অসুখী একজন
(পাবলো নেরুদা)
প্রিয় মাধ্যমিক শিক্ষাথীর্র,
আজ আমরা তোমাদের জন্য দশম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য বই থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দিতে চলেছি, কবি পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতা থেকে রয়েছে , আগত টেস্ট ও ফাইনাল পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সাহায্য করবে। তাই আর দেরি না করে নিচের দেওয়া প্রশ্ন উত্তর গুলো ভালো করে দেখে নাও। আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে।
দশম শ্রেণীর বাংলা || অসুখী একজন (পাবলো নেরুদা) প্রশ্ন ও উত্তর || Asukhi Ekajana Questions Answers class-10
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
১) 'অসুখী একজন' কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর: 'অসুখী' একজন' কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত প্রতিবাদী কবি এবং প্রেমের কবিতাতেও এক আশ্চর্য কণ্ঠস্বরের স্রষ্টা পাবলো নেরুদার লেখা।
২) তোমাদের পাঠ্য 'অসুখী একজন' কবিতাটি বাংলা ভাষায় কে তরজমা করেছেন?
উত্তর: আমাদের পাঠ্য 'অসুখী একজন' কবিতাটি বাংলা ভাষায় তরজমা করেছেন কবি নবারুণ ভট্টাচার্য।
৩) 'অসুখী একজন' কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম কী?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম 'The Unhappy One' |
৪) 'অসুখী একজন' কবিতাটি কোন্ অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: পাবলো নেরুদা রচিন 'অসুখী একজন' কবিতাটি কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে থেকে নেওয়া হয়েছে।
৫) 'অসুখী একজন' কবিতাটি পাবলো নেরুদার কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা?
উত্তর: 'অসুখী একজন কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার Extravagaria কাবগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা।
৬) 'Extravagaria' কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থটি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
৭) 'Extravagaria' কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি কোন্ সময়পর্বে রচিত?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত।
৮)'Extravagaria' কাব্যগ্রন্থে মোট ক-টি কবিতা রয়েছে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থে মোট ৬১টি কবিতা রয়েছে।
৯) কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল নির্দেশ করো।
উত্তর: চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল ১৯০৪- ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ।
১০) কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো।
১১) কবি পাবলো নেরুদা কত খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সুদত্য পুরস্কার লাভ করেন।
১২) "অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে..."-'অসুখী একজন' কবিতায় কথ ক কাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে কোথায় চলে গেলেন?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় কথক তাঁর প্রেয়সীকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে বহুদূরে চলে গেলেন।
১৩) "সে জানত না..." কার কী না জানার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশে প্রেয়সীর, কথক তাকে চিরতরে ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি না জানার কথা বলা হয়েছে।
১৪) "একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”-এই ব্যঞ্জনাটি কীভাবে কবিতায় উপস্থাপিত হয়েছে?
