Ads Area


ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব কী ছিল?

ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব - সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব বা ভারতের অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন‍্য খুবই হেল্পফুল হবে।

ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব কী ছিল?

ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব কী ছিল? (What was the impact of the First World War on the Indian Economy?)


উত্তর-

বিংশ শতকে বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছর পরিচালিত এই যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই কোনো-না-কোনো ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ভারতবর্ষ সরাসরি এই যুদ্ধের অংশীদার ছিল না। তবে প্রথম মহাযুদ্ধের অন্যতম ছিল ইংল্যান্ড। সেই মুহূর্তে ভারতের উপর ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক আধিপত্য কায়েম ছিল। তাই ভারতবর্ষ ও ভারতবাসী পরোক্ষে এই সর্বনাশা যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিল। যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল ইংল্যান্ড ও তার সহযোগী দেশগুলি। কিন্তু ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের উপর এই যুদ্ধের প্রভাব ছিল পুরোপুরি নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল মূলত সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির অশুভ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ফল। উনিশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের অনেকগুলি দেশ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। এদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ছিল একচেটিয়া পুঁজিপতি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া। এজন্য তারা নিরন্তর প্রতিযোগিতা ও বাজার দখলের লড়াইয়ে মত ছিল। পুঁজিপতি রাষ্ট্রবর্গের এই লড়াইয়ের কেন্দ্র ছিল অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলি। নিজ নিজ অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সকল পুঁজিবাদী দেশ এককভাবে কিংবা জোটবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অনুন্নত বা উন্নতিশীল দেশগুলির উপর। স্বভাবতই এহেন রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী যুদ্ধের অশুভ প্রভাব থেকে ইংল্যান্ডের অন্যতম উপনিবেশ ভারতবর্ষ মুক্ত থাকতে পারেনি।

নেতিবাচক প্রভাব:


ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ছিল। সম্পূর্ণ রূপেই নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক। যুদ্ধের বিপুল ব্যয়, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বুদ্ধি, শিল্প-বাণিজ্যে অভূতপূর্ব মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু মানুষের জীবনহানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ইত্যাদির অভিঘাতে ভারতীয় অর্থনীতি প্রায় পঙ্গুত্বের পর্যায়ে উপনীত হয়। ভারতের মানবসম্পদ এবং বস্তুসম্পদ উভয় ক্ষেত্রেই এই যুদ্ধ সর্বনাশা প্রভাব ফেলে। যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় যুবকদের সৈনিকের বৃত্তি গ্রহণে প্ররোচিত করে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বহু যুবককে সেনাবাহিনীতে গ্রহণ করা হয়। ভারত- সচিব ই. এইচ. মন্টেগু (E. H. Montagu)-র এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই সময় ভারত থেকে মোট ১১ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৯ জনকে সৈনিকের বৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। শুধু পাঞ্জাব থেকে সংগৃহীত হয়েছিল পাঁচ লক্ষাধিক সেনা। এদের মধ্যে প্রায় দশ শতাংশ মানুষ যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল।

যুদ্ধ পরিচালনায় অযোগ্যতা বা ভ্রান্তির কারণেই প্রাণ গিয়েছিল অনেকের। মেসোপটেমিয়ার ক্ষেত্রে পরিচালনগত ব্যর্থতার জন্যই ভারতীয় সেনারা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। আবার সোমের যুদ্ধে (ফ্রান্স) মিত্রপক্ষের বিপর্যয় অনিবার্য জেনেও ভারতীয় সেনাদের সেখানে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধে যোগদান ইচ্ছামূলক ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক করতে দ্বিধা করেনি। যেমন পাঞ্জাবের সামরিক শাসক মাইকেল ও ডায়ার পাঞ্জাবে আইনের সুযোগ নিয়ে জোর করেই ভারতীয় যুবকদের সেনাবাহিনীতে সংগ্রহ করেছিলেন।

যুদ্ধের পর ভারতীয় সৈনিকেরা শূন্য হাতেই কর্মচ্যুত অবস্থায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিল। ভারতবাসীর এই আত্মত্যাগের একমাত্র লক্ষ্য ছিল স্বায়ত্তশাসনের অধিকার অর্জন করা। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে সেই প্রতিশ্রুত শাসনাধিকার দেয়নি কিংবা যুদ্ধে নিযুক্ত সৈনিকদের অবসরকালীন কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়নি।

যুদ্ধকর আরোপ:


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হবার পর ভারতে ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শোষণ ভয়ংকর রূপ নেয়। যুদ্ধের বায়নির্বাহের জন্য ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সম্পদ শুষে নিতে শুরু করে। ভারত থেকে প্রায় ১২৭ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল। সামরিক খাতে ব্যয়বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৩০০ শতাংশ। ফলে জাতীয় ঋণের পরিমাণ বেড়েছিল প্রায় ৩০ শতাংশ। যুদ্ধের খরচ মেটাতে ভারতীয়দের উপর অস্বাভাবিক করের বোঝা চাপানো হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর বাড়ানো হয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। যুদ্ধের আগে মোট রাজস্বের মাত্র ২ শতাংশ আয়কর থেকে সংগৃহীত হত। কিন্তু যুদ্ধের পর এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ১১.৭৫ শতাংশ। ধনী-গরিব সবার উপরেই চাপানো হয়েছিল 'যুদ্ধকর'। কৃষকদের উপর নিয়মিত রাজস্বের উপর অতিরিক্ত কর (উপ-কর) চাপিয়ে রাজকোষে অতিরিক্ত অর্থাগমের পথ তৈরি করেছিল সাম্রাজ্যবাদী সরকার।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি:


