Safety Education: বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা | নিরাপত্তামূলক শিক্ষা
Safety Education: Safety at Home, School, College, Play ground, Streets. Prevention and control of Communicable Diseases- Malaria, Cholera, Common Cold, Coughs, Influenza. (নিরাপত্তামূলক শিক্ষা: বাড়ি, স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ ও রাস্তাঘাটের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ম্যালেরিয়া, কলেরা, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।)
Safety Education: বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা | নিরাপত্তামূলক শিক্ষা: আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি নিরাপত্তামূলক শিক্ষা: বাড়ি, স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ ও রাস্তাঘাটের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। ম্যালেরিয়া, কলেরা, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল আলোচনা।
নিরাপত্তামূলক শিক্ষা (Safety Education)
নিরাপদভাবে জীবনযাপন এবং সতর্কতা অবলম্বনের জন্য যে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে নিরাপত্তা শিক্ষা বলে।
নিরাপত্তামূলক শিক্ষা এমন এক ধরনের শিক্ষা যা থেকে আমরা সহজেই অবাঞ্ছিত দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। এর ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই মসৃণ হয়। আবার অনেক সময় সামান্য ভুলের জন্য এমন দুর্ঘটনা ঘটে যার প্রভাব সারা জীবন ধরে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। নিরাপত্তা শিক্ষার অভাব বহু সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাসস্থানে, স্কুলে, অফিসে, আদালতে, খেলার মাঠে, রাস্তায় যে যে সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কা থাকে তার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করলে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।
নিরাপত্তা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা:
আধুনিক যান্ত্রিক যুগে প্রতিটি শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য সকলের জন্য নিরাপত্তা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সমাজ জীবনে প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে নিরাপত্তামূলক জ্ঞান সুস্থ সবল জীবন ধারণের সহায়ক। নিরাপত্তা শিক্ষার প্রয়োজনয়ীতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল-
1. নিরাপত্তা শিক্ষার মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণগুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে দেওয়া।
2. অকস্মাৎ সংঘটিত কোনও দুর্ঘটনায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সহকারে কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করা।
3. বিদ্যালয়ে, রাস্তায়, বাড়িতে, পরীক্ষাগারে, ক্রীড়াক্ষেত্রে নিরাপত্তার নিয়মগুলি জানা, বুঝতে পারা ও মেনে চলার জন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন করে দেওয়া এবং অনুসরণে সাহায্য করা।
4. ক্লান্ত, অবসন্ন বা অসুস্থ বোধ করলে কিংবা কোনও কারণে উত্তেজিত হলে নিরাপত্তামূলক মনোভাব বা সাবধানতা অবলম্বন করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া।
5. যানবাহন চলাকালীন বাইরে হাত না রাখা। রাস্তা বা রেল স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম বদলের সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া।
6. আনন্দ উৎসবে বাজি পোড়ানো, আগুন ও জলের ব্যবহার, বৈদ্যুতিক আলো খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সাবধনতা অবলম্বন করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে দেওয়া ও অভ্যাস গঠনে সাহায্য করা।
নিরাপত্তা শিক্ষাদানের কর্মসূচীর পরিকল্পনা-
