মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত " মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা " প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bangla Prabandha Rachana
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা
"মাতৃভাষা সে তো মাতৃদুগ্ধ সমান,
সে ভাষায় শিক্ষালাভে ভরে ওঠে প্রাণ।”
ভূমিকা :
মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সমান। মাতৃভাষায় মনের ভাব যত সহজে প্রকাশ করা সম্ভব অন্য কোনো ভাষায় তা নয়। জ্ঞানবিদ্যার চর্চায়ও মাতৃভাষার গুরুত্ব সর্বাধিক। যে ভাষায় সহজেই সবকিছু বলা-কওয়া ও বোঝানো যায়, সেই ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত। এই জন্যই শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সার্থক করতে হলে আমাদের বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষাটা মাতৃভাষার মাধ্যমে হওয়া দরকার। কারণ মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান ও গ্রহণ সহজসাধ্য হয়। মাতৃভাষাই শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম।
মাতৃভাষা সমস্যা :
ভারত নানা ভাষার দেশ। তাই শুধু মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে বাস্তব অসুবিধা আছে। তাহলে একে অপরের সাথে যোগসূত্র কীভাবে রক্ষিত হবে? ভারতে ১৫টি ভাষা সংবিধানে স্বীকৃতি পেলেও ভারতে ভাষার সংখ্যা ১৭৯ এবং উপভাষার সংখ্যা ৫৪৪। ভারতে এতগুলি ভাষা থাকার জন্য সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটি ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করার যথার্থ অসুবিধা আছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে না। এই জন্য অঞ্চল ভেদে শিক্ষার ভাষা-মাধ্যম স্থির করা প্রয়োজন। বিভিন্ন অঞ্চলের মাতৃভাষাই এই ক্ষেত্রে সমস্যা দূরীকরণের উপায় হতে পারে। জোর করে অন্য ভাষা চাপিয়ে দিলে সমস্যা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার বাহন :
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের দাবি উঠেছে। এই দাবি ন্যায়সংগত। সম্ভব হলে প্রতিটি ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় বলে অন্তত প্রধান ভাষাগুলিকে শিক্ষার মাধ্যম করা প্রয়োজন। তবে তাতেও সমস্যা মেটে না। ভারতের ভাষাগুলির চরিত্রগত বিভিন্নতা এত বেশি এবং অঞ্চল ভেদে তাদের অবস্থান এত বিচিত্র যে, সর্বত্র একই সঙ্গে ওই ভাষাগুলিতে পঠন-পাঠন সম্ভব নয়। তাই অঞ্চল ভিত্তিতে এক একটি ভাষা প্রাধান্য পেয়েছে। ভারতে এখন অঞ্চল ভিত্তিতে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
ইংরেজি ভাষা :
তবে আমাদের দেশে একমাত্র মাতৃভাষাই সর্বশিক্ষার উপযুক্ত বাহন হতে পারে না। বহু ভাষাভাষী দেশ হওয়ায় যোগাযোগ ও জ্ঞান-বিনিময়ের ভাষা রূপে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন "দুই স্রোতের সাদা এবং কালো রেখার বিভাগ থাকিবে বটে, কিন্তু তারা একসঙ্গে বহিয়া চলিবে। ইহাতে দেশের শিক্ষা যথার্থ বিস্তীর্ণ হইবে, গভীর হইবে, সত্য হইয়া উঠিবে।" এদিকে ভারতীয় ভাষাগুলির সঙ্গে যোগসূত্র রাখতে গেলে 'হিন্দি' ভাষা শেখা আমাদের পক্ষে একইরকম জরুরি। সুতরাং ভারতবর্ষের বাসিন্দা হিসেবে এবং সার্থক ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনটি ভাষার সূত্র আমাদের মেনে চলা দরকার। জাতীয় সংহতির প্রয়োজনে এটি খুবই দরকার।
উপসংহার :
Mass Education-এর জন্য অর্থাৎ সাধারণ শিক্ষার জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাই যথেষ্ট। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষা, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে। তা না-হলে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার যুদ্ধে আমরা হেরে যাব। আমাদের দেশের উন্নতির পথ রুদ্ধ হবে। ভারত বিশ্বসভার আসন থেকে বঞ্চিত হবে।
আরও পড়ুন-