অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান
জয় গোস্বামী
প্রিয় মাধ্যমিক শিক্ষাথীরা,
জীবিকা দিশারি ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা বইয়ে অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। এই কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর সমাধানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্য অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে।
দশম শ্রেণীর বাংলা || অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (জয় গোস্বামী) প্রশ্ন ও উত্তর || Ostrer Biruddhe Gan Questions Answers
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
১) কবি অস্ত্র নিয়ে কী করতে বলেছেন?
উত্তর: কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন এবং পায়ের কাছে রাখতে বলেছেন।
২) কবি গানকে কীভাবে ব্যবহার করেন?
উত্তর: কবি গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করে শরীরে পরে থাকেন।
৩) হাজার হাতে পায়ে কবি কী করেন?
উত্তর: হাজার হাতে পায়ে কবি এগিয়ে আসেন, উঠে দাঁড়ান।
৪) কবি বুলেট তাড়ান কীভাবে?
উত্তর: হাত নাড়িয়ে কবি বুলেট তাড়ান।
৫) কবি 'খড়কুটো' বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি 'খড়কটো' বলতে তাঁর জানা একটা দুটো গানের কথা বলেছেন।
৬) "মাথায় কত শকুন বা চিল”-শকুন এবং চিলেরা কীসের প্রতীক?
উত্তর: শকুন এবং চিলেরা হিংস্রতার এবং নৃশংসতার প্রতীক।
৭) গানের গায়ে কবি কী করেন?
উত্তর: গানের গায়ে কবি রক্ত মোছেন।
৮)"আমার শুধু একটা কোকিল”-কোকিলটি কী করে?
উত্তর: চারপাশের হিংস্রতার মধ্যে কোকিলটি সহস্র উপায়ে গান বাঁধে।
৯)"বর্ম খুলে দ্যাখো..." বর্ম খলুলে কী দেখা যায়?
উত্তর: বর্ম খুললে দেখা যায় গান দাঁড়িয়ে আছে ঋষিবালকের মতো।
১০) "গান দাঁড়াল ঋষিবালক"-ঋষিবালকের মাথায় কী ছিল?
উত্তর: ঋষিবালকের মাথায় ছিল ময়ূরপালক গোঁজা।
১১)"তোমার নিয়ে বেড়াবে গান"-কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: গানের কথা ও সুরের মধ্য দিয়ে শ্রোতার মন সর্বত্রগামী হয়। এ-কথাই বোঝানো হয়েছে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে।
১২) "আমি এখন হাজার হাতে পায়ে/এগিয়ে আসি, উঠে দাঁড়াই” কথাটির মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: অস্ত্রের থেকে অনেক শক্তিশালী মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিরোেধ যে-কোনো অস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। কবিও অস্ত্রশক্তির বিরুদ্ধে জাগ্রত জনশক্তিরই জয় ঘোষণা করেছেন। যে মানুষেরা অস্ত্রের প্রতি নির্ভর তাদের কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অস্ত্র আসলে মানবতার বিরোধী, মনুষ্যত্বের পক্ষে অবমাননাকর। তাই অস্ত্র নয়, মানুষই এই পৃথিবীর শেষ সত্য। সেই জীবনীশক্তিতেই, অজস্র মানুষের শক্তিতেই তিনি শক্তিশালী। সংঘবদ্ধ জনশক্তিই কবির উঠে দাঁড়ানো এবং এগিয়ে চলার প্রেরণা।
১৩) “হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই।” হাত নাড়িয়ে কবি কীভাবে বুলেট তাড়ান?
