একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা - Writing A Travel Experience Essay In Bengali- পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো।যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা-
“না জানি কেনরে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘ভ্রমণ’ শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে মন কেমন যেন নেচে ওঠে। ব্যাকুলিত প্রাণ বেরিয়ে পড়তে চায়- হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে। বন্ধুদের মাধ্যমে খবর পেলাম এবার দুর্গাপুজোতে সবাই বেড়াতে যাবো পৃথিবীর বৃহত্তম নদী ব-দ্বীপ- ‘সুন্দরবন’। খবর শুনেই মন চাঙ্গা হয়ে উঠল। তারপর থেকে শুরু হল দিন গোনা। যেন দিন আর কাটতে চায় না। এক একটা দিনকে মনে হয় এক একটা যুগ। বহু প্রতীক্ষার পর এল সেই দিন- শুভ পঞ্চমী। এবার ঘর থেকে পা বাড়াবার পালা।
শুভযাত্রা-মুহূর্ত:
আমি কলকাতা থেকে রওনা দিলাম চতুর্থীর দিন বিকাল বেলায়। শরতের বিকেলে আকাশের বুকে সে কী অপরূপ সৌন্দর্য; আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে শ্রীশ্রীদুর্গামায়ের মাঙ্গলিক আগমনী। মধ্যমগ্রাম থেকে ট্রেনে উঠে বসলাম। তারপর সোজা হাসনাবাদ, সেখান থেকে আবার বাস। গিয়ে উঠলাম লেবুখালি। সেখান থেকে এবার অটো করে সোজা বাড়ি। সেখান থেকে পরদিন ভোরে রওনা। কী মজাই না হচ্ছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় আমরা সুন্দরবন দেখতে রওনা দিলাম ট্রেন কিম্বা টুরিস্ট বাসে নয়; একেবারে নদীপথে ইঞ্জিন চালিত বোট (নৌকা) ধরে।
আমরা সঙ্গে প্রায় জনা চল্লিশেক অভিযাত্রী। সঙ্গে আমার দুই বোনও আছে। সকাল ৬-৩০ মিনিটে আমাদের বোট যাত্রা শুরু করল। পাগল করার মতো সে ছুটে চলল রমাপুর বোটঘাট থেকে সুন্দরবনের দিকে।
আমাদের যাত্রাপথ-
নদীপথে সে কী দুঃসাহসিক যাত্রা! আমাদের বোট নদীর ঢেউ একের পর এক অতিক্রম করে চলেছে বীর পরাক্রমশালী যোদ্ধার মতো। মাঝে মধ্যে সেই ঢেউ -এর জল বোটের মধ্যে সকলকে শুচিস্নান করিয়ে দিচ্ছে। দূরে নীল আকাশ সবুজ পল্লির সঙ্গে একাকার। মাঝে মাঝে নদীর ঢেউ যেন গোখরো সাপের মতো ফণা তুলে আমাদেরকে আক্রমণ করছে। নদীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যতদূর চোখ যায় জেলে নৌকার সারি সারি বিস্তার।
তারা নদীতে এভাবেই রোদে পুড়ে জলে ভিজে মাছ ধরে। মাঝে মাঝে বুকের মাঝে ধড়াস করে ওঠে। ঢেউয়ের চোটে মাঝে মাঝে বোট ডুবে যাওয়ার উপক্রম। এবার বুঝি কুমির কিম্বা বোয়াল মাছের পেটে যেতে হয়। নদীর পাড়ে বন। কেওড়া, গরান থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ঘনঘটা দূরে তাকালেই মনে হচ্ছে সমস্ত নদীকে যেন সবুজ বন ঘিরে রেখেছে। কত গ্রাম; কত নদীপথ; কত প্রান্তর; কত ঘাট পেরিয়ে আমরা এসে উঠলাম সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী নদীর চড়ায়।
সুন্দরবন দর্শন-
ঠিক এগারোটা নাগাদ আমরা সকলে বোট থেকে নদীর চড়ায় নামলাম। সিমেন্টের চড়া সেখানে গলে নদীর জলের সঙ্গে একাকার। নদীর পাড়ের একটি সবুজ ঘাসের চড়ায় আমরা দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম।
এবার শুরু হল বহু প্রত্যাশিত সেই নদী বদ্বীপ সুন্দরবন দর্শন। আমরা ফরেস্ট অফিসে যোগাযোগ করে পুলিশি সাহায্য নিয়ে প্রথমে টাওয়ারে উঠে যতদূর চোখ যায় বন্য জীবজন্তু দেখলাম। সুন্দরবনের একেবারে প্রান্ত বরাবর কাঁটার তারের ইলেকট্রিক বেড়াজাল আটকানো। যাতে বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বাঘ যেন পার হতে না পারে। অবশ্য বাঁদর, শূকরের নিত্য যাতায়াত আছে পার্শ্ববর্তী লোকালয়গুলোতে। আমরা এরপর পুলিশি মধ্যস্থতায় বনের কাঁটাবেড়া আচ্ছাদিত পথ ধরে অনেক দূর পর্যন্ত ঢুকলাম।
