Ads Area


মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে

মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে


মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে


মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।



মাতৃভাষা বিজ্ঞান চর্চা রচনা



অনুরূপে: (১) সমকালীন বিজ্ঞানসাধনা; (২) বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা: (৩) বিজ্ঞানচর্চায় বাঙালি।




ভূমিকা:


মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম। মাতৃদুগ্ধ পান করে যেমন সকলে পালিত হয়, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমে সবাই মনের ভাবকে অতি সহজেই প্রকাশ করে। মানুষের আনন্দ, বেদনা, জ্ঞান, বোধ এসবকিছুর স্বাভাবিক প্রকাশ মাতৃভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষা মানুষের এক সহজাত সংস্কার।

মাতৃভাষাকে অবলম্বন করেই সুদূর অতীতকাল থেকে সভ্যতার জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, সবকিছু। চিন, ভারত, গ্রিস, মিশর প্রভৃতি দেশের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য।

আমাদের দেশে ঔপনিবেশিক শাসকেরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে বিজ্ঞানচর্চার প্রচার ও প্রসার ঘটালেও তারা এ দেশের মাতৃভাষাকে বিজ্ঞানচর্চা ও উন্নততর বিদ্যাচর্চার অনুপযুক্ত বলে প্রচার করেছে। এর ফলে বাঙালির মাতৃভাষা হীনমন্যতাবোধের স্বীকার হয়ে বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যম হিসেবে তার কোলিন্য অর্জন করতে পারেনি।



জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন ভারত:


প্রাচীনকালে সমুন্নত সভ্যতার আধার ছিল ভারতবর্ষ। সে যুগে ভারতবাসীর জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার ভাষা ছিল মাতৃভাষারূপ বহুল চর্চিত সংস্কৃত। বহু পুরোনো যুগের উন্নত চিন্তার ফসল ঋগ্‌বেদ, উপনিষদ থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ ও পুরাণ ইত্যাদি সবই সংস্কৃততেই বিধৃত।

সংস্কৃত ভাষাতেই জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার কাজ শুরু করেছিলেন আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত প্রমুখ অসামান্য গাণিতিক।

বরাহমিহির রচিত ‘বৃহৎসংহিতা’; ‘ভূগোল’; ‘খনিজবিদ্যা’; ‘জ্যোতির্বিদ্যা’ - ইত্যাদি নানা গ্রন্থ প্রাচীন ভারতকে সমৃদ্ধ করেছে। দার্শনিক, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত নাগার্জুন সংস্কৃত ভাষাতেই অসামান্য কয়েকটি রসায়ন গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। এ ছাড়া সেযুগে রচিত দুটি অসামান্য গ্রন্থ- ‘চরক সংহিতা’ ও ‘সুশ্রুত সংহিতা’ ভারতীয় সংস্কৃত ভাষায় রচিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষণা গ্রন্থ।


চক্রপাণি দত্তের ‘আয়ুর্বেদ দীপিকা’ এবং অনুভূতি ও শুরপাল রচিত ‘লৌহ পদ্ধতি’ ও ‘বৃক্ষায়ুর্বেদ; মল্লিকার্জুনের ‘শিষ্য ধীমহাচন্দ্র’ প্রাচীনযুগের বিজ্ঞানচর্চার আকর গ্রন্থ।




বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা:


বাংলা ভাষাতে আধুনিক যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। শ্রীরামপুর মিশন (১৮০০) থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে অনূদিত বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া সে যুগের বিভিন্ন পত্রিকা (‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘বিজ্ঞান সেবধি’) বিজ্ঞান আলোচনায় বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

প্রকৃতিজগৎ ও মানবজগতের সম্পর্ক নিয়ে অক্ষয়কুমার দত্তের ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ গ্রন্থটি বস্তুনিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।

তাঁর ‘পদার্থবিদ্যা’ গ্রন্থটি যুক্তিনিষ্ঠ বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ গ্রন্থ। এ ছাড়া বিদ্যাসাগর, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রমুখের রচনাতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞান সচেতন সাহিত্য সৃষ্টির পরিচয় মেলে।



বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা:



বিজ্ঞান চর্চায় জগদীশচন্দ্র বসুর নাম সর্বাগ্রে। বিনা তারে বিদ্যুৎ- তরঙ্গ প্রেরণ করে রেডিয়ো আবিষ্কারের পথপ্রদর্শক তিনিই; কিন্তু এই খ্যাতি থেকে তিনি বঞ্চিত হন। তবে উদ্ভিদবিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বাঙালির গৌরব। তিনি ‘ক্রেস্কোগ্রাফ’ যন্ত্র আবিষ্কার করে প্রমাণ করেন গাছের প্রাণ আছে।

