Ads Area


প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা | Essay on Social Duty Towards Disabled People

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা | Essay on Social Duty Towards Disabled People

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা | Essay on Social Duty Towards Disabled People- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।




প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা


ভূমিকা:


এই জগৎ যেদিন সেজে উঠল আনন্দে সেদিন থেকে এ জগতের কোণে কোণে দানা বাঁধতে শুরু করে নানান সমস্যা, নানান প্রতিকূলতা। দেবার বেলায় এ জগৎ প্রাণ খুলে দিয়েছে; নেবে যখন ঠিক করেছে সেখানেও কাপণ করবে না। এ জগতে আজও দুরারোগ্য ব্যাধি, পঙ্গুত্ব, জীর্ণতা ধনুকের ছিলার মতোই টান টান। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে অপুষ্টি, দারিদ্র্য, অশিক্ষা প্রভৃতি ব্যাপক আকার নিয়েছে। এ সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত সম্ভব নয়।

যতদিন যাবে ততই বাড়বে এর জটিলতা। কেবল আলাপ-আলোচনা করে, মিষ্টি কথার বুলি আওড়ে সহানুভূতির বাণী ছড়িয়ে, সভাসমিতি করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন বাস্তবসম্মতভাবে প্রয়োগমূলক দৃষ্টান্ত। আজকের ভারতের আর -একটি গুরুতর সমস্যা প্রতিবন্ধী সমস্যা। সমগ্র বিশ্বের প্রায় দশভাগের এক ভাগ প্রতিবন্ধীই ভারতের। এদের মেধা ও নৈপুণ্যের কোনো অভাব নেই।

অথচ সমাজে সুস্থভাবে জীবনযাপনের পথ এদের সামনে খোলা নেই। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে উৎপাদনের উপাদান হিসেবে শ্রমকে মূল্য দেওয়া হয়। বলাই বাহুল্য, এদের সেখানে প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ। কেন- না এদের পরিচয়, এরা পরনির্ভরশীল। সমাজে আজও এরা দয়ার পাত্র।

সুতরাং, এদের প্রতি মহানুভব কর্তব্য আমাদের একান্ত জরুরি। কারণ সমগ্রের উন্নয়নেই সমগ্র দেশের উন্নয়ন। কাউকে বাদ রেখে তা সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রসংঘ ও প্রতিবন্ধী-


১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের কথা। রাষ্ট্রসংঘ সেই বছরকে বিশ্বজনমতের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী বর্ষ (The year of the disable) হিসেবে অভিহিত করেছে। তার বক্তব্য ছিল প্রতিবন্ধী মানুষেরা আর পাঁচজন সাধারণ স্বাভাবিক মানুষের মতোই সুস্থ ও পরিপূর্ণ জীবনের স্বাদ পেয়ে বিকশিত হওয়ার অধিকারী। সে কারণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সাধ্যমতো সাহায্য দান করতে আহ্বান করা হয়েছে। ভারত সরকার এ ধরনের আদর্শ প্রচারের জন্য রাষ্ট্রপুত্থকে দশ হাজার ডলার দান করে।



প্রতিবন্ধীদের সমস্যা ও ভারত-


একজন মানুষ নানা কারণে প্রতিবন্ধী হয়ে উঠতে পারে। কখনও রোগে, কখনও জন্মগতভাবে আবার কখনও আকস্মিক দুর্ঘটনায়। দৈহিক ত্রুটিকেই মানুষের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে স্বীকার করা হয়। এ ধরনের সমস্যা কম থাকলে আমাদের এত উদ্‌বেগের কারণ থাকত না, কিংবা রাষ্ট্রসংঘকে এত আড়ম্বরের সঙ্গে কতোয়া জারি করতে হত না। যেহেতু এ সংকট অত্যন্ত গভীর ও বিস্তারিত- সে কারণেই আমাদের সমূহ উদ্‌বেগ।

দৈহিক ত্রুটি সম্পন্ন যারা অন্ধ, মূক, বধির, পঙ্গু- তাদের প্রতি সমাজ ও রাষ্ট্রের অবশ্যকরণীয় কিছু দায় থেকেই যায়। তা না হলে আজ একুশ শতকে বসেও আমাদের ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধীবর্ষের সুচনাকালে তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগন বলেছিলেন, “If society admits that they are personalities and we have some responsibilities for them, then we must do some admirable activities by which their lives may prosper in all the sphere.”

