আফ্রিকা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজ আমার নিয়ে চলে এসেছি একটি নতুন পোস্ট যা দশম শ্রেণীর বাংলা বই থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা আফ্রিকা থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর নিচের পোস্টে দিলাম, তোমাদের পরীক্ষায় জ্ন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে।
দশম শ্রেণীর বাংলা || আফ্রিকা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) প্রশ্ন ও উত্তর || Africa Questions And Answers Class-10
১) 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণের প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণের প্রকাশকাল ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ।
২) 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে 'আফ্রিকা' কবিতাটি ছিল কি?
উত্তর: পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের প্রথম সংস্করণে (প্রকাশ ২৫ বৈশাখ, ১৩৪৩) 'আফ্রিকা' কবিতাটি ছিল না।
৩) 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ ২৫ শ্রাবণ ১৩৪৫ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়।
৪) 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে ক-টি কবিতা সংযোজিত হয়?
উত্তর: পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে দুটি কবিতা সংযোজিত হয়। এর একটি হল 'আফ্রিকা'।
৫) 'পত্রপুট' কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে 'আফ্রিকা' কবিতাটি কত সংখ্যক কবিতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়? উত্তর: পরপুট কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে 'আফ্রিকা' কবিতাটি 'ষোলো' সংখ্যক কবিতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
৬) 'আফ্রিকা' কবিতাটি প্রথম কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়, চৈত্র, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে।
৭) রবীন্দ্রনাথের জীবনকালে 'আফ্রিকা' কবিতাটির ভিন্নতর পাঠ কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের জীবনকালে 'আফ্রিকা' কবিতার ভিন্নতর একটি পাঠ প্রকাশিত হয়েছিল কবিতা পত্রিকায়, আশ্বিন,১৩৪৪ সালে।
৮) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর 'আফ্রিকা' কবিতার আর একটি পাঠ কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর 'আফ্রিকা' কবিতার আর একটি পাঠ বিশ্বভারতী পত্রিকার শ্রাবণ-আশ্বিন ১৩৫১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।
৯) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কার অনুরোধে 'আফ্রিকা' কবিতাটি লেখেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি অমিয় চক্রবর্তীর অনুরোধে 'আফ্রিকা' কবিতাটি লেখেন।
১০) 'আফ্রিকা' কবিতাটি কোন্ সময়ের রচনা?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আফ্রিকা' শীর্ষক কবিতাটি ২৮ মাঘ, ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের (৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ) রচনা।
১১) উনিশ শতকের শেষভাগে কোন্ কোন্ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র এশিয়া ও আফ্রিকার বুকে নিজেদের উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল?
উত্তর: উনিশ শতকের শেষভাগে ইংল্যান্ডে, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া প্রভৃতি ইউরোপীয় রাষ্ট্র এশিয়া ও আফ্রিকার বুকে নিজেদের সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
১২) সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি কোন্ অজুহাতে এশিয়া ও আফ্রিকায় তাদের থাবা বাড়ায়?
উত্তর: অসভ্য জাতিকে সভ্য করার অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদী * শক্তিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকায় তাদের থাবা বাড়ায়, যার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল লুণ্ঠন ও উপনিবেশ বিস্তার।
১৩) "উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে..." 'আদিম যুগ' বলতে কোন্ সময়পর্বের কথা বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতায় 'আদিম যুগ' বলতে বিশ্বসৃষ্টির সূচনাপর্বের কথা বোঝানো হয়েছে।
১৪) "তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে..." কে কেন অধৈর্যে ঘন ঘন মাথা নাড়িয়েছেন?
উত্তর: বিশ্বস্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিপর্বের সূচনালগ্নে নিজের প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধবস্ত করছিলেন আর অধৈর্যে ঘন ঘন মাথা নাড়িয়েছিলেন।
১৫) "ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা"-কে আফ্রিকাকে কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?
উত্তর: আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে উত্তাল সমুদ্রের বাহু যেন প্রাচী ধরিত্রী অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্বদিকের দেশগুলির থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
১৬) আফ্রিকা মহাদেশ কোন্ কোন্ সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত?
উত্তর: 'আফ্রিকা' মহাদেশ প্রধানত আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর এবং তাদের বিভিন্ন উপসাগর দ্বারা বেষ্টিত।
১৭) 'কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে' আলো 'কৃপণ' কেন?
