাজ্যজয়ের কারণে নয়, শিল্পস্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই অধিক। তাঁর রাজত্বকালকে মুঘল আমলের ‘স্বর্ণযুগ’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
তবে তাঁর রাজত্বের শেষদিকে দেখা গিয়েছিল উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব। সিংহাসনের অধিকার নিয়ে তাঁর চার পুত্রের মধ্যে সংঘটিত বিবাদের পরিণতিতে আগ্রা দুর্গে বন্দি অবস্থায় তাঁর জীবনাবসান হয়। বাবর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যে মুঘল-শাসনের সূচনা করেন, তা ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর ফলে (১৭০৭ খ্রিঃ) একটা নির্দিষ্ট অধ্যায়ের অবসান ঘটায়।
এর পরেও দীর্ঘদিন মুঘল সাম্রাজ্য টিকেছিল, কিন্তু তার সেই গৌরবোজ্জ্বল দিন আর ফিরে আসেনি। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় ১৮১ বছরের মুঘল-রাজত্ব ভারতবর্ষকে কেবল রাজনৈতিক ঐক্য দেয়নি, ভারতের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তার অবদানের চিহ্ন রেখে গেছে। এ যুগের কঠোর কেন্দ্রীয় স্বৈরাচার সত্ত্বেও রচিত হয়েছিল বহু গ্রন্থ, -যার ঐতিহাসিক মূল্য কম নয়।
আরও পড়ুন- আকবরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির বিবরণ দাও
শিল্প, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে মুঘলযুগ তো কেবল ভারতে নয়, বিশ্বের সুকুমার কলার ইতিহাসেও নিজের স্থান করে নিয়েছে। কৃষি নির্ভর ভারতীয় অর্থনীতি মুঘল শাসনের স্থিরতা ও প্রশাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে নতুনত্বের আস্বাদ পেয়েছে। এই যুগে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যে এসেছে নতুন জোয়ার। পথঘাটে নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বিনিময়-মুদ্রার মানের নিশ্চয়তা ইত্যাদি ইতিবাচক উপাদানের ফলে বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে দ্রুত লয়ে।
সব মিলিয়ে মুঘলযুগে ভারতের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এনেছে নতুন গতি।
🔘Join Our Telegram Chanel - Click Here🔘
আকবর ও মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতিকরণ PDF ডাউনলোড