বাংলায় সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বাংলায় সর্বশিক্ষা অভিযান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বশিক্ষা অভিযান
অনুরূপে- (১) সার্বিক সাক্ষরতা প্রকল্প, (২) সর্বশিক্ষা কর্মসূচি, (৩) সর্বশিক্ষা অভিযান।
ভূমিকা:
শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব। এ বিপ্লব অবশ্যই অন্যায় ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে শিক্ষাকে চোখ ফোটার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অন্ধ ব্যক্তি যেমন কোনো কিছু দেখতে পায় না, জানতে পারে না, তেমনি একজন নিরক্ষর ব্যক্তির কাছেও জগতের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ব্যর্থ হয়ে যায়।
সেজন্য সকলের আগে দরকার শিক্ষালাভের। আমাদের সরকার সর্বপ্রকারে দেশের মানুষকে শিক্ষার আলোকবর্তিকার পদতলে নিয়ে এসে হাজির করতে বদ্ধপরিকর। সে সুযোগ হাতছাড়া করা আমাদের কোনোমতেই উচিত হবে না। দেশ থেকে নিক্ষরতার জগদ্দল পাথরকে অপসারিত করার জাতীয় প্রকরণ হল ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’।
সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রস্তুতি-
আজ ৬৩ বছর হল দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তিলাভ করেছে; তথাপি এ ঘটনা আমাদের লজ্জিত করে যে, আজও দেশের সাক্ষরতার হার মাত্র ৬৫.৩৬ শতাংশ। সমগ্র দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার হার যদিও একটু বেশি (৬৯.১২ শতাংশ), তবুও আত্মসচেতন বাঙালির কাছে তা নিশ্চয় আনন্দের বিষয় হতে পারে না।
এই ব্যর্থতা অপসারণে ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’ নামে এই কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই মে বিশ্ব-সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিক্ষাবিস্তারের মহানব্রতী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জেলা অবিভক্ত মেদিনীপুরে সার্বিক সাক্ষরতাদানের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র জনচেতনা শিবির নামে একটি কর্মসূচী গ্রহণ করে।
তারপর পর্যায়ক্রমে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাকি ১৭ টি জেলাতেও সার্বিক সাক্ষরতা দান করবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল, আগামী ২০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ‘টোটাল লিটারেসি ক্যাম্পেন’ কর্মসূচী সম্পাদন করা হবে। কিন্তু নানা কারণে তা সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন পর্যায়-
ভারত সরকার এই কর্মসূচীকে সফল রূপায়নের জন্য ১৯৯৯-২০০০ সালের আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করে। ঠিক হয় ২০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র ভারতের প্রতিটি নাগরিককে সাক্ষর করে তোলা হবে। এজন্য দুটি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি 800 পর্যায়ে শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে বিন্যস্ত করা হবে। প্রথম পর্যায়ের নাম ‘বেসিক লিটারেসি সেন্টার’ বা সংক্ষেপে বিএলসি।
আর দ্বিতীয় পর্যায়ের নাম ‘পোস্ট লিটারেসি সেন্টার’ বা সংক্ষেপে পিএলসি। এই পর্যায়েই এলাকার ৫ বছর বয়স উত্তীর্ণ সমস্ত বালক-বালিকাদের বর্ণপরিচয়ের আওতায় আনতে হবে। তারপর তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরে শুরু হবে পাঠদান। এই চারটি পর্যায়ে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদেরই বলা হবে পূর্ণসাক্ষর।
নানা স্তরে সর্বশিক্ষা:
২০০০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা লাভ হলেও ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘শিশুশিক্ষা ও বিকাশকেন্দ্র’ নামে একটি পরিকল্পনা রুপায়ন করে। এতে বলা হয়, যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই বা অনেক দূরে আছে এবং থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের স্থান সংকুলান হয় না, সেখানে শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এখানে ৫ থেকে ৯ বছর বয়সের সমস্ত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনা হবে।
এমনকি যারা পড়াশুনো ছেড়ে দিয়েছে, সেই সমস্ত স্কুলছুট ছেলেমেয়েদেরও ফিরিয়ে আনা হবে। বয়সের কোনো বাধা থাকবে না। সর্বশিক্ষা অভিযানের সফল রূপায়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়া অনুপাতে ৫৮,২৬১ টি বিদ্যালয়ের দরকার।
সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ৫২,৩৮৫ টি। সুতরাং, ৮,৮৭৬ টি বিদ্যালয়ের অভাব পূরণ করতে হবে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিকে। এই শিশুশিক্ষাকেন্দ্রগুলি দেখভাল তদারকি করবার দায়িত্ব যৌথভাবে পঞ্চায়েত এবং অভিভাবকদের ওপর দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের ওপর আছে পঁচাত্তর ভাগ এবং অভিভাবকদের ওপর পাঁচিশ ভাগ। এঁদের মধ্যে দু-জন মহিলা সদস্যের অন্তর্ভুক্তি আবশ্যিক। চল্লিশ বছরের বেশি বয়সের মহিলারা এই কেন্দ্রে ‘সহায়িকা’ হিসেবে বার্ষিক চুক্তিতে নিযুক্ত হন।
প্রতিবছর এই চুক্তি নবীকরণ করা হয়। ২০০০ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে ৭,৯২০ টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ১৮,৮৫১ জন সহায়িকা নিযুক্ত হয়েছেন। এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫.০৫ লক্ষ। এর পাঠক্রম প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের অনুরূপ। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চায়েতের অধীনে একইভাবে চুক্তি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে; যার পাঠক্রম ও মাধ্যমিক পাঠক্রমের অনুরূপ।
উপসংহার-
বলা বাহুল্য এই সর্বশিক্ষা অভিযানের সফল রূপায়ন সম্ভব হলে দেশ যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টি স্বীকৃতি পাবে এবং দেশ তথা জাতি সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।