যতদূর চোখ যায় দেখলাম বন্য শূকর, হরিণ, শাখামৃগ থেকে অনেক কিছু। অবশেষে আমাদের বহুকাঙ্ক্ষিত সেই সুন্দরবনের বাঘ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার -এর দর্শন পেলাম। সত্যিই বন্য ‘বেঙ্গল টাইগার’ একটু মশকরা করে বললাম- রিয়্যা, বেঙ্গল টাইগার। কেন-না এরকম সাক্ষাৎদর্শন বাঘের সঙ্গে অনেকবার হয়েছে; সেগুলি পাঁচ ফুট থেকে সাত ফুটের মধ্যে। তবে জীবিতাবস্থায় নয়; মৃত অবস্থায়। একবার পাঁচটি গোরু মারার অপরাধে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীর দ্বারা বিষ মাখানো গোরুর মাংস খাওয়ায় একটি বাঘ মারা যায়; আর একবার খাঁচায় বন্দি অজ্ঞান করা একটি বাঘকেদেখেছিলাম। অবশ্য তখন তাকে মরা বাঘের মতোই লাগছিল।
কাছে যাইনি তা-ও মনে হচ্ছিল- বাপরে বাপ! সেখান থেকে বেরোবার পর আমরা বোটে করে নদীর কিনারা ধরে সুন্দর বনের এক পাশ দিয়ে কিছুক্ষণ এগিয়ে গেলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর মাঝি ভাই এগোনোর সাহস পেল না। কারণ নদীতে তখন ভাঁটা লেগেছে; তদুপরি সামনেই গভীর বন। সেখানে নদীপথ নেই। কারোর এগোতে সাহস হল না। দেখতে দেখতে সূর্যও তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। অনেক দূরের পূজামণ্ডপ থেকে কাঁসর-ঘণ্টা কানে আসতে লাগল। বুঝলাম এবার ঘরে ফেরার পালা।
সুন্দরবন দর্শনের অনুভূতি:
প্রকৃতিদেবী কোথায় কীভাবে বিচিত্ররূপে সেজে আছেন তা এই বনভূমি দর্শন না করলে বলা বড়ো মুশকিল। সবুজে আচ্ছাদিত এই বনভূমি ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সুন্দরী, গরান, বাণ, গেঁও, কেঁও, অর্জুন, কেওড়া, গর্জন দ্বারা আচ্ছাদিত এই বনভূমির সৌন্দর্য বড়োই মনোরম। শরতের সূর্যের শেষের রশ্মিতে সুন্দরবন কী অপরূপ সাজে সেজেছে। কোনো কোনো গাছে ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়, আবার কোনো কোনো গাছে শাখামৃগের (বাঁদরের) অবাধ রাজত্ব।
নীচে চরে বেড়াচ্ছে অতি সাবধানে হরিণ, শূকর, আরও অনেক অচেনা বন্য প্রাণী। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরবে সুন্দরবন হরবোলা সুরের মতো বাজছে। এরই মাঝে হঠাৎ কানে এল ‘হুম’ ‘হুম’ আওয়াজ। ভাবলাম বুঝি বনদেবী বুষ্ট হয়ে আমাদের মধ্য থেকে কাউকে তুলে নিলেন।
ধড়ফড় করে উঠে দেখলাম আমরা সংখ্যায় ঠিক আছি। আর যে লেজ বিশিষ্ট ভদ্রলোক বাঘমামা আওয়াজ করলেন তিনি আমাদের পাশের বোটে পুলিশি খাঁচায় বন্দি। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।
উপসংহার:
আমাদের বোট তখন সুন্দরবন ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছে। ফেরার কথা মনে ছিল না। তখন আমি বোটে বসেও কল্পরাজ্যের বাসিন্দা। স্মৃতির ফলকে তখন ভেসে বেড়াচ্ছে বিধাতার অদ্বিতীয় সৃষ্টি- সুন্দরবন। স্মৃতিপটে এই স্মরণীয় দিনকে ‘একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা-র’ ফলকে ধরে নিয়ে চললাম জন্মভূমি-গ্রামের দিকে।
আরও পড়ুন-
Note: পোস্ট টি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এ শেয়ার করুন। যদি কোন ভুল থেকে থাকে তবে তা Typing mistake এর জন্য। আমাদের comment করে জানান আমরা তা সংশোধন করে দেবার চেষ্টা করবো।