উত্তর: আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলে কঠিন কাঠযুক্ত অতিদীর্ঘ চিরহরিৎ বৃক্ষের নিবিড় অরণ্যভূমি। তা লতা ও আগাছাতেও পরিপূর্ণ। তাই সেখানে আলো 'কৃপণ'।
১৮) "সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি / সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য" - 'সেখানে' বলতে কোন্ জায়গার কথা বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: 'সেখানে' বলতে আফ্রিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলের নিবিড় অরণ্যভূমির কথা বোঝানো হয়েছে।
১৯) "চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত"-কে চিনছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে সংকলিত আলোচ্য অংশে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতকে চিনে নিচ্ছিল আফ্রিকা।
২০) জলস্থল-আকাশের সংকেতকে 'দুর্বোধ' বলা হয়েছে
কেন?
উত্তর: সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ প্রকৃতির কাছে নিত্যন্ত অসহায়। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল অনুধাবনের শক্তি বা অনুমানের ক্ষমতা তার নেই। তাই তা 'দুর্বোধ'।
২১) "প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল..."-'প্রকৃতির দৃষ্টি অতীত জাদু' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: 'প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু' বলতে মানুষের কাছে অচেনা প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা দিকগুলির কথা বলা হয়েছে যার রহস্য আদিম মানুষ তার বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে ভেদ করতে পারেনি।
২২) "বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে..."-কে 'ভীষণ'কে কীভাবে বিদ্রূপ করেছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে নবগঠিত আফ্রিকা মহাদেশ আপন প্রতিকূলতার ছদ্মবেশে প্রাকৃতিক ভয়ালতা ও ভীষণতাকে বিদ্রুপ করেছে।
২৩) "শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে..."-কে কীভাবে শঙ্কাকে হার মানাতে চেয়েছিল?
উত্তর: দুর্গম দুর্ভেদ্য আফ্রিকা মহাদেশ নিজেকে উগ্র করে তুলে তার বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়, বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলার প্রচণ্ড শব্দে শঙ্কাকে হার মানতে চেয়েছিল।
২৪) "... অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ/উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।"-কার মানবরূপ, কাদের কাছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল?
উত্তর: আলোচ্য অংশে আফ্রিকা মহাদেশের মানবরূপ যেন তার অরণ্য-আচ্ছাদিত 'কালো ঘোমটার নীচে' সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির কাঁছে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে অপরিচিত ছিল।
২৫) "গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে..."-তারা কী করল?
উত্তর: বিপুল বিশ্বের গর্বান্ধ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি লোহার হাতকড়ি দিয়ে আফ্রিকার মানুষদের কৌশলে শৃঙ্খলিত করল।
২৬) "নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা"-কীভাবে নির্লজ্জ অমানুষতা প্রকাশ পেল?
উত্তর: সাম্রাজ্যবিস্তারের লক্ষ্যে মানুষ মানুষকে শৃঙ্খলিত করেছে সভ্যতার বিকাশের অজুহাতে। তথাকথিত সভ্য মানুষের বর্বর লোভের মধ্যে দিয়েই তাদের নির্লজ্জ অমানুষতা প্রকাশ পেল।
২৭)"পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে..."- কীভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?
উত্তর: পৃথিবীর নানা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের উপনিবেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাধীন আফ্রিকার মানুষকে শৃঙ্খলিত করল। বর্বর, অমানুষিক অত্যাচার চালাল। এভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হল।
২৮) "চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে"- ইতিহাস অপমানিত কেন?
উত্তর: পরাধীনতার গ্লানিতে, মানুষের সম্মানহীনতায় আফ্রিকার ইতিহাস অপমানিত। সেই অপমানের চিহ্ন চিরস্থায়ী করে দিয়ে গেছে লোলুপ, হিংস্র বর্বর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি।
২৯) "তাদের পাড়ায় পাড়ায়..."-কাদের পাড়ায় কী ঘটছিল?
উত্তর: 'আফ্রিকা' যখন পরাধীন তখন সমুদ্রপারে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে পুজোর ঘণ্টা বাজছিল। শিশুরা মায়ের কোলে খেলা করছিল, কবিরা সুন্দরের আরাধনা করছিলেন।
৩০) "আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে/প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস/যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল-অনুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল"-উদ্ধৃতাংশে কোন্ রাজনৈতিক ঘটনার স্পর্শ রয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের প্রতি শ্বেতকায় তথাকথিত সভ্য মানুষের ও উদ্ধৃত রাষ্ট্রগুলির অত্যাচার ও উৎপীড়নের মতো রাজনৈতিক ঘটনার স্পর্শ রয়েছে।
৩১) "এসো যুগান্তের কবি..."-কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'যুগান্তের কবি'র কাছে কোন্ আহবান জানিয়েছেন?