উত্তর: জয় গোস্বামীর 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতার অংশ এটি। যুদ্ধবাজ মানুষ অস্ত্র হাতে মনুষ্যত্বের বৈপরীত্যে গিয়ে দাঁড়ায়। তার নেশা মানুষকে হত্যা করা, মনুষ্যত্বকে পদদলিত করে ক্ষমতা দখল করা। কবি গানকে সম্বল করে সেই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান। গান মানুষের শুভচেতনার বিকাশ ঘটায়, সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিভেদ ভুলিয়ে একতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। ঐক্যবদ্ধ শুভচেতনার কখনও পরাজয় নেই। তাই কবি গানকে - হাতিয়ার করে সহজেই হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ান।
১৪) "গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে"-কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: পাতার পোশাক কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতাটি থেকে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে। এখানে বলতে চাওয়া হয়েছে, অস্ত্রের আতঙ্ক আর পেশিশক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বর্ম হয়ে উঠতে পারে মানুষের শুভবোধ এবং চৈতন্য। এই কাজে সংগীত একটা গুরুত্বপূর্ণ-হাতিয়ার গানের মধ্য দিয়ে যেমন আনন্দ আর সুন্দরের বিকাশ হয়, মন শুদ্ধ হয়ে ওঠে, ঠিক সেরকমই গান হয়ে উঠতে পারে প্রতিবাদের বাহন। তাই বুলেটকে প্রতিহত করতে কবি গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করেন।
১৫) "আঁকড়ে ধরে সে-খড়কুটো” কবি কাকে 'খড়কুটো' বলেছেন? তাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন কেন?
উত্তর: অস্ত্রের বদলে অস্ত্র বাঁচার উপায় নয়। অস্ত্র ফেলে গানকে কবি রাত চেয়েছেন। এই গানকেই তিনি 'খড়কুটো' বলেছেন।
ডুবন্ত মানুষ কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। যদি সেটা খড়কুটোও হয়, তবে তাকেই সে অবলম্বন ভেবে আঁকড়ে ধরে। করিও মনে করেছেন, গানই হল মানুষের চেতনা পরিবর্তনের গ্রোম। এই গান জীবনের গান। কবির কাছে একটা-দুটো এমন যে গান আছে, আগ্রাসী পৃথিবীতে তিনি তাদের আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান।
১৬) "রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে”-একথার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামীর 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে গৃহীত। গানের মধ্যে দিয়ে অস্ত্রের আতঙ্ককে অতিক্রম করে যেতে চেয়েছেন কবি। যাবতীয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং মানবিক অপচয় যে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে, তৈরি করে দেয় যে বিপন্নতা তা থেকে কবি মুক্তি খুঁজেছেন শুধু গানকে অবলম্বন করেই। তাই কবি যখন 'গানের গায়ে' রক্ত মোছার কথা বলেন, তখন আসলে সংগীতকে অবলম্বন করে বাস্তব জীবনের সব হিংসা এবং রক্তাক্ততাকে ভুলে যেতে চান।
১৭) "মাথায় কত শকুন বা চিল।” উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: জয় গোস্বামীর 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত। যুদ্ধবাজ আগ্রাসী মানুষদের কথা বলতে গিয়েই কবি মন্তব্যটি করেছেন। কবি দেখেছেন, স্বার্থপর মানুষেরা যুদ্ধ-যুদ্ধ মেলায় মেতে উঠেছে। মনুষ্যত্বের অবমাননা করে তারা কায়েমি স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা দিতে সদা তৎপর। লুব্ধ চিল-শকুনের মতো তারা সমাজের মাথার ওপরে ঘুরে বেড়ায় সর্বস্ব করায়ত্ত করার নেশায়। এই শকুন বা চিলরূপী মানুষদের বিরুদ্ধেই কবি গানের অস্ত্র ধারণ করেছেন।
১৮) “আমার শুধু একটা কোকিল”-একথার মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবি তাঁর মাথার ওপরে শুধুই চিল শকুনের উড়ে চলা অর্থাৎ রহিংসা এবং অরাজকতার বিস্তার লক্ষ করেছেন। এরই মধ্যে একটা এই কোকিল', যা কবির নিজস্ব, তা কবিকে আশাবাদী করে রাখে। কারণ সহস্র কেবির রিজকাকিল গান বাঁধে। এখানে কোকিলটি এর হতে পারে কবির ভেতরের সতা কিংবা ধ্বংসের পৃথিবীতে সৃষ্টির - কারিগর। কিন্তু উল্লেখযোগ্য হল 'সহস্র উপায়ে' তার গান, প্রেম বা প্রতিবাদ বা যে ধারাতেই তৈরি হোক না কেন, তা আসলে সুন্দরেরই প্রতিষ্ঠা ঘটায়।
১৯)"গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে।"-কে গান বাঁধবে? সহস্র উপায়ে গান বাঁধার তাৎপর্য কী?