উত্তর: একটা কুকুর বা এক গির্জার নানের হেঁটে যাওয়ার তথ্য উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে যাওয়ার ব্যঞ্জনা গড়ে তোলা হয়েছে।
১৫) "বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল..." বৃষ্টি এসে কী ধুয়ে দিল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় বৃষ্টি এসে পথে পড়ে থাকা কথকের পায়ের দাগ ধুয়ে দিল।
১৬) "ঘাস জন্মালো রাস্তায়"-ব্যঞ্জনাটি কীসের?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় রাস্তায় ঘাস জন্মানোর কথা বলার মধ্যে দিয়ে পথে চলাচলের মানুষ যে আর নেই, সেই ব্যঞ্জনাটিকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৭)"নেমে এল তার মাথার ওপর।" 'মাথার ওপর' কী নেমে এল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় কথকের জন্য অপেক্ষারতা নারীর মাথার ওপর একটার পর একটা বছরের নেমে আসার কথা বলা হয়েছে।
১৮)'অসুখী একজন' কবিতায় বছরগুলো পাথরের মতো মাথার ওপর নেমে আসার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: কবিতায় প্রতীক্ষারতা রমণীটির দুঃসহ, দীর্ঘ, অনিঃশেষ অপেক্ষাকে মাথার ওপর ক্রমাগত নেমে আসা পাথরের গুরুভারের সঙ্গে তুলনা করে বছরগুলি অতিক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৯) "তারপর যুদ্ধ এল..."-'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ আসাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ আসাকে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২০) "শিশু আর বাড়িরা খুন হল।" কীভাবে শিশু আর বাড়িরা খুন হল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদার লেখা 'অসুখী একজন' কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধে শিশু আর গৃহস্থ মানুষেরা খুন হলেন।
২১) "সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।" কোন্ মেয়েটির মৃত্যু হল না?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় কালান্তক যুদ্ধে বহু শিশু ও গৃহস্থের মৃত্যু হলেও কথকের অপেক্ষায় থাকা মেয়েটির মৃত্যু হল না।
২২) "সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন..." কীভাবে সমন্ত সমতলে আগুন ধরে গেল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল।
২৩) "শান্ত হলুদ দেবতারা/যারা হাজার বছর ধরে...” কী করছিলেন?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবেছিলেন, যেন স্বপ্ন দেখছিলেন।
২৪) "উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে"-কী উলটে পড়ল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় হাজার বছর ধরে ধ্যানস্থ, স্বপ্নে বিভোর পাথুরে দেবতারা যুদ্ধের অভিঘাতে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়লেন।
২৫) "...তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” কোন্ স্বপ্ন তাঁরা আর দেখতে পারলেন না বলে তুমি মনে কর?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের বীভৎসতায় ভেঙে-পড়া 'প্রাণময়' দেবতারা শান্তি, মৈত্রী, অহিংসার স্বপ্ন আর দেখতে পারলেন না বলে আমার মনে হয়।
২৬) "সব চূর্ণ হয়ে গেল”- কীভাবে, কী চূর্ণ হয়ে গেল?
উত্তর: কবিতায় যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় কথকের ফেলে-আসা মিষ্টি বাড়ি,বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেল।
২৭) যেখানে ছিল শহর..."-সেখানে আজ কোন্ দৃশ্য?
উত্তর: যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধ-পরবর্তী ধ্বংসপরিকীর্ণ সেই শহরে আজ শুধু ছড়িয়ে আছে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা, রক্তের কালো দাগ।
২৮) "আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়”-কোন্ পরিস্থিতিতে মেয়েটি কথকের জন্য অপেক্ষা করেছে?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় মৃত্যুপরিকীর্ণ ধ্বংসস্তূপ আর অবিশ্বাসের মধ্যেও কথকের প্রেয়সী সেই মেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছে।
২৯)"আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”-এই ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তর: যুদ্ধক্ষেত্রের আহবান কবিকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। এই সময় গৃহসুখ, প্রিয়জনের সান্নিধ্য সবই অর্থহীন হয়ে যায়। বৃহত্তর জীবনের আহবান তুচ্ছ করে দেয় সাংসারিক বন্ধন। কবিকে চলে যেতে হয় দূরে। এই বিচ্ছেদের কথাই এখানে বাThe Unhappy Oneবজলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে কিছুই না জানিয়ে, তাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই বৃহত্তর জগতের আহবানে তাঁকে বেরিয়ে আসতে হয়।
৩০)"আমি চলে গেলাম দূর ... দূরে।" কে, কেন দূরে চলে গিয়েছিলেন?