নিরাপত্তা শিক্ষাদান প্রসঙ্গে নিম্নরূপ কর্মসূচীর পরিকল্পনা করা যেতে পারে, যেমন-
1. ছাত্র-ছাত্রীদের সমবেত উপস্থিতিতে নিরাপত্তা বিষয়ে ধারণা দেওয়া।
2. নিরাপত্তা শিক্ষা সম্পর্কিত সেমিনারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
3. নিরাপত্তা শিক্ষার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিবির গঠন, সমাজসেবামূলক কাজ, প্রচারমূলক ভ্রমণ ইত্যাদি কার্যাবলীর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
4. বেতার শ্রবণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে নিরাপত্তা শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
5. বুলেটিন ও পোস্টারের মাধ্যমে নিরাপত্তা শিক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
6. বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে নিরাপত্তা শিক্ষামূলক বিভিন্ন চিত্রগ্রন্থ, রেফারেন্স বই, সহায়ক বই ইত্যাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা।
বাসগৃহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বসতবাড়ি এমনভাবে করতে হবে যাতে দক্ষিণপূর্ব খোলা থাকে। কারণ বছরের অধিকাংশ সময় ও দক্ষিণপূর্ব দিক থেতে বাতাস প্রবাহিত হয়। পাকা বাড়ির বুনিয়াদ মজবুত হওয়া দরকার। বুনিয়াদ বা দেওয়াল ভেদ করে যাতে আর্দ্রতা দেওয়াল বা মেঝেতে উঠতে না পারে। শ্লেট, এ্যাসফাল্ট, দস্তার পাত, সিমেন্ট ও পাথরের নুড়ি দিয়ে বাড়ি তৈরি করলে সমূহ বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
গৃহীত ব্যবস্থা:
1. বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
2. বৈদ্যুতিক তারে ভেজা কাপড় না ছড়ানো।
3. দা, ছুরি, কাঁচি, কোদাল ইত্যাদি ব্যবহার সতর্কতার সঙ্গে করা ও নিরাপদ স্থানে রাখা।
4. আগুনের ব্যবহার সাবধানে করা।
5. ব্যবহার্য জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা।
6. ভাঙা কাঁচের জিনিস নিরাপদস্থানে ফেলা
7. সাবধানতার সঙ্গে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা ইত্যাদি।
স্কুল ও কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, কলকারখানায় বিপদযুক্ত স্থানে বিজ্ঞপ্তির দ্বারা সকলকে সচেতন করতে হবে। বিপদসঙ্কুল যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় সর্বদা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে সমূহ বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
গৃহীত ব্যবস্থা:
1. পরীক্ষাগারে সকলের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি রাখা।
2. বন্ধুদের সঙ্গে কলহে লিপ্ত না হওয়া।
3. খোলা খাবার না খাওয়া।
4. বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা।
5. দরজা, জানালা সাবধানে খোলা।
6. উপযুক্ত পোশাক ও আইন কানুন মেনে খেলাধুলা করা।
7. সঠিক জায়গায় ক্রীড়া সরঞ্জাম রাখা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্রীড়া সরঞ্জাম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই চলাচলের নিময়কানুন মেনে চলা দরকার। সামান্য একটু ভুলের জন্য বিরাট আকারের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করলে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
গৃহীত ব্যবস্থা:
1. রাস্তা পার হওয়া এবং চলার সময় বিভিন্ন নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলা।
2. রাস্তায় হাঁটার সময় অন্যমনস্ক না থাকা।
3. রাস্তায় কোনও সময় খেলাধুলা না করা।
4. বৈদ্যুতিক খুঁটিতে হাত না দেওয়া।
5. ফুটপাথ ব্যবহারের নিয়ম জানা।
খেলার মাঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
শারীরশিক্ষার ক্ষেত্রে যে কোনও কর্মসূচী বাস্তবায়ন বা পরিচালনার সময় প্রতিটি পদক্ষেপেই বিশেষ সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি আবশ্যক। শারীরশিক্ষার শিক্ষণে বা যে কোনও প্রতিযোগিতার পূর্বে শারীরশিক্ষক বা পরিচালককে কতগুলি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। যথা-
