Ads Area


শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা


শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।



শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা



অনুরূপে- সমাজজীবনে গণমাধ্যমের প্রভাব।


ভূমিকা-


 
“কত অজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই

দূরকে করিলে নিকট বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।”


সভ্য জগতের কাঠামো ক্রমপরিবর্তনশীল সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যবহারিক জীবনেও ঘটেছে নানা পরিবর্তন। শিক্ষা পদ্ধতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন প্রয়োগকৌশল। অতীতকালে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ছিল পাঠ্যগ্রন্থ ও গুরু প্রদত্ত উপদেশ নির্দেশাদি। যাত্রা-পাঁচালি কথকতা ইত্যাদির মাধ্যমে একদিকে অর্ধশিক্ষিত নিরক্ষর পল্লিমানুষ আমোদ-প্রমোদ ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ পেয়েছে।

অন্যদিকে এগুলির মাধ্যমে নীতিবোধ, বিবেকবোধ ইত্যাদি পরোক্ষ শিক্ষাও লাভ করেছে। কিন্তু এসব সামান্য উপায়ে সুপরিকল্পিতভাবে গণশিক্ষার কোনো সম্ভাবনা ছিল না।

বর্তমান যুগে বিশ্বে বিজ্ঞানের অনন্য বিজয়ের ফলে সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন ইত্যাদির আগমন ঘটেছে। গণশিক্ষার আধার হিসেবে এগুলির গুরুত্ব আজ সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত।


গণমাধ্যমের স্বরূপ-


 ‘গণ’ কথাটির অর্থ আপামর সাধারণ মানুষ। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই সাধারণ মানুষের একটি বৃহৎ অংশ অক্ষরজ্ঞানহীন। জ্ঞানার্জনের জন্য তাদের অবশ্য গ্রন্থপাঠের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এইসব সাধারণ মানুষের শিক্ষার জন্য দূরদর্শন, বেতার, চলচ্চিত্র এবং সাক্ষর জনসাধারণের জন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এইসব মাধ্যমগুলি এক কথায় ‘গণমাধ্যম’।

শ্রবণ ও দর্শন উভয়ের সংযোগে দূরদর্শন বা চলচ্চিত্র -এই দুটি উপাদান মানুষের মনে সর্বাপেক্ষা গভীরভাবে ছাপ ফেলার ক্ষমতা রাখে।


গণমাধ্যম ও শিক্ষা-


গণসামাজিক পরিস্থিতিতে পিছিয়ে থাকা সর্বাধিক জনসমষ্টির মধ্যে চিন্তা-ধারণা ও বিশ্লেষণের বীজ বপন করার জন্য গণমাধ্যমগুলি সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান। অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে পরোক্ষ শিক্ষালাভ করতে পারে। গণমাধ্যমগুলিই অর্ধশিক্ষিত মানুষের মনের মুক্তি ঘটায়। গণমাধ্যমগুলির সাহায্যে নিরক্ষর সাধারণ মানুষ দেশ-বিদেশের মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়, তাদের বিচিত্র রীতি, আচরণ ও ভাষা শুনতে পায়।

তার সংকীর্ণ মন মুক্তি পায় বৃহত্তর বিশ্বে। বিভিন্ন পেশার মানুষ গণমাধ্যমের সাহায্যে উপকৃত হয়। তাদের পেশাগত শিক্ষায় সমৃদ্ধি যোগায় গণমাধ্যমের সংবাদ, তথ্য ইত্যাদি। একজন গ্রামীণ চাষি জানতে পারে উন্নত সার বীজের সংবাদ এবং আবহাওয়া সম্পর্কে নানা প্রয়োজনীয় তথ্য সে বুঝতে পারে। নতুন যন্ত্রের ব্যবহারিক উৎকর্ষ গণমাধ্যমের সাহায্যে সে জানতে পারে। অতএব সাধারণ মানুষকে পরোক্ষ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তাদের ভূমিকা-


আধুনিক শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলি হল সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, বেতার এবং দূরদর্শন। বর্তমান বিজ্ঞান-নির্ভর যুগে শিক্ষিত জনমানসে সংবাদপত্র জীবনের দর্পণস্বরূপ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জনমত গঠনে এর ভূমিকা অপরিসীম। রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতির সঙ্গে সম্যক পরিচয় লাভের ফলে মানুষ দেশ সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞানলাভ করে। তা ছাড়া- কৃষি, শিল্প সাহিত্যের বিকাশেও এই মাধ্যমটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

