তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল
তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল || Tundra Climate Zone PDF : সুপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আজকের এই পর্বটিতে আমরা শেয়ার করলাম তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে। তুন্দ্রা অঞ্চল কোথায়? তুন্দ্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণী, তুন্দ্রা অঞ্চল বৃক্ষবিরল কেন? ইত্যাদি।
তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে
সুমেরু এবং কুমরে বৃদ্ধ অঞ্চলের বিশেষ ধরনের শীতল জলবায়ু হলো তুজা জলবায়ু। গ্রীষ্মকালে বরফ গলে এই জলবায়ু অঞ্চলে কিছু শৈবাল জন্মায়। এই শৈবালের নাম থেকেই ‘তুন্দ্রা' জলবায়ুর নামকরণ।
তুন্দ্রা অঞ্চল কোথায় অবস্থান :
সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্তের নিকটবর্তী উত্তর আমেরিকার কানাডার উত্তরাংশ, আলাস্কা, ইউরেশিয়ার উত্তরাংশ, ইউরোপের নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড - এর সংকীর্ণ উপকূল অংশ ও এশিয়ার সাইবেরিয়ায় তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়।
দক্ষিণ গোলার্ধে আন্টার্কটিকা মহাদেশের কিছু অঞ্চলেও এই জলবায়ু দেখা যায়।
তুন্দ্রা অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
স্বল্পস্থায়ী শীতল গ্রীষ্মকাল আর দীর্ঘস্থায়ী হিমশীতল শীতকাল এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
শীতকালীন জলবায়ু: বছরের অধিকাংশ সময় (৮-৯ মাস) শীতকাল। এইসময় তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াস থেকে ৪০° সেলসিয়াস -এ নেমে যায়। সাইবেরিয়ার 'ভারখয়ানস্ক' (উত্তর গোলার্ধের শীতলতম স্থান) -এ জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা থাকে -৫০.৬° সেলসিয়াস। ভয়ংকর শীতে সমস্ত অঞ্চল তুষারে ঢাকা পড়ে যায়। মাঝে মাঝে তুষারপাত, তুষারঝড় চলতে থাকে। এই সময় আকাশে সূর্যকে প্রায় দেখাই যায়। না। একটানা অন্ধকার রাতে মাঝে মাঝে ২-৩ ঘণ্টার জন্য ম্লান রংধনুর মতো আলোর ছটা (সুমেরু ও কুমেরু প্রভা) দেখা যায়।
গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু: দু সপ্তাহব্যাপী বসন্তের পর ভুদ্রা অঞ্চলে ২-৩ মাসের জন্য স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মকাল আসে। এইসময় গড় তাপমাত্রা হয় ১০° সেলসিয়াস। আকাশে সূর্য খুব অল্পসময়ের জন্য অস্তযায়। একটানা ২২-২৩ ঘণ্টা দিনের আলো থাকলেও তির্যক সূর্যরশ্মির জন্য উন্নতা বেশি বাড়তে পারে না। নরওয়ের উত্তরে হ্যামারফেস্ট বন্দর (৯০° ৩০' উঃ) ও আশপাশের অঞ্চলে স্থানীয় সময় অনুযায়ী গভীর রাতের আকাশে সূর্য দেখা যায়। এই অঞ্চলকে 'নিশীথ সূর্যের দেশ' বলে। গ্রীষ্মকালে আকাশ কুয়াশায় ঢাকা থাকে। ২০-৩০ বৃষ্টি হয়।
তুন্দ্রা অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য
তুন্দ্রা অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ -
বছরের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকায় এই অঞ্চলে কোনো বড়ো গাছ জন্মাতে পারে না। এখানকার প্রধান স্বাভাবিক উদ্ভিদ হলো মল, লাইকেন।
বন্যপ্রাণী- তিনি, মেরু শিয়াল, মেরু ভালুক, ক্যারিবু এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
তুন্দ্রা অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ও জীবনযাত্রা
অধিবাসীদের জীবনযাত্রা
অত্যন্ত প্রতিকূল জলবায়ু, কষ্টকর জীবনযাত্রার জন্য তুদ্রা অঞ্চল জনবিরল। একমাত্র আদিম অধিবাসীর প্রকৃতির সঙ্গে সংজ্ঞান করে বসবাস করে।
১. গ্রিনল্যান্ড, কানাডা ও আলাস্কার উত্তরাংশে এক্সিমো, রেড ইন্ডিয়ান
২. ইউরেশিয়ার সাইবেরিয়ায় স্যানোয়েদ, ইয়াকুত
৩. ল্যাপল্যান্ডে স্যাপ, ফিনল্যান্ড কিন উপজাতির মানুষ বসবাস করে।
তীব্র শীতে কৃষিকাজ হয় না, তাই এখানকার অধিবাসীরা যাযাবর জীবনযাপন করে। শীতকালে একরকম গোলাকার বরফের ঘরে (ইগলু) বাস করে। গ্রীষ্মকালে বরফ গলে গেলে সিলমাছের চামড়ায় তৈরি তাবুতে (টিউালিক) ক্যারিবু বাস করে। যাতায়াতের জন্য বরফের ওপর চাকাহীন শ্লেজগাড়ি আর জলে সিল মাছের চামড়ায় তৈরি কায়াক নৌকা ব্যবহার করে। পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক আর হাড় দিয়ে শিকারের বর্শা, সূচ তৈরি করে। খাদ্যের জন্য সিল, ভালুক, বলগা হরিণ, মেরু শিয়াল শিকার করে, সমুদ্রের মাছ ধরে। হরিণের দুধ, বেরি ফল এদের প্রিয় খাদ্য।
তুন্দ্রা অঞ্চলের সাম্প্রতিক পরিবর্তন
বর্তমানে এই অঞ্চলে বেশকিছু খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে যেমন স্পিটস্বার্গে কয়লা, সুইডেনের কিরুনা অঞ্চলে আকরিক লোহা, ইউক্রেন ও আলাস্কায় সোনা, খনিজ তেল। ফলে বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে। রেলপথ ও জলপথে এই অঞ্চলের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ বাড়ছে। সাইবেরিয়ার মারমিনস্ক বন্দর থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হয়েছে। উত্তর আমেরিকার আলাস্কা হাইওয়ে তুন্দ্রা অঞ্চলকে অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কিছু অঞ্চলকে বরফমুক্ত করে অথবা গ্রিনহাউসে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষবাস করা হচ্ছে। অধিবাসীরা পশুর লোম, চামড়ার বিনিময়ে চা, কফি, তামাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করছে।
বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রভূত উন্নতি ঘটছে এবং অধিবাসীরাও ধীরে ধীরে আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।