আমাদের ব্লগে স্বাগতম! এখানে, আমরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান শেয়ার করব যা আমরা মনে করি আপনার কাছে আকর্ষণীয় হবে।
GK Geography In Bengali - এই টপিকটি থেকে প্রায় সমস্ত রকম প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় WBCS | WBPSC | BANK | Rail | WBP | SSC প্রায়শই প্রশ্ন এসেই থাকে, তাই আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন ও উত্তর গুলি সুন্দর করে দেওয়া হলো। যদি ভালোভাবে মুখস্ত বা মনে রাখেন তা হলে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় আপনাদের অনেক সুবিধা হবে।
ভূগোলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
1. অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার কাকে বলে?
উত্তর: পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিনে একবছর ধরি। এর জন্য প্রতি ৪ বছর অন্তর ফেব্রুয়ারী মাসে ১ দিন বাড়িয়ে সময়ের সমতা বজায় রাখা হয়। এইভাবে যে বছর ফেব্রুয়ারী মাসের দিনসংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে (২৮ + ১ = ২৯ দিন ধরে) বছরটি ৩৬৬ দিন করা হয় সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপি ইয়ার বলা হয়। সাধারণত খ্রিষ্টাব্দ সংখ্যাকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোন ভাগশেষ না থাকে তবে ঐ সব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলে।
2. নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা কাকে বলে?
উত্তর: পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে সুমেরু ও কুমেরু বিন্দু থেকে সমান দূরে অবস্থিত যে বৃত্ত রেখা পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে বলে কল্পনা করা হয় তাকে নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা বলে।
নিরক্ষরেখা ও পৃথিবীর কেন্দ্র যে তলের ওপর অবস্থিত তাকেই নিরক্ষীয় তল বলে।
3. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা কাকে বলে?
উত্তর: আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা হল এমন একটি রেখা যে রেখা ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে মোটামুটি অনুসরণ করে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৮০ ° দ্রাঘিমারেখা পৃথিবীর পশ্চিম বা পূর্ব গোলার্ধের তারিখ বিভাজিকার কাজ করে। এই জন্যই ১৮০° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক রেখা বলে।
4. সুনামি কি?
উত্তর: জাপানি TSU শব্দের অর্থ বন্দর আর Nami- র অর্থ ঢেউ। সমুদ্রের বিশাল তরঙ্গকে সুনামি বলে। সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প হলে বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হলে বিশাল বিশাল সমুদ্রের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। উপকূলের কাছে সমুদ্রতরঙ্গ সব থেকে বেশি ৫০ ফুটের অধিক ঢেউ হয়। এই দৈত্যকার ঢেউকেই সুনামি বলে।
গত ২৬ সে ডিসেম্বর, ২০০৪ সকালে ভারত মহাসাগরের তলদেশে টেকটোনিক প্লেটের চলনের ফলে বিশাল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিশাল মহাসাগরীয় ঢেউ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়র দেশগুলির ওপর আছড়ে পড়ে সুনামির আকার নেয়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারতের আন্দামান, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি উপকূলীয় অঞ্চল প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে সম্পদহানি ও জীবনহানি ঘটে।
5. সার্ক বা করি কি?
উত্তর: সার্ক হল এমন উপত্যকা যা হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া হাতল ছাড়া ইজিচেয়ারের মত, মাঝখানে গর্ত এমন ভূমিরূপ নেয়। এর ফলে পুরো উপত্যকাটিকে দেখতে হয় অনেকটা হাতলছাড়া ডেক চেয়ারের মত। এই রকম আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকাকে ফরাসি ভাষায় সার্ক এবং ইংরাজীতে করি বলে। পার্বত্য উপত্যকাটি যতদিন পর্যন্ত হিমবাহে চাপা থাকে ততদিন বোঝা যায় না। উপত্যকাটি বরফমুক্ত হলে তবেই সার্ক দেখা যায়।
6. ডেকানট্রাপ কি?
উত্তর: ভারতের লাভাগঠিত মালভূমির অন্যতম নিদর্শন। ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম অংশে মহারাষ্ট্র, কাথিয়াবাড়, মধ্যপ্রদেশ প্রায় ৫ লক্ষ বর্গ কি. মি. বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একইরকম লাভা গঠিত মালভূমি দেখা যায়। এই মালভূমির উপরিভাগ টেবিলের মত সমতল এবং পার্শ্বদেশ সিঁড়ির মত ধাপে ধাপে নীচের দিকে নেমে গেছে। এই কারণেই একে ‘ডেকানট্টাপ’ বলে। কারণ ‘ডেকান’ - দাক্ষিণাত্যে, ‘ট্রাপ’ - Stair বা সিঁড়ি। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে ১৩-১৪ কোটি বছর আগে উত্তপ্ত ম্যাগমা পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ থেকে ফাটল পথে নির্গত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে সঞ্চিত শীতল ও কঠিন হয়ে এই মালভূমি সৃষ্টি করেছিল এবং পরে পার্শ্বদেশ ক্ষয় পেয়ে এই সিঁড়ির আকার ধারণ করেছে।
7. টেথিস সাগর কি?
