লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bangla Prabandha Rachana Class-10
লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই
ভূমিকা :
ছাত্রছাত্রীদের কাছে 'লেখাপড়া' হল এক বিশেষ সাধনার ব্যাপার। তাদের মন দিয়ে লেখাপড়া করতেই হয়।
অধ্যয়নং তপঃ
লেখাপড়াই শিক্ষার্থীদের ধর্ম। ছাত্রদের ধর্ম হল 'অধ্যয়নং তপঃ', সাধকরা যেমন তপস্যা করেন ইন্টলাভের আশায়, তেমনি ছাত্ররা তাদের অধীত বিদ্যাকে আয়ত্ত করতে তপস্যা করবে, এটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু জিজ্ঞাসা হল, ছাত্রছাত্রীরা কি দিন-রাত্তির কেবল পড়াশোনাতেই ডুবে থাকবে? তারা শুধু পড়াশোনার সাধনায় শরীরপাত করবে? এটি কি ঠিক?
শুধুই অধ্যয়ন নয় :
আধুনিক শিক্ষাবিদরা কিন্তু এই মত পোষণ করেন না। তাঁরা মনে করেন, লেখাপড়া করে ছাত্ররা জ্ঞান অর্জন করে থাকে বটে, কিন্তু ছাত্রদের চারিত্রিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য শুধুমাত্র লেখাপড়া করাই যথেষ্ট নয়। শরীর ও মন যথাযথভাবে গঠিত না হলে লেখাপড়ার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই শরীর ও মনের ব্যায়াম দরকার।
খেলাধুলা ও সাঁতার কাটা ইত্যাদি দরকার :
লেখাপড়ার অবসরে শরীরচর্চা খুবই জরুরি। আর শরীরচর্চার জন্য দরকার খেলাধুলা। আমাদের শাস্ত্রেও আছে, 'শরীরং আদ্যং খলু ধর্ম সাধনং'। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে শরীর। এইজন্য স্বামী বিবেকানন্দ ফুটবল খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তা শুধু ফুটবল কেন, এই সঙ্গে ক্রিকেট, ভলিবল, হকি, টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি খেলা যেতে পারে। সাঁতার কাটার মধ্য দিয়েও শরীর তৈরি হয়। সুতরাং লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত সাঁতারও কাটা যেতে পারে। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে এগুলিই খুবই দরকার।
গল্পের বইয়ের উপকারিতা :
আমাদের শরীর গঠনের জন্য যেমন খেলাধুলা আবশ্যিক, তেমনি মানসিক বৃত্তিগুলির উৎকর্ষ সাধনের জন্য গল্পের বই হল বিশেষ এবং উৎকৃষ্ট একটি উপাদান। তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে গল্পের বইয়ের বিশেষ আকর্ষণ থাকা খুবই স্বাভাবিক। ওই বয়সে গল্পের বই পড়তে কে না ভালোবাসে? গল্পের বইয়ের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে। জানা যায়, মানুষে মানুষে সম্পর্ক এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়গুলি। চেনা যায় আমাদের স্বদেশকে। জানা যায় কাকে বলে কর্তব্যবোধ। সামাজিক প্রেক্ষিতে ভাই-বোন, মা-বাবা ইত্যাদি আপনজনকে আপন করে গভীরভাবে দেখতে পাওয়া যায় গল্পের বই পাঠ করলে।
মনের প্রসার :
এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তারাশংকর প্রমুখের গল্পগুলি প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যায়। এই গল্পগুলি আমাদের মনকে কেবল মোহিত করে না, গ্রামবাংলার বৃহত্তর জনসমাজ, গ্রামবাংলার প্রকৃতি, জনপদ, নদীলালিত পল্লিগ্রাম আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরে। আমাদের মনের গভীরে এইসব দৃশ্য বিশেষভাবে আলোড়নের সৃষ্টি করে এবং সূক্ষ্ম মানসিক বৃত্তিগুলিকে জাগিয়ে তোলে এবং সমৃদ্ধ করে। বিভূতিভূষণের 'চাঁদের পাহাড়' আমাদের তরুণ মনে অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষুধা জাগিয়ে উদ্বোধিত করে। অপরিচয়ের সঙ্গে পরিচয়ের, অজানার সঙ্গে জানার, দূরের সঙ্গে নিকটের মেলবন্ধন তৈরি করে নানাধরনের এবং নানা বিষয়ের গল্পের বই। সবসময় কেবলমাত্র লেখাপড়ার মধ্যে ডুবে থাকাই তাই ছাত্রসমাজের পক্ষে একান্ত কাম্য নয়।
উপসংহার :
লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে এবং অবসর সময়ে আমাদের অবশ্যই খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে শরীরকে মজবুত করতে হবে, ভবিষ্যৎ জীবনে লড়াইয়ের উপযুক্ত করতে হবে এবং সেই সঙ্গে মানসিক বৃত্তিগুলিকে শক্তপোক্ত করার জন্য পড়তে হবে নানাধরনের গল্পের বই। নতুবা শুধুই পড়াশোনা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে পূর্ণ করে তুলতে পারবে না।
আরও পড়ুন-