উত্তর: “এসো যুগান্তের কবি"-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগান্তের কবিকে আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে 'আফ্রিকা' রূপ 'মানহারা মানবী'র পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।
৩২) "আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে"-সন্ধ্যাকাল আসন্ন কেন?
উত্তর: অশুভ ধ্বনিতে দিনের অন্তিমকাল ঘোষিত করেছে গুপ্ত গহবরের পশুরা, দিনের শেষে পশ্চিম দিগন্তও ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাসময়। সভ্যতার যেন ক্রান্তিকাল উপস্থিত। তাই সন্ধ্যাকাল আসন্ন।
৩৩) "সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী”-সভ্যতার শেষ 'পুণ্যবাণী'টি কী হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: উচ্চারণযোগ্য আফ্রিকা কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন যুগান্তের কবির কণ্ঠে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীটি হওয়া উচিত 'ক্ষমা করো'।
৩৪) "নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত।”-কে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিলেন? তাঁর এমন আচরণের কারণ কী?
উত্তর: এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, অর্থাৎ ঈশ্বর নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধবস্ত করছিলেন।
স্রষ্টা সৃষ্টি করেন আপন খেয়ালে। মনের মতো না হলে তিনি নিজেই নিজের সৃষ্টিকে ধ্বংস করেন এবং আবার গড়ে তোলেন। ভাঙাগড়ার খেলায় তাঁর সৃষ্টিলীলা চলতে থাকে। 'উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে' আফ্রিকা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও স্রষ্টা যেন সেই খেলায় মত্ত ছিলেন। যদিও কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট তত্ত্বের ব্যাখ্যায় একটি মহাদেশ থেকে টেক্টনিক প্লেন্সমূহের কম্পনে আফ্রিকাসহ বিভিন্ন মহাদেশের আলাদা হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত এখানে আছে।
৩৫) "তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে”- এই 'ঘন- ঘন মাথা নাড়া' কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্য বিশ্বসৃষ্টির ভৌগোলিক সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে। মহাদেশগুলোয় তটরেখার নানারকম সাদৃশ্যের নিরিখে এবং অন্যান্য প্রমাণের সাহায্যে আলফ্রেড ওয়েগেনার ১৯১৫ সালে বলেন যে, বহুকাল আগে সবগুলো মহাদেশ একত্রে একটিই মহাদেশ ছিল, কালের আবর্তে যা টেকটনিক প্লেস্টসমূহের নড়াচড়ায় আলাদা হয়ে যায়। এই তত্ত্বের নাম কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট তত্ত্ব। এভাবেই আফ্রিকান প্লেটেরও উদ্ভব হয়। রবীন্দ্রনাথ কাব্যিক ভঙ্গিতে এই ভৌগোলিক সত্যের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
৩৬)"বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়"- 'বনস্পতির নিবিড় পাহারা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশে আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় নিরক্ষীয় অঞ্চল হওয়ার জন্য ঘন অরণ্য রয়েছে। সেই নিবিড় অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলোও প্রবেশ করতে পারে না। প্রকৃতি যেন নিবিড়, নিশ্ছিদ্র পাহারায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে আফ্রিকাকে। এই ভৌগোলিক সত্যকেই রবীন্দ্রনাথ কাব্যিকভাবে তুলে ধরেছেন।
৩৭) "কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে"-'কৃপণ আলো' বলার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত 'আফ্রিকা' কবিতায় আফ্রিকা ভূখণ্ডের সৃষ্টিলগ্নের ইতিহাসটি বর্ণিত হয়েছে। রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচীন ধরিত্রীর বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেছিল অরণ্যসংকুল স্থানে। এমন এক ভৌগোলিক অবস্থানে আফ্রিকার জন্ম, যেখানে বেশিরভাগ স্থানই অরণ্যপরিবেষ্টিত। সূর্যের আলো সেই নিবিড় অরণ্য ভেদ করে সেখানে পৌঁছোতে পারে না। এই কারণেই আফ্রিকার অবস্থানের জায়গাটিকে কবি 'কৃপণ আলোর অন্তঃপুর' বলেছেন।
৩৮)"প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল, তোমার চেতনাতীত মনে।”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সৃষ্টির সূচনাপর্বে প্রকৃতির কোলে লালিত ছিল আফ্রিকা। বাইরের পৃথিবীর চোখের আড়ালে প্রকৃতি নিজের মতো গড়ে নিয়েছিল তাকে। একদিকে নিবিড় বনাঞ্চল, অন্যদিকে সাহারা, কালাহারির মতো মরুভূমি যেন আফ্রিকাকে লালন করেছে। ভয়ংকর বন্যজন্তু আর দুর্গম প্রকৃতিই যেন সেই উন্মেষপর্বে আফ্রিকাকে গড়ে তুলেছিল। সদ্য গড়ে-ওঠা এই মহাদেশ কবির ভাষায়, তখনও ছিল 'চেতনাতীত', অর্থাৎ তার নিজস্ব সংস্কৃতি বা জীবনধারা তখনও গড়ে ওঠেনি।
৩৯)'বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে।”-এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কেন সে ভীষণকে বিদ্রূপ করছিল?
