একাদশী তালিকা ২০২৩ PDF ডাউনলোড || Ekadashi in 2023 List Download
কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসারদুঃখ।।
শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে ঝড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণ আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন।
ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্টি প্রকার ভক্ত্যাগের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বোত্তম।
শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভত্যাগরূপে একা শীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেরই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগিতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে।
একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য ও শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যেকোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। সঙ্কটজনক অবস্থা বা জন্মমৃত্যুর অশৌচে কখনও একাদশী পরিত্যাগ করতে নেই। একাদশীতে শ্রাদ্ধ উপস্থিত হলে সেইদিন না করে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা উচিত। শুধু বৈষ্ণবেরাই নয়, শিবের উপাসক, সূর্য-চন্দ্ৰ ইন্দ্ৰাদি যেকোন দেবোপাসক, সকলেরই কর্তব্য একাদশী ব্রত পালন করা।
দুর্লভ মানবজীবন লাভ করেও এই ব্রত অনুষ্ঠান না করলে বহু দুঃখে-কষ্টে চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয়। অহংকারবশত একাদশী ব্রত ত্যাগ করলে অশেষ যমযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। যে ব্যক্তি এই ব্রতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, জীবিত হয়েও সে মৃতের সমান।
কেউ যদি বলে “একাদশী পালনের দরকারটা কি?” সে নিশ্চয় কুম্ভিপাক নরকের যাত্রী। যারা একাদশী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শনির কোপে তারা বিনষ্ট হয়। একাদশীকে উপেক্ষা করে তীর্থ স্নান আদি অন্য ব্রত পালনকারীর অবস্থা গাছের গোড়া কেটে পাতায় জল দানের মতোই।
একাদশী বাদ দিয়ে যারা দেহধর্মে অধিক আগ্রহ দেখায়, ধর্মের নামে পাপরাশিতে তাদের উদর পূর্ণ হয়। কলহ-বিবাদের কারণেও একাদশী দিনে উপবাস করলে অজ্ঞাত সুকৃতি সঞ্চিত হয়। পুণ্যপ্রদায়িনী সর্বশ্রেষ্ঠ এই ব্রত শ্রীহরির অতি প্রিয়।
একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয়, পাশ্বমেধ, রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞদ্বারাও তা হয় না। দেবরাজ ইন্দ্রও থোবিধি একাদশী পালনকারীকে সম্মান করেন। একাদশী ব্রতে ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। অনাহারে থেকে হরিনাম, হরিকথা রাত্রিজাগরণে একাদশী পালন করা কর্তব্য। কেউ যদি একাদশী ব্রতে শুধু উপবাস করে তাতে বহু ফল পাওয়া যায়। শুদ্ধ ভক্তেরা এই দিনে একাদশ ইন্দ্রিয়কে শ্রীকৃষ্ণে সমর্পণ করেন।
একাদশীতে শস্যমধ্যে সমস্ত পাপ অবস্থান করে। তাই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি, সরিষা আদি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য একাদশী দিনে বর্জন করা উচিত। নির্জলা উপবাসে অসমর্থ ব্যক্তি জল, দুধ, ফল-মূল এমনকি আলু, পেঁপে, কলা, ঘিয়ে বা বাদাম তেল অথবা সূর্যমুখী তেলে রান্না অনুকল্প প্রসাদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন। রবিশস্য (ধান, গম, ভুট্টা, ডাল ও সরিষা) ও সোয়াবিন তেল অবশ্যই বর্জনীয়।
দশমী বিদ্ধা একাদশীর দিন বাদ দিয়ে দ্বাদশী বিদ্ধা একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। একাদশীতে সূর্যোদয়ের পূর্বে বা সুর্যোদয়কালে (১ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে) যদি দশমী স্পর্শ হয়, তাকে দশমী বিদ্ধা বলে জেনে পরদিন একাদশীব্রত পালন করতে হয়। মহাদ্বাদশীর আগমন হলে একাদশীর উপবাস ব্রতটি মহাদ্বাদশীতেই করতে হয়।
একাদশী ব্রত করে পরের দিন উপযুক্ত সময়ে শস্যজাতীয় প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করতে হয়। শাস্ত্রবিধি না মেনে নিজের মনগড়া একাদশী ব্রত করলে কোন ফল লাভ হয় না। দৈববশত যদি কখনও একাদশী ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে ক্ষমা ভিক্ষা করে পুনরায় ব্রত পালন করতে হয়।