তিনি বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ ‘অব্যক্ত’ রচনা ছাড়াও পরবর্তী প্রজন্মের তরুণ বিজ্ঞানীদের গবেষণার সুবিধার জন্য ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। জগদীশচন্দ্র বসুর উত্তরসাধক হয়ে এলেন- আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

তিনি পারদ (মার্কারি) ও নাইট্রোজেন -এই দুই বিপরীতধর্মী বস্তুর মিলন ঘটিয়ে আবিষ্কার করলেন ‘মারকিউরাস নাইট্রাইট’ যৌগটি। সর্বভারতীয় বিজ্ঞান কল্যাণে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল কেমিক্যাল। অসামান্য বিজ্ঞান গ্রন্থ ‘হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস’ প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের আর এক অনবদ্য কীর্তি। এঁদের উত্তরসাধক রূপে বিজ্ঞান-জগতে পাওয়া যায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে।

তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সঙ্গে নতুন গবেষণালব্ধ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি করলেন- “বোস-আইনস্টাইন থিওরি। এ ছাড়া পরিসংখ্যান তত্ত্বের গবেষণাতে সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিশেষভাবে স্মরণীয়।

পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় ড. মেঘনাদ সাহা নক্ষত্র সম্বন্ধীয় তথ্যসংগ্রহের নবতম পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ভারতে পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে মেঘনাদ সাহার ‘সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ আজ বিশ্ববাসীর কাছে বিশেষ গর্বের প্রতিষ্ঠান।

ISI- এর প্রতিষ্ঠাতা ড. প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে আশ্চর্যজনক কৃতিত্ব দেখান। মহাকাশ গবেষণায় শিশির কুমার মিত্রও বাঙালির গর্ব। তিনি ‘আয়নস্তর’ বিষয়ে গবেষণা করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন।



আধুনিক বিজ্ঞানসাধকদের বিজ্ঞানচর্চা:


এরপর বাঙালি বিজ্ঞানীদের অনলস বিজ্ঞানচর্চা থেমে থাকেনি। এলেন প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ফলিত বিজ্ঞানের সাধক রাধানাথ শিকদার; আলোক-রসায়নবিদ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ; কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী; পলিপরিন আবিষ্কারক ডা. সহায়রাম বসু; নৃতত্ত্ববিজ্ঞানী নির্মলকুমার বসু; অপরাধবিজ্ঞানী পঞ্চানন ঘোষাল; ভেষজ রসায়নবিদ ডা. অসীম চট্টোপাধ্যায়; টেস্টটিউব বেবির স্রস্টা ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ডা. নীলরতন সরকার এবং রাধাগোবিন্দ কর প্রমুখ।



সাম্প্রতিক বিজ্ঞানচর্চা:



বর্তমানকালেও বহু বাঙালি বিজ্ঞান গবেষক বিজ্ঞান অনুশীলন করছেন। “কিশোর জ্ঞান-বিজ্ঞান’ ‘বিজ্ঞান-ভারতী’, ‘বিজ্ঞান-বার্তা’ প্রভৃতি পত্রিকায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ রচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান অনুশীলন। সামান্য কয়েকজন ছাড়া বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চাতে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী বেশ আগ্রহী। তাতে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই বাংলার মতো কৃষিনির্ভর দেশে বাংলাতে বিজ্ঞানচর্চা শ্রেয়তর।



মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সমস্যা:


বিদেশি জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থকে বাংলায় পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে পরিভাষাগত সমস্যা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশি কোনো বিজ্ঞান বিষয়ক শব্দকে বাংলাতে যথার্থ অর্থে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই পরিভাষার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব উদার হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদিও এই পারিভাষিক সমস্যার কথা সামনে রেখে বিজ্ঞান পরিষদ পরিভাষা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে।


উপসংহার:


বলা চলে, সরকারী কাজে, উচ্চশিক্ষায়, জ্ঞানাত্মক সাহিত্যচর্চায় সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা কাঙ্ক্ষিত। যে ভাষাতে দর্শন, অর্থবিদ্যা সবকিছুর চর্চা সম্ভব, আগামী দিনে সে ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা অবশ্যই সম্ভব হবে। একদিন এই সমস্যাকে কাটিয়ে উঠে আমরা মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারব।




আরও পড়ুন-


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area