Ads Area


বিজ্ঞান পাঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ

বিজ্ঞান পাঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ


বিজ্ঞান পাঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতা প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ


বিজ্ঞান পাঠ ও বিজ্ঞানমনস্কতা- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।



বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা



অনুরূপে- (১) জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞানচেতনার প্রয়োজনীয়তা; (২) বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারে বিজ্ঞানের ভূমিকা; (৩) বিজ্ঞান বনাম বিজ্ঞানমনস্কতা।




ভূমিকা-


বর্তমান যুগ একান্তভাবেই বিজ্ঞান-নির্ভর। বিজ্ঞান আজ আমাদের শয়নে, স্বপনে, জাগরণে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু বিজ্ঞানের এমন সর্বগ্রাসী অধিষ্ঠানের মধ্যে আমাদের জীবনের সমৃদ্ধি কতখানি তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেন-না বিজ্ঞানের কাজ তো শুধু মানুষের বহির্জীবনকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যময় করা নয়, তার কাজ মানুষের যুক্তিহীন ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের আগল ভেঙে তাকে সুস্থ চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করা।

বিজ্ঞানের কাজ মানুষের মনোজগৎকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে উত্তরণ ঘটানো। আজ এই বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে দেখতে হবে মানুষের জীবন ও শিক্ষায় এই বিজ্ঞান চেতনা কতখানি প্রভাব বিস্তার করেছে।



আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা:



বিজ্ঞান মানবজীবনে আলোক দিশারি শক্তি। তার পদসঞ্জার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের অলিতেগলিতে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্যই মানুষ বিপুল শক্তির অধিকারী। বৈজ্ঞানিক চিন্তার ফলেই জল-স্থল-অন্তরীক্ষ আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে সর্বত্র জড়িয়ে আছে বিজ্ঞান। চিত্তবিনোদনেও বিজ্ঞানের বিকল্প নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও সে এনেছে যুগান্তর। বিজ্ঞানের বলেই আজ অন্ধ মানুষ দেখতে পাচ্ছে জগতের আলো। বধির শুনতে পাচ্ছে মানুষের কণ্ঠস্বর। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানের বলেই আজ কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড, মূত্রথলি বসিয়ে মানুষের বাঁচার পথকে প্রশস্ত করা সম্ভব হয়েছে। সবের মূলে আছে বিজ্ঞানচেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতা।



বিজ্ঞানচেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতা:


সভ্যতা চলমান। মানুষও আজ এক জায়গায় থেমে নেই। বন্য জীবনযাপন থেকে তার উত্তরণ ঘটেছে মানবজীবনে। অতীতে যা মানুষ অন্ধের মতো মেনে নিত, আজ তাকে যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে চায়। এই যে বিচারবিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তাই হল বিজ্ঞানমনস্কতা। প্রত্যক্ষ দর্শন, বাস্তব অভিজ্ঞতা, কার্যকারণ যোগাযোগ সূত্রের জ্ঞান, সত্য-মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা থেকে জন্ম নেয় বিজ্ঞানমনস্কতা।

আর এই বিজ্ঞানমনস্কতার জ্যোতির্ময় আলোকে অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীভূত হয়। দূরীভূত হয় মানুষের ভ্রান্তধারণা। বিজ্ঞানমনস্কতা বিশ্লেষণী মনোবৃত্তি দান করে। আর বিজ্ঞানচেতনা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সত্যকে আবিষ্কার করে মানুষকে আলোকতীর্থে উন্নীত করে।




বিজ্ঞানমনস্কতার সূচনা ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন:



বিজ্ঞানমনস্কতার সূচনা হয় সেদিন, যেদিন মানুষ প্রথম আলো জ্বালাতে শেখে। এক সময় মানুষ সমাজের স্বার্থপুষ্ট গোঁড়া নীতির প্রভাবে চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণকে ধর্মীয় ব্যাখ্যার দিক থেকে অন্ধের মতো গ্রহণ করত; কিন্তু এ যুগের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতা, কার্যকারণ সূত্র, পরীক্ষানিরীক্ষা বাদ দিয়ে কোনো কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করে না। এই দৃষ্টিই যথার্থ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি। ক্রমে ক্রমে মানুষের বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ঘটেছে। জড়জগৎ, প্রকৃতি, জীবন, মহাশূন্য, মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থান ও অধিকার, সবকিছু বিজ্ঞানচেতনার দ্বারা বিশ্লেষিত হচ্ছে।

