পরিবেশ পরিষেবায় অরণ্য প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “পরিবেশ পরিষেবায় অরণ্য” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ পরিষেবায় অরণ্য
ভূমিকা-
একটি গাছ একটি প্রাণ। তার স্নেহশীতল স্নিগ্ধ ছায়া, উদার প্রশান্ত পরিবেশ মানুষকে দিয়েছে নিবিড় আশ্রয়; দিয়েছে বিচরণ ক্ষেত্র; দিয়েছে চিত্তমনোহারিত্বের জন্য পাখির কুজন, ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য ফলমূল। এ ছাড়া অরণ্য বাসগৃহের মূল উপাদান সরবরাহ করে।
প্রাচীনকালে রাজপ্রাসাদ থেকে তপোবন পর্যন্ত ছিল অরণ্যের সুবিস্তার। তাই রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন- “অরণ্য নষ্ট হওয়ায় বিপদ এখন আসন্ন; সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে।”
সভ্যতার বিকাশে অরণ্য-
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতা অরণ্যনির্ভর। বৈদিক সভ্যতায় ‘বানপ্রস্থ’ ছিল জীবনের অন্যতম আশ্রয়স্থল। তপোবনের শিক্ষা দিয়ে যে জীবন শুরু হত যে জীবন শেষ হত অরণ্যে, বাণপ্রস্থ অবলম্বনে।
গাছের তলাতেই মানুষ তার প্রথম সংসার পেতেছে, শিক্ষা নিয়েছে, মানুষ তার প্রথম সৌন্দর্যবোধ পেয়েছে অরণ্যের কাছ থেকেই। প্রভাবের কথা প্রচীন যুগের মানুষরা যথেষ্ট জানতেন। তাই দেখি অশোক, শেরশাহ প্রমুখ সম্রাট পরবর্তীকালে দেখি বোধিবৃক্ষের নীচে বুদ্ধের বোধি লাভ।
মানুষের জীবনে বৃক্ষের আমোদ পথপার্শ্বে বৃক্ষরোপণ করেন। আজকে মানুষ সেই শ্যামলিমা সৃষ্টির পরিবর্তে ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গল তৈরি করছে।
অরণ্য সংহারের কারণ-
সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ অরণ্যাচারী থেকে হয়েছে সভ্য, হয়েছে আধুনিক। ক্রমেই জনসংখ্যা বেড়েছে। তাই তারা অরণ্য কেটে তৈরি করছে শহর, নগর। আধুনিক সভ্যতার জন্য প্রস্তুত প্রয়াজনীয় আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, যানবাহন তৈরির উদ্দেশ্যে অরণ্য ক্রমেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে।
পশ্চিমি দেশের লোকেদের এত জ্বালানি প্রয়োজন যে অন্য দেশ তা রপ্তানি করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে গাছের সংখ্যা বর্তমানে ক্রমহ্রাসমান। যান্ত্রিক সভ্যতায় পদার্পণ করে আমরা এই আধুনিক সভ্যতার মানুষজন অতিযান্ত্রিক হয়ে পড়েছি।
বৃক্ষের গুরুত্বের কথা আমরা বিস্মৃত হচ্ছি। পৃথিবীতে এই বৃক্ষচ্ছেদনের কুফল যে কী নিষ্ঠুর, কতটা ভয়ানক তা কল্পনা করে শিহরিত হতে হয়।
মানবজীবনে অরণ্যের ভূমিকা-
মানবজীবনে অরণ্যের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। অরণ্য তার অকৃপণ দানে আমাদের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছে। অরণ্যের আশীর্বাদস্বরূপ আমরা বসবাসের গৃহ, আসবাবপত্র, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, রোগনিরাময়ের ঔষধ প্রভৃতি পাই। সর্বোপরি অরণ্য আমাদের পরিবেশদূষণ রোধ করে।
(ক) আমাদের বাঁচার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা আমরা অরণ্যের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। অরণ্যভূমির জন্য বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
(খ) অরণ্য ভূমিক্ষয় রোধ করে। অরণ্য না থাকলে বৃষ্টির জলে, নদীর স্রোতে মৃত্তিকা ক্ষয়ে গিয়ে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিত।
