স্কুল ছাত্রদের দৈহিক শাস্তিবিধান প্রবন্ধ রচনা | School Students Corporal Punishment Essay- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “স্কুল ছাত্রদের দৈহিক শাস্তিবিধান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
স্কুল ছাত্রদের দৈহিক শাস্তিবিধান প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা-
অনেকে মনে করেন ভয় দেখালে ছাত্রছাত্রীরা সহজে পড়ার প্রতি মনোযোগী হয়। ফলে তাদের শেখানোর সুবিধে হয়। সেজন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীরা প্রায়সই দৈহিক শাস্তির ব্যবস্থা করেন। পড়া না পারলে শাস্তির ব্যবস্থা তো আছেই; সেই সাথে আছে ক্লাসে বা স্কুলপ্রাঙ্গণে তাদের শান্ত ও শিষ্ট করে রাখার জন্যও শাস্তির খাঁড়া।
এই শাস্তি অনেক সময় এমন অমানবিক রূপ নেয় যে, তার ফলে ছাত্র বা ছাত্রীটির স্বাস্থ্যহানীর মতো ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। এইসব নির্দয় অমানবিক আচরণগুলির হাত থেকে সুকুমার মতি ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করবার জন্য আদালতকে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। দুঃখের বিষয়, আদালত কঠোর নিয়মবিধি প্রচলন করেও অনেক সময় নিষ্ঠুর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ন্ত্রণ করতে অপারগ হয়।
দৈহিক শাস্তির রকমফের-
পড়া না পারলে কানমলা খাওয়ার বিধান একটি অতি সাধারণ শাস্তি। অনেক সময় কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর একটু কঠিন শাস্তি হল বেঞ্চের ওপর দাঁড়ানো। এগুলি অতি সাধারণ ব্যবস্থা। অনেক শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী হাঁটু নীলডাউনের ব্যবস্থা করেন। রোদেও দাঁড় করিয়ে রাখেন।
বেত্রাঘাতের মতো কঠোর শাস্তি নিতান্তই অমানবিক। এমনও দেখা গেছে, বেত্রাঘাতের ভয়ে ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসাই ছেড়ে দিয়েছে। কখনো কখনো দারুণভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। প্রাণহানীর ঘটনাও অপ্রতুল নয়। বলা বাহুল্য এসবের কোনোটিই শিক্ষাদানের অঙ্গ হওয়া উচিত নয়।
অমানবিকতা-
শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শারীরিক নিগ্রহ একটি অত্যন্ত অপমানজনক ঘটনা। এমনকি ছাত্রছাত্রীকে ভর্ৎসনা করাও তার মনের ওপর গভীর চাপ সৃষ্টি করে। মনে রাখা দরকার সকলেরই আত্মসম্মান রয়েছে। শিশু বলে তার আত্মমর্যাদা থাকবে না, এমন হতে পারে না। বরং তার আত্মমর্যাদাকে গুরুত্ব দিলে তবেই শিশুটিকে ভবিষ্যতে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সহজ হবে।
বিদ্যাসাগর ক্লাসের মধ্যে কোনো ছাত্রকে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর না পেলে সেই প্রশ্ন আর দ্বিতীয় জনকে করতেন না। নিজেই উত্তরটি বলে দিতেন। তিনি মনে করতেন, দ্বিতীয় জনকে প্রশ্ন করার অর্থই হল প্রথম জনকে অপমান করা।
শিক্ষকের দায়িত্ব-
একজন শিক্ষকের উদ্দেশ্য হল, ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাক্ষেত্রে সাহায্য করা। ছাত্রছাত্রী বিষয়টি জানে না বলেই বিদ্যালয়ে আসে। তাকে জানিয়ে দেওয়াই শিক্ষকের দায়িত্ব। তার বেশি নয়। অনেক সময় ক্লাসের পাঠ ছাত্রছাত্রী ঠিকমত মনে রাখতে পারে না বলে শিক্ষক শিক্ষিকা ক্রুদ্ধ হন। কিন্তু তা না হয়ে কেন মনে রাখতে পারছে না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা উচিত ও যত্নশীল হওয়া উচিত।
অনেক সময় নিরস পাঠ মনে থাকে না। সুতরাং, শিক্ষকের দায়িত্ব নিরস বিষয়কে সরস করে উপস্থাপন করা। এ প্রসঙ্গে নিরস বিষয়কে কীভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে ও ব্যবস্থা নিতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই।
আদালতের রায়-
বিদ্যালয়ে দৈহিক শাস্তির ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সুপ্রিম কোর্ট ২০০০ সালে। তার কয়েক মাস পরে দিল্লি হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে সম্মান জানিয়ে দৈহিক শাস্তি অমানবিক বলে রায় দেয়। ২০০৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্জ ছাত্রছাত্রীদের বেত মারার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। এ ছাড়া সিবিএসই এবং আইসিএসই ২০০৩ সালে দৈহিক শাস্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে শিক্ষা আইন সংশোধন করে পাঠানো এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, প্রহারকারী শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। বলা বাহুল্য, এতসব ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যায়তনে শিক্ষক-শিক্ষিকারা এ বিষয়ে একেবারেই উদাসীন।
সাম্প্রতিক কালে শাস্তিদানের অবস্থা-
২০০৬ সালে ‘সাথ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ ও ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল’ যৌথভাবে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং অন্ধ্রপ্রদেশের একটি করে জেলার সমস্ত স্কুলগুলিতে দৈহিক শাস্তির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, সমস্ত স্কুলের শিক্ষকই দৈহিক শাক্তির পক্ষে মতদান করছেন। আমাদের পশ্চিমবাংলায় ‘প্রতীচী ট্রাস্ট’ এক সমীক্ষায় বলেছে, জাতপাত তুলে গালাগালি দিয়ে বা বিদ্রূপ করে মানসিক শাস্তি দেওয়া বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাভাবিক আচরণ।
বিশ্বে শাস্তিদানের অবস্থা-
দৈহিক শাস্তির ব্যবস্থা সারা বিশ্বজুড়ে প্রচলিত রয়েছে। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের উদ্যোগে অধ্যাপক পাবলো পিনহেইরোর সভাপতিত্বে এক বিশেষজ্ঞ দল বিশ্ব জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে শাস্তির বিভিন্ন ধরন, তার কারণ ইত্যাদি বিষয়ে মত প্রকাশ করে শাক্তিবিধানের প্রতিরোধকল্পে কতকগুলি পরামর্শ দিয়েছেন।
উপসংহার-
পরিশেষে বলা যায়, কেবল আইন করে শাস্তির ব্যবস্থা বন্ধ করা যাবে না। দরকার সচেতনতা ও সহানুভূতি। ছাত্রছাত্রীদের কোমল নিষ্পাপ মুখগুলির দিকে তাকিয়ে প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ভাবতে হবে কেন শিশুরা বিদ্যালয়ে এসেছে এবং তাদের প্রতি কর্তব্য কী। শাস্তিদান যে উদ্দেশ্য নয়, তা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।