আমার চোখে আমার দেশ বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "আমার চোখে আমার দেশ" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আমার চোখে আমার দেশ বাংলা রচনা || Amar Chokhe Amar Desh Bangla Rachana
আমার চোখে আমার দেশ
ভূমিকা :
"ভারতবাসী আমার ভাই, ভারবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী..." স্বামী বিবেকানন্দের চোখে এই দেশই আমার দেশ। দেশকে দেখার মতো চোখ না থাকলে অন্ধের হস্তীদর্শনের মতো দেশ মনের অগোচরে রয়ে যায়। স্বামীজি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন বলে দেশের সত্যস্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
দেশ বলতে কী বুঝি?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'দেশ মাটি দিয়ে গড়া নয়, মানুষ দিয়ে গড়া'। এই উপলব্ধি আমারও। দেশ মানে শুধু ভূখণ্ড নয়, তার ধারকবাহক তো দেশেরই অংশ। সামগ্রিক চেতনাই দেশকে অখণ্ডরূপে দেখতে সাহায্য করে। স্বদেশ চেতনা নিজের দেশকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর 'মেবার পতন' নাটকে স্বদেশ চেতনাকে সংকীর্ণতাদোষ দুষ্ট বলে দেখিয়ে বিশ্বচেতনার জয় ঘোষণা করেছেন। এটা অবশ্য ঠিক যে 'উদারচরিতানাড়ু বসুবৈধ কুটুম্বকম্' অর্থাৎ উদারচরিত্রের মানুষদের কাছে বসুন্ধরাই কুটুম্বের মতো। বৃহৎ ভাবনা থেকে সরে এসে এ কথা বলা যায় যে, আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ভারতভূমি আমার দেশ আর এদেশের মানুষ আমার ভাই, আমার প্রাণ।
আমার চোখে দেশ :
আমার দেশ ভারতবর্ষ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যেই এদেশের
বৈশিষ্ট্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ এদেশে বাস করে। অসামান্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এ দেশ। "কী বিচিত্র এই দেশ। দিনে প্রচণ্ড সূর্য এর গাঢ় নীল আকাশ পুড়িয়ে দিয়ে যায়। আর রাত্রিকালে শুভ্র চন্দ্রমা এসে তাকে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় স্নান করিয়ে দেয়। তামসী রাত্রে অগণ্য উজ্জ্বল জ্যোতিঃপুঞ্জে যখন এর আকাশ ঝলমল করে, আমি বিস্মিত আতঙ্কে চেয়ে থাকি। এর বিশাল নদনদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দামবেগে ছুটছে। এর মরুভূমি বিরাট স্বেচ্ছাচারের মতো তপ্ত বালিরাশি নিয়ে খেলা করছে।" 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকে সেকেন্দারের মুখে দ্বিজেন্দ্রলালের এই সংলাপই আমার চোখে আমার দেশ। আমার দেশের সনাতন সংস্কৃতি, সভ্যতা আমার আত্মা।
এদেশের মানুষ আমার প্রাণের আত্মীয়। এদেশের ধূলিকণা সোনার চেয়ে দামি। এদেশ সীতা-সাবিত্রী-দময়ন্তীর দেশ, বহু মনীষীর আবির্ভাবে পুণ্য এ দেশ, এখানে যুগে যুগে অবতার মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে। এ ভারতভূমি বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী প্রমুখ শহিদের রক্তে রঞ্জিত। এদেশ বিদেশির কাছে "Tagore land' নামে পরিচিত। পুণ্যসলিলা গঙ্গা এদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত। এদেশের আকাশে-বাতাসে এদেশের মানুষের আনন্দধ্বনি ধ্বনিত হয়।
এখন দেশ :
আমার দেশ পৃথিবীর বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এদেশের শাসক বা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সেই প্রতিনিধিদের উপর দেশের উন্নতি অগ্রগতি নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের অনুপ্রবেশ ঘটায় দেশের সম্পদ লুঠ হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে সবাই এক হতে না পারলে দেশ জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিতে পারবে না। আমার দেশের গরিমা অক্ষুণ্ণ রেখে তার সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি করা আমাদের সকলের কর্তব্য। দিকে দিকে ন্যায়-নীতি আদর্শের অবক্ষয়, হিংসা, হানাহানি, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন সামগ্রিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
উপসংহার :
সমস্ত নীতিবাচকতার ঊর্ধ্বে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের স্বপ্নের দেশকে সাজিয়ে তোলার সংকল্প নিতে হবে। আমরা সকলে যেন কবিগুরুর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে পারি- "সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে”।
আরও পড়ুন-