উত্তর: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়জনকে ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন। মানুষ অনেক সময় কর্তব্যের খাতিরে, The Unhappy One দেশ ও দশের মুক্তির জন্য বিপ্লবের পথে পা বাড়ায়। তার ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা থাকে The Unhappy Oneনা। কেন-না, বিপ্লবের পথ, যুদ্ধের পথ সবসময় প্রত্যাবর্তনের পথ হয় না। এভাবেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে অথবা স্বদেশের মুক্তির লক্ষ্যে কবিও আত্মীয়পরিজন, প্রিয়জনের সান্নিধ্য ছেড়ে দূরে, অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন।
৩১) "একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গীর্জার এক নান”- প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ আলোচনা করো।
উত্তর: সংগ্রামী মানুষকে যুদ্ধজয়ের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যেতেই হয়। কিন্তু তার' জন্য অপেক্ষা করে থাকে তার প্রিয়তমা। বিপ্লবীর কাছে এইThe Unhappy One অপেক্ষা অর্থহীন। অপেক্ষারতা মেয়েটি তাইThe Unhappy Oneজানেও না যে বিপ্লবী মানুষটি আর কখনও ফিরে আসবে না। ফলে সময় বয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে কুকুর কিংবা গির্জার সন্ন্যাসিনীর হেঁটে যাওয়া বোঝায় যে জীবন তার স্বাভাবিক বিচিত্র গতিতে বয়ে যায়। অপেক্ষা চলতেই থাকে।
৩২)"বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”-কবি এ কথার মধ্যে দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: বৃহত্তর সমাজ ও পৃথিবীর দাবি কখনো-কখনো মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। অগ্নিগর্ভ ভয়ানক বিপ্লবের পথকেই সে তার পথ বলে মনে করে। তার স্মৃতি, চেনা পৃথিবী, প্রিয় মানুষেরা-সব কিছুকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যায় চূড়ান্ত সংগ্রামের লক্ষ্যে। সাংসারিক পৃথিবীতে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় মানুষটির স্মৃতি। প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
৩৩) "ঘাস জন্মালো রাস্তায়"-উদ্ধৃতিটি কোন্ তাৎপর্য বহন করে?
উত্তর: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় কথকের স্বদেশত্যাগের কথা বলতে গিয়ে উদ্ধৃত অংশটির অবতারণা করা হয়েছে।
কবিতার কথক তাঁর প্রিয়জনের সান্নিধ্য ত্যাগ করে পা বাড়িয়েছিলেন ঠিকানাবিহীন বিপ্লবের পথে। সেই পথে যারা যায় তাদের ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। কবিতার কথক যে পথ ধরে স্বদেশ-স্বজন ত্যাগ করেছি লেন সেই পথে আর ফিরে আসেননি। যুদ্ধ তাঁর ফেরার পথকে অবরুদ্ধ করেছিল। তাই তাঁর যাওয়ার পথে ঘাস জন্মেছিল।
৩৪) "নেমে এল তার মাথার ওপর।" কী নেমে এল? এই নেমে আসার তাৎপর্য কী?
উত্তর: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় অপেক্ষারত মেয়েটির মাথার ওপর অতিক্রান্ত বছরগুলো পাথরের মতো নেমে এল।
কবির কথামতো মেয়েটি দরজায় অপেক্ষা করতে থাকল দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। অথচ তিনি আর ফিরে এলেন না। প্রিয়জনকে হারিয়ে স্বজন-স্বদেশ অসুখী। তাই অতিক্রান্ত বছরগুলো ক্রমেই ভারী বলে অনুভূত হল। আর এই অনুভূতি চৈতন্য আচ্ছন্ন করেছিল বলে মনে হল তা যেন মাথার ওপর নেমে এসেছে।
৩৫) "সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।”-এই 'মৃত্যু' না হওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তর:বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ মানুষকে লড়াইয়ের লক্ষ্যে যেতেই হয়। এই যাওয়ার পথে সে তার সংসার, প্রিয়জন সব কিছুকেই পিছনে ফেলে যায়। কিন্তু এই কঠোর বাস্তবকে মানতে পারে না তার প্রিয়তমা মেয়েটি। প্রিয় মানুষটির জন্য তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। যুদ্ধ হয়, অজস্র ধ্বংস এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু মেয়েটির মৃত্যু ঘটে না। কারণ, তার ভালোবাসা চিরজীবী। তার কখনও মৃত্যু হয় না।
৩৬) "সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন।” কী কারণে সমতলে আগুন ধরে গেল? আগুন ধরে যাওয়ার ফলে কী হয়েছিল?
