গ্রন্থাগার বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "গ্রন্থাগার" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রন্থাগার বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bangla Prabandha Rachana Class-12
গ্রন্থাগার
"গ্রন্থের আগার 'গ্রন্থাগার', জ্ঞানভাণ্ডার যারে কয়,
দেশ-বিদেশের জ্ঞানসম্পদ, চুপিসারে কথা কয়।"
ভূমিকা :
'লাইব্রেরি' বা গ্রন্থাগার শিক্ষিত মানুষের বিশেষ করে জ্ঞানপিপাসু মানুষের আশ্রয়স্থল। গ্রন্থাগার সভ্যতার দিকচিহ্ন, অতীত ও বর্তমানের সংগমস্থল। মানুষের জ্ঞানরাশি স্থান পায় গ্রন্থে। সেই সকল গ্রন্থ সঞ্চিত হয়ে গড়ে ওঠে গ্রন্থাগার।
প্রাচীন যুগের পাঠাগার :
প্রাচীন ভারতে যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পুঁথি সংগ্রহ করে রাখা হত, তাকে বলা হত 'গ্রন্থকুঠি'। সে যুগের গ্রন্থাগার নানা নামে পরিচিত ছিল। যেমন, 'ধর্মগঞ্জ', 'জ্ঞানভান্ডার', 'সরস্বতী ভান্ডার'। দক্ষিণ ভারতের তাঞ্চোরে এখনও আছে 'সরস্বতী মহল'।
কয়েকটি পুরাতন পাঠাগার :
প্রাচীন যুগে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল তক্ষশীলা, নালন্দা, বিক্রমশীলা, মথুরা, বারাণসী প্রভৃতি খান। ওইসব বিদ্যাকেন্দ্রে গড়ে উঠেছিল এক-একটি পুঁথির সংগ্রহশালা।
একালের গ্রন্থ পাঠাগার :
আধুনিক যুগে বিদ্যা-শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। এখন ছাপাখানার কল্যাণে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেইসব গ্রন্থ ব্যক্তিগত ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা গ্রন্থাগারে সংকলিত ও সংগৃহীত হয়। সেইসব অমূল্য সংগ্রহ মানুষের জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার প্রধান অবলম্বন।
গ্রন্থাগারের মর্মার্থ :
গ্রন্থাগারের বিস্ময়কর ভূমিকাটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া-পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাদেশের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে।" সত্যই, যুগ যুগ ধরে জ্ঞান বন্দি হয়ে আছে, চিন্তা আবদ্ধ হয়ে আছে এই গ্রন্থাগারে। যুগ-যুগান্তরের মানুষের কথা পুঁথির পাতায় নিঃশব্দ নীরবতার মধ্যে বাঁধা পড়ে আছে।
পাঠাগার শহর ও গ্রাম :
একালের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা কতখানি, তা এরপর আর নতুন করে ব্যাখ্যা করবার দরকার হয় না। ছোটো হলেও আমাদের প্রতিটি বিদ্যালয়ে রয়েছে ছোট্ট এক-একটি পাঠাগার। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নতমানের পাঠাগার একান্তভাবেই আবশ্যক। ইদানীং সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি জেলা-শহর ও প্রধান প্রধান নগরগুলিতে বড়ো বড়ো লাইব্রেরি তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে প্রাচীন গ্রন্থাগার হিসেবে 'এশিয়াটিক সোসাইটি' ও 'জাতীয় গ্রন্থাগার'-এর তুলনা মেলা ভার। দিল্লির 'মহাফেজখানা'য় প্রচুর প্রাচীন দলিল ও কাগজপত্র রক্ষিত রয়েছে। এগুলি আমাদের দেশের ইতিহাস লেখার কাজে খুবই জরুরি।
বিভিন্ন পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা :
মনীষীদের নিজের নিজের সংগৃহীত গ্রন্থ থেকে অনেক সময় তাঁদের ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি হয়ে থাকে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তি-সংগ্রহ থেকেই গড়ে উঠেছে একটি পাঠাগার। বিদ্যাসাগর এবং আশুতোষের ব্যক্তিগত পাঠাগার জমা রয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগারে। এইভাবে 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' অনেক ব্যক্তি-সংগ্রহ নিজের পরিষদ ভবনে ধরে রেখেছে। সব বই সকলের পক্ষে কেনা বা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। গ্রন্থাগার সেখানে 'মুশকিল আসান', জ্ঞানতৃয়া মেটাবার নির্ভরযোগ্য স্থান। তাই এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
উপসংহার :
পরিশেষে বলতে হয়, লাইব্রেরি হল মানবসভ্যতার এক অত্যাশ্চর্য নির্মাণ। এমন জ্ঞানভাণ্ডার আর কোথাও নেই। পাঠকদের কাছে টানবার জন্য সে হাত বাড়িয়ে আছে। আমাদের শুধু যাওয়ার অপেক্ষা। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের দেশে হাসাপাতালের চেয়ে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। গ্রন্থাগার মনকে জ্ঞানের আকারে আলোকিত করে সুস্থ করে তোলে। মানুষকে মানুষ করে তোলে। তাই মানবজীবনে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম।
আরও পড়ুন-