Ads Area


যুদ্ধ নয় শান্তি চাই প্রবন্ধ রচনা | I Want Peace Not War Essay Writing

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই প্রবন্ধ রচনা - I Want Peace Not War Essay Writing


যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই প্রবন্ধ রচনা - I Want Peace Not War Essay Writing- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই: সমস্যা ও সমাধান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।





যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই প্রবন্ধ রচনা




অনুরূপে: (১) যুদ্ধ-শান্তি জাতীয় সংহতি; (২) যুদ্ধ বনাম শান্তি।




ভূমিকা:



“হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব

ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভ জটিল বন্ধ।”


-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



সভ্যতার ইতিহাস গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। সভ্যতার আদিম লগ্ন থেকেই চলেছে। যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও রক্তপাত -সৃষ্টির মনের কথা মনে হয় দ্বেষ। গুহাবাসী হিংস্ৰ মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলল সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি। মানুষের অনিশ্চিত, অনিয়ন্ত্রিত জীবন নিয়ন্ত্রিত হল।

কিন্তু তবুও মানুষের গোপনে থেকে গেল আদিম, বর্বর প্রবৃত্তি- হিংসা। এরই ফলে দেশে দেশে কত যুদ্ধই না ঘটেছে। কত সাম্রাজ্যের উত্থান পতন হয়েছে। আজকের যুদ্ধের পরিণতি কতখানি নির্মম ও নিষ্ঠুর তা বিগত দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে মানুষ জেনে গেছে। মানুষ সেই বিভীষিকাময় রক্তাক্ত স্মৃতি ভুলতে পারেনি। আজ যুদ্ধ মানে সভ্যতার বিনাশ এবং মানুষের অস্তিত্ব লোপ। তাই সারা বিশ্বজুড়ে শান্তিকামী মানুষ আবেদন জানাচ্ছে- “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই”।



বিগত বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও তার ভয়াবহতা:


বিগত শতাব্দীতে এই বিশ্বের বুকে সংঘটিত হয়েছে দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ। পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধকে অতিক্রম করে গেছে এই দুই যুদ্ধের ভয়াবহতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ গড়ার উদগ্র বাসনা, বিশ্বের বাজার দখলের লড়াই- এইসব কারণের বিশ্বযুদ্ধ ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৯) ব্যবহৃত হয়েছিল বোমারুবিমান ও আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ। এতে নিহত হয়েছিল চার কোটি চোদ্দো লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ। বিকলাঙ্গ হয়েছিল দু-কোটি মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-৪৫) নিহত মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটি চল্লিশ লক্ষ। এই সংখ্যা সর্বকালীন রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বিকলাঙ্গ হয়েছে ন-কোটি মানুষ। এই মহাযুদ্ধে প্রথম আণবিক বোমা ব্যবহৃত হয় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে। মুহূর্তে মধ্যে দুটি সমৃদ্ধ শহর জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রবীন্দ্রনাথ, রমা রল্যা, বার্নার্ড শ - প্রমুখ মনীষী যুদ্ধবিরোধী আহ্বান জানালেন। স্থায়ী শান্তির জন্য গঠিত হল ‘লিগ অব নেশনস্’ বা ‘জাতিসংঘ’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা’র মধ্য দিয়ে শক্তিশালী দেশগুলি শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখল। গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ এই আহ্বানে সাড়া দেন।



সমরাষ্ট্রের বিভীষিকা:



বিশ্বের যুদ্ধবাজ ঔপনিবেশিক শক্তিকামী দেশগুলির হাতে এখনও অজস্র সমরাস্ত্র মজুত হয়েছে। তারা পরস্পর ঠান্ডা লড়াই বা স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারা পৃথিবীর বাতাসকে কলুষিত করে রেখেছে। মানবসমাজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় ভীত সন্ত্রস্ত।

বৃহৎ শক্তি এখন নক্ষত্রযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নক্ষত্রযুদ্ধ হল অতি আধুনিক যুদ্ধ পরিকল্পনা। এর দ্বারা মহাকাশ থেকে লেসার রশ্মি ফেলে আণবিক শক্তিকে নিষ্ফল করে দেওয়া সম্ভব। এরজন্য সারা পৃথিবী আতঙ্কিত।

এখনও বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির হাতে সঞ্চিত রয়েছে ভয়ংকর মারণাস্ত্রসমূহ। পারমাণবিক বোমার থেকে আরও শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা প্রস্তুত হয়েছে। সেই বোমা বহনের জন্য তৈরি হয়েছে রকেট।

শক্তিধর দেশগুলির হাতে সংরক্ষিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের থেকে দশ হাজার গুণ বেশি শক্তিসম্পন্ন বিস্ফোরক। এখন জল-স্থল-অন্তরীক্ষ, গ্রহ-উপগ্রহ পরিব্যাপ্ত করেছে যুদ্ধের বিস্তৃতি। রকেট, উপগ্রহ, সাবমেরিন এইসব আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ মানুষের হাতের মুঠোয়।