1. খেলার স্থান বিষয়ক নিরাপত্তা।
2. খেলার সরঞ্জাম বিষয়ক নিরাপত্তা।
3. খেলা চলাকালীন অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
খেলার স্থান বিষয়ক নিরাপত্তা:
1. খেলাধুলার নির্দিষ্ট স্থানগুলিতে কোনও গর্ত, বাঁশ, ইঁটের টুকরো, ভাঙা কাচের টুকরো যাতে পড়ে না থাকে এবং মাটি যাতে উঁচু নিচু না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। না হলে পড়ে গিয়ে হাত-পা মচকে বা ভেঙে যেতে পারে।
2. লংজাম্প, হাইজাম্প, পোল ভল্ট অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার সময় লাফিয়ে পড়ার স্থানটি যাতে নির্দিষ্ট মানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
3. খেলার মাঠে নিরাপত্তার জন্য পূর্বেই প্রয়োজনীয় দাগ দিয়ে রাখতে হবে।
4. জিমন্যাস্টিক্সের অনুশীলন বা প্রতিযোগিতা চলাকালীন নির্দিষ্ট মানের গদির ব্যবহার অতি বাঞ্ছনীয়। দাগ ব্যবহার না করলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
5. জ্যাভলিন, সটপাট, ডিসকাস, হ্যামার প্রভৃতি ছোঁড়ার সময় উপযুক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
খেলার সরঞ্জাম বিষয়ক নিরাপত্তা:
1. যে কোনও খেলার মাঠে, জিমন্যাস্টিক্স বা ব্যায়ামাগারে অনুশীলন বা প্রতিযোগিতা চলাকালীন যাতে অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
2. দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম এবং জিমন্যাস্টিক্সের সরঞ্জামগুলি কিছুদিন পর পর পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
3. অনুশীলন বা প্রতিযোগিতার সময় সরঞ্জামগুলি অবশ্যই যথাযথ স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে।
খেলা চালকালীন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা:
1. খেলা চলাকালীন কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে লাঘিমারা, ধাক্কা দেওয়া, ব্যাট দিয়ে আঘাত করা এবং কোনও কিছু ছুঁড়ে মারা উচিত নয়।
2. যে কোনও খেলার সময় খেলোয়াড়দের লম্বা নখ রাখা অনুচিত। তেল জাতীয় কোনও পিচ্ছিল পদার্থ শরীরে মাখাও উচিত নয়।
3. বিভিন্ন খেলায় উপযোগী পোশাক পরিধান করতে হবে।
4. নিরাপত্তামূলকভাবে যে কোনও খেলা বা প্রতিযোগিতার সময় উত্তেজক পদার্থ গ্রহণ করা ঠিক নয়।
5. কবাড়ি, খো-খো ইত্যাদি খেলায় কোনও গয়না, ক্লিপ, সেফটিপিন বা ঐ ধরনের কোনও জিনিস ব্যবহার করা ঠিক নয়।
6. প্রতিযোগিতা চলাকালীন দর্শকের বেষ্টনী ঠিক রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা না হলে উত্তেজনাবশে দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে। এতে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
7. শারীরশিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচী পরিচালনার সময় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স মজুত রাখতে হবে, যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
8. যে কোনও খেলা বা প্রতিযে তায় অংশগ্রহণের পূর্বে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসাবে উপযুক্ত পরিমাণে ওয়ার্মিং আপ করে নিতে হবে।
সংক্রামক ব্যাধি
নানাভাবে সংক্রামক রোগের জীবাণু জীবদেহে প্রবেশ করে সংক্রামিত হতে পারে। রোগ জীবাণু দেহে প্রবেশ করলেই যে কোনও ব্যক্তি যে রোগে আক্রান্ত হবে এমন কোনও কথা নেই। ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি থাকলে রোগ জীবাণু দেহে প্রবেশ করে সহজে কাবু করতে পারে না। কাজেই সুস্থ শরীর থেকে অসুস্থ শরীরে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে সহজেই সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটায়।
সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হাম, মাম্পস, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, হুপিং কাশি, বসন্ত, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়া, খোস-পাঁচড়া, কালাজ্বর, যক্ষা ইত্যাদি।
রোগ বিস্তারের স্তর:
রোগ জীবাণু জীবদেহে প্রবেশের পর থেকে রোগী সুস্থ হওয়া পর্যন্ত এই সম্পূর্ণ সময়কে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা-
1. উৎপত্তিকাল (Incubation stage)।
2. সংকট কাল (Acute stage)।
3. রোগোত্তর কাল (Convalescence stage)।
উৎপত্তিকাল (Incubation stage):
জীবদেহে রোগ-জীবাণুর প্রবেশ করার পর থেকে রোগের প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত সময়কে উৎপত্তিকাল বলে।
সংকট কাল (Acute stage ):
দেহে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর রোগী আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকাকালীন এই সময়কে সংকটকাল বলা হয়। এই সময় রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
রোগোত্তর কাল (Convalescence stage): সংকটকাল কেটে গেলে রোগী ক্রমশ সুস্থ হতে থাকে ঠিকই কিন্তু দুর্বলতা থেকে যায়। রোগমুক্তির পর থেকে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত সময়কে রোগোত্তর কাল বলে। এই সময় রোগীকে ভাললোভাবে য- নিতে এবং পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হয় যাতে রোগী তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
সংক্রামক ব্যাধির শ্রেণিবিভাগ:
i. কীটপতঙ্গ বাহিত রোগ- ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ইত্যাদি।
ii. শ্লেষ্মা ও বায়ুবাহিত রোগ- সর্দি, যক্ষা, নিউমোনিয়া, বসন্ত, ডিপথেরিয়া।
iii. জল ও খাদ্য বাহিত রোগ- কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি।
iv. ঘনিষ্ঠ সহচর্যের রোগ– খোস, পাঁচড়া, গনোরিয়া, সিফিলিস, দাদ প্রভৃতি।
v. পশু দ্বারা রোগ- জলাতঙ্ক, প্লেগ প্রভৃতি।
vi. মৃত্তিকা দ্বারা রোগ- টিটেনাস, কৃমি প্রভৃতি।
ম্যালেরিয়া (Malaria)
স্ত্রী এ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। এই মশা ম্যালেরিয়া রোগীর দেহ থেকে রোগ জীবাণু সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রামিত করে, অর্থাৎ কোনও সুস্থ লোককে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়।
উৎপত্তিকাল:
দেহের অভ্যন্তরে 10-12 দিনের মধ্যে জীবাণুগুলির বংশবৃদ্ধি হতে থাকে কাজেই 10-12 দিন পরেই রোগীর জ্বর দেখা দেয়।
লক্ষণ:
হঠাৎ শীতবোধ হতে থাকে ও কম্প দিয়ে জ্বর আসে। এবং সাথে বমি থাকে। মাথা ব্যাথা, পিপাসা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। অতিদ্রুত দেহের তাপ বৃদ্ধি পেয়ে 2/3 ঘন্টায় মধ্যে 104 105 জ্বর ওঠে। অতএব গরমবোধ হতে থাকে। এর 2/3 ঘন্টা পর প্রচুর ঘাম হয়ে জ্বর ছেড়ে যায়।
রোগ নিয়ন্ত্রণ:
i. ম্যালেরিয়াগ্রস্ত রোগীর সুচিকিৎসা করতে হবে।
ii. এ্যানোফিলিস মশার ধ্বংস সাধন করতে হবে।
iii. সুস্থ ব্যক্তির আত্মরক্ষা করতে হবে। মশা যাতে দংশন করতে না পারে সেই জন্য মশারির ভেতর শুতে হবে।
iv. উপযুক্ত খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত বসতবাড়ির ব্যবস্থা করে জনসাধারণের রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
v. রোগীর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করতে হবে।
কলেরা (Cholera)
এটি একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগে মারাত্মক দাস্ত ও বমি হয়। এর ফলে মাংসপেশীর খিঁচুনী, নেতিয়ে পড়া, দুর্বল হওয়া ও শেষে রোগীর মৃত্যু হয়।
কারণ:
ভিব্রিও কলেরি (Vibrio-Choleri) নামে কমার মতো বাঁকা ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী। এরা রোগীর মলমূত্রের সাথে নির্গত হয়। এই জীবাণু খাদ্য ও জলের সঙ্গে কোনও সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে তাকে আক্রমণ করে।
লক্ষণ:
কলেরা রোগ প্রথমে উদরাময় হয়ে আরম্ভ হতে পারে, অথবা হঠাৎ বেদনাহীন অতি সত্ত্বর চাল ধোয়া জলের মতো সরল বমি হয়। এইভাবে দেহের তরল পদার্থ হ্রাস পায়। রক্তের চাপ কমে যায়, হাতে পায়ে খিল ধরে। নাড়ী দ্রুত চলে ও ক্ষীণ হয়। রোগের প্রখরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগীর বাহ্যিক আকৃতির পরিবর্তন হয়। চক্ষু কোর্টরাগত, দেহ ঠাণ্ডা, প্রবল তৃষ্ণা, প্রস্রাব বন্ধ হওয়া, রক্ত ঘন, শ্বাস কষ্ট ও হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