পৃথিবীর বহু বিজ্ঞানী, নৃতাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে নানা বিষয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে সর্বক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সাধন করেছেন। মানুষের জ্ঞানের সীমা আজ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে নক্ষত্রলোকে ছড়িয়ে পড়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও কার্ল মার্কসের বস্তুবাদ মানুষের বিজ্ঞানচেতনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।



বিজ্ঞানচেতনায় অবিশ্বাস ও কুসংস্কার:



অবিশ্বাসের ফলে মানুষের মনের মধ্যে এমন কতকগুলো জায়গা আছে যেখানে বিজ্ঞান অকেজো। পরীক্ষায় পাস করা, চাকরির ক্ষেত্রে, খেলার জগতে জ্যোতিষশাস্ত্রের পর্যালোচনা বিজ্ঞানচেতনাকে হার মানায়। ডাক্তারও আজ দৈববিশ্বাসের কাছে পরাভূত।

শিক্ষিত মানুষের হাতেও আজ রংবেরংয়ের আংটি ঝলসে ওঠে। আজও শুভদিনে যাত্রা, হাঁচি, টিকটিকির ডাককে অনেকে মেনে চলে। তাই এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে রক্ষা করতে গেলে যুক্তি বিতর্ক ও বিচারবিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে হবে। আর তা করতে হলে সমাজের ‘সহৃদয় সামাজিক মানুষ’ -কে মূল্যবান ভূমিকা নিতে হবে।



জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞানচেতনার প্রয়োজনীয়তা-



অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, অলৌকিকতা প্রভৃতি ধর্মান্ধতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে বিজ্ঞান। পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা বিজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ। আমাদের জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিধানে, রোগ নির্ধারণে, আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর উৎপাদন ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের ব্যবহার অপরিহার্য।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভুত্বকে বজায় রাখার জন্য যারা ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারকে কাজে লাগান, তাঁরাও নিজেদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। এই ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের হাত থেকে রক্ষা পেতে দৈনন্দিন জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞানমনস্কতার অনুশীলন অত্যন্ত জরুরি।



জীবনাচরণে বিজ্ঞানমনস্কতার ভূমিকা:


মানবজীবনে বিজ্ঞানমনস্কতার মূল্য অপরিসীম। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ প্রচলিত ভ্রান্ত কুসংস্কার থেকে মুক্ত হবে; অদৃষ্টবাদী মানুষ বিজ্ঞানমনস্কতার ঘুণে হবে যুক্তিনির্ভর। এইভাবে ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবন ক্রমশ গতিময় হবে।



শিক্ষায় বিজ্ঞানমনস্কতার ভূমিকা:


জীবনে শিক্ষা ব্যতীত মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণতা আসে না। আর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানমনস্কতার মূল্য অপরিসীম। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে হলে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে হবে। যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা জীবনকে পূর্ণতর করে তাকে নিয়ে যাবে উদার উন্মুক্ত জ্ঞানালোকে।



বিজ্ঞানমনস্কতায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা:



ছাত্ররা যেহেতু জাতির ভবিষ্যৎ, তাই তাদের সংস্কারমুক্ত, যুক্তিনিষ্ঠ করে গড়ে তুলতে হবে। আর তা করতে হলে ছাত্রদেরকে জীবনের শুরু থেকে একটা বিচারবিশ্লেষণমুখী পরিমণ্ডলে রাখতে হবে। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে এভাবে তাদেরকে শিক্ষিত করতে পারলে তারা হয়ে উঠবে উদার মনোভাবাপন্ন, বিজ্ঞানচেতনা সম্পন্ন এক নতুন সংস্কারমুক্ত মানুষ।



উপসংহার:



আজও এই বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে মানুষ এখনও পুরোপুরি বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারেনি। শিক্ষার প্রসার ঘটালেও অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা আজও সমাজে থেকে গেছে। রাজনীতি, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা - সব ক্ষেত্রে আজ বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব। তাই জীবনকে সম্পূর্ণ অর্থে সমৃদ্ধ করতে হলে সকলকে বিজ্ঞানমনস্কতার দীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচেতনা বৃদ্ধি মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে সক্ষম। মানুষ যদি সত্যিই বিজ্ঞানমনস্ক না হয়ে ওঠে তবে পদে পদে জীর্ণ লোকাচার মানবজাতিকে গ্রাস করে ফেলবে।



আরও পড়ুন-


Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area