তোমার জীবনের লক্ষ্য প্রবন্ধ রচনা - Essay On Your Life Goals In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “তোমার জীবনের লক্ষ্য” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার জীবনের লক্ষ্য প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা:
প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার একটা উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকবেই। লক্ষ্যহারা হয়ে কোনো মানুষ সমাজে টিকে থাকতে পারে না। এমনকি লক্ষ্যহীন মানুষকে আদৌ। সামাজিক মানুষ বলে গণ্য করা যায় না। কৃষক জমিতে চাষ করে তার লক্ষ্য জমিতে ভালো ফসল ফলিয়ে লভ্যাংশ বের করা। একজন শিক্ষকের লক্ষ্য ছাত্রদের উপযুক্ত পাঠদান করে তাদের মানুষ হবার ব্রতে লক্ষ্যস্থির করে দেওয়া; তেমনি একজন পড়ুয়া বা ছাত্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত উপযুক্ত পাঠগ্রহণ করে যথার্থ শিক্ষার মাধ্যমে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য স্পর্শ করা। আমার জীবনের লক্ষ্য আমার স্কুল জীবনের শিক্ষকমশহিদের আদর্শ অনুসরণে করে শিক্ষক হওয়া এবং আদর্শ মানুষ হয়ে পিতা-মাতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।
আমার মনোজগৎ ও মনোভাবনা:
আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক অসহায় ছাত্র। খুব ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে আমি পড়াশোনা করতে পারি না। পিছনে আছে দারিদ্রের যন্ত্রণা। তবুও আমি স্বপ্ন দেখি জীবনে বাঁচার মতো বাঁচতে হবে। জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাকে বড়ো হতে হবে, মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। পাশাপাশি আছে বাবা-মার অদম্য চেষ্টা; যাঁরা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেন। শিক্ষকের নম্র আচরণ এবং আন্তরিক ব্যবহার আমাকে অনুপ্রাণিত করে। পিতা-মাতার দারিদ্র্য ঘোচানোর অদম্য ইচ্ছা, তাঁদের চোখের জল, বাৎসল্যমণ্ডিত অনুশাসন, পাশাপাশি শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং জন্ম হোক, যথা তথা কর্ম হোক ভালো -এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে আমার মনোভূমি।
জীবনের লক্ষ্যপথে যাঁরা প্রাতঃস্মরণীয়:
আমি গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করি। আগে পাঠশালা, পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার জীবনের লক্ষ্যের ভিত প্রথম স্থাপিত হয়। কিন্তু এত ছোটো বয়সে বোঝা কি সম্ভব পড়াশোনা মূলত কী। শিশুবয়সে তখন দুষ্টুবুদ্ধিই আমার একমাত্র সম্বল। পরে পঞ্চম শ্রেণিত যখন উঠলাম তখন শ্রীযুক্ত শ্রীকান্ত বাবু আমায় প্রথম চক্ষুদান করলেন; পরে দেউলি আর পি কে আর সি বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনাকালে শ্রীযুক্ত ভূপেন্দ্রনাথ মণ্ডল আমার যথার্থ শিক্ষাগুরুর স্থান দখল করেন। তাঁর কথা- মনের জমিতে চাষ দাও, তা না হলে মনের ফসল ফলবে না- আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করত। পপল্লি দিগম্বর সিনহা বিদ্যায়তনের বাংলা শিক্ষক শ্রীকান্ত বাবু আমাকে লেখার প্রেরণা জোগাতেন আর ভূপেন বাবু জোগাতেন পড়ার প্রেরণা- এই দুই কল্পবৃক্ষকে জীবনে পেয়ে আমার চলার পথ কখন যে বাঁক নিল আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না। ভাবলাম, জীবনে মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে এরকম আদর্শ গুরুর লক্ষ্যপথ ধরে চলতে হবে। শিখতে হবে জীবনের মূল্য আয়ুতে নয়, তার একটা বৃহত্তর দিক রয়েছে। একারণে আমার জীবনের লক্ষ্যপথ স্থাপনে এঁরাই আমার প্রাতঃস্মরণীয় এবং বরণীয় ব্যক্তিত্ব।
পিতা-মাতার স্বপ্ন ও আমার লক্ষ্য:
মধ্যবিত্ত পরিবারে পিতা-মাতাদের যতই দারিদ্র দুঃখকষ্ট থাক না কেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই আছে। সমাজে তাঁরা সন্তানের সৎকর্ম প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান। কামনা করেন, পরম মঙ্গলময়ের কাছে- আমার সন্ততি সুখে থাক। তাই পিতা-মাতার ইচ্ছানুসারে আমার লক্ষ্য ক্ষয়িষ্ণু সমাজের একজন প্রতিনিধিস্থানীয় শিক্ষক হওয়া। সেখানে আমি যেন সামাজিক মানুষের পাশে থেকে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারি- নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমার লক্ষ্যপূরণের করতে হলে:
আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আমাকে শুধু সৎ, নম্র, বিনয়ী হলে চলবে না, আমাকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। নিত্যনৈমিত্তিক জীবনধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে আমাকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতে হবে। জীবনের সৎ বন্ধু, সং পরামর্শদাতা এবং সৎ মানুষের সংসর্গ লাভ করতে হবে। পরিশ্রমের সময় আজও বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজেকে দায়িত্বশীল, সময় সচেতন, কর্তব্য সচেতন একলক্ষ্য পূজারিতে পরিণত হতে হবে।
আমার জীবনের লক্ষ্য পূরণে বাধা:
আমাদের সমাজে যে- কোনো সৎ লক্ষ্যকে পূরণে অনেক বাধা বর্তমান। যেমন-
(১) অর্থনৈতিক সমস্যা;
(২) সামাজিক প্রতিষ্ঠিত মানুষের তাচ্ছিল্য ও নিষ্ক্রিয় মানসিকতা,
(৩) ঘৃণধরা সমাজে উপযুক্ত পরিবেশে নিজেকে গড়ে তুলতে না পারার বাধা
-এগুলি আমার জীবনের আশু লক্ষ্যপূরণে অমোঘ বাধা।
অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়ে:
অভীষ্ট লক্ষ্যে তির ক্ষেপণ করে সেখানে আমার ভূমিকা হবে–
(১) ছাত্রছাত্রীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তাদের সকল সমস্যার মোকাবিলা করা;
(২) অমনোযোগী ও অবুঝ ছাত্রছাত্রীদের মনে আকর্ষণবোধ তৈরি করা;
(৩) একজন স্কুলশিক্ষকের যথার্থকর্তব্য পালন করা;
(৪) অবসর সময়ে সামাজিক সমস্যার প্রতি যথোপযুক্তভাবে মনোনিবেশ করা;
(৫) ছাত্রছাত্রী ও সমাজকল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করা- এতেই আমার জীবনের চরম সার্থকতা।
উপসংহার-
আমি জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখি। জীবনগাঙে যখন খেয়াতরি ভাসিয়ে দিয়েছি তখন অভীষ্টলক্ষ্যে আমি পাড়ি দেবই। সেখানে খেয়াতরির মাঝি হবেন আমার জীবনদেবতা- পরমেশ্বর; থাকবে শিক্ষাগুরুদের প্রেরণা এবং আমার পিতা-মাতার আশীর্বাদ।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।