উত্তর: এখানে সৃষ্টিলগ্নের আদিম আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে।
এক দুর্গম রহস্যময় স্থানে আফ্রিকার জন্ম হয়েছিল। অরণ্যবেষ্টিত এই আফ্রিকার চারিপাশের প্রকৃতি ছিল আরও দুর্বোধ্য এবং সংকেতপূর্ণ। প্রকৃতির এই দুর্বোধ্য ঐন্দ্রজালিক রহস্য আফ্রিকার চেতনাতীত মনে মন্ত্র জুগিয়ে চলেছিল। আর আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশে প্রকৃতির সেই ভীষণতাকে বিদ্রূপ করছিল। নিজের শঙ্কাকে হার মানাতেই ভীষণের বিরুদ্ধে সেও ভীষণ হয়ে উঠেছিল। প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতেই আফ্রিকা এই পথ বেছে নিয়েছিল।
৪০)"আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়"- | প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সভ্যতাসৃষ্টির প্রথম পর্বে আফ্রিকা বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজেকে পরিচিত করেছিল তার ভয়ংকর স্বরূপের মধ্য দিয়ে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাই একসময় তাকে রক্ষা করেছিল বহিঃশক্তির হাত থেকে। তার দুর্ভেদ্য অরণ্য ভেদ করে প্রবেশ করার অধিকার সূর্যরশ্মিরও ছিল না। বিরূপের ছদ্মবেশে আফ্রিকা যেন ভীষণ বহিঃপ্রকৃতিকে বিদ্রূপ করেছিল। নিজের ভয়কে সে জয় করেছিল বিভীষিকাকে আশ্রয় করে।
৪১) "অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ/উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে"-মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর: আদিম অরণ্য আর মরুভূমি অধ্যুষিত আফ্রিকা এক দীর্ঘ সময় ছিল বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগহীন। উন্নত পৃথিবী মুখ ফিরিয়ে থেকেছে আফ্রিকার থেকে। রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছেন 'ছায়াবৃতা', আর সাংবাদিক হেনরি স্ট্যানলি আফ্রিকা সম্পর্কে দিয়েছিলেন সেই বহুশ্রুত বিশেষণ 'dark continent' ইতিহাস প্রমাণ করে উনবিংশ শতাব্দীর আগে কোনো ইউরোপীয় শক্তি আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনের কথা ভাবেনি। আফ্রিকার সম্পদ এবং সংস্কৃতি এভাবেই উপেক্ষিত হয়েছিল সভ্য সমাজের দ্বারা।
৪২) "এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে/নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে।” মন্তব্যটির দ্বারা কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে?
উত্তর: সাধারণভাবে মনে হয়, আফ্রিকায় যে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ঘটেছিল তার অত্যাচারী স্বরূপকে তুলে ধরাই ছিল কবির লক্ষ্য। কিন্তু শুধু এটুকুই নয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় ইতিহাসের এক ধারাক্রমকে তুলে ধরেছেন, যা থেকে মনে হয় এখানে কবি পঞ্চম শতক থেকে প্রায় আধুনিক কাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল যে দাসব্যবস্থা সেদিকেও ইঙ্গিত করেছেন। 'এল মানুষ-ধরার দল'- এতে দাসব্যবস্থা ও দাস-মালিকদের অত্যাচারী স্বরূপের দিকেই ইঙ্গিত আছে।
৪৩) "গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।” কারা গর্বে অন্ধ? অরণ্য সূর্যহারা কেন?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক প্রভুদের কথাই এখানে বলা হয়েছে। তারা বর্ণকৌলীন্যে এবং ক্ষমতার গর্বে অন্ধ।
আদিম আফ্রিকার ভৌগোলিক অবস্থান ছিল দুর্গম, রহস্যময়। চারিদিকে ঘন বনস্পতি যেন আফ্রিকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। এতই ঘন অরণ্যসংকুল স্থানে আফ্রিকার অবস্থান ছিল যে, সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছোতে পারত না। চিরছায়ায় আফ্রিকা যেন কালো ঘোমটার নীচে তার মানবরূপকে ঢেকে রেখেছিল। এইজন্যই অরণ্যকে সূর্যহারা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-