উত্তর: কবি বলেছেন, তাঁর শুধু একটা কোকিল আছে। এই কোকিল গান বাঁধবে বলে জানিয়েছেন।
চিল, শকুন লুব্ধ পাখি। এদের আমরা হিংস্র রূপেই দেখি। কিন্তু মধুর কন্ঠের কোকিল সৌন্দর্যের প্রতীক। কোকিলের রূপক ব্যবহার করে কবি নিজের ভিতরের সৃজনশীল সত্তাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যে গানকে তিনি জীবনযুদ্ধের বর্ম করতে চেয়েছেন, বিবিধ উপায়ে সেই গান বাঁধবে এই কোকিল। তা হতে পারে প্রেম অথবা প্রতিবাদ-যে-কোনো ধারাতেই। যাবতীয় অস্ত্রের আস্ফালনকে স্তব্ধ করে তা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে।
২০) "অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো পায়ে।" কবি পায়ে অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন, বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: জয় গোস্বামী তাঁর 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান" কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহবান জানিয়েছেন। ক্ষমতা-মদমত্ত মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র বর্জন করে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন। এখানে কবির মানবতাবাদী মনোভাবটিই প্রকাশিত।
২১)"গান দাঁড়াল ঋষিবালক"-গানের সঙ্গে ঋষিবালকের উপমাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামীর, 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে গৃহীত। গানের মধ্যে কবি অসীম ক্ষমতা লক্ষ করেছেন। এই গান বুলেটকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু গানের কোনো নির্দিষ্ট বিষয় কিংবা নির্দিষ্ট আঙ্গিক নেই। 'সহস্র উপায়ে' গান বাঁধা হয়। সেখানে গান কখনও হয়ে যায় ঋষিবালকের মতো। স্নিগ্ধ, সতেজ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং আন্তরিক। গানের মধ্য দিয়ে হৃদয়ের যে উচ্ছ্বাস, নিবিড়তা ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে সে-কারণেই গানকে ঋষিবালকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২২) "মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক।"- কার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা? এখানে ময়ূরপালক গোঁজা চিত্রকল্পের তাৎপর্য কী?
উত্তর: গানরূপী ঋষিবালকের মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা।
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গানকে প্রতিরোধের হাতিয়ার করে কবি এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। গানকে কবি ঋষিবালকের চিত্রকল্প হিসেবে ব্যবহার করে অন্য বার্তা দিয়েছেন। মানসিক পবিত্রতাই হিংসা দূরীকরণের একমাত্র পথ। ঋষিবালক যাবতীয় হিংস্রতা বর্জিত পবিত্রতার প্রতীক। - তার মাথায় ময়ূরপালক গোঁজার মধ্যে শাশ্বত মানবপ্রেমই দ্যোতিত হয়েছে। হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, হিংসাকে জয় করতে হবে হৃদয়ের পরিশুদ্ধতা দিয়ে। উক্তিটির মধ্যে এই সত্যই প্রকাশিত।
২৩) 'তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান'-এই কথার তাৎপর্য কী? উত্তর: গানের কথা এবং সুরের সঙ্গে রসিক মানুষের অন্তরে বিশ্বভ্রমণ সম্ভব হয়। গানের মধ্যে যেমন রয়েছে প্রসারতা তেমনই গানেই রয়েছে মাটির ছোঁয়া। গান বস্তুত হৃদয়ের এক আশ্চর্য বিস্তৃতি ঘটায়, তুচ্ছ জাগতিক বিষয় থেকে উত্তীর্ণ করে মনকে এক অপার্থিব, অতীন্দ্রিয় জগতে নিয়ে যায়। গানের মাধ্যমেই। সম্ভব হয় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ, মানুষের কাছাকাই পৌঁছোনো। তাই কবি যখন বলেন-“তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান/নদীতে, দেশগাঁয়ে"-তখন আসলে গানের এই শক্তি এবং সীমাহীন বিস্তারের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়।
আরও পড়ুন-