বাংলা যাত্রাপালা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "বাংলা যাত্রাপালা" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা যাত্রাপালা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bangla Jatra Pala Bangla Prabandha Rachana
বাংলা যাত্রাপালা
ভূমিকা :
বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের প্রধানতম ধারা বাংলার যাত্রাগান। কলকাতার রাজা-মহারাজা এবং বাবু সম্প্রদায় প্রভাবিত সংস্কৃতির অতীত ইতিহাসে যাত্রাগানের একটা বিশেষ মর্যাদা ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে যাত্রাকে তার ঐতিহ্যের মাটি থেকে তুলে এনে নানা আধুনিক উপকরণে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। ফলে এই লোকশিল্পটি আধুনিক হয়ে উঠলেও নিজস্ব মর্যাদা হারিয়েছে।
যাত্রাপালার সেকাল :
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাগানবাড়ি ও বৈঠকখানার হই-হুল্লোড়ে সমকালীন অপরাপর বিনোদনগুলির পাশাপাশি যাত্রাগানের একটি বিশিষ্ট জায়গা ছিল। বাৎসরিক পূজাপার্বণ এবং নানারকম পারিবারিক উৎসব উপলক্ষ্যে অবস্থাপন্ন বাড়িতে যাত্রার আসর বসত। পরবর্তীকালে যাত্রাগানের মূল বিষয় কৃষ্ণকাহিনিকে আশ্রয় করে পাঁচালি ও কীর্তন জনপ্রিয় হয়ে উঠলে যাত্রাকে তার বৈচিত্র্যহীনতা থেকে মুক্ত করবার প্রয়োজন দেখা গেল। সেই তাগিদে এবং সর্বোপরি বাবুবিলাসের নব নব চাহিদার স্রোতের মুখে পড়ে কবিগান, আখড়াই, বাইনাচ, সং, ভাঁড়ামি প্রভৃতি যাত্রার মধ্যে ঢুকতে শুরু করল।
ফলে যাত্রা একটা তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারল। কিন্তু খুব দ্রুত কলকাতার শিক্ষিত-ভদ্র সমাজ কুরুচিপূর্ণ লঘু রসিকতা থেকে যাত্রাকে মুক্ত করবার চেষ্টা শুরু করল। চন্দননগরের মদনমোহন চট্টোপাধ্যায় যাত্রাপালার রচনা ও প্রয়োগরীতি ছাড়াও নাচ-গান-সংলাপ, সাজসজ্জা, সংগীতবিদ্যা প্রভৃতি সবকিছু সংস্কার করে যাত্রায় সর্বপ্রথম একটি সার্বিক রূপান্তর আনতে পেরেছিলেন। এই সময় কেশবচন্দ্র সেনের কমলকুটিরে 'নিমাই সন্ন্যাস' পালা দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সমাধিস্থ হয়েছিলেন।
বাংলা যাত্রার একাল :
বিংশ শতাব্দীর ছয়ের দশকের সূচনায় পালাসম্রাট ব্রজেন্দ্রকুমার দে পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর লেখা যাত্রাপালাগুলির মধ্যে 'আকালের দেশ', 'স্বামীর ঘর', 'পরশমণি', 'নিষিদ্ধ ফল' বিখ্যাত। ছয়ের দশকের শেষদিকে সামাজিক পালার চূড়ান্ত সার্থকতা দেখা দিল নবরঞ্জন অপেরা অভিনীত বিধায়ক ভট্টাচার্য রচিত স্বপনকুমার নির্দেশিত মাইকেল মধুসুদন পালার প্রযোজনার সাফল্যে। এর ঠিক পরেই তরুণ অপেরার 'হিটলার', বীণাপাণি অপেরার 'স্বামী বিবেকানন্দ'। এই প্রসঙ্গে শান্তিগোপালের 'আমি সুভাষ বলছি', 'মাও-সে-তুং' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আজকের যাত্রার সমস্যা :
আজ যাত্রার সেদিন আর নেই। ব্রজেন্দ্রবাবুর মতো পালাকারের আজ বড়ো অভাব। যোগ্য সুরকারের অভাব রয়েছে। বায়না দর ক্রমশই বেড়ে চলেছে। দক্ষ পরিচালকেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন ভালো মেকআপ ম্যানের। তা ছাড়া যাত্রাশিল্পটি তিন মাস চলে। এর পরেই যাত্রা ও অনুসারী শিল্পের কলাকুশলীরা বেকার হয়ে পড়েন। এর থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা।
উপসংহার :
নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাত্রাশিল্প আজ বিপন্ন। তবু আশার কথা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত প্রকৃত আধুনিক মনোভাবাপন্ন সংস্কারকের, যিনি তাঁর ভালোবাসা আর বুদ্ধির জোরে পালা, অভিনেতা, সুরকার, মেকআপ ম্যান সকলের মধ্যে একটি সমন্বয় ঘটাতে পারবেন।