বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা class 10 - বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা class 10 - বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞান: আশীর্বাদ না অভিশাপ
অনুরূপে: (১) বিজ্ঞানের ভালোমন্দ; (২) বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ। (৩) বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল।
ভূমিকা-
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানবসভ্যতার অগ্রগতি, মানুষের মঙ্গলসাধনের নামান্তর। মানুষের হিতসাধনের জন্য বিজ্ঞানের সৃষ্টি। কিন্তু ভাবনার বিষয়, বিশ শতকের বিজ্ঞানকে অকল্যাণকর দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ফলে বিজ্ঞানের আশীর্বাদক দিক উপেক্ষিত হয়ে অকল্যাণের ছায়া মানুষকে গ্রাস করে ফেলছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদী মূর্তি আজ সংহারিনী মূর্তিতে পর্যবসিত হতে চলেছে।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও মানবসমাজ:
আদিম মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শেখে, সেদিন থেকে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সূচনা। তারপর সে ধীরে ধীরে ধাতু আবিষ্কার করল, শিখল চাকার ব্যবহার। বিজ্ঞানের নিত্যনতুন পথে মানুষ আবিষ্কার করে চলেছে নানা যন্ত্র। বিজ্ঞানের জন্য আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে বৈদ্যুতিক শক্তি, বাষ্পশক্তি, যন্ত্রশক্তির।
বেতার যন্ত্র; দূরদর্শন দূরকে করে দিল আরও নিকট। বিজ্ঞানের জন্য দুরারোগ্য ব্যাধির কবল থেকে মানুষ ওষুধের দ্বারা বাঁচতে পারছে। বিজ্ঞানের শুভ কীর্তির জন্য মানুষ ছুটে চলেছে বিভিন্ন গ্রহে ও উপগ্রহে। মুদ্রণযন্ত্র, বেতার, দূরদর্শন সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদস্বরূপ।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব-
মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষের দিনলিপির প্রতিটি পদক্ষেপেই বিজ্ঞান নির্ভরতা প্রকাশ পায়। তার টুথপেস্ট, ব্রাশ, ফ্যান, হিটার, গ্যাস, কুকার, ফ্রিজ, রেডিয়ো, ঘড়ি, টেলিভিশন এসব কিছুই বিজ্ঞানের দান। কৃষি, শিল্প সবক্ষেত্রেই এই বিজ্ঞানের প্রয়োগ ও প্রসার লক্ষ করা যায়। ট্রাক্টর, পাম্প প্রভৃতি থেকে শুরু করে। উন্নত বীজ, সার–সবই বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণকর ফল।
বিজ্ঞানের কল্যাণে শহর ও শহরতলিতে কাঁচামাল পৌঁছে যাচ্ছে দ্রুতগামী যানবাহনের সাহায্যে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য এসেছে বাস, ট্যাক্সি, ট্রেন, প্লেন, জেটপ্লেন -ইত্যাদি। আজ আর ভূর্জপত্রে কেউ লেখে না। মুদ্রণযন্ত্র তাকে সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত করেছে। দূরভাষে মানুষের বন্ধুত্বের তথা সম্পর্কের বন্ধনকে আরও অটুট করেছে।
সৌরজগতের রহস্যও আজ মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতিতে মানুষ দৃঢ়ভাবে প্রতিষেধকের মাধ্যমে প্রতিরোধ করে চলেছে কঠিন ব্যাধিকে।
অতিরিক্ত বিজ্ঞান-নির্ভরতা:
বর্তমান যন্ত্রসভ্যতার যুগে দিন-দিন মানুষ পরিণত হচ্ছে। যন্ত্রে মানুষ অতিরিক্ত বিজ্ঞান-নির্ভর হয়ে পড়ায় তার জীবনের সুকুমার বৃত্তিগুলোকে সে ভুলতে বসেছে। এই অতিরিক্ত বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে প্রয়োজনের দাসে পরিণত করেছে।
বিজ্ঞানের অভিশপ্ত দিক:
বিজ্ঞান-সভ্যতার এক কলঙ্কময় অধ্যায় হল হিরোশিমা ও নাগাসাকির হত্যাকাণ্ড। উন্নত দেশগুলি পারমাণবিক শক্তিতে উন্নত হয়ে আজ ক্ষুদ্র দেশগুলির ওপর শোষণের রাজনীতি চালাচ্ছে। ডিনামাইট আজ পাহাড় ভাঙার কাজে ব্যবহৃত না হয়ে মানুষ মারার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে মানুষ। যানবাহনের ধোঁয়া, বর্জ্যপদার্থ আজ প্রকৃতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে। যন্ত্রসভ্যতার যুগে মানুষ যেন নিষ্প্রাণ| যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। কৃত্রিম জীবনযাপন, মানবিকতার অবনমন আজ আধুনিক বিজ্ঞান-নির্ভর সভ্যতার মস্ত বড়ো অভিশাপ।
বিজ্ঞানের অভিশাপ মুক্তি:
বিজ্ঞানকে অভিশপ্ত করার জন্য দায়ী মানুষ। স্বার্থান্বেষী, জ্ঞানপাপী মানুষের অন্তরে যদি শুভবোধ জাগ্রত না হয়, তবে বিজ্ঞান তো মন্দের পথে চালিত হবেই। এর জন্য মানুষকে শুভবোধ দ্বারা জাগ্রত হতে হবে। মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানকে নিয়োগ করতে হবে। বিজ্ঞান পরিচালককেও শুভবোধ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। তবেই বিজ্ঞান হবে আশাবাদী মানুষের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।
বিজ্ঞানের কল্যাণ কামনায় মানুষের ভূমিকা:
বিজ্ঞানের কল্যাণ কামনায় মানুষের ভূমিকা অনেকখানি। বিজ্ঞান প্রতিটি পদক্ষেপে যেভাবে সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও নিশ্চয়তা প্রদানে এবং মানুষের কল্যাণে লিপ্ত তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। জনগণ ও সরকারকে সচেতন হতে হবে ধ্বংসাত্মক কাজে যেন কোনোভাবেই বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ না হয়। আইনের কঠোরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ দমনমূলক কাজে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বিজ্ঞান কল্যাণকামী শক্তিরূপে সকলের কাছে ধরা দেবে।
উপসংহার:
সমাজের বিবেকহীন মানুষের স্বার্থসর্বস্ব মানসিকতার জন্য বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু। তাই সাম্রাজ্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদের নগ্ন মানসিকতা ভুলে মানুষ যদি বিশ্বমানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়- তবে বিজ্ঞানকে সকলে আশীর্বাদরূপে পাবে।
বর্তমানে বিজ্ঞানের যে রূপটি বিভীষিকার দিকে মুখ করে আছে, সকলের দায়িত্ব তাকে কল্যাণের দিকে ফিরিয়ে জীবনমুখী করে তোলা। বিজ্ঞানকে বিশ্বস্ত ভৃত্যে পরিণত করতে পারলেই তা আর অভিশাপ নয়, তাকে আশীর্বাদরূপে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।