উত্তর: এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এল, আর তাতেই সমতলে আগুন ধরে গেল।
যুদ্ধের আগুন ধ্বংসাত্মক। তাই ভেঙে পড়ল মন্দির। টুকরো টুকরো হয়ে গেল শান্ত হলুদ দেবতাদের পাথরের মূর্তি। পুড়ে গেল স্বপ্নের ঘরবাড়ি, সাধের বাগান, গোলাপি গাছ, চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ। বলা যায় সবকিছুই চুরমার হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে। যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর কবন্ধ পাথরের মূর্তির মাথা।
৩৭) "তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।"-মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যুদ্ধ হলে সমাজের স্থিরতার অবসান ঘটে। যুদ্ধ হল রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো, যাতে শিশুমৃত্যু ঘটে, মানুষ নিরাশ্রয় হয়। সমতলে যেন আগুন ধরে যায়। এই অবস্থায় যে ঈশ্বরেরা হাজার বছর ধরে মন্দিরে ধ্যানমগ্ন ছিল তারাও ভেঙে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে। তাদের স্বপ্ন দেখা, বিশ্ববিধানকে নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদির শেষ হয়। এ আসলে ঈশ্বরের ভেঙে পড়া নয়, ঐশ্বরিকতার বা মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাসের ভেঙে পড়া।
৩৮)"সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে" কবির এ কথা বলার কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: বিপ্লবের পথ আসলে যুদ্ধের পথ। এ হল স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সমাজ পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ। তাই সাম্রাজ্যবাদী হোক বা শোষক শক্তি-প্রত্যাঘাত করে। সেই প্রবল লড়াইয়ে ভেঙে পড়ে সেই সুন্দর বাড়ি, যেখানে কবিতার বিপ্লবী মানুষটি একদিন থাকতেন, সেই বারান্দা যেখানে তিনি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমাতেন, কিংবা গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি। যুদ্ধের তাণ্ডবের অনিবার্যতায় সব কিছুই ভেঙে পড়ে, চূর্ণ হয়ে যায়।
৩৯)“রক্তের একটা কালো দাগ।”-বিষয়টি কোন্ তাৎপর্যকে বহন করে।
উত্তর: যে-কোনো যুদ্ধই আসলে ধ্বংসকে বহন করে আনে। জনজীবন বিনষ্ট হয়ে যায়। যেখানে একদিন শহর ছিল, সেখানে পড়ে থাকে শুধু কাঠকয়লা, যেন ধ্বংসস্তূপের সাক্ষ্য হয়ে। দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ইত্যাদি যেন ধ্বংসের চিহ্ন হয়ে থাকে। আর রক্তের কালো দাগ হত্যা, হিংসা, রক্তাক্ততার কাহিনিকে স্পষ্ট করে দেয়। সমাজে অত্যাচারী শাসক শক্তির নিজেকে রক্ষার তাগিদ এই রক্তপাত ঘটায়।
৪০) "যেখানে শহর ছিল”-শহরের কী পরিণতি হয়েছিল এবং কেন?
উত্তর: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতার প্রশ্নোদ্ভূত অংশে একটা শহরের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে। শান্ত সমাহিত পরিবেশে যুদ্ধ অস্থিরতা আর ধ্বংসকে আবাহন করে আনে। ঠিক তেমনই এক যুদ্ধে একটা শহর পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। চারিদিকে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। এভাবেই যুদ্ধের তাণ্ডবে আস্ত একটা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।
আরও পড়ুন-