প্রলয়োল্লাস
কাজী নজরুল ইসলাম
প্রিয় মাধ্যমিক শিক্ষাথীরা,
জীবিকা দিশারি ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। এই প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্নের উত্তর সমাধানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্য প্রলয়োল্লাস কবিতার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে।
দশম শ্রেণীর বাংলা || প্রলয়োল্লাস (কাজী নজরুল ইসলাম) প্রশ্ন ও উত্তর || Pralayollasa Questions Answers Class-10
১) 'প্রলয়োল্লাস' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
২) অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত হয়।
৩) কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা (প্রকাশ-অক্টোবর, ১৯২২)। এর আগে তাঁর একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয় 'ব্যথার দান' (মার্চ, ১৯২২)।
৪) কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?
উতর: কাজী নজরুল ইসলাম 'অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থটি 'ভাঙা বাংলার রাঙা যুগের আদি পুরোহিত সাগ্নিক বীর শ্রী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ'-কে উৎসর্গ করেন।
৫) অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা কে করেন?
উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেন 'চিত্রকর-সম্রাট' অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচ্ছদটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শ্রী বীরেশ্বর সেন।
৬) অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ-কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ-কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে মাসিক উপাসনা পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় হয়েছিল।
৭) 'প্রলয়োল্লাস', 'অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা।
৮) অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোেট ক-টি কবিতা রয়েছে?
উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে- প্রলয়োল্লাস, বিদ্রোহী, রক্তাম্বরধারিণী মা, আগমণী, ধূমকেতু, কামালপাসা, আনোয়ার, রণভেরী, শাত-ইল-আরব, খেয়াপারের তরণী, কোরবাণী, মোহরম।
৯) "তোরা সব জয়ধ্বনি কর!"-পঙ্ক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: 'অগ্নিবীণা' কাব্যের অন্তর্ভুক্ত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় পরাধীন দেশের নাগরিকদের জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।
১০) "তোরা সব জয়ধ্বনি কর।"-কার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা 'প্রলয়োল্লাস'-এ ধবংস ও সৃষ্টির দেবতার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।
১১)"ওই নূতনের কেতন ওড়ে..."-নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদ কে বহন করে এনেছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় 'নূতনের কেতন' ওড়ার সংবাদ কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে এনেছে।
১২) 'নূতনের কেতন' ওড়া বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় নূতনের কেতন ওড়া বলতে পরাধীনতার বন্ধন থেকে, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির দিন সমাগত-এ-কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
১৩) "আসছে এবার..."-কে, কীভাবে আসছেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য অংশে প্রলয়-নেশায় নৃত্যপাগল শিবের সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে, আগল ভেঙে আসার কথা শুনিয়েছেন।
১৪) "মহাকালের চন্ড-রূপে"-'চন্ড-রূপ' বলতে কী বোঝ?
উত্তর: 'চণ্ড-রূপ' বলতে অত্যন্ত কুদ্ধ, ভীষণ, ভয়ানক, পরাক্রমী, উদ্ধত রূপকে বোঝায়।
১৫) "... আসছে ভয়ংকর।"-'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি কেমন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ভয়ংকরের রূপ অত্যন্ত ভীষণ, উদ্ধত। তিনি বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে অবতীর্ণ হন।
১৬) "... গগন দুলায়"-গগন কীভাবে দুলে ওঠে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ধবংসের দেবতা শিবের মলিন কেশরাশির ঝাপটায় গগন অর্থাৎ সারা আকাশ দুলে ওঠে বলে কবি কল্পনা করেছেন।
১৭)"... ধূমকেতু তার চামর চুলায়।”-প্রলয়োল্লাস কবিতায় 'ধূমকেতু'র কী কী বিশেষণ প্রযুক্ত হয়েছে?
উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ধূমকেতুর ক্ষেত্রে 'সর্বনাশী' ও 'জ্বালামুখী' বিশেষণ দুটি প্রযুক্ত হয়েছে।
১৮) 'বিশ্বপিতার বক্ষ-কোলে। রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে। দোদুল দোলে!-পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ধ্বংসের দেবতা শিব। উন্মুক্ত তরবারির মতো দুলে ওঠা তাঁর রক্ত বিশ্বের যিনি রক্ষাকর্তা, তাঁর বুককেও আন্দোলিত করে তোলে।
১৯) "...স্তব্ধ চরাচর"-চরাচর স্তব্ধ কেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ধ্বংসের দেবতা প্রলয়ংকর শিবের অট্টহাসির প্রচন্ড শব্দে চরাচর স্তব্ধ হয়ে পড়েছে বলে কল্পনা করেছেন।
২০ "দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়"-'দ্বাদশ রবি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: 'দ্বাদশ রবি' বলতে সূর্যের বারোটি রূপ বা মূর্তির কথা বলা হয়েছে। হরিবংশ মতে এই মূর্তিগুলি হল-বিবস্বান্, অর্যমা, পুষা, ত্বষ্টা, ভগ, ধাতা, বরুণ, মিত্র ও পর্জন্য এবং বিস্তু।
২১) "দিগন্তরের কাঁদন লুটায়..."-কীভাবে দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় যে রুদ্রদেবের কল্পনা করেছেন, তাঁর ত্রাসসঞ্চারী পিঙ্গলবর্ণ জটাজালে দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ে।
২২) 'সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে কপোলতলে।'-কার কপোলতলে সপ্ত মহাসিন্ধু দুলে ওঠে?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে ভাঙনের দেবতা শিবের একফোঁটা চোখের জলে তাঁরই গালে সাতসমুদ্র দুলে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
২৩) "বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর"-উদ্ধৃতাংশের অর্থ পরিস্ফুট করো।
উত্তর: প্রলয়ংকর শিব সৃষ্টি ও রক্ষার কর্তা। বিশ্বমায়ের অস্তিত্বকে তিনি তাঁর বিপুল বাহুর সাহায্যে রক্ষা ও লালন করেন।
২৪)"হাঁকে ওই..."-কার হাঁক শোনা যাচ্ছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইলসাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার আলোচ্য অংশে ধ্বংসের দেবতা প্রলয়ংকর শিবের হাঁক শোনা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
২৫) "জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে"- পঙ্ক্তিটির অর্থ পরিস্ফুট করো।
উত্তর: জগৎজুড়ে যে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে, তার ধবংসলীলার শেষে জরা ও জীর্ণতার অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রাণ জেগে উঠবে।
২৬) "এবার মহানিশার শেষে..."-কোন্ দৃশ্য দেখা যাবে?
উত্তর: কবি আশা করেছেন যে ধ্বংসের কালরাত্রির অবসানে নতুন ভোরের সূর্য অমিত সম্ভাবনা জাগিয়ে হেসে উঠবে।
২৭)"দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর"-পঙ্ক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: মহাদেবের জটায় ধৃত শিশু চাঁদের নরম স্নিগ্ধ আলোয় সকলের ঘর ভরে উঠবে বলে কবি আশা প্রকাশ করেছেন।
২৮) "বজ্রগানে ঝড়-তুফানে..."- কীসের শব্দ নিনাদিত হয়?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় বজ্রগানে ঝড়-তুফানে মহাকালের রথের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি নিনাদিত হয়।
২৯)"উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!"-উল্কা কোথায় কীভাবে এসে পড়ে?
উত্তর: মহাকালের রথের ঘোড়ার ক্ষুরের দাপটে আকাশ থেকে জ্বলন্ত পাথর বা উল্কা এসে পড়েছে অন্ধ কারাগারের বন্ধ ঘরগুলিতে, দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত যজ্ঞের যূপকাষ্ঠে, পাষাণস্তূপে।
৩০) "এই তো রে তার আসার সময়"-কীভাবে তা বোঝা যাচ্ছে?
উত্তর: প্রলয়ংকর মেঘের ঘর্ঘর শব্দে কবির মনে হয়েছে যেন মহাকালের রথের শব্দ তাঁর কানে আসছে। ধ্বংসের দেবতার আগমন-সম্ভাবনা এভাবেই কবিতায় সূচিত হয়েছে।
৩১) "ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?"-ধ্বংস দেখে ভয় করা উচিত নয় কেন বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। প্রলয় বা ধ্বংসকে কবি 'সৃজন-বেদন' বা নতুন সৃষ্টির যন্ত্রণারূপে দেখেছেন।
৩২)"প্রলয় বয়েও আসছে হেসে"- প্রলয় বহন করেও তার মুখে হাসি কেন?
উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় প্রলয় অর্থাৎ ধ্বংসের বার্তা নিয়ে মহাকাল এসেছেন হাসিমুখে, কারণ তিনি ধবংস করবেন, তেমনই নতুন সৃষ্টিও করবেন তিনিই।
৩৩) "আসছে নবীন।"-নবীনের আসার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় জীবনহারা, প্রাণহীন, জড়, অসুন্দরকে বিনাশ করতেই যে নবীনের শুভাগমন, তা ব্যক্ত করেছেন।
৩৪) "ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কীসের তবে ডর?"- 'ভাঙা-গড়া খেলা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: 'ভাঙা গড়া খেলা' বলতে মহাকালের রুদ্ররূপে জীর্ণ পুরাতন সৃষ্টিকে বিনাশ করা ও শুভঙ্কর রূপে নতুন জগৎ সৃষ্টি করাকে বোঝানো হয়েছে।
৩৫) "ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।"-কী ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় জীর্ণ, পুরাতন গতানুগতিকতাকে ভেঙে, যাবতীয় প্রাণহীনতা, নিশ্চলতার অবসান ঘটিয়ে নতুন সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
৩৬)"বধূরা প্রদীপ তুলে ধর"-বধূরা কার উদ্দেশে প্রদীপ তুলে ধরবে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় বধূদের প্রদীপ তুলে ধরার আহবান জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ তুলে ধরে বধূরা কাল-ভয়ংকরের বেশে আসা সুন্দরকে বরণ করে নেবে।
আরও পড়ুন-