Ads Area


সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা | Courtesy and Etiquette Essay In Bengali

সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা | Courtesy and Etiquette Essay In Bengali

সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা | Courtesy and Etiquette Essay In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “সৌজন্য ও শিষ্টাচার” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা পড়তে এখানে ক্লিক করুন


সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধ রচনা


অনুরূপে - (১) শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ; (২) জীবনে, শিক্ষায় শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের গুরুত্ব; (৩) ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও পরিবেশের ভূমিকা।


ভূমিকা-



“ভদ্রতা আত্মীয়তার চেয়ে কিছু কম এবং সামাজিকতার চেয়ে কিছু বেশি।” 


-ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী


সৃষ্টির ঊষালগ্নে মানুষ ছিল হিংস্র অরণ্যাচারী গুহাবাসী। আপন শক্তি বলে বলীয়ান হয়ে সেদিন তারা প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে আনতে দুর্জয় সংগ্রাম করেছে। মানবশক্তির সঙ্গে চলেছে পশুশক্তির লড়াই। এ সময় মানুষ সামাজিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে সচেতন ছিল না। ক্রমে নিজেদের প্রয়োজনে একদিন তারা সমাজবদ্ধ হয়। গড়ে তুলল রীতির বন্ধন, সৌজন্যপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক। এভাবে মানুষের অন্তরের মাধুর্য দিয়ে মানুষে মানুষে সৌজন্যবোধ বাড়ল। শিষ্টাচার তারই মার্জিত বহিঃপ্রকাশ। সমাজজীবনে ও ছাত্রজীবনে এই সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারের প্রয়োজন ব্যাপক ও গভীর।


শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের প্রকৃতি-


মার্জিত রুচিশীল ভদ্র ব্যবহারই শিষ্টাচার ও সৌজন্য অভিধায় চিহ্নিত। ভালোমন্দ, আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ রুচিমার্জিত ব্যবহারই হল শিষ্টাচার। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সৌজন্যবোধ। মানুষের মনের সুন্দর, পবিত্রতাপূর্ণ, গভীর, নির্মল অভিব্যক্তি সৌজন্য ও শিষ্টাচারের প্রকৃতিকে বাড়িয়ে তোলে।

শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের মধ্যে সম্পর্ক-


শিষ্টাচার ও সৌজন্য একে অপরের পরিপূরক। এটা প্রথম গড়ে ওঠে পরিবারের মধ্যে। শিশুকে পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পিতা-মাতার। পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে শিশুর শিষ্টতা গড়ে ওঠে। যে পরিবার যত বেশি অশিক্ষিত সে পরিবারের শিশুরা তত বেশি অশিষ্ট। তাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে আন্তরিকতা, ভদ্রতা, যথাযথ আচরণ সম্পর্কে তাকে সচেতন করতে হবে। তবেই শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধে সমৃদ্ধ হয়ে প্রতিটি শিশু পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

মানবজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারবোধের প্রয়োজনীয়তা-


মানবজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বোধ জীবন -প্রগতির ধারক ও বাহক। সামাজিক মানুষ সৌজন্য ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে, যার পরিপূর্ণ রূপ হল মনুষ্যত্ববোধ। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ সমাজে পরিপূর্ণ মানুষ গড়ে তোলে। তা মানবতাবোধের বিকাশে, হৃদয়ের অমলিন বিকাশে, প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশে সহায়তা করে। এইবোধ মনুষ্যসমাজকে সকল সংকোচ, ভয়, হীনম্মন্যতা, নীচতা ও স্বার্থসর্বস্বতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারবোধের প্রয়োজনীয়তা-


ছাত্রজীবন সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতো পবিত্র। সৌজন্য ও শিষ্টাচারের স্পর্শে ছাত্র হয় বিনীত ও ভদ্র। সে গুরুজনকে শ্রদ্ধা করতে শেখে; বড়োদেরকে মান্য করতে শেখে; সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখে। ছাত্রাবস্থাতে যারা অসংযমী, অস্থিরমনা, উদ্ধত, অবাধ্য তাদের কেউ ভালোবাসে না। শিক্ষকের চোখে, সমাজের আর দশজনের চোখে তারা অষ্টরম্ভা, দুরন্ত ও মন্দ বলে প্রতিপন্ন হয়। ছাত্রজীবনে পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীকে বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র হওয়ার শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।

