চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা | Role of Sports in Character Building Essay Writing In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চরিত্রগঠনে খেলাধুলার ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা
অনুরূপে- (১) ছাত্রজীবনে খেলাধুলার স্থান; (২) ছাত্রজীবনে খেলাধুলার প্রভাব; (৩) জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব।
ভূমিকা:
“খেলা মোদের লড়াই করা, খেলা মোদের বাঁচা মরা;
খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রাচীনকাল থেকেই খেলাধুলা মানুষের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশের প্রধান উৎস হিসেবে স্বীকৃত। দেহ এবং মনের পরিপূর্ণ বিকাশের মধ্যে দিয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয়। মনের বিকাশের জন্য যেমন জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন, তেমন দৈহিক বিকাশ ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজন খেলাধুলা। দেহ সুস্থ না থাকলে মনের বিকাশও সম্ভব নয়।
স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়- “দুর্বল মস্তিষ্ক কিছুই করিতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তোমরা সবল হও। গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।”
বস্তুত খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত আনন্দের ভাণ্ডার।
খেলাধুলার বিবর্তন ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ:
খেলাধুলা মানবসমাজে আদিকাল থেকে চলে আসছে। দেশ ও জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য , নিজস্ব জীবনবোধ, ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্য দিয়ে খেলাধুলার অভ্যাস, প্রকৃতি ও পদ্ধতি গড়ে ওঠে। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলি, দাবা –ইত্যাদি এক এক দেশের নিজস্ব খেলা আজ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করেছে। দেশে দেশে এখন নিয়মিত খেলার আসর বসে অজস্র ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মন জয় করেছে ক্রীড়াবিদরা।
ভৌগোলিক বেড়াজাল, জাতিগত ও ধর্মগত ভিন্নতা মুছে গিয়ে মানুষ মানুষের আরও নিকটে আসার সুযোগ পেয়েছে। অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষের এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। অলিম্পিকের অনুসরণে গড়ে উঠেছে এশিয়াড়। এইসব ক্রীড়ানুষ্ঠান দূরের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষকে আরও কাছে টেনে এনেছে।
এর মধ্যে দিয়েই এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটে। ভাবের আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে। দূরদর্শনের পর্দায় খেলা দেখে সারাবিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক মুগ্ধ হন এবং অকুণ্ঠ প্রশংসা ও ভালোবাসায় অভিনন্দিত করেন ক্রীড়াবিদদের।
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চরিত্রগঠনের সূত্রপাত:
জন্মলগ্ন থেকে শিশুর খেলাধুলার প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ থাকে। শিশু জন্মের পর থেকে পা-ছুড়ে খেলা করে। এইভাবে খেলার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে সে বড়ো হতে থাকে। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গৃহের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ করে। এইভাবে বৃহত্তর জগতে প্রবেশের ফলে সে মানসিক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।
খেলাধুলা ও শৃঙ্খলাবোধ-
নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে গড়ে ওঠে শৃঙ্খলাবোধ। ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত শৃঙ্খলাবোধের অনুশীলনে দেহ হয়ে ওঠে সুস্থ, সবল, মন হয় ওঠে সতেজ ও সুন্দর। মনে সমষ্টি বোধের জাগরণ ঘটে। ফলে দলগত আদর্শ ও ঐক্যবোধের উন্মেষ ঘটে। ব্যক্তিগত স্বার্থ মন থেকে বিলুপ্ত হয়। সেই জায়গায় সমষ্টির কল্যাণ চিন্তা বা দলগত ঐক্য মুখ্য হয়ে ওঠে। এই দলগত শৃঙ্খলাবোধই একটি জাতির উন্নতির সোপান। এইজন্য বর্তমানে প্রত্যেক রাষ্ট্রেই খেলাধুলোর মূল্য অপরিসীম।
খেলাধুলা ও চরিত্রগঠন-
নিয়মিত শৃঙ্খলা ও সংযম মেনে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয়। খেলাধুলা মানুষের মনে ভারসাম্যের সৃষ্টি করে। খেলার মাঠে ও জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে মানুষকে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় সাফল্য-ব্যর্থতা, জয়পরাজয় আছে।
সাফল্যের বা জয়ের উল্লাসে যেমন অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং আত্মতুষ্টি ভালো নয়, তেমনি ব্যর্থতা বা পরাজয়ে মনোবল হারানো বা ভেঙে পড়াও ঠিক নয়। খেলাধুলার মাধ্যমে সব রকম প্রতিকূলতার মধ্যে সমমানসিকতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে ওঠে। খেলাধুলা মানুষকে শেখায় নিয়মানুবর্তিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, সংকল্পের দৃঢ়তা, ধৈর্য্য, একাগ্রতা ও উদারতা।
উপসংহার:
বর্তমানে দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আজ খেলাধুলার সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিন্তু শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলার সুযোগসুবিধা পেলে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ফলে অপসংস্কৃতির দিকে তাদের প্রবণতা কমবে; বাড়বে সাহস ও শৌর্য। ভীরুতা ও কাপুরুষতার খোলসমুক্ত হয়ে তারা হয়ে উঠবে বিপদ-ভয়হীন, নিঃশঙ্ক ও উদারচেতা।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।