প্রিয় দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী তোমাদের এই চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা রচনা টি সুন্দরভাবে লিখিত আকারে নিচে দেয়া হলো। এটি মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এটি একটি ৫০০ শব্দের এবং ১০ নাম্বারের রচনা।
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা বাংলা রচনা
ভূমিকা:
শিক্ষা ও খেলাধুলা-এই দুইয়ের সার্থক প্রয়োগেই মানবজীবন সার্থকতামণ্ডিত হয়ে ওঠে। কারণ, স্বাস্থ্যবান ব্যপ্তিই প্রকৃত সুখসম্পদের অধিকারী হয় ও বুদ্ধির জাল বুনে সে সকল প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে। দেহ ও মনের পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্র গঠন সম্ভব হয়। তাই মন ও শরীরের সমপ্রবাহী বিকাশধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন যথাযথ শিক্ষা লাভের পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় খেলাধুলা।
খেলাধুলার শ্রেণিকরণ :
খেলার স্থানানুযায়ী খেলাধুলা দ্বিবিধ-১। ইনডোর গেমস বা ঘরের ভিতরে অনুষ্ঠিত খেলাধুলা ও ২। আউটডোর গেমস বা মাঠে বৃহদাকারে আয়োজিত খেলা। আমরা লুডো, ক্যারাম, দাবা, ব্যাডমিন্টন, টেবিল-টেনিস ইত্যাদিকে ইনডোর গেমস বলে থাকি। অপরপক্ষে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, বাস্কেট বল ইত্যাদি বহু প্রচলিত ও জনপ্রিয় খেলাগুলিকে আউটডোর গেমসয়ের পদমর্যাদা প্রদান করা হয়।
বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ:
বর্তমান কালে ক্রীড়া জগৎ ভৌগোলিক বেড়াজাল, জাতিগত ও ধর্মগত ভেদাভেদকে মুছে দিচ্ছে। কখনও অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান আবার কখনও 'এশিয়াড' বিভিন্ন দেশের মধ্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে। খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের মানুষ যখন পরস্পরের সম্মুখীন হয় তখন প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে স্থাপিত হয় বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ, বিভিন্ন দেশের মধ্যে গড়ে ওঠে পারস্পরিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন।
খেলাধুলা ও চরিত্রগঠনের সূত্রপাত্র:
শৈশবকাল থেকে খেলাধুলার মাধ্যমেই ব্যপ্তির চরিত্রগঠনের কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মলগ্ন থেকে হাত পা ছুড়ে খেলার মাধ্যমে নিজের মনোভাব প্রকাশের দ্বারা যে শিখন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে তারই প্রসার ঘটে পুতুলখেল্যর মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরিতে। ফলে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গো শিশু যখন গৃহকোণ ত্যাগ করে ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ করে তখন সে বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানে সপারক হয়ে ওঠে।
শৃঙ্খলাবোধের জাগরণ:
নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা ব্যক্তিবিশেষকে শৃঙ্খলাবোধসম্পন্ন, সংযমী মনোভাবাপন্ন ও আদর্শবাদী করে তোলে। খেলার মাঠে প্রাপ্ত দলগত ঐকা ও শৃঙ্খলাবোধের ধারণা পৃথিগত বিদ্যাভ্যাসে সম্ভব নয়। খেলাধুলায় নেতৃত্ব প্রদানের দ্বারা শিশুর মধ্যে লুক্কায়িত অধিনায়কটি পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
খেলাধুলা ও পূর্ণ চরিত্রগঠন:
খেলাধুলার মাধ্যমে এক স্থিতধী, মানসিক ভারসাম্যপূর্ণ ও বলিষ্ঠ মানুষের জন্ম হয়। ক্রীড়াক্ষেত্রে জয়পরাজয়ের সম্মুখীন হওয়ায় মানুষ বুঝতে শেখে জয়ের উল্লাসে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস কিংবা ব্যর্থতায় মনোবল হারানো কোনোটিই প্রকৃত মানুষের চরিত্রবৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তা ছাড়া খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ অল্প বয়স থেকেই কর্মস্পৃহ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আলস্যবর্জিত, নিষ্কাম মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
যন্ত্রনির্ভরতার যুগে শরীরচর্চার গুরুত্ব:
বর্তমানের যন্ত্রনির্ভরতার যুগে যেখানে জীবনের সর্বত্র যন্ত্রদানবের অবাধ যাতায়াত সেখানে কায়িক পরিশ্রমের সমতুল্য শরীর চালনা ব্যতীত বিভিন্ন নবাগত অসুখের কবলস্থ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। ক্ষুধামান্দার মতো সাধারণ অসুখ থেকে শুরু করে ব্রেন হ্যামারেজ, হার্ট অ্যাটাক, ওবেসিটি প্রভৃতি নানা প্রকার জটিল রোগের উদ্ভাবনা মানুষকে মৃত্যুমুখী করে তুলতে পারে। তাই নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রয়োজনানুযায়ী ব্যায়াম ও খেলাধুলা করা তাদের শরীর-মন সবকিছুর জন্যই দরকার।
উপসংহার:
কোনো ব্যক্তিরই জীবনপথ কুসুমাস্তীর্ণ হয় না, বরং কণ্টকের বিস্তীর্ণ আবরণ জীবনের প্রবাহকে বারংবার বাধা প্রদান করে। নীরোগ শরীরের পক্ষেই সম্ভব জীবনের যাবতীয় কন্টকগুলি ধীরে ধীরে উপড়ে ফেলা এবং এই নীরোগ শরীর প্রাপ্তি সম্ভব একমাত্র খেলাধুলার মাধ্যমেই। তা ছাড়া ক্রীড়াঙ্গানে আত্মপ্রসারের সুযোগ ছাত্রদলকে পাঠ্যবিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলে অপসংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত হতে সাহায্য করে। খেলাধুলাই মানুষকে বুক্ষ কঠিন পথে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।
আরও পড়ো-