শিক্ষাবিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “শিক্ষাবিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষাবিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা
অনুরূপে: (১) জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার; (২) মানবজীবনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা।
ভূমিকা:
গ্রন্থাগার মানব মননের যুগসমৃদ্ধ সঞ্চয়ের অনন্ত ভাণ্ডার। গ্রন্থাগার মানুষের হৃদয়ে ভাব বিস্তারের মিলন সেতু রচনা করে। কবির কবিতা, দার্শনিকের ভাবনা, বিজ্ঞানীর সংকেতসূত্র, ইতিহাস বিদগণের বিশ্লেষণ, শিল্পী, চিত্রশিল্পী ঐতিহাসিকের বিশেষ মতামত, সিদ্ধান্ত ও মন্তব্য মেলে যে-কোনো গ্রন্থাগারে।
‘যুগযুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা’ সঞ্চিত অভিমান, বুকে নিয়ে মানুষ যে ইতিহাস রচনা করে তার সন্ধান মেলে গ্রন্থাগারে। সুতরাং, গ্রন্থাগার হল জ্ঞানান্বেষী মানুষের চিরন্তন জ্ঞানার্জন ও যুক্তির এক দুর্লভ ঐশ্বর্যের খনি।
প্রাচীন যুগে গ্রন্থাগারের উৎপত্তি:
গ্রন্থাগারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীন মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা তত্ত্বকে ধরে রাখত তার স্মৃতিতে। এতদিন শ্রুতির মাধ্যমে চলত ভাবের আদানপ্রদান। এক সময় হাজির হল লিপি। এর সাহায্যে মানুষ বাঁধতে শুরু করল তাদের চিন্তাকে। নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে সে অক্ষরের ব্যবহার শিখল। এরপর আবিষ্কৃত হল কাগজ এবং লিপি। এই দুই মিলে তৈরি হল মানুষের চিন্তার ফসল গ্রন্থ। গ্রন্থকে সংরক্ষণের জন্য তৈরি হল গ্রন্থাগার।
প্রাচীন আমলের গ্রন্থাগার:
পণ্ডিতদের অনুমান পৃথিবীতে প্রথম গ্রন্থাগার তৈরি হয় মিশরে। মিশর ছাড়াও প্রাচীন ভারত, রোম, তিব্বত, চিন- প্রভৃতি স্থানে গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের কথা সকলের জানা। মোগল সম্রাট হুমায়ুন নিজেও গ্রন্থাগার বিভিন্ন করেছিলেন। আসলে প্রাচীন কাল থেকেই গ্রন্থাগার তৈরি তথা গ্রন্থ সংরক্ষণের একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানকালের গ্রন্থাগার:
একদিকে মুদ্রাযন্ত্রের আবিষ্কার, অন্যদিকে মানবচিন্তার প্রগতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আধুনিকীকরণ আজকের গ্রন্থাগারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থের প্রকাশ যত বেড়েছে, গ্রন্থাগার ততই প্রসারিত হয়েছে। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, রোমের ভ্যাটিক্যান লাইব্রেরি, আমেরিকার ওয়াশিংটন লাইব্রেরি; প্যারিসের জাতীয় গ্রন্থাগার: রাশিয়ার লেলিনগ্রাদ লাইব্রেরি- এগুলি আধুনিক কালের অন্যতম প্রন্থালয়। ভারতে জাতীয় গ্রন্থাগার ও অন্যতম গ্রন্থাগার হিসেবে স্বীকৃত।
গ্রন্থাগারের সুবিধা:
গ্রন্থাগার মানুষের মনে জ্ঞানতৃয়া ও ভাবতৃয়া সার করে। একটি গ্রন্থাগারে বিভিন্ন রকমের গ্রন্থ থাকে। পাঠক তার রুচি ও প্রয়োজন মতো একটি গ্রন্থাগার থেকে গ্রন্থ দেওয়া- নেওয়া করতে পারে। আবার, গ্রন্থাগার যেহেতু সমাজের সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান, তাই বিভিন্ন রুচির পাঠক এখান থেকে একাধিক গ্রন্থ একসঙ্গে নিতে পারে, অথবা বসে পড়ে নিতেও পারে।
গ্রন্থাগারের বিষয় বৈচিত্র্য:
গ্রন্থাগার আধুনিক যুগের এক আশ্চর্যজনক আবিষ্কার। একটি গ্রন্থাগারে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ভ্রমণসাহিত্য, শিশু মনোরঞ্জক গ্রন্থ এবং পত্রপত্রিকা থাকে। তবে রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে কিংবা স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারে অর্থনীতি, আইন, প্রযুক্তিবিদ্যা, কারিগরিবিদ্যা, বাণিজ্য প্রভৃতি বহুমুখী গ্রন্থের নিদর্শন পাওয়া যায়।
শিক্ষাবিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা:
গ্রন্থাগার হল সর্বজনীন পাঠশালা। প্রমথ চৌধুরীর মতে গ্রন্থাগার হল মনের হাসপাতাল। এই বিচিত্র সংগ্রহশালা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অনন্ত জগতকে জানতে, বুঝতে সাহায্য করে। প্রত্যেক সুশিক্ষিত মানুষ মাত্রই স্বশিক্ষিত। এই স্বশিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনন্য। একটি গ্রন্থাগার একটি জাতিকে সমৃদ্ধি দান করতে পারে। গ্রন্থাগার বিজ্ঞান নামক পাঠ্যক্রম নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেয় গ্রন্থাগারের বর্তমান গুরুত্বকে।
জাতীয় শিক্ষার প্রসারে, সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে অনুপ্রাণিত করতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এদেশে মননচর্চার ধারাবাহিকতা গ্রন্থাগারকে মূল্যবান করে তুলছে। তবে এখনও দেশে প্রয়োজনের তুলনায় আয়োজনে অনেক ঘাটতি আছে। জনশিক্ষা প্রসারে গ্রন্থাগারগুলি অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে। মনের সংকীর্ণতা রোধ এবং জ্ঞানের বিস্তারে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠভূয়া প্রন্থাগারই নিবৃত্ত করতে পারে। স্কুলকলেজে যারা পাঠ গ্রহণের সুযোগ পায় না, তাদের কাছে গ্রন্থাগার প্রধান চেতনাশক্তি।
তা ছাড়া ভাবীকালের গবেষকদের কাছে প্রন্থাগারের ভূমিকা অনেক। গ্রন্থাগার শুধু জ্ঞান অর্জন বা জ্ঞান আহরণ নয়, তা বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে তথা শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ব জাগিয়ে তোলে।
ছাত্রজীবনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা:
ছাত্রজীবন হল মানবজীবনের প্রস্তুতিকাল। এই সময়ে তার মনোভূমি যত সুন্দর কর্মিত হবে, ভবিষ্যতে সেই ছাত্র অনুরূপ মানুষ হবে। তাই স্কুলপাঠ্য বিষয়ের মধ্যে তার যে অতৃপ্তি তা পূরণ করবে গ্রন্থাগার। বিভিন্ন শ্রেণির পুস্তক পড়ে তার প্রসার ঘটে।
এমনিভাবে ছাত্রছাত্রী আপন মনের আনন্দে বিভিন্ন স্বাদের গ্রন্থ পাঠ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই ছাত্রজীবনে গ্রন্থাগারের ইতিবাচক ভূমিকা অপরিসীম।
গ্রন্থাগারের গুরুত্ব:
একটি গ্রন্থাগার জাতির জীবনের ধারক ও বাহক। এই গ্রন্থাগার মানুষের মনের গহনে জ্বালিয়ে দেয় জ্ঞানের প্রদীপ। তা মানুষকে বিচিত্র জানা-অজানার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। অচেনা বিশ্বকে না দেখেও ধারণা তৈরি করতে শেখায়। মানুষের অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সংযোগসেতু রচনা করে গ্রন্থাগার। আবার স্বশিক্ষিত মানুষের মনের ক্ষুধা মেটাতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম।
উপসংহার:
আধুনিক সভ্যতা প্রগতির পথ ধরে চলেছে। তার সাথে তাল মেলাতে প্রয়োজন শিক্ষা ও জ্ঞানের। গ্রন্থাগারগুলি একারণে অত্যন্ত জরুরি। তা জীবনের ভারসাম্যের দ্যোতক। মানবসভ্যতার ধারাবাহিক চিন্তারাজির সঙ্গে একমাত্র গ্রন্থাগারই পারে পরিচয় ঘটিয়ে দিতে।
তাই ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের প্রচার ও প্রসার অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।