রোগবিস্তার:
রোগীর মল ও বমির সাথে কলেরা জীবাণু নির্গত হয়। রোগীর কোনও খাদ্য ও পানীয় ব্যবহারের জন্য অপর লোকের কলেরা হয়। রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র, কাড়চোপড়, থালা-বাটি ইত্যাদি পুকুরে বা কুয়োর কাছে ধুলে পুকুর বা কুয়োর জল দূষিত হয়। মাছি মল ও বমি হতে রোগ জীবাণু বহন করে অরক্ষিত খাদ্যদ্রব্য জীবাণু যুক্ত করে।
রোগ প্রতিরোধ:
কোনও এলাকায় কলেরা দেখা দিলে নিম্নলিখিত নিময়গুলি মেনে চলতে হবে-
1. কোনও এলাকায় কলেরা দেখা দিলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেএ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শীঘ্রই খবর দিতে হবে।
2. সম্ভব হলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
3. রোগীর মল ও বমি একটি পাত্রে সংগ্রহ করে তাতে ব্লিচিং পাউডার, চুনের জল বা ফিনাইল দিতে হবে নতুবা মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে।
4. রোগীর কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য জিনিস পুড়িয়ে ফেলাই ভালো, অন্যথায় ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
5. পেটে যাতে অসুখ না হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে। যে সব খাদ্য পেটের অসুখ ঘটাতে পারে এমন খাদ্য বর্জন করতে হবে। পাতলা পায়খানা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণ সরবৎ খাওয়াতে হবে।
6. কলেরা রোগ দেখা দিলে খালি পেটে থাকতে নেই। পাকস্থলী শূন্য থাকলে এই রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারে।
7. প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তিকে কলেরার প্রতিষেধক নিতে হবে।
8. মাছির বংশবৃদ্ধি রোধ করতে হবে, আস্তাকুঁড় ও নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে।
সর্দি (Common Cold)
কারণ:
এই রোগ নানা জীবাণু থেকে হয়। স্ট্যাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস প্রভৃতি জীবাণু এর জন্য দায়ী।
সর্দিযুক্ত লোকের সংস্পর্শ থেকে এই রোগ হয়। জল- হাওয়া পরিবর্তন থেকেও এই রোগ হয়। বৃষ্টিতে ভেজা, ঠাণ্ডা লাগা প্রভৃতি থেকেও এই রোগ হয়।
লক্ষণ:
1. চোখ মুখ লাল হয়, হাঁচি, গলায় ব্যথা হয় ও চোখ দিয়ে জল পড়ে।
2. নাক দিয়ে জল পড়ে। সেই সঙ্গে কাশি হয়, নাকে ও গলায় ক্ষত হয়।
3. কখনও কখনও গায়ে ব্যথা হয়।
এই রোগের সাথে জ্বর হয়। তখন তাকে সর্দিজ্বর বলে। বুকে সর্দি ভ্রমলে তা খারাপ লক্ষণ, ব্রঙ্কাইটিস, ফ্যানিনজাইটিস প্রভৃতি দেখা যায়।
রোগের বিস্তার
1. সর্দিযুক্ত লোকেদের সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়।
2. বৃষ্টিভেজা থেকে ছড়ায়।
3. জল-হাওয়া পরিবর্তন থেকে ছড়ায়।
4. ঠাণ্ডা লাগা থেকে ছড়ায়।
5. নানা জীবাণু থেকে ছড়ায় (স্ট্যাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস)।
রোগ প্রতিরোধ
সর্দি হলে এর প্রতিরোধ চিকিৎসকের পরামর্শ সাপেক্ষ-
1. নাকে Otrivin Drop দিলে উপকার হয়।
2. অনেক সময় Allergy-র জন্য Avil বা ঐ জাতীয় ওষুধ দিতে হবে।
3. সর্দি ও সামান্য জ্বর হলে Alkali Mixture দিতে হবে।
4. বুকে-নাকে-কপালে Vicks Vaporub মালিশ করলে উপকার হয়।
কাশি (Cough)
প্রথমেই জানতে হবে কাশি কোনও খারাপ রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। মুখগহ্বর থেকে শুরু করে শ্বাসনালী পর্যন্ত এমনকি ব্রঙ্কাই (Bronchi) এবং ফুসফুস আক্রান্ত হলেও কাশি হয়।
সাধারণত ব্রঙ্কাসের ভেতরে স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস প্রভৃতির আক্রমণে কাশি হয়ে থাকে।যক্ষাতেও বুকের ভেতর খুক খুক কাশি হয়।
অন্যান্য কারণ:
1. যদি শ্বাসনালীর উত্তেজনা হয় তাহলে কাশি হয়।