এখনকার মারণাস্ত্রের দ্বারা এই পৃথিবীর মতো কয়েকশো পৃথিবীকে মুহূর্তে ধ্বংস করা অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। এরই জ্বলন্ত একটি দৃষ্টান্ত- আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করা গেছে। আক্রমণের মূল হোতা তালিবান জঙ্গিনেতাকেও ধ্বংসের মধ্য দিয়েই শাস্তি দেওয়াই হল।



যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির প্রচেষ্টায় সমগ্র বিশ্ব:


আজ আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো যুদ্ধবাজ দেশগুলিও উপলব্ধি করেছে যুদ্ধের কুফল। যুদ্ধ কখনোই শান্তির বাণী বয়ে আনে না। যুদ্ধ মানে ধ্বংস, মৃত্যু, যুদ্ধ মানে দুর্ভিক্ষ, উপবাস। তাই আজ সকলেই শান্তির প্রত্যাশী। তাই সারা বিশ্বে একজোট হয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।

আজ বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ সংঘটিত হলেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ সম্ভাবনার হাত থেকে বাঁচতে আজ গোটা দুনিয়া একজোট হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দকে ‘আন্তজার্তিক শান্তিবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের পক্ষ থেকে পুনরায় শান্তিস্থাপনের জন্য প্রয়াস চলছে।


ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদের স্বরূপ:


ভারতবর্ষ চিরদিনই শান্তির প্রত্যাশী। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করেছে ভারত। নানা ধর্মের, নানা বর্ণের, নানা জাতির মানুষ নিয়ে ভারতবর্ষ। কিন্তু ভারতবাসীর প্রধান অবলম্বন হল ঐক্য ও সংহতি। অথচ বিচ্ছিন্নতাকামী ও ধর্মীয় মৌলবাদীরা প্রতিনিয়ত ভারতের অখণ্ডতা বিনষ্ট করতে চাইছে। এর পরিণতিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমশ অশান্তি ধূমায়িত হয়েছে। পাঞ্জাবে খালিস্থানে উগ্রপন্থীদের উন্মত্ততা, দার্জিলিং -এ পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে ঝাড়খণ্ডী আন্দোলন, অসমে বোড়ো আন্দোলন, ত্রিপুরায় ‘টিনএনভি’র উগ্রতা, উত্তরপ্রদেশে উত্তরাখণ্ড গঠন; তামিলনাড়ুতে ‘এলটিটি’র দৌরাত্ম্য, কাশ্মীরে উগ্রপন্থীদের তাণ্ডবলীলা ভারতের ঐক্য ও সংহতি প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করতে চাইছে।

এই সমস্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিচ্ছে বহিঃশক্তি। এরই ফল হল সাম্প্রতিক কারগিল যুদ্ধ। পাকিস্তান বছরের পর বছর ভারতের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কাশ্মীরে কিয়ংদশ তারা আগেই অধিকার করেছে। বাকি অংশও অধিকারের জন্য মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের বহু মানুষের জীবন নাশ ও অজস্র সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত অর্থব্যয়ের ফলে দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।


ভারতের জাতীয় সংহতি:


ভারতের মূলমন্ত্র হল ‘মা হিংসি’- অর্থাৎ হিংসা কোরো না। যুগে যুগে বুদ্ধদেব, জিশু, নানক, কবির, শ্রীচৈতন্যদেব প্রমুখ ধর্মসাধকের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সাম্য, মৈত্রী ও অহিংসার বাণী। একশো কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষ। তার অখণ্ডতা রক্ষার জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত ঢেলে দিতে হবে দেশবাসীকে।

অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধ চায় না, চায় শান্তি। দীর্ঘদিনের সাধনায় ভারত তথা সমগ্র বিশ্ব যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, সংগীতের সম্পদ অর্জন করেছে তা কি এক মুহূর্তে বিশ্বকে ধ্বংস করার জন্য? ভারতের নীল আকাশে শিল্পী পিকাসোর শ্বেত পারাবত যেন মানুষের মনে শান্তির প্রতীকরূপে ডানা মেলে উড়ছে। তাই ভারত বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে নিজের সমস্ত শক্তিকে এক করে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছে।


উপসংহার:


আজ ভারত বিশ্বকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, যুদ্ধ-বিচ্ছিন্নতা-সাম্প্রদায়িকতা মানুষকে কোন অন্ধকারের অতল গহ্বরে টেনে নিয়ে যায়। তাই সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হয়ে আমরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলি-


“বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়ায়ে

ঊর্ধ্বমুখে নরনারী।”




আরও পড়ুন-

🔘 Join Our Telegram Chanel - Click Here 🔘


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area