Ads Area


ভারতের জাতীয় সংহতি: সমস্যা ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা || ভারতের জাতীয় সংহতি প্রবন্ধ রচনা || জাতীয় সংহতি বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা

ভারতের জাতীয় সংহতি: সমস্যা ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা


ভারতের জাতীয় সংহতি: সমস্যা ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ভারতের জাতীয় সংহতি: সমস্যা ও সমাধান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।



ভারতের জাতীয় সংহতি: সমস্যা ও সমাধান প্রবন্ধ রচনা



অনুরূপে: (১) ভারত ও জাতীয় সংহতি: (২) বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ভারতের ভবিষ্যৎ: (৩) বর্তমান ভারতের সংহতি।



ভূমিকা:




“নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান

বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।”


-অতুলপ্রসাদ সেন




সেই কোন অতীতলগ্নে ভারতের অরণ্যগর্ভ থেকে প্রথম সামগান ধ্বনিত হয়েছিল ওঁ অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজং হোতারং রত্নধাতমম্। ভারতীয় সভ্যতার মর্মবাণীই হল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। এ তত্ত্বটি সর্বজনস্বীকৃত। বর্ণভেদ-ধর্মভেদ-জাতিভেদ-ভাষাভেদ -এর মধ্যেও সেই ঐক্যের দৃঢ়তা দেশকে মহান করে তুলেছে।

কবি এই ভারতবর্ষকে ‘মহামানবের সাগরতীর’ বলে উল্লেখ করেছেন। মনে রাখতে হবে যে, কবির এই উক্তি কেবল ভাবকল্পকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য নয়। বাস্তবানুগও বটে। কবির উক্তির পিছনে ঐতিহাসিক তথ্যের জোগান পর্যাপ্ত। তবে আজ, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তীকালে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলির অশুভ চক্রান্তে এ দেশের সংহতি বিপন্ন।

ঐক্যবোধে বিবিধের পত্তন। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, আঞ্চলিক বিদ্বেষ, ভাষাবিরোধ ইত্যাদির বিষময় প্রভাব এদেশের সংহতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।



অতীতে ভারতের সংহতি চিত্র:



বিবিধ জনজীবনের তরঙ্গে একীভূত ভারতীয় মহামানবের মহাসাগর। হাজার হাজার বছর ধরে এদেশে এসেছে বাইরের মানুষ। কেউ কেউ চলে গেলেও তাদের বিপুল অংশই থেকে গেছে এদেশে। ভারতীয় মূল সভ্যতায় পদার্পণ ঘটেছে আর্যসভ্যতার। শক-হুন-পাঠান-মোগলদের মতো ভিনদেশীয়রা একদিন আক্রমণকারী হয়ে এসেছিল এ দেশে।

ক্রমে ভালোবেসেছিল এদেশের জল-মাটি বাতাসকে। তারা ‘একদেহে হল লীন’। বিন্ধপর্বতের দক্ষিণে বসবাসকারী দ্রাবিড় সংস্কৃতি স্বতন্ত্রভাবে বইতে থাকলেও সেই অতীত লগ্নে বিভিন্নতার মধ্যে কখনোই জাতীয় সংহতি গুরুতর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি।

বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সংঘাত ঘটলেও তার সার্বিকতা গুরুত্বহীন হয়ে গেছে। সংস্কৃতির আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে অবিরাম গতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে এই সভ্যতা। জাতীয় সংহতি নিরঙ্কুশভাবে প্রাধান্য লাভ করতে পারেনি বটে, কিন্তু বর্তমান ভারতের এই সংকট কখনোই সূচিত হয়নি সমকালে। মূলগত ঐক্যের সুরটি ক্ষুণ্ন হয়নি। বহু বিরোধের মধ্যেও সাম্প্রদায়িকতার লেলিহান শিখা তেমন তীব্র ছিল না।


ব্রিটিশ আমলে জাতীয় সংহতি:


উত্তর-পশ্চিম ভারতের গিরিপথ ধরে যে দুর্ধর্ষ জাতিসমূহ একদিন এদেশে এসে এদেশেই লীন হয়ে গেল, তেমনভাবে মিলল না পশ্চিম থেকে আগত বণিক ইংরেজরা। ভারতীয় রাজনীতির অস্থিরতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বণিকের বেশ ক্রমে রাজ অধিকারী হিসেবে দেখা দিল। বলাই বাহুল্য ইংরেজ শাসকদের আমল থেকেই দেশে সংহতির ভিত্তি সব থেকে প্রবলভাবে ধাক্কা খায়। তাদের শাসন পদ্ধতি ও সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে অন্যতম বড়ো অস্ত্র ছিল ভেদবুদ্ধির খেলা। ভাগ করে ভোগ করো। -এ নীতিতে তারা সফল হয়েছে।