নিরক্ষর মানুষও শিক্ষিত মানুষের মুখ থেকে সংবাদপত্রের পাঠ শুনে দেশ এবং পৃথিবীর সমকালীন অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়। তবে শিক্ষাবিস্তারে যে দুটি মাধ্যম বিশেষ অগ্রগণ্য, তা হল বেতার ও দূরদর্শন।

বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেতারের প্রসার ব্যাপক। গ্রামীণ কর্মক্লান্ত নিরক্ষর মানুষ সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় রেডিওর সামনে বসে শুধু অবসরবিনোদনই করে না; জীবন বিকাশের নানা পথনির্দেশ লাভ করে জ্ঞান-সমৃদ্ধ হয়। কৃষিকথার আসর, পল্লিকথা, চাষি ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান, বিভিন্ন যাত্রা, নাটক প্রভৃতির মাধ্যমে তারা জ্ঞানলাভ করে। অন্যদিকে, দূরদর্শন কাল্পনিক বস্তুকে মানুষের দৃশ্যপটে আনে।

এর ফলে মানুষ বাস্তব জ্ঞানলাভ করে, জীবনকে সুন্দর করে তোলে। বর্তমান চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন এক হিসেবে Teaching Aid -এর ভূমিকা পালন করে। বেতার, দূরদর্শন ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষ দেশ-বিদেশের নানা তথ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে জীবনমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে। তাই জনশিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা অনবদ্য।


গণমাধ্যমগুলির সীমাবদ্ধতা-


গণমাধ্যমগুলিতে এই শিক্ষাদানের কাজগুলির ক্ষেত্রে কতকগুলি শর্ত অবশ্যই ভাবনার বিষয়। গণমাধ্যমগুলিতে এইসব শিক্ষাচেতনার প্রয়োগ কার্যকরী হয় তখনই যখন পরিচালকমণ্ডলী জনদরদি, সৎ ও নিষ্ঠাবান হয়। সাধারণ মানুষের মেজাজ মর্জি, মন ও মানসিকতার সঙ্গে পরিচালিত না হলে, তাদের সঙ্গে অন্তরের সংযোগ অনুভব না করতে পারলে এ ধরনের শিক্ষা প্রয়োগের কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

গণমাধ্যম মানেই যে সর্বক্ষেত্রে বিচরণ তা কিন্তু নয়। কারণ, মাধ্যমগুলির মধ্যে যে নৃত্য-নাটক-আলাপচারিতা, ভাষণ, সংবাদ ইত্যাদি প্রচারিত হয়, তার সবগুলি সাধারণের মধ্যে প্রবেশ করে না। লোকশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবেশনা, ভাষার ব্যবহার, বিষয় নির্বাচনের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন- কোনো অনুষ্ঠানের বিষয় কৃষি কিন্তু বক্তা সঞ্চালকগণ যদি সেখানে তাত্ত্বিক আলোচনায় বসেন কিংবা সংখ্যাতত্ত্বসহ তথ্য পরিবেশনে আগ্রহী হন তবে গণশিক্ষার লক্ষ্যটি ভ্রষ্ট হতে বাধ্য। আবার গণমাধ্যমগুলির মধ্য দিয়ে অপসংস্কৃতিমূলক যে-কোনো অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে, তা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কুৎসিত অঙ্গভঙ্গী, অশ্লীল প্রবৃত্তির ইন্ধন, কুরুচি বিস্তার সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে অসুস্থ করে তোলে।

গণমাধ্যমগুলির এ সকল দিকেও নজর রাখা দরকার। আবার সংবাদ মাধ্যমগুলির মাধ্যমে আজকাল যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়, তার অধিকাংশই রাজনৈতিক প্ররোচনায় দগ্ধ। নিরপেক্ষতায় গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা সুদৃঢ় করে।


উপসংহার-


মানুষের শিক্ষার শেষ নেই। তাই গণশিক্ষার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার। যেহেতু দূরদর্শনের মতো শক্তিশালী মাধ্যমটি এখনও পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, সেহেতু সরকারকেও এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতার ওপর নির্ভর করছে দেশে শিক্ষাবিস্তারের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি। তাই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন সফল করতে তা অত্যন্ত জরুরি।



আরও পড়ুন-

🔘 Join Our Telegram Chanel - Click Here 🔘


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area