গঙ্গাস্নানে যেমন সবার অধিকার আছে তেমনি একাদশী ব্রতের অধিকারীও সকলেই। শাস্ত্রে বিধবা, সধবা সকলের জন্যই একাদশী ব্রত পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা সধবার একাদশী পছন্দ করেন না, শাস্ত্রে তাদের বিষ্ণুদ্রোহী বলা হয়েছে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই একাদশী ব্রত পালনের প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রীল জীব গোস্বামী তার ‘ভক্তিসন্দর্ভে’ ‘স্কন্দপুরাণ’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন “যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে, সে তার পিতা-মাতা, ভাই ও গুরুহত্যাকারী। সে যদি বৈকুণ্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার পতন হয়।
একাদশীর দিন ভগবানের জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয়, এমনকি অন্ন-ডালও। কিন্তু সেই অন্নপ্রসাদ সেইদিন গ্রহণ করা উচিত নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। ‘শ্রীপুরীধামে জগন্নাথের অন্নপ্রসাদ গ্রহণে দোষ নেই’ -এই ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই একাদশীতে নিঃসঙ্কোচে অন্ন প্রসাদ গ্রহণ করেন। এটি সম্পূর্ণ শাস্ত্রবিরুদ্ধ বিচার।
একাদশীতে উপবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেবল অনাহারে উপবাস করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে গোবিন্দ বা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অধিক শ্রদ্ধা ও প্রেমপরায়ণ হওয়া।
‘উপ’ মানে নিকটে, ‘বাস’ মানে অবস্থান করা অর্থাৎ শ্রীহরির নিকটে অবস্থান করা। একাদশীর দিন উপবাস করার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, শারীরিক আবশ্যকতাগুলি খর্ব করে ভগবানের মহিমা কীর্তন এবং অন্যভাবে ভগবানের সেবা করে সময়ের সদ্ব্যবহার করা।
ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপানি বর্জনীয়।
এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়। এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রত্নপান ভক্তদের একাদশীতে পঁচিশ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ।
একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এসকল কথা বর্ণিত আছে।
বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে- উৎপন্না, মোক্ষদা, সফলা, পুত্রদা, ষটতিলা, জয়া, বিজয়া, আমলকী, পাপমোচনী, কামনা, বরুথিনী, মোহিনী, অপরা, নির্জলা, যোগিনী, শয়ন, কামিকা, পবিত্রা, অন্নদা, পরিবর্তিনী বা পার্থ, ইন্দিরা, পাশাঙ্কুশা, রমা এবং উত্থান। কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়।
যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।
তারিখ | বার | একাদশী | পারণের সময়সূচি |
---|---|---|---|
২ জানুয়ারী, ২০২৩ | সোমবার | পুত্রদা একাদশী | ০৬:৪১-১০:১৬ |
১৮ জানুয়ারী, ২০২৩ | বুধবার | ষটতিলা একাদশী | ০৬:৪৩-১০:২০ |
১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ | বুধবার | ভৈমি একাদশী | ০৬:৩৯-১০:২১ |
১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ | শুক্রবার | বিজয়া একাদশী | ০৬:৩০-১০:১৮ |
৩ মার্চ, ২০২৩ | শুক্রবার | আমলকী একাদশী | ০৬:১৮-১০:১৩ |
১৮ মার্চ, ২০২৩ | শনিবার | পাপমোচনী একাদশী | ০৬:০৪-০৮:৩৭ |
২ এপ্রিল, ২০২৩ | রবিবার | কামদা একাদশী | ০৫:৪৯-০৬:৫৪ |
১৬ এপ্রিল, ২০২৩ | রবিবার | বরুথিনী একাদশী | ০৫:৩৬-০৯:৫১ |
১ মে, ২০২৩ | সোমবার | মোহিনী একাদশী | ০৫:২৪-০৯:৪৫ |
১৫ মে, ২০২৩ | সোমবার | অপরা একাদশী | ০৭:১১-০৯:৪২ |
৩১ মে, ২০২৩ | বুধবার | পান্ডবা নির্জলা একাদশী | ০৫:১১-০৯:৪১ |
১৪ জুন, ২০২৩ | বুধবার | যোগিনী একাদশী | ০৫:১১-০৯:০২ |
৩০ জুন, ২০২৩ | শুক্রবার | শয়ন একাদশী | ০৫:১৫-০৯:৪৬ |
১৩ জুলাই, ২০২৩ | বৃহস্পতিবার | কামিকা একাদশী | ০৫:২০-০৯:৪৯ |
২৯ জুলাই, ২০২৩ | শনিবার | পদ্মিনী একাদশী | ০৫:২৭-০৯:৫২ |
১২ আগস্ট, ২০২৩ | শনিবার | পরমা একাদশী | ০৫:৩৩-০৯:৫৩ |
২৭ আগস্ট, ২০২৩ | রবিবার | পবিত্রারোপণ একাদশী | ০৫:৩৯-০৯:৫৩ |
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | সোমবার | অন্নদা একাদশী | ০৫:৪৪-০৯:৫১ |
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | মঙ্গলবার | পার্শ্ব একাদশী | ০৫:৪৮-০৯-৪৯ |
১০ অক্টোবর, ২০২৩ | মঙ্গলবার | ইন্দিরা একাদশী | ০৫:৫৪-০৯-৪৮ |
২৫ অক্টোবর, ২০২৩ | বুধবার | পাশাঙ্কুশা একাদশী | ০৬:০১-০৯:৪৮ |
৯ নভেম্বর, ২০২৩ | বৃহস্পতিবার | রমা একাদশী | ০৬:০৯-০৯:৫১ |
২৩ নভেম্বর, ২০২৩ | বৃহস্পতিবার | উত্থান একাদশী | ০৬:১৯-০৯:৫৬ |
৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ | শনিবার | উৎপন্না একাদশী | ০৬:৩০-০৭:৪৩ |
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ | শনিবার | মোক্ষদা একাদশী | ০৬:৩৮-১০:০৪ |
2023 সালের একাদশী তালিকার PDF ডাউনলোড করতে চাইলে নিচের ক্লিক করুন।