উত্তর: প্রিটেসিয়াস যুগের আগে এখন যেখানে হিমালয় পর্বতমালা সেখানে ছিল এক অগভীর সাগর। যার নাম টেথিস সাগর। মনে করা হত তখন পৃথিবীর সব মহাদেশগুলি একগুচ্ছ হয়ে অবস্থান করত। তাকে বলা হত প্যাঞ্জিয়া। প্যাঞ্জিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ছিল টেথিস সাগর। এর উত্তরে ছিল লরেসিয়া আর দক্ষিণ গান্ডোয়ানাল্যান্ড। জিওসিঙ্কলাইন তত্ত্বে মনে করা হয় লরেসিয়া ও গান্ডোয়ানাল্যান্ডের চাপে টেথিস সাগরে পলি ভাঁজ পর্বত হয়ে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক পাতসংস্থান তত্ত্বে মনে করা হয় ইউরেশিয়া পাত ও ভারতীয় পাতের অভিসারী সংঘর্ষে সাগরের পলি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে।
8. ম্যানগ্রোভ বনভূমি কি? উদাহরণ দাও।
উত্তর: মূলত গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা প্রভৃতি নদীর-দ্বীপ অঞ্চলে ও কাম্বে উপসাগরে নিম্ন জলাভূমিতে এক বিশেষ প্রকারের বনভূমি দেখা যায়। লবণাক্ত জলাভূমি বলে বনভূমির বৃক্ষগুলির শিকড় শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মাটি ফুঁড়ে উপরে ওঠে। একে শ্বাসমূল বলে। কাণ্ডকে সোজা করে ওপরে ধরে রাখার জন্য ঠেসমূলও দেখা যায়। এখানকার বৃক্ষগুলির মধ্যে সুন্দরী, গরাণ, গেঁওয়া, কেওড়া, হোগলা, গোলপাতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরকম নৌকা ও গৃহনির্মাণে এবং জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই বনভূমিতে মধু ও মোম পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ‘ম্যানগ্রোভ’ বনভূমির আদর্শ উদাহরণ।
9. সবুজ বিপ্লব বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: স্বাধীনতার পর ভারতে ৬০ -এর দশকে কৃষিক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ফসল উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে তাকে সবুজ বিপ্লব’ বলে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ফোর্ড ফাউন্ডেশন - এর রিপোর্ট অনুযায়ী নিবিড় কৃষি জেলা কর্মসূচী উচ্চফলনশীল বীজ কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে কৃষিতে দ্রুত বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন সাধিত হয়। এই কর্মসূচীকে সবুজ বিপ্লব বলে। উচ্চফলনশীল গম, উচ্চফলনশীল ধান এই বিপ্লবের ফলেই সাধিত হয়েছে। সবুজ বিপ্লব পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ সাফল্যলাভে সমর্থ হলেও দেশের অন্যত্র এর প্রভাব সীমিত। তবে এই বিপ্লবের ফলেই ভারতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়েছে।
10. বায়োগ্যাস কি?
উত্তর: বায়োগ্যাস বর্তমানে ভারতের গ্রামাঞ্চলে আদর্শ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামের গৃহপালিত পশু, গরু, বা মোষের মলকে কাজে লাগিয়ে এই গ্যাস উৎপাদন করা হয়। বায়োগ্যাসের সাহায্যে আলো জ্বালানো বা রান্না করা হয়। এছাড়াও বায়োগ্যাস থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতে বৈদ্যুতিক পাম্প এবং গ্রামের কুটীরশিল্পের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বর্তমান ভারতে অনেকগুলি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরী করা হয়েছে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎকৃষ্ট মানের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার পাওয়া যায়।
11. ঘূর্ণবার্ত কি?
উত্তর: যখন কোনো অল্প পরিমাণ স্থান হঠাৎ বেশী মাত্রায় উত্তপ্ত হয়, তখন সেই স্থানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে চারিদিকের অপেক্ষাকৃত শীতল ও উচ্চচাপের স্থান থেকে প্রচণ্ড বেগে বায়ুস্রোত ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে, একেই ঘূর্ণবাত বলে। ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
i) ঘূর্ণবাতের ধ্বংস ক্ষমতা অতি ভয়ংকর।
ii) ঘূর্ণবাত অতিদ্রুত স্থানে পরিবর্তন করে।
iii) ঘূর্ণবাতের সঙ্গে ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়।
iv) ঘূর্ণবাত সবসময় উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে হয়।