সৌজন্যবোধ ছাত্রজীবনে সুকুমার বৃত্তিগুলিকে লালন করে। তাকে অন্তরের ঐশ্বর্যে আলোকিত করে তোলে। অতএব শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ হল ছাত্রজীবনে চরিত্রগঠনের মূল চাবিকাঠি। যে ছাত্র বা ছাত্রী বিনয়ী, বুদ্ধিমান ও বিবেকবান হয় তাকে সকলেই ভালোবাসে। এগিয়ে চলার জীবনে সে পায় সকলের সহযোগিতা, পরিপূর্ণ আশীর্বাদ।

সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অভাব শিক্ষার্থীকে অভদ্র, অসংযমী, আত্মসর্বস্ব, নিষ্ঠুর, বিবেকহীন মানুষে পরিণত করে। বিনাশ করে সত্য, সুন্দর, দয়া, প্রেম, স্নেহ-মমতার কোমল বৃত্তিগুলি। তাকে ঠেলে দেয় দীপ্তিহীন, কীর্তিহীন, সুচিভেদ্য অন্ধকারের মধ্যে।

শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রদর্শনে ছাত্রসমাজের কাছে প্রত্যাশা-


বর্তমানে প্রত্যেক দেশের মানবজাতির তথা দেশের ছাত্রসমাজকে দেখে সেই দেশের ভাবী নাগরিক সম্পর্কে ধারণা করা যায়। ছাত্রদের মধ্যে অবশ্যই মার্জিত প্রতিবাদের ভাষা থাকবে। তা হবে শ্রীল ও সংযত। কথা যতই অপ্রিয় সত্য হোক, ভাষা যেন অপ্রিয় এবং রূঢ় না হয়। এর জন্য প্রয়োজন ভালো ব্যবহার, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, মানানসই পোশাক পরিধান। উগ্র চালচলন, ইচ্ছাকৃত তাচ্ছিল্যভাব এগুলি কখনোই কাম্য নয়।


সৌজন্য ও শিষ্টাচারের বর্তমান চিত্র- আজ আমাদের সমাজে সৌজন্য ও শিষ্টাচার পালনের হীনতর দিকগুলি উচ্চকিত। ছাত্রজীবনে বাড়ছে উচ্ছৃঙ্খলতা। তার চোখে বাড়ছে সীমাহীন ঔদ্ধত্য। আজ বার্ধক্যকে আমরা করি অসম্মান, শ্রদ্ধেয়দের করি অবজ্ঞা, অবহেলা। ভারতের দিকে দিকে জন্ম নিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবোধ। একদিকে বাড়ছে বিত্তবানের ঔদ্ধত্য, অন্যদিকে বাড়ছে প্রবলের সীমাহীন অত্যাচার। সমাজের “সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখে।” দুর্বাক্য এখন বাচনিক অলংকার। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ হারিয়ে মানুষ হয়ে পড়েছে বিবেকশূন্য। মানুষের পুরাতন মূল্যবোধ অপসংস্কৃতির সংস্পর্শে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।

শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের অভাব এবং আমাদের মনোভাব-


বর্তমানে দেখা যায় অনেক শিক্ষিত মানুষ এবং ছাত্রছাত্রী শিষ্টাচারের অভাবে মানসিক মন্দাগ্নিতে ভোগে। একে অপরের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, সমবয়স্কদের প্রতি খারাপ ব্যবহার, পরস্পরের প্রতি ঈর্ষা আদৌ কাম্য নয়। শুধু পুথিগতবিদ্যার দ্বারা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ আসে না; তা আসে আমাদের প্রত্যেকের ভিতর থেকে। পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও ভালোবাসা থেকে।

প্রতিকারের উপায় এবং আমাদের কর্তব্য-


মানুষের মানস-প্রবণতার প্রথম ধাপ হল শিষ্টাচার। শিষ্টাচার-হীনতার প্রতিকার করতে হবে মানুষকেই। এক্ষেত্রে সমাজকে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তাদের ঘরে বাইরে সর্বত্র পরিবেশের সঙ্গে মানানসই আচরণ করতে হবে। কথাবার্তা ও চালচলনে শিশুকে ভদ্রভাবে গড়ে তুলতে হবে। ছোটোদের প্রতি বড়োদের স্নেহ-ভালোবাসা মিশ্রিত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে।

উপসংহার-


ছাত্রসমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। এই শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ বিকাশে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। চারিদিকে অবক্ষয় ও বিশৃঙ্খলারোধে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। শিশুমন যাতে ভালোভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে বড়োদের খেয়াল রাখতে হবে। এই সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠায় ছাত্রছাত্রীরাই সমাজের আদর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি।

আরও পড়ুন-


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area