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাতে এবং উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার দাপটে যুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলিতে ভারতে অস্বাভাবিক হারে মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছিল। সরকার কাগজী মুদ্রা ছাপিয়ে অর্থসংকট মেটাতে চেষ্টা করলে অনিবার্যভাবে মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়ে সারা দেশ। যুদ্ধের অস্থিরতার সুযোগ ফাটকাবাজি ও মজুতদারি বেড়েছিল লাগামছাড়া হারে। এ সবের পরিণাম ছিল অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। বহু পণ্যের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ছিল ১০০ শতাংশ। ড. জুডিথ ব্রাউন (Judith Brown) তাঁর “Gandhi's Rise to Power" শীর্ষক গ্রন্থে মূল্যসূচক বৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা থেকে এই বক্তব্য সমর্থিত হয়।

১৮৭৩ সালের মূল্যসূচক ১০০ ধরে যুদ্ধ শুরুর বছরে (১৯১৪ খ্রিঃ) এই হার ছিল ১৪৭। যুদ্ধের শেষ বছরে অর্থাৎ ১৯১৮-তে তা বেড়ে হয়েছিল ২২৫। যুদ্ধোত্তর দু'বছরে (১৯২০ খ্রিঃ) তা আরও বেড়ে হয়েছিল ২৮১। ব্রিটিশ সরকার ভারতের শিল্পজাত পণ্যগুলিতে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিল। ভারতের পাট, তুলা ও পশম শিল্পগুলি যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যাপক উৎপাদন চালাতে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে ব্রিটেন তার নিজের প্রয়োজনে ভারত থেকে অনেক কম দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ব্রিটেন রপ্তানি করেছিল।

কৃষি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি:


কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া ছিল ঠিক উল্টো। শিল্পজাত পণ্যাদির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও, কৃষিজাত পণ্যের মূল্য আনুপাতিক হারে বাড়েনি। পাট, তুলা, তৈলবীজ ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ায় কৃষকদের প্রবল অর্থ সংকটের মুখে পড়তে হয়। ভূস্বামী ও বণিকেরা এই সময় ব্যাপক হারে কৃষক শোষণ চালাতে থাকে। সাধারণ প্রয়োজনের দ্রব্য লবণ, কেরোসিন, কাপড় ইত্যাদি সংগ্রহ করাও কৃষকদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

১৯১৪-তে সাধারণ চাল ও গমের মূল্যমান ছিল যথাক্রমে ১৭২ ও ১৬৬। কিন্তু ১৯১৮-তে তা বেড়ে হয়েছিল যথাক্রমে ২৩৩ ও ২৫৯। সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য বাজরার মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল প্রায়। ১০০ শতাংশ। ১৯১৪-তে বাজরার মূল্যমান ছিল ২২০। মাত্র চার বছরে ১৯১৮-তে তা বেড়ে হয়েছিল ৪১০। সাধারণ মানুষের গড় আয় ও ব্যয়ের তুলনামূলক বিচার। করলে কৃষিজীবী ভূমিহীন মানুষদের দুরবস্থায় চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অধ্যাপক রবীন্দ্রকুমার Essays on Gandhian Politics' গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, ১৯১৪-তে লাহোরে একজন সাধারণ মুসলিম কারিগরের গড় মাসিক আয় ছিল ৫০ টাকা, আর ব্যয় ছিল ৪৭ টাকা ৮ আনা। ১৯১৮-তে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৮ টাকা ৬ পাই। ফলে যুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ ভারতের সাধারণ কারিগর বা কৃষকদের অভাব, অনটন ও অনাহার অবশ্যম্ভাবী হয়েছিল।

সহায়ক শিল্পনীতি:


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে সাময়িকভাবে ভারতের শিল্পায়নে গতি আসে এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। স্বদেশি বয়কট আন্দোলনের ফলে ভারতীয় শিল্পে যে পুনরুজ্জীবন এসেছিল, তা স্থায়ী হয়নি। স্বদেশি- বয়কট আন্দোলন শিথিল হলে ভারতের শিল্পায়নের গতিও স্তব্ধ হয়ে যায়। বিশ্ব- পুঁজিবাদী অর্থনীতির সাথে অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় শিল্পপতিরা পিছিয়ে পড়েন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সাময়িকভাবে হলেও ভারতীয় শিল্পকে এরূপ সংকট থেকে মুক্ত করেছিল। বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পে প্রস্তুত পণ্যের আমদানি দারুণভাবে হ্রাস পায়। ভারতীয় শিল্পজাত পণ্যদ্রব্যের বাজার উন্মুক্ত হয়। ভারতীয় শিল্পপতিরা অভ্যন্তরীণ বাজার দখলের সহজ সুযোগ পান। যুদ্ধসামগ্রী ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব পেয়ে ভারতীয় শিল্পের বিকাশ সহজ হয়।

