স্বেচ্ছায় রক্তদান প্রবন্ধ রচনা - Voluntary Blood Donation Essay In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “স্বেচ্ছায় রক্তদান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
স্বেচ্ছায় রক্তদান প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা-
দান করা মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। উপকথায় আছে মহারাজ হরিশচন্দ্র রাজ্য, স্ত্রী, পুত্র সবকিছু দান করে সর্বত্যাগী হয়েছিলেন। এভাবে দানের ইতিহাস আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বহু মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখের দানের তুলনা ছিল না। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দানের স্বরূপ পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। অন্যের প্রাণ বাঁচানোর জন্য বর্তমানে রক্তদান করা হয় এবং এই শ্রেণির দান একটি নির্দিষ্ট স্থান দাবি করে।
রক্তদান কী-
মানুষের রক্তে চারটি গ্রুপ থাকে। এগুলি হল- A, B, AB এবং O গ্রুপ। যে ব্যক্তির দেহে যে রক্ত আছে সেই ব্যক্তি সেই রক্তই ধারণ করতে পারেন। আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন যে, 'O' গ্রুপের রক্তে কোনো অ্যান্টিজেন থাকে না বলে ‘O’ গ্রুপের রক্ত ধারণকারী ব্যক্তি সব গ্রুপের ব্যক্তিকেই রক্তদান করতে পারেন। তাই ‘O’ গ্রুপকে সর্বজনীন দাতা বা ইউনিভারসাল ডোনার বলা হয়। ‘AB’ বিভাগের রক্তে কোনো অ্যান্টিবডি থাকে না কিন্তু উভয় প্রকার অ্যান্টিজেন থাকে। ফলে 'AB' শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিকে সব গ্রুপের রক্ত দেওয়া যায়। 'AB' গ্রুপের রক্ত ধারণকারী ব্যক্তি সব বিভাগের রক্ত ধারণ করতে পারে বলে এই বিভাগকে সর্বজনীনগ্রহীতা বলে। প্রসঙ্গত রক্তদানের আগে Rh গ্রুপও দেখা হয়। রক্তদান ও রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানের এই সত্যকে প্রত্যেকে মেনে চলে।
রক্তের উপাদান ও রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা:
রক্তের মূল্য অনেক। মানুষ যেসব খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে, পরিপাক যন্ত্রের নানা ক্রিয়া পদ্ধতির ফলে এবং দেহের ভিতরকার হরমোন ইত্যাদির সংশ্লেষে তা রক্তে পরিণত হয়। এই রক্তই সারা দেহে সঞ্চালিত হয় এবং মানুষ সুস্থ ও সজীব থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ত মেলাও শক্ত।
অসুস্থ রোগীকে রক্ত দিতে হলে অনেক সময় তার আত্মীয়স্বজনের রক্তেও কাজ হয় না। এই কারণেই দ্রুত রক্ত সরবরাহ করতে হলে সঞ্চিত রক্ত অপরিহার্য। এটা সম্ভব রক্তদানের মাধ্যমে; কিন্তু অনেক দুঃস্থ লোক টাকার জন্য নিজেদের দেহের রক্ত বিক্রয় করেন। তবে ব্যাপকভাবে রক্তের আমদানি না হলে চাহিদাও মেটানো যায় না।
রক্তদান ও রক্ত সংরক্ষণের পদ্ধতি:
একজনকে রক্ত দান করা মানে তাকে জীবনদান করা। অনেকে মনে করেন যে রক্তদান করলে হয়ত তার নিজের শরীরে রক্তের ঘাটতি থেকে যাবে, কিন্তু এটি আদৌ সত্যি নয়। উপযুক্ত বয়সে কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে এককালে ২৫০ সিসি রক্ত টেনে নিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না; যেটুকু ঘাটতি হয় তা সাতদিনের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু শুধু রক্তদান করলেই হবে না। তাকে সংরক্ষণ করতে হবে। রক্ত শুধু ধরে রাখলেই হয় না; কারণ তা জমাট বেঁধে যেতে পারে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে হোর্নস্টেইন রক্ত সংরক্ষণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। সুস্থ মানবদেহ থেকে ২৫০ সিসি রক্ত নিয়ে বোতলে রাখা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট বোতল আছে। সেগুলি ৫০ সিসি অ্যাসিড নাইট্রেট ডেক্সট্রেজ সম্বলিত। রক্তের গ্রুপ ধরে প্রত্যেকটি বোতলকে চিহ্নিত করা হয় এবং কতদিন তা ব্যবহার করা যাবে তাও লিখে রাখা হয়। রক্ত কতদিন অবিকৃত থাকবে তা নির্ভর করে তাপমাত্রা ও পারিপার্শ্বিকতার ওপর। কিন্তু ধরা হয় ৪ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপসমন্বিত ফ্রিজে কমপক্ষে ১৯ দিন, আবার কারও মতে তিন মাস পর্যন্ত রক্ত রাখা যেতে পারে।
রক্তদানের প্রচারাভিযান ও রক্তদাতা:
আজকাল বহু সংগঠন যথা এসএফআই, ডিওয়াইএফ আই, যুব কংগ্রেস, সরকারি কর্মচারী সংস্থা, রেলওয়ে কর্মচারী ইউনিয়ন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ প্রভৃতি সংস্থা রক্তদান শিবির পরিচালনা করে থাকেন।
দলমত নির্বিশেষে সমস্ত শ্রেণির মানুষই রক্তদানে এগিয়ে আসেন। রক্তদানকে কেন্দ্র করে বেতারে, দূরদর্শনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। নাটক অভিনীত হচ্ছে রক্তদানকে কেন্দ্র করে। ব্লাড ব্যাংক আগের তুলনায় বেশি সংখ্যায় স্থাপিত হচ্ছে। গ্রামের অভ্যন্তরেও ব্লাড ব্যাংক ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে রক্ত দেহে থাকলে জমাট বেঁধে যায়, দান করলে কোনো ক্ষতি হয় না।
বর্তমানে যারা রক্তদান করেন তাদের একটি কার্ড দেওয়া হয় সেটি দেখালে পরবর্তীকালে সহজে রক্ত পাওয়া যায়। রক্তের কোনো জাত হয় না। হিন্দু, মুসলমান যে-কোনো ধর্মের মানুষ হোক না কেন সবার রক্তের রঙ লাল। সেই জন্য রক্তদানের ক্ষেত্রে কোনো জাত দেখা হয় না। যে-কোনো সুস্থ মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁকে সুস্থ হতে হবে। কোনো কঠিন ব্যাধি বা সংক্রামক ব্যাধিতে রোগগ্রস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারবেন না।
উপসংহার:
ক্ষুধার্তকে অন্ন দেওয়া ও তৃয়ার্তকে জল দেওয়া যেমন মানুষের কর্তব্য তেমন কোনো অসুস্থ মানুষকে রক্ত দেওয়াও সকলের কর্তব্য। আর এই ব্রত কোনো সুস্থ মানুষ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে পারেন, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এই রক্তদানের মাধ্যমে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে দূর করতে পারা যায়। তাই আজ সকলের কাছে মূলমন্ত্র হবে “রক্তদান জীবন দান।”
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।