আর যে মারণবীজটি এদেশে বপন করে গেছে সেটি হল- সাম্প্রদায়িকতা ও বিচ্ছিন্নতাবোধ। তবে এ কথা বলাই বাহুল্য ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য এদেশে সামগ্রিকভাবে ঐক্য ও সংহতির মিলনমালা রচিত হয়। আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষ ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলনের সূত্রে জাতীয়তাবোধের মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আর সেই ঐক্যই বিদেশি শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।


স্বাধীনতার অব্যবহিতকালের পর সংহতিতে ফাটল:



দেশ সত্যিই বিচিত্র। দেশটির নাম ভারতবর্ষ। যে ঐক্য এ দেশকে স্বাধীন করল, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে সেই ঐক্যেই দেখা গেল ফাটল। আশা করা গিয়েছিল স্বাধীনতার পর সেই সংহতি আজও মজবুত হবে। কিন্তু ‘ভারত-বিভাগ’ -এর মতো মর্মান্তিক ঘটনা জাতির জীবনে অনিবার্যভাবে বিচ্ছিন্নতার বীজ রোপণ করল। ধর্মের ভিত্তিতে পৃথক করে দেওয়া একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র যদি জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে, তা হলে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রক্ষায় অন্যান্য জাতি বা ধর্মের মানুষেরা কী করবে।

ধর্ম যদি পৃথক হওয়ার ভিত্তি হয়, তা হলে ভাষাও অবশ্যই একটি ভিত্তি হতে পারে। ক্রমে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেদিন হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইল, দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রগুলি স্বভাবতই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল।

প্রাদেশিকতার সংঘাত এই সংহতিকে নাড়া দিয়ে গেল। সূচনা হল ভাষাভিত্তিক স্বতন্ত্র রাজ্যের। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের উদ্ভব হল ভাষার ভিত্তিতে। সংস্কৃতিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে দাবি অনুযায়ী সৃষ্টি হল অরুণাচল, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি রাজ্য।

কিন্তু এইভাবে কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে। আসাম, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলে ক্রমেই অশুভ ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। আজ ভারতের চতুর্দিকে, ঘরে-বাইরে সর্বত্র বিভেদকামী শক্তিগুলি অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

উত্তর-পূর্ব ভারতে সীমান্তবর্তী আসাম ও ত্রিপুরায় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি অত্যন্ত সক্রিয়। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে হরিজন-নিগ্রহও এক দুরপনেয় কলঙ্ক। অধিকারের দাবিতে স্বার্থ এসে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ঐক্যের মধ্যে সংঘাত তাই স্বার্থপরতার অশুভ ইঙ্গিত বহন করে।


সংহতি রক্ষার বা সমস্যা সমাধানের উপায়:


যে দেশে বহু ভাষা ও বহু ধর্ম, সে দেশে ঐক্য বা সংহতি রক্ষার জন্য কতকগুলি গুরুতর দিক নিয়ে ভাবা আবশ্যক। পরিকল্পনা করেই এগোতে হবে এ সমস্যাসমাধানের জন্য। প্রথমত, যেহেতু এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত, সেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই একে অন্যের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে।

রাজনৈতিক আদর্শ যাইহোক, রাষ্ট্রের স্বার্থে, বৃহত্তর স্বার্থে সে সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে কঠোর নিয়ম ও শৃঙ্খলার বাহন হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সমগ্র দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে উন্নয়নের সুষম বিকাশ ঘটাতে হবে।

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবে ও প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলির উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে হবে।

চতুর্থত, কোনো ধরনের প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ডের দ্রুত দমন আবশ্যক।

পঞ্চমত, জাতীয় সংগীত, ব্রত, উৎসব, সংস্কৃতি, মেলা ইত্যাদির প্রচার প্রয়োজন।

ষষ্ঠত, গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় সকলকে আপন কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং পরিশেষে বলা দরকার, সমস্ত বিদ্বেষ বিভেদ ভুলে মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের বন্ধন ঘটাতে হবে। শিক্ষালাভের মধ্য দিয়ে সেই হৃদয়-বন্ধন সম্পন্ন হবে।


উপসংহার:


বহুর মধ্যে ঐক্যের ধারণা এদেশের মূলভিত্তি। একং সদ্বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি -একই সত্তাকে বিপ্রগণ বহু বলেন। আমাদের আদিগ্রন্থে এই ঐক্যমন্ত্রের বীজ ধর্মের ভাষায় আলাদা হলেও ভাবে লুকিয়ে আছে- আমরা এক। আমরা সকলেই ভারত সন্তান। সকলকে ডেকে জানাতে হবে- বর্ণে বর্ণে নাহিকো বিশেষ, নিখিল ভুবন ব্রহ্মময়।



আরও পড়ুন-

🔘 Join Our Telegram Chanel - Click Here 🔘


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area