এদের চারপাশে যে প্রতিবন্ধকতা বিরাজমান তা দূর করতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। অন্ধত্ব আমাদের দেশের একটি বড়ো ব্যাধি। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে অপুষ্ঠিই তার কারণ। তা ছাড়া, ধোঁয়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও এর কারণ। টাইফয়েড, ডিপথেরিয়া, বসন্ত ইত্যাদি মারণ রোগের সংক্রমণের ফলেও বিকলাঙ্গতা ঘটে থাকে। ভারতের প্রায় সত্তর হাজারের মতো মানুষ মুক ও বধির।

আমাদের কর্তব্য-


ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক উন্নয়নশীল দেশে প্রতিবন্ধীদের ক্রম- সংখ্যাবৃদ্ধি এদেশের উন্নয়নকে মন্থর করে দিতে বাধ্য। ফলে প্রয়োজন, অঙ্কুরেই তার বিনাশ সাধন। অর্থাৎ উপযুক্ত পরিকাঠামোর ভিত্তিতে প্রথমাবস্থাতেই সে সমস্যার সমাধান। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “এদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারি, বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

শুধু কথা বলে বা সভা সমিতি করে এঁদের মৌখিক আন্তরিকতা দেখালে চলবে না, প্রকৃতপক্ষে সমাজে যোগ্যতা অনুসারে রুজিরোজগারের সাধ্যমতো ব্যবস্থা করতে হবে।” এই কথাগুলি অত্যন্ত বিবেচনাধীন ও সময়োপযোগী। কেন-না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন প্রতিবন্ধী আছে যারা মোটর চালায়, টাইপ করে, টেলিফোন বিভাগে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। আসলে এর মূলে আছে উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র। আর সমাজের ও রাষ্ট্রের নিজের ও নৈতিকস্বার্থে প্রবল দায়বন্ধতা। প্রতিবন্ধকতার মতো সমাজের এক জটিল ও মর্মাস্তিক সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের বেশ সচেতন ও শ্রমসাধ্য কর্তব্য জরুরি।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ যে প্রতিবন্ধীবর্ষ চিহ্নিত হল তাতে বিশ্বব্যাপী- জনগণ জানতে পারল এই সমস্যাটির কথা। মানুষের সচেতনতা এভাবে বাড়ানো দরকার। সারাবছর ধরে দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার বা ব্যক্তিগত সংগঠন এ কাজে অংশগ্রহণ করছে। এ প্রসঙ্গে এই দাবিগুলিও বাস্তবায়িত হোক যে,

(ক) বছরে অন্তত কিছু টাকা খরচ করে প্রতি ব্লকে দু-জন প্রতিবন্ধীকে এক হাজার টাকা করে অনুদান দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের সুরাহা করা,

(খ) শতকরা দু-জন প্রতিবন্ধীকে সরকারি অফিসে নিয়োগের সিদ্ধান্ত আরও উপযুক্ত পদ্ধতিতে কার্যকরী করা,

(গ) প্রতিবছর প্রতিবন্ধীদের মধ্য থেকে একজনকে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ দেওয়া,

(ঘ) নবম শ্রেণির নীচের দুঃস্থ প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত শিক্ষার ব্যয়ভার সরকারের গ্রহণ করা।

(ঙ) প্রতিবন্ধী কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে উৎসাহদানের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা।

(চ) প্রতিবন্ধীদের জন্য আরও উন্নত ও অধিক সংখ্যক স্কুল ও কর্মশালা স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া,

(ছ) প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের চলাফেরার সুবিধার জন্য বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম বিনা পয়সায় দেওয়া, ইত্যাদি।


আনন্দের বিষয় এ সকল প্রস্তাবের অধিকাংশই আজ গৃহীত হয়েছে। এখন প্রত্যাশা এই আরও উন্নত জীবনের স্রোতে এইসব প্রতিবন্ধীরা ফিরে আসুন। ইদানীং দেহদান ও চক্ষুদান পদ্ধতির মাধ্যমে এই পরিকল্পনাকে সফল করা হচ্ছে। কেন-না একজন মৃত মানুষের একটি চোখ একটি অন্ধচোখে দৃষ্টি দিতে পারে। সমাজের হিতসাধনের সার্বিক হিতসাধনের কথাই তো ভাবা দরকার।

উপসংহার-


একজন প্রতিবন্ধী তখনই জীবনীশক্তি ফিরে পেতে পারে যখন সে জানবে সমগ্র সমাজ তার জন্য মানবিক সাহায্য দিতে প্রস্তুত। প্রতিবন্ধীরা শ্রমশক্তিতে কোনোভাবেই অচ্ছুৎ নয়। হেলেন কেলার আজ মিথ -এ পরিণত হয়েছেন। আমরা চাই শারীরিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এ সকল মানুষ নবজীবনের নবীন প্রভাতে সূর্যোদয় ঘটাবে।


আরও পড়ুন-


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area