বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিজ্ঞান ও কুসংস্কার” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা
অনুরূপে- (১) কুসংস্কারের অভিশাপ; (২) বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার; (৩) কুসংস্কার প্রগতির অন্তরায়।
ভূমিকা:
“ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো।
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো॥”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রাচীনযুগে মানুষ ছিল প্রকৃতিনির্ভর। প্রকৃতির নির্মম ঝড়ঝন্থায় সে বিপর্যস্ত হয়েছে, বন্যা তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, প্রচণ্ড খরায় তার স্বাভাবিক জীবন পুড়ে খাক হয়েছে, ভূকম্পনে জনজীবন হয়েছে বিপর্যস্ত। একটা সময় চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ এসবকিছুকে মানুষ দৈব-পরিচালিত বলে ভেবেছে। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে নানা ভুল ধারণা ছিল। এই ধারণার জায়গা থেকে মানুষের মনে কুসংস্কারের বদ্ধমূল বিশ্বাস জন্ম নেয়।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার কী?
বিজ্ঞান হল বিশেষ ধরনের জ্ঞান। তা অজানাকে জানতে অদেখাকে দেখতে এবং দুর্বোধ্যকে বুঝতে সাহায্য করে। তার জন্য বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষারও প্রয়োজন। যেটা গবেষণালব্ধ অমোঘ সত্য, সেটা বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচারবিবেচনা, যুক্তি দিয়ে বিশেষ জ্ঞানে পৌঁছোনোর বিষয়। বিজ্ঞানচেতনার অভাবে মানুষের মনে বাসা বাঁধে অন্ধবিশ্বাস।
এই অন্ধবিশ্বাসের পিছনে কোনো যুক্তিনির্ভরতা নেই, কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই। এই যুক্তিবিহীন অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার।
বিজ্ঞানচিন্তায় অবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রভাব:
অন্ধবিশ্বাসের দৌলতে মানুষের মনের মধ্যে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে বিজ্ঞান অকেজো। কারণ, তার যুক্তিতে বিজ্ঞান সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। পরীক্ষা পাসের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান একেবারে অচল। বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রেও; খেলাতে জেতার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান একেবারে চুপচাপ। শুরু হয় জ্যোতিষশাস্ত্রের পর্যালোচনা। এসবই দৈববিশ্বাস তথা কুসংস্কারের ফল। ডাক্তারও বিভিন্ন বিষয়ে দৈববিশ্বাসের কাছে পরাভূত। তাই বিজ্ঞানের চেয়ে দৈবের ওপর মানুষের আস্থা আজও অনেক বেশি।
অতীতে অন্ধবিশ্বাসের জেরে গ্যালিলিয়ো বিধর্মী হিসেবে প্রতিপন্ন হন। কোপারনিকাসের মতো বিজ্ঞানীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আজও সর্বত্র কুসংস্কারের জয়জয়কার। তা না হলে শিক্ষিত মানুষের হাতে রংবেরংয়ের আংটি সেজে উঠবে কেন? গ্রামে কলেরা লাগলে ওলাবিবির পুজো, শুভদিনে যাত্রা করা, টিকটিকি ডাকলে এবং হাই তুললে তুড়ি দেওয়া -এসব কর্মকাণ্ডের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। আজও সমাজে ধর্মের নামে ভয় দেখিয়ে ভণ্ডধার্মিকসহ নানান ধড়িবাজ পয়সা রোজগার করে। এসব কুসংস্কারের প্রভাব আজও সমাজে বর্তমান।
কুসংস্কারের প্রভাবে ক্ষতি:
বিজ্ঞানশিক্ষার অভাবে সমাজ ও সভ্যতা আজ অপূরণীয় আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি ক্ষতির শিকার। সাগরে সন্তান বিসর্জন, সজ্ঞানে গঙ্গালাভের আশায় মুমূর্ষু রোগীকে গঙ্গাতীরে নিয়ে গিয়ে বুক সমান জলে ডুবিয়ে রাখা, ডাইনি ভেবে মানুষকে পুড়িয়ে মারা আমাদের সমাজে দুর্লভ নয়। আজও শোনা যায় নাগিনী কন্যার দীর্ঘশ্বাস কিংবা নিশির ডাকে আত্মঘাতী হওয়ার মর্মন্তুদ কাহিনি। মানুষ প্রকৃত শিক্ষার অভাবে আজও এই ক্ষতির শিকার।
কুসংস্কার দূরীকরণ:
কুসংস্কার দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। মানুষের বিজ্ঞানচেতনাকে বৃদ্ধি করতে পারলেই এ সামাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানজীবী পরিচালিত বিতর্ক সভা, আলোচনাচক্র, বিজ্ঞান প্রদর্শনী অনেক সুফল আনতে পারে। এ বিষয়ে ভারতে ২৬ টি ‘বিজ্ঞান জাঠা’ ও তাদের একটি আঞ্চলিক জাঠা স্থাপিত হয়েছে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিজ্ঞানজীবীর কার্যকরী ভূমিকা এ -প্রসঙ্গে স্মরণীয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কয়েকজন বিজ্ঞানীর জন্মশতবর্ষ হিসেবে বিজ্ঞানমেলা চালু করা হয় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে। এভাবে বিজ্ঞান চেতনা সকলের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারলে কুসংস্কার দূরীকরণ সম্ভব হবে। অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা বৃদ্ধি ও যুক্তিনির্ভর মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে কুসংস্কারের প্রভাব থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
কুসংস্কাররোধে ছাত্রসমাজ:
ছাত্রসমাজ ‘চিরমুক্তিকামী’। তাদের একনিষ্ঠ সংগ্রাম, অকুণ্ঠ ত্যাগস্বীকার, নিঃস্বার্থ আত্মদান আনতে পারে বিশ্বের সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তি। পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে আনন্দঘন শান্তির নীড়। মানবতার প্রতিষ্ঠায় নতুন সমাজ, নব সংস্কারমুক্ত জাতি গড়ে উঠবে। বৈজ্ঞানিক ও বাস্তব চেতনাসম্পন্ন ছাত্ররাই পারে মানুষের মনে বাস্তবের প্রতিফলন ঘটাতে। মানুষকে বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে।
উপসংহার:
বিজ্ঞান যুক্তিগ্রাহ্য দৃষ্টি নিয়ে ভ্রান্তধারণার মোহমুক্তি ঘটাতে পারে। আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানসংস্থাগুলি কুসংস্কার রোধে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। মানুষ বিজ্ঞান শিক্ষার আলোকে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠলে সমাজে আর কুসংস্কার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কুসংস্কারের মূঢ়তা এক সময় বাস্তব সত্যের আলোতে আলোকিত হয়ে শুচিস্নাত হবে। এভাবে দেশ ও জাতির বুক থেকে ঘটবে কুসংস্কারের অপসারণ।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।