(গ) অরণ্য আমাদের এই বিশাল জীবজগতের খাদ্য ও শক্তির প্রধান উৎস। গাছের দেহের সঞ্চিত খাদ্য থেকেই আমরা খাদ্য পেয়ে থাকি। গাছের মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে কাঠকয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতির মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
(ঘ) অরণ্য সম্পদ থেকেই বিভিন্নপ্রকার জীবনদায়ী ঔষধ প্রস্তুত হয়। যেমন, কুইনাইন, রেসারপিন, অ্যাট্রোপিন- ইত্যাদি। ম্যাপল গাছের পাতার সংস্পর্শে এসে আমাশয়ের রোগজীবাণু বিনষ্ট হয়। গাছের এই জীবনদায়ী ক্ষমতা প্রভৃত পরিমাণে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত দেশে চলছে সবুজ প্রাচীর গড়ার প্রয়াস। আমাদের দেশেও চলছে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা। এ ছাড়া
(ঙ) অরণ্য সম্পদের ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজন (O3) স্তরের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাকে ভেদ করে সূর্য থেকে আগত আলট্রা ভায়োলেট-রে আমাদের গায়ে সরাসরি এসে পড়ছে। এর ফলে নানাবিধ চর্মরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিও হতে পারে। এক কথায় বায়ুদূষণ প্রতিরোধে, মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধে জলের পূর্ণ ব্যবহার ও পরিবেশের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে অরণ্যের অবদান অপরিসীম।
ভারতে অরণ্য সম্পদ ব্যবহার:
ভারতে অরণ্য অঞ্চলের আয়তন খুব কম। যেখানে অরণ্যের পরিধি হওয়া উচিত মোট ভূভাগের ১/৩ অংশ, যেখানে ভারতে অরণ্যভূমি পরিধি মোট ভূভাগের ১/৬ অংশ। ভারতের GNP -এর ১.৫৭ ভাগ আসে অরণ্যভূমি থেকে।
অরণ্যজীবীদের জীবিকার সংখ্যাও কম নয়, প্রায় ৩০ লক্ষ। ভারতের মোট রাজস্বের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আসে বনজ সম্পদ থেকে। যে জ্বালানি সম্পদে ভারত ঐশ্বর্যশালী তার প্রায় ৬০ শতাংশ হল অরণ্য সম্পদের দান।
বোঝাই যায়- ভারতে অরণ্য-সৃজনের থেকে অরণ্য সংহারের গতি বেশি। যেখানে বিগত ২০-২২ বছর ভারতে অরণ্য উচ্ছেদ হয় প্রায় ৩৮-৪০ লক্ষ হেক্টর জমিতে, যেখানে অরণ্য সৃজন হয় মাত্র ২৩-২৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে। আসামের অরণ্যভূমির আয়তন হচ্ছে মোট ভূভাগের মত্র ১০%। ফলস্বরূপ ব্রহ্মপুত্র নদ ক্রমশই পলিপূর্ণ হয়ে বন্যার প্রকোপ বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া অনেক দুর্লভ ও বহুমূল্য প্রাণী ও উদ্ভিদ হারাচ্ছি আমরা।
আমাদের প্রচেষ্টা:
অরণ্যচ্ছেদন রোধ করার সহজতম অথচ শক্তিশালী ও সুপরিকল্পিত পন্থা হল বনমহোৎসব। প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে ও শহরাঞ্চলে কেটে ফেলা গাছের জায়গায় নতুন চারাগাছ লাগানো অবশ্যই বাধ্যতামূলক। বৃক্ষরোপণে ছাত্রছাত্রীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মুনাফালোভীরা যাতে দামি গাছ না কাটতে পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
উপসংহার:
অরণ্যের সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্ক মধুর। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে- “একটি গাছ পঞ্চাশ বছর বাঁচলে মানুষকে পনের লক্ষ টাকা দান করে। এর মধ্যে আড়াই লক্ষ টাকার অক্সিজেন।” আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভৌগোলিক আয়তনের এক তৃতীয়াংশ অরণ্যাঞ্চল প্রয়োজন।
তাই রবীন্দরনাথের ভাষায় বলি- “অরণ্য নষ্ট হওয়ায় বিপদ এখন আসন্ন। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে - আবার তিনি রক্ষা করুন এই ভূমিকে, দিন তার ফল, দিন তার ছায়া।”
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।