বারো ভূঁইয়া কারা ছিলেন - সুপ্রিয় পাঠকগন আমাদের এই নতুন পোষ্টে স্বাগতম, এই পর্বটিতে বারো ভূঁইয়া কারা ছিলেন বা বারো ভূঁইয়া কাদের বলা হয় সম্পর্কে নিঁখুত ভাবে আলোচনা করেছি, যা আপনাদের জন্য খুবই হেল্পফুল হবে।
বারো ভূঁইয়া কারা ছিলেন? (What were the Twelve Bhuiyas ?)
বাংলাদেশের ইতিহাসে 'বারো ভূঁইয়া' নামটি দেশপ্রেম, বীরত্ব ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়ে থাকে। বারো ভূঁইয়া' কথার অর্থ বারো জন ভূম্যধিকারী বা জমিদার। জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন স্বাধীনচেতা জমিদারের উত্থান ঘটেছিল, যাঁরা মুঘলদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। তবে 'বারো ভূঁইয়া' কথাটি কীভাবে এসেছে বা এর দ্বারা নির্দিষ্ট কোন বারোজন ভূম্যধিকারীর কথা বলা হয়েছে, তা আজও স্পষ্ট নয়। কারণ আলোচ্য সময়ে বারোজনের বেশি জমিদারের সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁরা মুঘলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
যাই হোক, স্বাধীনচেতা ও মুঘলবিরোধী জমিদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সোনার গাঁও-এর ঈশা খ তাঁর পুত্র মুসা খাঁ, শ্রীপুর-এর কেদার রায়, যশোহর-খুলনার প্রতাপাদিত্য, ময়মনসিংহের উসমান খাঁ, বাকলা'র রামচন্দ্র প্রমুখ।
জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ভূঁইয়াদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও, তা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বস্তুত বাংলার সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগ বাংলাদেশে বেশ কিছু বড়ো জমিদার স্বাধীন হয়ে উঠেন। এদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান- উভয়েই ছিল। এদের দমন করার ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই বাংলার সুলতানদের ছিল না। দাউদ করনানি র পতনের পর বাংলাদেশ আইনত মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও, বাস্তবে মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লেগেছিল। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল এইসব স্বাধীনচেতা জমিদারেরা। এঁরা নিজ নিজ এলাকায় একধরনের স্বাধীন রাজত্ব শুরু করে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ যুদ্ধের পর আকবরের আমলে এই ভূঁইয়াদের অবসান ঘটেছিল।
ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের অবদান প্রসঙ্গে আধুনিক গবেষকগণ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। অতীতে প্রতাপাদিত্যকে শিবাজীর সমতুল্য ভেবে স্মরণ করা হত। কিন্তু আধুনিক গবেষকদের মতে, 'বারো ভূঁইয়াদের কীর্তিকলাপকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন জমিদারি ভোগ করা ছাড়া এঁদের কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছিল না। দেশপ্রেম বা বাংলার স্বাধীনতার চিন্তা এঁরা করেননি। এ কাহিনি প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। শাসক হিসেবে এঁরা প্রজাহিতৈষী ছিলেন- এমন কথাও বলা যায় না। প্রতাপাদিত্যের নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাংলা উপন্যাসও রচিত হয়েছে। এঁদের প্রতিরোধ কোনো রকম গণসমর্থন ছিল না। এমনকি এঁদের নিজেদের মধ্যেও কোনো প্রকার ঐক্য, সহযোগিতা বা সংহতি ছিল না। ফলে এঁদের প্রতিরোধ ছিল বিক্ষিপ্ত ও দুর্বল।