ব্রিটিশ সরকারও যুদ্ধকালে অনুকূল শিল্পনীতি গ্রহণ করায় এই বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছিল। অবশ্য ব্রিটিশ সরকার পরিস্থিতির চাপে পড়েই ভারতীয় শিল্পের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছিল। ব্রিটেনের কারখানাগুলি যুদ্ধের প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে ভারতীয় বাজার থেকে দৃষ্টি সরাতে বাধ্য হয়েছিল। এই সুযোগে ভারতের বাজার দখল করার লক্ষ্যে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঝাঁপ দিয়েছিল। তখন ব্রিটিশ সরকার ভারতের বাজার হাতছাড়া হবার ভয়ে ভারতীয় শিল্পপতিদের নানাভাবে উৎসাহিত করার নীতি নেয়। ভারতে ভারী শিল্প গড়ে তোলার ওপর ব্রিটিশ সরকার জোর দেয়। ভারতে শিল্পায়নের সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য সরকার ১৯১৬-তে ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিশন' গঠন করে। এই কমিশন ভারতীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা শিল্পক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের উপর জোর দেয়। এই সময় টাটার লৌহ ও ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণ ছিল লক্ষণীয়।

সংরক্ষণ নীতি:


বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় মধ্যবিত্ত ও পুঁজিপতিদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার সংরক্ষণমূলক শুল্কনীতি গ্রহণ করেছিল। ভারতীয় শিল্প-বিকাশের ক্ষেত্রে এটি ছিল আবশ্যিক শর্ত। যুদ্ধকালে আমদানি শুল্কের হার ৩.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। ১৯২১-এ এই হার আরও বাড়িয়ে করা হয় ১১ শতাংশ। এই সহায়ক শুল্কনীতির ফলে ভারতে বস্ত্রের আমদানি কমতে থাকে এবং ভারতীয় উৎপাদন বৃহত্তর বাজার খুঁজে পায়। একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, যুদ্ধের আগে ভারতের বস্ত্র-বাজারের ৭০ ভাগ ব্রিটেনের দখলে ছিল। ৬ ভাগ দখল করেছিল অন্যান্য বিদেশি রাষ্ট্র। ভারতীয় বস্ত্রের দখলে ছিল চাহিদার ২৪ ভাগ মাত্র। সংরক্ষণবাদী শুল্কনীতির ফলে ভারতীয় বস্ত্রের দখলে আসে চাহিদার ৬১ ভাগ।

ব্রিটেন থেকে আমদানি কমে যায় ৬৫ ভাগ। আমেদাবাদ, সুরাট প্রভৃতি স্থানে বস্ত্রশিল্পে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটে। কেউ কেউ মনে করেন, ব্রিটিশ সরকার আদর্শগত কারণে এই সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে ড. বিনয়ভূষণ চৌধুরী মনে করেন, কোনো আদর্শগত কারণে নয়, নিছক পরিস্থিতির চাপে পড়েই ব্রিটিশ সরকার এই নীতি নিয়েছিল। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর 'Financial Foundation of the British Raj' গ্রন্থে এই মত সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে, ব্রিটিশের শুল্কনীতি ছিল সাময়িক ও ব্রিটিশ স্বার্থের দূরবর্তী রক্ষাকবচ হিসেবে প্রণীত।

অবশ্য সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতীয় শিল্পের বিকাশ সুচারুভাবে ঘটেনি। মার্কসবাদী লেখক রজনী পাম দত্তের মতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন শিল্পে উড়ানের ফলে ভারতীয় কুটিরশিল্প তার ক্ষেত্র থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। অথচ বৃহত্তর শিল্প তার অগ্রগতি ধরে রাখতে পারেনি। এর মূলে ছিল ব্রিটিশের সৃষ্ট অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি। যেমন- জাহাজ ও রেল পরিবহণের অভাব, উপযুক্ত কাঁচামালের অভাব, শ্রমজীবীশ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার স্বল্পতা ইত্যাদি।

শ্রমিক অসন্তোষ:


বিশ্বযুদ্ধকালে ভারতে শিল্পায়নের ফলে শ্রমিকশ্রেণির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯১১-তে ভারতে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২২ লক্ষের কাছাকাছি। পরবর্তী দশ বছরে তো বেড়ে হয়েছিল প্রায় ২৭ লক্ষ। কিন্তু শ্রমিকদের আর্থিক বা সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। যুদ্ধের অভিঘাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ বেড়েছিল। কিন্তু বহু দাবিদাওয়ার পরে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। পরন্তু যুদ্ধান্তে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার জেরে ব্যাপক হারে শ্রমিক ছাঁটাই ঘটেছিল। এমতাবস্থায় ভারতে 'শ্রমিক আন্দোলন' দানা বাঁধতে থাকে এবং ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন' সংগঠিত রূপ নিতে থাকে।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area