একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা - A Stormy Night Experience Essay In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা:
“নৃত্যের তালে তালে নটরাজ
ঘুচাও সকল বন্ধ
সুপ্তি ভাঙাও চিত্তে জাগাও
মুক্ত সুরের ছন্দ।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জীবনের প্রতি পদে যেন অভিজ্ঞতা মানুষকে জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। এগিয়ে চলার পথে আসে নানা বাধাবিপত্তি। নানাভাবে, নানারূপে, নানারঙে, আমাদের জীবনে অভিজ্ঞতার সঞ্চার ঘটে। তবুও সব অভিজ্ঞতা মানুষের জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকে না। থাকে দু-একটি। বাকি সব নিত্য জীবনের টানাপোড়েনে কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়। সেরকমই আমি সব ভুলে গেলেও সেদিনের সেই ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলতে পারব না। তা আমার জীবনের একটি স্মৃতি।
ঝড়ের পূর্বমুহূর্ত:
আমি তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। সারাদিন আকাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সন্ধ্যার সময় যেন পরিবেশটা একটু কেমন ঠেকল। মাঝে-মধ্যে ভারী বাতাস যেন অভিমান ভরে সমস্ত কিছুকে নিভিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। সন্ধ্যার সময় আমরা চার ভাইবোন উঠানে মাদুর বিছিয়ে এক আলোতে পড়তাম। এই দমকা হাওয়া আমাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যেতে থাকল। তবুও মা পাশেই রান্নবান্না করছেন। কাজেই হ্যারিকেনের আলো জ্বালাতে অসুবিধা হচ্ছে না।
মা বললেন, কিছু হবে না। এখন রাত সাতটা আর একটু পড়ে নাও। তারপর দোষে সবাই ঘরে যাবে। আর ঘরে ওঠা। মা তাড়াতাড়ি উনানের আগুন নিভিয়ে আমাদের চারজনকে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। দূর থেকে শোনা গেল সাঁ সাঁ শব্দ। নিমিষের মধ্যে কোথা থেকে ৱুদ্র বঝড় এসে সমস্ত ওলট-পালট করে দিয়ে গেল।
প্রথম দমকা শেষ হতেই মা বাইরে গিয়ে দেখেন সেই রাতের রান্না করা খাবার ঝড়ের তাণ্ডবে শেষ। পুনরায় রান্নাও সম্ভব নয়। চারদিকে তখন আতঙ্কিত চিৎকার-রোল।
ঝড়ের দ্বিতীয় পর্ব:
রাত তখন প্রায় দশটা। আমরা তখন খিদের জ্বালায় কান্না জুড়ে দিলাম। সঙ্গে ঝড়ের আতঙ্ক তো আছেই। বাইরে ঝড় তখন একটু কম হলেও একেবারে থেমে নেই। ইতোমধ্যে ঘরের মাঝামাঝি ‘আড়া’ গেল ভেঙে। মাটির ঘরের চৌচালার একটি চালা গেল উড়ে। ঘরের মধ্যে বৃষ্টির জল তখন তীরের ফলা মতো ঢুকছে। কিছু করার নেই। মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি আর কড়কড় গর্জন আমাদের খিদের জ্বালা ভুলিয়ে দিল।
মা-বাবা আমাদের চারজনকে নিয়ে আগলে আছেন। এমন সময় কোথা থেকে আর-এক দমকা হাওয়া বাকি তিন চালা উড়িয়ে নিয়ে গেল। আমরা সবাই তখন অসহায়। বাইরে তখন ঝড়ের তাণ্ডবে বড়ো বড়ো গাছ ভেঙে পড়ছে। গাছ থেকে নারকেল যত্রতত্র বোমার মতো এসে পড়ছে। বাবা-মা আমাদের নিয়ে বের হওয়ার সাহস পেলেন না।
ঝড়ের তৃতীয় পর্ব:
রাত তখন দুটো অবশেষে ঝড় একটু কমায় আমরা একে অপরের হাত ধরাধরি করে বাইরে বেরিয়ে পড়লাম একটু আশ্রয়ের জন্য। রওনা দিলাম জ্যাঠামশায়দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু কোথায় সে ঘর? চারিদিকে ঘোর অন্ধকার। যেন এক বিরাট কালীমূর্তি চরাচর অন্ধকার করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের ঝিলিকে অস্পষ্ট দেখা যায় দূরের পথ; তাও লুটিয়ে পড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সকলে সাবধানে চলেছি এমন সময় তৃতীয়বারের দমকা হাওয়া আমাকে বাবার হাত ছাড়া করল, একরকম উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো। কাছে একটা পড়ে যাওয়া গাছের অবলম্বন পেয়ে সে যাত্রা বেঁচে গেলাম। ভাবলাম ঝড় মৃত্যুরাজার থেকেও কী ভয়ংকর।
অবশেষে বাবা-মায়ের চিৎকার শুনতে পেয়ে সেই নিশানা ধরে গাছপালার ভিতর দিয়ে গিয়ে তাদের হাত ধরলাম এবং একটু এগিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ আশ্রয় জ্যাঠামশায়দের ঘরে গিয়ে উঠলাম। সেখানে রাতে শুকনো খাবার খেয়ে ক্লান্তদেহে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঝড়ের বাস্তব চিত্র:
পরদিন সকালো ঝড়ের বাস্তব চিত্র দেখে আতঙ্কিত ও শিহরিত হলাম। মৃত পশুপাখির সারি বাড়ির সামনের খাল দিয়ে ভেসে চলেছে। গাছের সারি, ঘরবাড়ি ধূলিসাৎ। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ যদি সেদিনের সেই অবস্থা দেখতেন তবে হয়তো দুঃখেই মারা যেতেন, অন্য দুর্ঘটনার দরকার ছিল না। ঘর চাপা পড়ে মারা গেছে, গোয়াল চাপা পড়ে মারা গেছে গোরু-ছাগল-ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণী। গ্রামীণ আনন্দমুখর পরিবেশ একটি ঝড়ের রাতের পর যেভাবে বিলাপে-বিষাদে শোকস্তব্ধ তা চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না।
ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা:
প্রকৃতির তান্ডব এই ঝড়ের মধ্য দিয়ে আমি উপলব্ধি করলাম নটরাজ শিবকে। মনে হতে লাগল প্রকৃতির বিধান কে খন্ডাবে। কবির সুর মনে উদিত হল- “যাবার যাহা যাক সে চলে/রুদ্র নাচের তালে”। রাত্রির এই প্রচন্ড ঝড়ের মধ্য দিয়ে আমি প্রত্যক্ষ করলাম এক পাগলকে। বলতে লাগলাম-
“নৃত্য কর হে উন্মাদ, নৃত্য কর।” (পাগল প্রবন্ধ)। এই ৰুদ্ৰ প্রকৃতির নাচন দেখে কে বলবে না- ‘হে ভৈরব দাও শক্তি।’
উপসংহার:
বড়োদের মুখে শুনেছি প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করলে প্রকৃতিতার প্রতিশোধ নেয় দুর্যোগের মধ্য দিয়ে। বারবার মনে করতে লাগলাম- আমি কোনো অত্যাচার করেছি কিনা। তাই ঠাকুরকে ডাকতে লাগলাম- 'হে শিব ঠাকুর আমাকে রক্ষা করো।' সেদিনের রাতে শিবকে বারবার স্মরণ করে আর কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছি “বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি, সে কি সহজ গান? সেই সুরেতে জাগব আমি, দাও মোরে সেই টান।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।