আমার দেশ বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "আমার দেশ" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আমার দেশ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Amar Desh Bangla Prabandha Rachana
আমার দেশ
"সবার উপরে মানুষ সত্য-
তাহার উপরে তুমি,
জননী জন্মভূমি, ধ্যানের ভারতভূমি।"
ভৌগোলিক পরিচিতি :
'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকে আলেকজান্ডার সেলুকস্কে বলেছিলেন-'সত্য সেলুকস্, কী বিচিত্র এই দেশ।' ভারতের ভূপ্রকৃতি নানা বৈচিত্র্যে ভরা। উত্তরে ধ্যানগম্ভীর হিমালয় পর্বতমালা চেয়ে আছে, তিন দিকে অন্তত জলরাশি নিয়ে 'সাগর লুটায় ভারতমাতার পায়ে।' কবিগুরু বলেছেন-
"ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর,
নদীজপমালা ধৃত প্রান্তর"
বৈচিত্র্য :
ভারতের প্রকৃতি বিচিত্রের রঙ্গশাখা। এর কোথাও গ্রীষ্মের খরতাপ, কোথাও শীতের প্রকোপ, কোথাও গভীর শ্যামল অরণ্যানী, কোথাও বিস্তীর্ণ মরুভূমি, কোথাও গগনচুম্বী পর্বতশ্রেণি, কোথাও-বা নদীমাতৃক সমভূমি। সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা ভারত হল প্রকৃতির লীলা নিকেতন। বহু ভাষাভাষী, নানা ধর্মাচারী মানুষের দেশ হল এই ভারত। পৃথিবীর নানা জাতির স্রোতধারা এসে মিশেছে ভারত-ভূমিতে। রবীন্দ্রনাথ ভারতকে 'মহামানবের সাগরতীর' বলেছেন। এখানে প্রকৃতির মতোই বৈচিত্র্য মানবজাতির। যুগে যুগে দেশ দেশান্তর থেকে বহু বর্ণ-ধর্ম-জাতির মানুষ এসেছে এই দেশে, তারা "এক দেহে হল লীন"। তাদের সবাকার মিলনভূমি আমাদের ভারতভূমি-"এমন দেশটি কোথাও খুঁজে" পাওয়া যাবে না।
ঐতিহ্য :
বহু নদনদী ভারতভূমিকে করেছে উর্বরা। স্বল্প পরিশ্রমে এখানে ফসল ফলে। তাই এখানকার মানুষ প্রাচীনকাল থেকে খাদ্য উৎপাদনের চর্চায় মন না দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনের চর্চা করে আসছে। ভারতের তপোবন থেকেই পৃথিবীর প্রথম সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল। মুনি-ঋষিরা শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশে-দেশান্তরে ভারতের ওই তপোতীর্থ থেকে।
বহির্বিশ্বে আমাদের কথা :
প্রাচীন ভারত বহির্বিশ্বে জ্ঞান-বিস্তার ও বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছিল। বালি দ্বীপ থেকে গ্রিস সর্বত্র ভারতের বাণিজ্যতরি পৌঁছেছিল। এ যুগেও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে ভারতীয় মেধা ও প্রতিভা আজ সর্বাগ্রে স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও ঐক্য :
প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ভারতে ছোটো-বড়ো অনেকগুলি রাজ্য গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক রাজ্যের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি। আচার-আচরণে, আহারে-বিহারে, পোশাকে-পরিচ্ছদে প্রত্যেকটি রাজ্যের মানুষ স্বতন্ত্র। গিরিপথ এবং সমুদ্রপথে বহু বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী অভিযান চালিয়ে এসেছে ভারতভূমিতে, বহু বিদেশি পর্যটক এবং ধর্মপ্রচারকও এখানে এসেছেন। এই ভারতেই 'শক-হুণ-দল-পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।'
নানা ভাষা-নানা মত :
ভারতে 'নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান' থাকা সত্ত্বেও ভারতবাসীর মধ্যে রয়েছে এক গভীর ঐক্যবোধ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলা যায়, 'প্রভেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা ভারতবর্ষের একমাত্র প্রচেষ্টা'। ভারতের যা কিছু ভিন্নতা, তা একান্ত বাহ্যিক। প্রকৃতপক্ষে ভারত হল এক ও অভিন্ন। এই ঐক্য আত্মিক এবং অনুভূতিগ্রাহ্য। ভারতীয় জীবনসাধনার মধ্যে কখনও অনৈক্য পরিলক্ষিত হয়নি। 'নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান'।
দেশের টান বনাম দেশপ্রেম :
বিশ্ববিদ্যায় ভারতের স্থান সবার ওপরে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারত অধ্যাত্ম বিদ্যায় পরম সত্য উপলব্ধি করেছে। 'শূন্য' আবিষ্কারের কৃতিত্ব এই ভারতের-অর্থাৎ ভারত মনন সম্পদে সুসমৃদ্ধ। ভারত বেদ-উপনিষদের প্রবক্তা, বহু মূল্যবান গ্রন্থের স্রষ্টা। এ দেশ সাধুসন্তের দেশ, মনীষীর দেশ, যাঁরা বলতে পেরেছেন-“শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ”-'বিশ্ববাসী শোনো, তোমরা অমৃতের পুত্র”। তাই, ভারতের মাটি খাঁটি সোনা। বিশ্বভুবনে এর তুলনা নেই-
"এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।"