2. বেশি ধুলো বা ধোঁয় লাগা সর্দি কাশির গৌণ কারণ।
3. সর্দি জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে সর্দির সঙ্গে সঙ্গে কাশিও হয়।
লক্ষণ:
কাশি দুই প্রকার-
i. শুকনো কাশি
ii. তরল কাশি
অন্যান্য লক্ষণ:
1. যক্ষা হলে রোজ বিকালে জ্বর হয় এবং কফের সঙ্গে রক্ত পড়তে থাকে। বুকের মাঝখানে বেদনা ও কাশি হয়। পরবর্তীকালে কফের সঙ্গে রক্ত পড়তে থাকে।
2. হাঁপানির কাশি রাতে বেশি হয়। রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং বুকে টান ভাব দেখা যায়।
3. শ্বাসনালীতে শব্দ হলে বুঝতে হবে যে, ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয়েছে। কাশি ও ঘন ঘন সর্দি, বুকে সর্দি জমা প্রভৃতি হাঁপানির প্রাথমিক লক্ষণ, তাই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
4. স্বরযন্ত্রে প্রদাহ, গলার আলজিভ অথবা টনসিল বৃদ্ধি, প্লুরায় প্রদাহ, হৃদপিণ্ড অক্ষম হওয়ার জন্য ফুসফুসে অধিক রক্ত সঞ্চার প্রভৃতি কারণে কাশি হয়।
5. কাশি হলে তার সাথে মাথা ভার বা মাথা ধরা, তৃয়ায় গলা শুকনো হওয়া, গলা জ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অল্প প্রস্রাব ইত্যাদি দেখা যায়।
রোগ প্রতিরোধ
1. যদি কাশি, জ্বর একসাথে হয় তার জন্য Alkali Mixture দিতে হবে।
2. শুকনো কাশি হলে সব সময় ওষুধ খেতে হবে। তরল কাশির জন্য ওষুধের প্রয়োজন নেই। তখন মূল রোগ কি জেনে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
3. গলা খুসখুস করলে Strepsils লজেন্স খেলে উপকার হয়।
4. লঘু পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। টক খাওয়া বর্জনীয়।
5. কাশির ভাব সাধারণ হলে ও জ্বর না থাকলে Vicks Vaporub গলায় ও নাকে মালিশ করলে উপকার হয়।
6. রোদে ঘোরা, ঠাণ্ডা লাগা, অনিয়ম, রাতজাগা বর্জনীয়।
7. ভেজা বাতাস, তাপময় ঘরে বাস, জনাকীর্ণ স্থানের বাতাস প্রভৃতি ত্যাগ করা প্রয়োজন।
8. তুলসী পাতার রস, ছোট এলাচ, গোল মরিচ, মধু , বাসক পাতার রস উপকারী।
ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza)
ইনফ্লুয়েঞ্জা খুবই সংক্রামক রোগ, এর রোগ জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। শ্বাসযন্ত্র ও পাকাশয়ের শ্লেষ্মা ঝিল্লির বিকার সমন্বিত জ্বর, শরীরের সমস্ত অস্থির মধ্যে মাঝে মাঝে ব্যাথা ও অন্যান্য রোগ প্রকাশ পায়।
কারণ:
মিক্সো ভাইরাসের পর্যায়ভুক্ত অ্যান্টিজেন সমন্বিত তিন ধরনের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য জীবাণু মিশ্রিত হয়ে গুরুতর উপসর্গ উপস্থিত হয়।
লক্ষণ:
হঠাৎ শীত করে ও প্রবল জ্বর হয় এবং উত্তাপ যা দিনে বেশি হয়। সঙ্গে শিরঃপীড়া, শরীর ব্যথা, শুকনো কাশি ইত্যাদি থাকে। জটিল উপসর্গ উপস্থিত না থাকলে সামান্য হ্রাস বৃদ্ধির সপ্তাহ কালের মধ্যেই জ্বর সেরে যায়।
রোগের বিস্তার:
ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণু শ্লেষ্মা, থুতু ইত্যাদির সঙ্গে দেহ হতে বেরিয়ে আসে। হাঁচি, কাশি ও থুতুর কণার সাথে যুক্ত থাকে। রোগীর ব্যবহৃত দ্রব্য, যেমন- রুমাল, কাপড় চোপড় ইত্যাদি দূষিত হয়ে রোগ বিস্তারে সহায়তা করে।
চিকিৎসা:
রোগটি যেহেতু ছোঁয়াচে কাজেই অন্যদের থেকে যতটুকু দূরে রাখা সম্ভব তা রাখাই বাঞ্ছনীয়। এই সময় রোগী বিশ্রামে থাকলে আরাম বোধ করে এবং লবণ মিশ্রিত জলে গার্গল করলে উপকার হয়। এছাড়া এসময় পানীয় জল এবং অন্যান্য খাবার খেলে আরামবোধ এবং রোগের উপশম তাড়াতাড়ি হয়।
রোগ প্রতিরোধ:
ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ প্রতিরোধ করতে হলে নিচের কাজগুলি করতে হবে-
1. রোগীকে আলাদা রাখা ভালো।
2. রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন।
3. রোগীর ব্যবহৃত রুমাল, কাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়।
4. শ্লেষ্মা, কফ, মল- মূত্র দূরে ফেলতে হবে অথবা পুঁতে ফেলতে হবে।
5. মহামারীর সময় জনপূর্ণ স্থান বর্জনীয়।
6. বাসগৃহে প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা দরকার।